 অমৃতসর
		অমৃতসর
		
		ভারতের উত্তর-পশ্চিম দিকে  অবস্থিত 
		পাঞ্জাব নামক প্রদেশের রাজধানী। উল্লেখ্য পঞ্চনদীর দেশ পাঞ্জাব, পাকভারত 
		বিভাজনের সময় দ্বিখণ্ডিত হয়। এই সময় এর পাঁচ নদীর তিনটি নদী ভারতের ভাগে 
		পড়ে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব অংশের রাজধানী লাহোর। ভারতের পাঞ্জাবের  
		 পশ্চিমে পাকিস্তান, উত্তরে 
		জম্মু-কাশ্মির, উত্তর-পূর্বে হিমাচল, দক্ষিণে রাজস্থান ও হরিয়ানা।  
	 অমৃতসর অংশে 
		পড়েছে ব্রিটিশ নিপীড়নের স্বাক্ষ্যবহনকারী জালিয়ানওয়ালবাগ। 
 অমৃতসরের প্রধান আকর্ষণ 
		স্বর্ণমন্দির।  
১৫০২ খ্রিষ্টাব্দে লাহোর থেকে মাত্র ২৫ 
		কিলোমিটার দূরে জিটি রোডের ধারে, শিখ ধর্মের 
		প্রতিষ্ঠাতা  
		গুরুনানক
		 একটি মন্দির গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। তখন এই স্থানের 
নাম ছিল 'চক'।
লাহোরে রামদাশের সাথে সম্রাট আকবরের সাক্ষাৎ হলে, উভয়ের মধ্যে 
ধর্মবিষয়ক আলোচনা হয়। আলোচনায় সন্তুষ্ট হয়ে- আকবর তাঁকে কিছু ভূমিদান করেন। ঐ ভূমি 
গোলাকার হওয়ায়, এর নাম হয়েছিল 'চক্র রামদাস'। রামদাসের শিষ্যদের সাহায্য রামদাস। এর 
কিছুদিন পর তিনি এই স্থানে একটি দীঘি খনন করান। এই দীঘির চার দিকে কিছু মন্দির 
নির্মাণ করেন এবং কিছু শিষ্যদের জন্য কিছু বাড়ি নির্মাণ করে দেন। তখন
লোকমুখে এর প্রচলিত ছিল 'গুরু 
দা চক'। ১৫৭৪ খ্রিষ্টাব্দে শিখদের চতুর্থ গুরু 
রাম দাশ, 
 গুরুনানক
		 -এর 
		স্বপ্নপূরণের জন্য  টাং গ্রামের মালিকের কাছ থেকে ৭০০ টাকায় জমি কিনে 
সেখানে বেশ কয়েকটি শিখ মন্দির তৈরি করেন। তখন এই স্থানের নামকরণ করা হয়েছিল 
রামদাশপুর।
		
		 ১৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে রামদাসের পুত্র এবং শিখ গুরু
অর্জন দাশ  সরোবরের ধারে স্বর্ণ মন্দিরের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন 
		করেন।   তা ছাড়া এই নগরীর নির্মাণ কাজ এই গুরুর আমলে 
সম্পন্ন হয়েছিল। এই সময় শিখদের ধর্মীয় রাজধানী হিসেবে এই স্থানের 
		নামকরণ করেন অমৃতসর।
		
 ১৬০৪ খ্রিষ্টাব্দে  এই মন্দিরের 
		শিখদের ধর্মগ্রন্থ গ্রন্থসাহেব স্থাপন করা হয়। মন্দিরের এই অংশের নাম 
		হরবিন্দ সাহিব। হরমন্দির সাহিবে ঢোকার 
		দরজা চারদিকে চারটি। জাতিধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের অবারিত দ্বার বোঝাবার 
		জন্যেই নাকি এই চার দুয়ারের নির্মাণ। ভেতরে সুন্দর কারুকার্যময় চাদরের নিচে
গুরু গ্রন্থসাহিব অধিষ্ঠিত। 
		
		১৭৬২ খ্রিষ্টাব্দে আফগানস্থানের দুররানি রাজবংশের বংশের  দ্বিতীয় শাসক 
		তিমুর শাহ দুররানি এই অঞ্চল দখল করে নেন। এই সময় তিনি
এই স্থানের মন্দিরগুলো ভেঙে ফেলেন এবং কয়েকটি মসজিদ 
		নির্মাণ করেন। পরে শিখরা জুলুন্দুর দোয়াবের গভর্নর আদিনা বেগ খানের সহায়তায় 
		এই স্থান থেকে  
		তিমুর শাহ দুররানিকে বিতারিত করেন।
		
১৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে পুনরায়  হরবিন্দ সাহিব তৈরি করা হয়েছিল।
		১৮০৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজা 
		রঞ্জিত সিংহ এখানে গোবিন্দগড় নামক একটি পরিখাবেষ্টিত দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর সময় এই মন্দির সোনায় আবৃত করার কাজ শুরু করেন। 
		
		
	 বর্তমান মন্দিরটি  স্বর্ণমন্দিরটি মোট 
		সাড়ে চার বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। শিখধর্মাবলম্বী ছাড়াও সারা পৃথিবী থেকে 
		পর্যটক এই স্বর্ণমন্দিরটি দেখতে আসেন। প্রতিদিন এখানে প্রায় ৯০ হাজার 
		মানুষের খাবারের আয়োজন করা হয়। এই মন্দিরটি ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। কথিত আছে 
		এই মন্দিরে প্রণামী সংগ্রহ হয় প্রতি মাসে প্রায় ৮০ কোটি রুপি।  
		শিখধর্মাবলম্বীর প্রত্যেক যুবককে রণবিদ্যা, আত্মরক্ষা কৌশলবিদ্যা ও 
		যুদ্ধবিদ্যা রপ্ত করতে হয় প্রথা হিসেবে। আদি যুদ্ধের এই কলাকৌশল শিক্ষা 
		দেয়ার জন্য রয়েছে একটি বিশাল মাঠ আছে। মূলত এখান থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত 
		রণকৌশলীরা এই মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত। এখনো নিরাপত্তা 
		রক্ষীরা তীর, ধনু, কাতরা, বল্লম, খাজা, খঞ্জনী জাতীয় অস্ত্র ব্যবহার করে।
		 
		
 এই 
		মন্দিরে প্রবেশের আগে নারী পুরুষ নির্বিশেষে মাথা আবৃত করতে হয়। অমৃত সরোবরের যার চারদিকে মার্বেলে মোড়া রাস্তা 
রয়েছে। অনেকেই সরোবরের 
		জল পবিত্র মনে করে মাথায় স্পর্শ করেন, অনেকে স্নানও করেন। প্রবেশপথ 
		সরোবরের যেদিকে হরমন্দির সাহিব তার বিপরীত দিকে অবস্থিত। 
তাই একদিক থেকে যাত্রা শুরু করে হরমন্দির সাহিব দর্শন করে অপর দিক দিয়ে 
বেরোলে অমৃত সরোবরকে পরিক্রমা করা হয়ে যায়।