মাদারীপুর
বাংলাদেশের একটি জেলা। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়।

ভৌগোলিক স্থানাঙ্ক: জেলার সীমা ২৩°০০' উত্তর অক্ষাংশ থেকে ২৩°৩০' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৬' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ থেকে ৯০°২১' পূর্ব দ্রাঘিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।

ভৌগোলিক অবস্থান: এই জেলার উত্তরে ফরিদপুর জেলা ও মুন্সিগঞ্জ জেলা, পূর্বে শরিয়তপুর জেলা, পশ্চিমে ফরিদপুর জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলা এবং দক্ষিণে গোপালগঞ্জ জেলা ও বরিশাল জেলা।

আয়তন: প্রায় ১১২৫.৬৯ বর্গ কিলোমিটার।
উপজেলাসমূহ: মাদারীপুর সদর, কালকিনি, রাজৈর, শিবচর ও ডাসার।

ইতিহাস: ধারণা করা হয় খ্রিষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে সুফি সাধক শাহা মাদারের (কুতুব-ই-জাহান হযরত বদিউদ্দীন আহমেদ জিন্দা শাহ মাদার) নামানুসারে মাদারিপুর নামকরণ করা হয়। উল্লেখ্য, তুঘলকের শাসনকালে (১৩৫১-১৩৮৮ খ্রিষ্টাব্দ),শাহ মাদার ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে সিরিয়া ভারতবর্ষে আসেন। উত্তর ভারত পর্যটন শেষে তিনি বঙ্গাদেশে আসেন। সম্ভবত ১৩৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বঙ্গের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেন। সে সময় তৎকালিন চন্দ্রদ্বীপের উত্তর সীমান্ত জুড়ে ছিল গভীর জঙ্গল। চন্দ্রদ্বীপ ভ্রমণকালে শাহা মাদার সহযাত্রীদের নিয়ে বর্তমান মাদারীপুর অঞ্চলে কিছুদিন অতিবাহিত করেন। এই সূত্রে এই অঞ্চলটি শাহ মাদারের পুর (মাদারীর স্থান) নামে পরিচিতি লাভ করে। কালক্রমে এখানে তাঁর নামে দরগা শরিফ স্থাপিত হয় এবং এখানে তাঁর স্মরণে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত হয়। সপ্তদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বিক্রমপুরের জমিদার ভূমিহীন প্রজাদের পূনর্বাসনের লক্ষে চন্দ্রদ্বীপের মাদারের পুরকে বেছে নিয়েছিলেন। সে সময়ে এই স্থানের নাম দেওয়া হয়েছিল মাদারন। ব্রিটিশ ভারতে এই অঞ্চলটি গ্রাম থেকে ইউনিয়নের মার্যাদা লাভ করেছিল।

খ্রিষ্টীয় ৪র্থ ও ৫ম শতকে এই অঞ্চল মৌর্য ও গুপ্ত শাসনাধীন ছিল। ৪র্থ শতকে পুষ্করণ (বাঁকুড়া) মহারাজা চন্দ্রবর্মা কোটালীপাড়া দখল করে বাকলা চন্দ্রদ্বীপ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। উল্লেখ্য, উল্লেখ্য গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, বাখরগঞ্জ, পটুয়াখালী, খুলনা, বাগেরহাটসহ সমস্ত দক্ষিণাঞ্চল তখন বাকলা চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। এই সময় মাদারিপুরের পূর্বাংশ ইদিলপুর এবং পশ্চিম অংশ কোটালীপাড়া নামে পরিচিত ছিল।

এরপর গুপ্তবংশ, পাল বংশ, চন্দ্রবংশ, সেন বংশের শাসকরা এই অঞ্চলে শাসন করেছে। সেন রাজবংশ ১০৯৮ হতে ১২৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পূর্ব বাংলা শাসন করে। কোটালীপাড়া ও মদনপাড়ায় বিশ্বরূপ সেন এবং ইদিলপুরে কেশব সেনের তাম্রলিপি পাওয়া যায়। সেন রাজাদের পতনের পর চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এই সময় বরিশাল বিভাগ, মাদারিপুর, শরিয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বাগেরহাট জেলা চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অধীনে ছিল।

চতুর্দশ শতকে ফরিদপুর সুলতানদের শাসনাধীনে চলে যায়। সুলতান জালাল উদ্দিন ফতেহ শাহ (১৪৮১-১৪৮৫ খ্রিষ্টাব্দ) ফরিদপুর ও চন্দ্রদ্বীপের একাংশ দখল করে ফতেহাবাদ পরগনা গঠন করেন। সুলতান হুসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে) ফতেহাবাদের শাসক ছিল। ১৫৩৮ হতে ১৫৬৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত শেরশাহ ও তার বংশধরগণ বাংলা শাসন করেন। ১৫৬৪ থেকে ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত কররানি বংশ বাংলার রাজত্ব করে তারপর ১৫৭৬ থেকে ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বারোভূঁইয়ার অধীনে ছিল বাংলা। বারোভূঁইয়াদের অন্যতম ছিল বিক্রমপুরের চাঁদ রায়, কেদার রায় এবং বাকলার কন্দর্প রায়, রামচন্দ্র রায়। এরপর ধীরে ধীরে চন্দ্রদ্বীপ মুঘল সাম্রাজ্যের
অধীনে চলে যায়। ১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে এদেশে ব্রিটিশ শাসনের সূত্রপাত ঘটে। মূলত ১৭৬৫ থেকে ব্রিটিশরা বাংলা শাসন করে।

১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মাদারীপুর ছিল বাকেরগঞ্জ জেলার অধীনে।
১৮৫৪ খ্রিষ্টাব্দে একে বাকেরগঞ্জ জেলার থানা-মহকুমা করা হয়।
১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এই মহকুমাকে ফরিদপুর জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়। উল্লেখ্য, ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে ফরিদপুর জেলা সৃষ্টি হয়েছিল।
১৮৭৫ খ্রিষ্টাব্দে মাদারিপুর মিউনিসিপ্যাল কমিটি স্থাপিত হয়।
১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে মাদারিপুর থেকে গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া থানাকে আলাদা করে গোপালগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয়।
১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য তৎকালীন বাংলাদেশের মাদারীপুরে গঠিত হয়েছিল মাদারীপুর সমিতি। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন- পূর্ণচন্দ্র দাস। প্রাথমিক পর্যয়ে পূর্ণচন্দ্র দাস ছাড়া এই দলে ছিলেন, বিনোদ দাস, বামন চক্রবর্তী, পঞ্চানন চক্রবর্তী, চিত্তপ্রিয় রায় চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ দাশগুপ্ত, মনোরঞ্জন সেনগুপ্ত , রাধাচরণ প্রমাণিক, কালীপ্রাদ প্রমুখ।
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ১লা মার্চ গোপালগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়।
সূত্র:
http://www.madaripur.gov.bd/