বরকল
চট্টগ্রাম [বাংলাদেশ] বিভাগের রাঙ্গামাটি
জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। জনশ্রুতি আছে যে, কর্ণফুলি নদীর এই স্থানে একসময় একটি বড় জলপ্রপাত ছিল। এই জলপ্রপাতের জল পড়ার শব্দ অনেক দূর থেকে শোনা যেত। দূর থেকে মনে হতো- যেনো বড় কল (যন্ত্র) চলছে। এই শব্দপ্রকৃতি থেকে স্থানীয় অধিবাসীরা এর দিয়েছিল বর (বড়) কল বা বরকল।

ভৌগোলিক অবস্থান: ২২°৩৯'- ২৩°১৪' উত্তর অক্ষাংশ ৯২°১১'-৯২°২৯' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫০ কিলোমিটার। এ উপজেলার উত্তরে বাঘাইছড়ি লংগদু উপজেলা, পশ্চিমে লংগদু উপজেলা ও রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা, দক্ষিণে জুরাছড়ি উপজেলা এবং পূর্বে ভারত-এর মিজোরাম প্রদেশ অবস্থিত।

আয়তন: ৭৬০.৮৮ বর্গকিলোমিটার।

নদনদী ও খাল বিল: এই উপজেলার প্রধান নদী কর্ণফুলী। এছাড়া এই উপজেলার পশ্চিমাংশ জুড়ে রয়েছে কাপ্তাই হ্রদ
জনসংখ্যা ও জাতি সত্তা: ২০১১ খ্রিষ্টাব্দের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই উপজেলার জনসংখ্যা ৩৯,৭৮১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২১,৮৯২ জন এবং মহিলা ১৭,৮৮৯ জন। মোট জনসংখ্যার ২১.৫০% মুসলিম, ১.৫০% হিন্দু, ৭৬.২০% বৌদ্ধ এবং ০.৮০% খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে। এ উপজেলার ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠীর হলো চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, পাংখোয়া।

যোগাযোগ:
রাঙ্গামাটি জেলা সদর থেকে এই উপজেলার সাথে প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম হলো নৌপথ।

ইতিহাস ও প্রশাসন: এই এলাকায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা বাস করা শুরু করেছিল বঙ্গীয় মধ্যযুগে। ব্রিটিশ শাসনামলে, এই অঞ্চলে কুকিদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পায়। এদের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ইংরেজরা কাপ্তাই খালের একটি দুর্গ নির্মাণ করে। তারপরেও ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে কুকিরা পার্বত্য এলাকায় হানা দিয়ে ব্যাপক লুটতরাজ করে। এই কারণে ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে বিভাগীয় কমিশনার পাহাড়ী কুকিদের প্রতিরোধ করার জন্য একজন সুপারিনটেনডেন্ট নিযুক্ত করে, চট্টগ্রাম হতে পৃথক করে পার্বত্য অঞ্চলকে একটি রেগুলেশান জেলা করার সুপারিশ করেন। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে কুকিরা তিপ্পেরা
(Tipperah) অঞ্চলে ইংরেজদের উপর আক্রমণ করে। এই আক্রমণে তিপ্পেরা অঞ্চলে ১৮৬ জন ইংরেজ নিহত হয় এবং ১০০ জনকে তারা বন্দী করে। খ্রিষ্টাব্দের ২০শে জুন প্রশাসনিক সুবিধার জন্য রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই সময় বরকল ব্রিটিশ প্রশাসনিক সুবিধার আওতায় চলে আসে।

ব্রিটিশদের সাথে কুকিদের বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলে ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। প্রথম দিকে ব্রিটিশরা প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও ১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দে দিকে  কুকিদের অনেকাংশে দমন করতে সক্ষম হয়। এরপর ১৮৯১ এবং ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা কুকুদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে।

১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে বরকল থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। পাকিস্তান শাসনামলে বরকল থানা হিসেবেই থেকে গিয়েছিল। ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সূত্রে বরকল উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। তবে
উপজেলাটি প্রশাসনিক কার্যক্রম বরকল থানার আওতাধীনেই রয়ে গেছে।

এ উপজেলায় ৫টি ইউনিয়ন রয়েছে।  এগুলো হলো-  শুভলং, বরকল, আইমাছড়া, ভূষণছড়া ও বড় হরিণা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: বরকল উপজেলার স্বাক্ষরতার হার ৩৬.১০%। এ উপজেলায় রয়েছে ১টি কলেজ, ৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি দাখিল মাদ্রাসা, ১টি কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ১০টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৮১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

কৃষি: প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, তুলা, আদা, হলুদ, মরিচ, শাকসবজি, গম, সরিষা।
ফল: আম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, জাম, পেয়ারা, আনারস, পেঁপে।

নির্বাচনী আসন: ২৯৯ পার্বত্য রাঙামাটি।
দর্শনীয় স্থান:


তথ্যসূত্রঃ