লংগদু
চট্টগ্রাম [বাংলাদেশ] বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

LangduUpazila.jpgবাংলা বা পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর ভাষায় লংগদু শব্দের কোনো অর্থ পাওয়া যায় না। তবে লংগদু নামের উৎপত্তি সম্পর্কে ত্রিপুরা এবং চাকমাদেরর দুটি উপকথা প্রচলিত আছে। এই উপকথা দুটি হলো-

ভৌগোলিক অবস্থান: ২২°৪৮'- ২৩°০৬' উত্তর অক্ষাংশ ৯২°০৫'-৯২°১৯' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৭৬ কিলোমিটার। এ উপজেলার উত্তর-পূর্বে বাঘাইছড়ি , পূর্ব ও দক্ষিণে বরকল উপজেলা, পশ্চিমে রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা, নানিয়ার চর, খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলা ও খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা এবং উত্তরে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘানালা উপজেলা অবস্থিত।

আয়তন: ৩৮৮.৪৯ বর্গকিলোমিটার।

নদনদী ও খাল বিল: এই উপজেলার প্রধান দুটি নদী হলো- মাইনী ও কাচালং। এছাড়া এই উপজেলার এক তৃতীয়াংশ জায়গা জুড়ে রয়েছে কাপ্তাই হ্রদ

জনসংখ্যা ও জাতি সত্তা: ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুযায়ী লংগদু উপজেলার জনসংখ্যা ৮৪,৬৭৭ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪৩,৮৪৬ জন এবং মহিলা ৪০,৮৩১ জন। মোট জনসংখ্যার ৭২.৪১% মুসলিম, ১.৫০% হিন্দু, ২৫.৮৭% বৌদ্ধ এবং ০.২২% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলায় প্রধানত বাঙালি ও চাকমা সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করে। এছাড়া অল্পসংখ্যক ত্রিপুরা ও পাংখোয়া নৃগোষ্ঠীর লোকজন রয়েছে।

যোগাযোগ:
রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে এই উপজেলার সাথে প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হলো নৌপথ। তবে খাগড়াছড়ি থেকে হাল্কা যানবাহনে সড়ক পথে যাওয়া যায়।

ইতিহাস ও প্রশাসন: এই এলাকায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা বাস করা শুরু করেছিল বঙ্গীয় মধ্যযুগে। ব্রিটিশ শাসনামলে, এই অঞ্চলে কুকিদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। এদের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ইংরেজরা কাপ্তাই খালের একটি দুর্গ নির্মাণ করে। তারপরেও ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে কুকিরা পার্বত্য এলাকায় হানা দিয়ে ব্যাপক লুটতরাজ করে। এই কারণে ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে বিভাগীয় কমিশনার পাহাড়ী কুকিদের প্রতিরোধ করার জন্য একজন সুপারিনটেনডেন্ট নিযুক্ত করে, চট্টগ্রাম হতে পৃথক করে পার্বত্য অঞ্চলকে একটি রেগুলেশান জেলা করার সুপারিশ করেন। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে কুকিরা তিপ্পেরা
(Tipperah) অঞ্চলে ইংরেজদের উপর আক্রমণ করে। এই আক্রমণে তিপ্পেরা অঞ্চলে ১৮৬ জন ইংরেজ নিহত হয় এবং ১০০ জনকে তারা বন্দী করে। খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুন প্রশাসনিক সুবিধার জন্য রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই সময় বরকল ব্রিটিশ প্রশাসনিক সুবিধার আওতায় চলে আসে।

১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দে লংগদু থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সূত্রে লংগদুকে উপজেলায় উন্নীত করা
। এ উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন রয়েছে।  এগুলো হলো-  আটারকছড়া, কালাপাকুজ্যা, গুলশাখালী, বগাচতর, ভাসান্যাদম, মাইনীমুখ ও লংগদু সদর।

স্বাধীনতা যুদ্ধে লংগদু: ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে পাকবাহিনী লংগদু উপজেলায় ব্যাপক গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট চালায়। এই উপজেলার বগাচতর ইউনিয়নের আমবাগান ও রাঙ্গীপাড়ায় পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিবাহিনীর বেশ কয়েকটি সম্মুখ লড়াই হয়। ৬ ডিসেম্বর লংগদু শত্রুমুক্ত হয়।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: এই উপজেলার স্বাক্ষরতার হার ৪২.২০%। উপজেলায় রয়েছে ২টি কলেজ, ১টি আলিম মাদ্রাসা, ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি দাখিল মাদ্রাসা, ৬টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৬১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি কিন্ডারগার্টেন ও ৫টি ইবতেদায়ী মাদ্রাসা।

কৃষি: প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, তুলা, আদা, হলুদ, মরিচ, শাকসবজি, গম, সরিষা।
ফল: আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জাম, পেয়ারা, আনারস, পেঁপে।

নির্বাচনী আসন: ২৯৯ পার্বত্য রাঙামাটি।
দর্শনীয় স্থান:


তথ্যসূত্রঃ