নানিয়ার চর
চট্টগ্রাম [বাংলাদেশ] বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

মিয়ানমারের আরাকানদের দ্বারা নিপীড়িত ও অত্যাচারিত হয়ে চাকমারা নৃগোষ্ঠীর মানুষ ১৪১৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে তৈনছড়ি নদীকূলে মাত্র ১২টি গ্রামের একটি বসতি স্থাপন করে। পরে ঐসব এলাকায় মগ ও পর্তুগিজদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেলে, ষোড়শ শতাব্দীতে তারা পার্বত্য চট্টগ্রামের গভীর অরণ্যে বসতি স্থাপন করে। কিংবদন্তি আছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি স্থাপনকারী নান্যা নামের একব্যক্তি চেঙ্গী নদী বিধৌত চরের স্বত্ত্বাধিকারী ছিলেন। প্রথম দিকে নান্যা নামানুসারে এই এলাকার নাম ছিল নান্যারচর। এই নাম বিবর্তিত হয়ে বর্তমানে নানিয়ারচর হয়ে গেছে।

ভৌগোলিক অবস্থান: ২২°৪৩'- ২৩°৫৭' উত্তর অক্ষাংশ ৯২°০২'-৯২°১১' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার। এ উপজেলার পূর্বে  লংগদু  উপজেলা, দক্ষিণে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা, পশ্চিমে
কাউখালি উপজেলা ও খাগড়াছড়ি জেলার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা এবং উত্তরে খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলা অবস্থিত।

আয়তন: ৩৯৩.৬৮ বর্গকিলোমিটার।

নদনদী ও খাল বিল: এই উপজেলার ভিতর দিয়ে চেঙ্গি নদী প্রবাহিত হয়ে কাপ্তাই হ্রদে পতিত হয়েছে। এ উপজেলার প্রায় এক পঞ্চমাংশ জুড়ে কাপ্তাই হ্রদের  অংশবিশেষ অবস্থিত।

জনসংখ্যা ও জাতি সত্তা: ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুসারে নানিয়ারচর উপজেলার জনসংখ্যা ৪২,৯৬৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২২,১৩০ জন এবং মহিলা ২০,৮৩৫ জন। মোট জনসংখ্যার ১৪.৬৫% মুসলিম, ২.৪৬% হিন্দু, ৮১.৮৭% বৌদ্ধ এবং ১.০২% খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় চাকমা ও মারমা নৃগোষ্ঠীর আধিক্য রয়েছে।

যোগাযোগ:
রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে নানিয়ারচর উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি সড়ক এবং লংগদু-নানিয়ারচর সড়ক। প্রধান যোগাযোগ বাহন সিএনজি চালিত অটোরিক্সা। এছাড়া এ উপজেলায় যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম নৌপথ। রাঙ্গামাটি  থেকে কাপ্তাই হ্রদের উপর দিয়ে বিভিন্ন নৌযান যোগে এ উপজেলায় যাওয়া যায়।

ইতিহাস ও প্রশাসন: খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে, এই অঞ্চলে চাকমাদের একটি অংশ বসতি স্থাপন করেছিল। ব্রিটিশ শাসনামলে পার্বত্য চট্টগ্রামের অংশ হিসেবে
রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।

রাঙামাটির নানিয়ার চরে মুন্সী আব্দুর রউফ, বীরশ্রেষ্ঠ-এর সমাধি।

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়, নানিয়ারচর উপজেলার বুড়িঘাট ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর সংঘর্ষ হয়। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ লড়াইয়ে মুক্তিবাহিনীর ল্যান্স নায়েক বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ শাহাদাত বরণ করেন।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে
নানিয়ার চর থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সূত্রে নানিয়ার চর উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।

এ উপজেলায় ৪টি ইউনিয়ন রয়েছে।  এগুলো হলো-  সাবেক্ষ্যং, নানিয়ারচর, বুড়িঘাট ও ঘিলাছড়ি।

শিক্ষা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: নানিয়ারচর উপজেলার স্বাক্ষরতার হার ৩৮.৪০%। এ উপজেলায় ১টি কলেজ, ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি দাখিল মাদ্রাসা, ৮টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৪৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি এবতেদায়ী মাদ্রাসা রয়েছে। এছাড়া এখানে রয়েছে পুলিশ স্পেশাল ট্রেনিং স্কুল।

কৃষি: প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, তুলা, আদা, হলুদ, মরিচ, শাকসবজি, গম, সরিষা।
ফল: আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জাম, পেয়ারা, আনারস, পেঁপে।

নির্বাচনী আসন: ২৯৯ পার্বত্য রাঙামাটি।
স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান:


তথ্যসূত্রঃ