অর্জন দাশ

কাগজে অঙ্কিত, অস্বচ্ছ জলরঙ
দ্য গভর্নমেন্ট মিউজিয়াম, চণ্ডীগড়

১৫৬৩-১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দ
শিখ ধর্মের পঞ্চম ধর্মগুরু।

১৫৩৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর, পাঞ্ঝাবের লাহোরের মাণ্ডিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন গুরু রাম দাশ । মায়ের নাম মাতা ভানি (গুরু অমর দাশের কন্যা)।  স্ত্রীর নাম ছিল গঙ্গা। পুত্রের নাম হরগোবিন্দ।

তিনি অমৃতসর নগরের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন। এছাড়া তিনি বার্ন তরান এবং কার্তারপুর নগরের গোড়াপত্তন করেন। তিনি তাঁর পূর্ববর্তী পণ্ডিতদের রচিত শিখ ধরধ্ম বিষয়ক  গ্রন্থাবলি সম্পাদনা করে। এছাড়া শিখ ধর্মের সাথে সমঞ্জস্যপূর্ণ এমন শিক্ষামূলক গ্রন্থাদির সম্পদনা করে একটি সংকলন তৈরি করেন। এর মাধ্যমে 'গ্রন্থ সাহিব' শিখ ধর্মের আদশ ধর্মগ্রন্থে পরিণত হয়েছিল।

শিখ গুরুদের আদর্শ অনুসারে শিক্ষা দান এব প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি মসন্দ নামক একটি প্রতিনিধি তৈরি করেন। শিখদের উপার্জনের একাংশ এবং দান এবং স্বেচ্ছাসেবী হওয়ার জন্য একটি সমিতি তৈরি করেন। এঁর নাম দেওয়া হয়েছিল দফভন্দ। তিনি নানকের, প্রবর্তিত লঙ্গর পদ্ধতিকে ধর্মীয় কর্তব্য হিসেবে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান পরিণত করেন।

১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ মে-কে তাঁর হত্যা দিবস হিসেবে মান্য করা হয়। অর্জুন দাশের হত্যাকাণ্ড নিয়ে নানা ধরনের গল্প প্রচলিত আছে। যেমন-

'বিপাশা নদীর তীরে গোবিন্দওয়ালে অর্জন নামে এক হিন্দু বাস করে। সে একজন আধ্যাত্মিক শিক্ষক হওয়ার ভাব দেখায়। এভাবেই সে অনেক সরল-মনস্ক ভারতীয় এবং কিছু অজ্ঞান মূর্খ মুসলমানকে নিজের ভক্ত হিসেবে পেয়েছে এবং নিজেকে সন্ত বলে দাবি করছে। তারা তাকে গুরু বলে। আশেপাশের অনেক মূর্খ তাকে সাহায্য করে এবং তাকেই পুরোপুরি মেনে চলে। তিন বা চার প্রজন্ম ধরে এরা একই ব্যবসা চালিয়ে আসছে। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছি হয় এই ভণ্ড ব্যবসা নির্মূল করা দরকার অথবা একে ইসলামের ছত্রছায়ায় আনা দরকার। ঘটনাচক্রে খুসরো যখন সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন, এই সামান্য ব্যক্তিটি তাঁকে সম্মান জানাতে চান। খুসরো যখন তার বাসভবনে যান, [অর্জন] বেরিয়ে আসে এবং [তাঁর সঙ্গে] সাক্ষাৎ করে। এখান ওখান থেকে সংগৃহীত কিছু মৌলিক ধর্মোপদেশ দেওয়ার পর, লোকটি তাঁর কপালে গেরুয়া রঙের তিলক পরিয়ে দেয়। এটিকে কাশকা বলে। হিন্দুরা এটিকে সৌভাগ্যদায়ক চিহ্ন মনে করে। এই কথা আমাকে জানানো হলে, আমি বুঝতে পারি, লোকটা কী পরিমাণে ভণ্ড। আমি আদেশ করি, তাকে যেন আমার কাছে আনা হয়। আমি তার এবং তার সন্তানদের বাড়ি ও বাসস্থানগুলি মুর্তাজা খানকে উপহার দি। আমি আদেশ করি, তার বিষয়সম্পত্তি যেন বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।' [সিয়াসাত ও ইয়াসা রাসানান্দ]।

১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গীরের আদেশে তাঁকে প্রথমে বন্দী করে লাহোর জেলে রাখা হয় এবং সেখানে ৩০ মে শেখ ফরিস বুখারি  তাঁকে হত্যা করেন।  কোনো কোনো মতে তাঁকে পাঞ্জাবের ইরাবতী নদীতে ডুবিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। এই কারণে শিখরা তাঁকে শহিদ গুরু অর্জন দাশ নামে অভিহিত করে থাকে।  কথিত আছে, তাঁকে গ্রেফতার করার পর, শিখরা প্রচুর অর্থের বিনিময়ে তাঁর মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সম্রাট তা প্রত্যাখ্যান করে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন।

অর্জন দাশের মৃত্যর পর গুরুপদ লাভ করেছিলেন তাঁর পুত্র হরগোবিন্দ