চোল
প্রাচীন ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের একটি রাজবংশ এবং রাজ্যের নাম। ‌‌

খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতাব্দী থেকে প্রথম খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য সাম্রাজ্যগুলো ছিল পাণ্ড্য, চের ও চোল। সে সময়ে চোল রাজ্যের সীমা পেনার ও ভেলার নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ছিল। বর্তমানে এই অঞ্চলকে তাঞ্জোর ও ত্রিচিনপল্লী নামে অভিহিত হয়ে থাকে। মহাবংশ নামক পালি গ্রন্থ থেকে জানা যায়- 'বুদ্ধের নির্বাণের ২৯৬ বর্ষ পরে চোলরাজা সিংহল অধিকার  করেছিল'। অশোকের শিলালিপিতর চোল রাজ্যের উল্লেখ আছে। টলেমির রচিত 'পরিপ্লাস-অফ-দি-ইরিথিয়ান-সী' গ্রন্থে চোলদের সম্পর্কে মূল্যবান তথ্যাদি পাওয়া যায়। সবমিলিয়ে বলা যায় খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে চোল রাজ্য স্থাপিত হয়েছিল। খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে তামিল জনগোষ্ঠী দক্ষিণ ভারতে চোলরাজ্য একটি বিশিষ্ট স্থান লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল।

সম্ভবত খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাবব্দীতে চোলরাজ কারিকল রাজ্যকে সুসংহত অবস্থায় আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর সময় পার্শ্ববর্তী পাণ্ড্য চের রাজ্য চোলরাজ্য আক্রমণ করে। কারিকল সাফল্যের সে আক্রমণ প্রতিরোধ করেছিলেন। এছাড়া তিনি সিংহল সাফল্যের আক্রমণ সম্পন্ন করেছিলেন। এই সময় তাঁর রাজ্যের রাজধানী ছিল কাবেরী পদিনাম। কারিকল ও তাঁর পুত্র চোল রাজ্যকে শক্তিশালী রাজ্যে পরিণত করলেও তাঁর পৌত্র নেদুমুদুকিল্লার শাসনামলে রাজশক্তি দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এই সুযোগে জলদস্যুরা ক্রমাগত চোলরাজ্যে হানা দিতে থাকে। শেষ পর্যন্ত জলদস্যুরা রাজধানী কাবেরী পদিনাম আক্রমণ করে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। এই সুযোগে দাক্ষিণ্যাতে পল্লব, পাণ্ড্য চের রাজ্য শক্তিশালী হয়ে উঠে। এরা বিভিন্ন সময় চোলরাজ্য আক্রমণ করে পুরো চোলরাজ্যকে ধ্বংস করে দেয়। এর মধ্য চোলারাজ্যের প্রথম দশার পরিসমাপ্তি ঘটে। খ্রিষ্টীয় তৃতীয় শতাব্দী থেকে অষ্টম শতাব্দী পর্যন্ত চোল রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চল ুক্য পল্লবদের অধীনে চলে যায়। খ্রিষ্টীয় ৫৬৬ থেকে ৫৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে বাতাপী  ুক্য রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা
কীর্তিবর্মণ প্রথম চোল রাজ্যের একটি অংশ দখল করে নেন।

খ্রিষ্টীয় নবম শতাব্দীতে পল্লব রাজ্যের পতন শুরু হলে, চোল রাজশক্তির পুনরুত্থান ঘটে। চোল রাজা বিজয়ালয় ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে পাণ্ড্যদের কাছ থেকে তাঞ্জোর দখল করেন এবং তাঞ্জোরে তাঁর রাজধানী স্থাপন করেন। এই সময় তিনি কাবেরী ও কোলেরুন উপত্যাকায় আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হন। ৮৭১ খ্রিষ্টাব্দে (মতান্তরে ৮০ খ্রিষ্টাব্দ) বিজয়ালয়ের পুত্র আদিত্য (প্রথম) সিংহাসন লাভ করেন। আঞ্চলিক আধিপত্য বজায় রাখার জন্য তিনি পল্লবরাজ্যের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এই যুদ্ধকে বলা হয় শ্রীপুরাবিয়ামের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আদিত্য পল্লবরাজাকে সহায়তা করেন। এই যুদ্ধে পল্লবরাজ জয়ী হলে, চোলরাজা আদিত্য আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন। পরে সুযোগ বুঝে পল্লবরাজ্য আক্রমণ করেন। এই যুদ্ধে পল্লবরাজ 'অপরাজিত' পরাজিত ও নিহত হন। এরপর আদিত্য পল্লবরাজ্য অধিকার করে সার্বভৌম রাজ্য স্থাপন করেন। এরপর তিনি কঙ্গু প্রদেশ ও পশ্চিম গঙ্গ জয় করেন। শেষপর্যন্ত তিনি, মাদ্রাজ থেকে কাবেরী উপত্যাকা পর্যন্ত রাজ্য বিস্তারে সক্ষম হন।

৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে আদিত্য (প্রথম) এর পুত্র পরাক্রান্ত (প্রথম) সিংহাসন লাভ করেন। তিনি প্রথমে পাণ্ড্য রাজা রাজসিংহকে পরাস্ত করে পাণ্ড্য রাজ্য দখল করেন। রাজসিংহ তাঁর বন্ধু সিংহলের রাজার কাছে আশ্রয় নেন। পরে পরাক্রান্ত (প্রথম) সিংহল আক্রমণ করে উভয় রাজাকে পরাস্ত করেন। এই সময় মাদুরাই এবং পাণ্ড্যরাজ্যের একাংশ চোলদের দখলে চলে যায়।

এরপর বাণ ও বৈদুম্বদের পরাস্ত করেন এবং মাদুরাইকোণ্ড উপাধি গ্রহণ করেন। এরপর বারকুট রাজ্যের কৃষ্ণকে (দ্বিতীয়) বল্লালের যুদ্ধে পরাজিত করে পেন্নার নদী পর্যন্ত রাজ্য বিস্তার করেন। রাজা পরাক্রান্তের এই শক্তিবৃদ্ধিতে বারকুটে রাজা অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েন। বারকুটের রাজা কৃষ্ণ (তৃতীয়) গঙ্গ রাজার সাথে জোট বেঁধে পরাক্রান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। উভয় শক্তি ৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে তাক্কোলামের যুদ্ধে চোল বাহিনীকে পরাজিত করেন। এর ফলে তোণ্ডামণ্ডলমে চোল শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। ৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে পরাক্রান্তের মৃত্যুর পর রাষ্ট্রকুটরা তোণ্ডামণ্ডলম করে নেয়। এছাড়া পাণ্ড্যরা চোলরাজ্যের একাংশ দখল করে নেয়। ধীরে ধীরে চোল রাজ্য ক্ষয়িষ্ণু রাজ্যে পরিণত হতে থাকে।

এই অবস্থায় চোল রাজা সুন্দর ভেঙে পড়া দুর্বল চোল সেনাবাহিনীকে শক্তিশালি করেন। তিনি প্রথমে পাণ্ড্য রাজা বীরকে পরাজিত করেন এবং তোণ্ডালম থেকে রাষ্ট্রকুটদের বিতারিত করেন। সুন্দরের মৃত্যুর পর ৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর পুত্র উত্তম সিংহাসনে বসেন। উত্তম কিছুদিন রাজত্ব করার পর, ৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে চোল সিংহাসনে বসেন সুন্দরের পুত্র রাজরাজ। 

রাজরাজ সিংহাসন লাভের পর প্রথমে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। এর উদ্দেশ্যে সমুদ্রের উপর আধিপত্য বিস্তার করা। সে সময়ে আরব বণিকরা মালাবার বন্দরে আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হয়েছিল। এদের সহায়তা করেছিল কেরালার চের শাসকেরা। আরব বণিকরা এই সুযোগ নিয়ে চীন ও মালাবারের একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার লাভ করেছিল। রাজরাজ তাঁর শক্তিশালী নৌবাহিনী দিয়ে প্রথম চের-নৌবাহিনীকে ধ্বংস করে দেন এবং কেরালার চের বন্দরগুলো দখল করে নেন। যুদ্ধের শুরুতে চোল সৈন্যরা ত্রিবেন্দ্রমের কাছে চেরদের পরাজিত করেন। পরে ধীরে ধীরে অন্যান্য অঞ্চল দখল করতে থাকেন। ফলে আরব বণিকরা অবাধ বাণিজ্য সুবিধা হারায়। এরপর রাজরাজের সেনাবাহিনী পাণ্ড্যরাজ্য আক্রমণ করে এবং মাদুরাই দখল করে নেয়। এই সময় পাণ্ড্য রাজা অমরভুজঙ্গ চোল সৈন্যদের হাতে বন্দী হন। এরপর চোল সৈন্যরা উদ্‌গাই দুর্গ দখল করে। এর ফলে কেরালা চোল রাজ্য অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। কেরালা জয় করার পর, চোল নৌবাহিনী সিংহল আক্রমণ করে এবং সিংহলের রাজা মহেন্দ্রকে (পঞ্চম) পরাস্ত করে উত্তরাঞ্চল দখল করে নেয়। এই সময় এরা অনুরাধাপুরে অধিকৃত সিংহলের রাজধানী স্থাপন করে। রাজরাজ এই বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য একটি পাথরের শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
 

সিংহল জয়ের পর তুঙ্গভদ্রা অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হন। ৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের দিকে রাষ্ট্রকুট শক্তির পতন হয়। ফলে গঙ্গরাজ্য মিত্রহীন হয়ে পড়ে। এই সুযোগে রাজরাজ গঙ্গ রাজ্য (মহীশূর) দখল করে নেন। এরপর তিনি চালুক্য রাজ্যের দিকে নজর দেন।
 এরপর রাজরাজ বেঙ্গীর চালুক্য-রাজ্য আক্রমণ করেন এবং রাজধানী বেঙ্গী অধিকার করেন। তবে বেঙ্গীর পরাজিত চালুক্য রাজা বিমলাদিত্যকে সিংহাসন ফিরিয়ে দেন এবং চোল রাজ্যের অনুগত রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেন। বেঙ্গীর উপর আধিপত্য সুদৃঢ় করার জন্য তিনি নিজ কন্যা কুন্দভাকের সাথে বিমলাদিত্যের বিবাহ দেন। বেঙ্গীর এই পরিণতি দেখে পশ্চিম চালুক্য-রাজ সত্যাশ্রয় ক্ষুব্ধ হন এবং ১০০৬ খ্রিষ্টাব্দে সত্যাশ্রয় বেঙ্গী আক্রমণ করেন। রাজরাজ তাঁর পুত্র রাজেন্দ্রকে পশ্চিম চালুক্য আক্রমণের আদেশ দেন। যুবরাজ রাজেন্দ্র রায়চুর দোয়াব অঞ্চল দখল করেন এবং বেঙ্গী থেকে সত্যাশ্রয়কে বিতারিত করেন। এই সময় রাজরাজ তাঁর শক্তিশালী নৌবাহিনীর সাহায্যে লাক্ষাদ্বীপ ও মালদ্বীপ অধিকার করেন।

১০১২ খ্রিষ্টাব্দে রাজরাজের মৃত্যুর পর, তাঁর পুত্র রাজেন্দ্র (প্রথম) চোলরাজ্যের সিংহাসনে বসেন। তাঁর পিতার আমলে সিংহল দখল করলে, সেখানকার দখল স্থায়িত্ব লাভ করতে ব্যর্থ হয়। তাই রাজেন্দ্র সিংহলে সামরিক অভিযান চালাতে হয়। এই অভিযানে চোল বাহিনী সিংহলের রাজা মহেন্দ্রকে পরাজিত ও বন্দী করে। এর ফলে সিংহলের দক্ষিণভাগ চোলরাজ্যের অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। রাজেন্দ্র সিংহলে শিব ও বিষ্ণু মন্দির তৈরি করেন। এছাড়া তাঁর পিতার আমলে কেরালা ও পাণ্ড্য রাজ্য চোলদের অধিকারে এসেছিল। রাজেন্দ্র এই দখল সুদৃঢ় করার জন্য উদগাই দুর্গ অধিকার করেন। তাঁর এক পুত্রকে 'চোল-পাণ্ড্য' উপাধি দিয়ে কেরালার শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। তিনি পশ্চিম চালুক্য রাজ্য নতুন করে আক্রমণ করেন এবং কৃষ্ণা-গোদাবরী অঞ্চলে ক্ষমতা সুদৃঢ় করেন। ১০১৮ খ্রিষ্টাব্দে চোলদের অধিকৃত বেঙ্গী রাজ্যের রাজা বিক্রামাদিত্য মৃত্যুবরণ করেন। এই সময় বেঙ্গীর বিধবা মহিষী কুন্দভাক্ তাঁর পুত্র রাজরাজকে (দ্বিতীয়) সিংহাসনে বসানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু চালুক্য রাজপরিবারের জয়সিংহ রাজরাজের বৈমাত্র্যয় ভাই বিজয়াদিত্যকে সিংহাসনে বসানোর চেষ্টা করেন। রাজসিংহ রাজেন্দ্রকে হত্যা করার জন্য বেলারি জেলা অধিকার করে রাজেন্দ্রকে হত্যার চেষ্টা করলে, রাজেন্দ্র তাঁর সেনাবাহিনী দুই ভাগ করে, একভাগ বাতাপি আক্রমণের জন্য প্রেরণ করেন। এই বাহিনী জয়সিংহকে পরাজিত করে, মান্যখিটা অধিকার করে। অপর সেনাদলকে পাঠান বেঙ্গীতে এবং বিজয়াদিত্যকে পরাজিত করে বেঙ্গীর সিংহাসনে রাজারাজকে বসানো হয়।  পশ্চিম চালুক্যরাজ জয়সিংহের পর, সোমশ্বর চালুক্য বিজয়াদিত্যকে পুনরায় সিংহাসনে বসানোর উদ্যোগ নেন এবং বেঙ্গী আক্রমণ করেন। তবে যুদ্ধে কোনো নিষ্পত্তিতে না পৌঁছারনোর জন্য রাজারাজ বেঙ্গীর সিংহাসনে বহাল থেকে যান।

 

১০৪৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজেন্দ্র (প্রথম) মৃত্যুবরণ করলে, রাজরাজ (দ্বিতীয়) চোলরাজ্যের সিংহাসন লাভ করেন। রাজরাজ সিংহাসন দখলের পর চালুক্যরা চোলরাজ্য আক্রমণ করে। অন্যদিকে পাণ্ড্য ও সিংহল-রাজ্যে বিদ্রোহ দেখা দেয়। রাজরাজ পাণ্ড্য ও সিংহল-রাজ্যের বিদ্রোহ দমন করেন। কিন্তু তুন্দ্রাভদ্রা অঞ্চলে চালুক্যদের সাথে চোলদের সংঘাত চলমান অবস্থায় থেকে যায়। রাজরাজ ধানাকটক সোমেশ্বরের বাহিনীকে পরাজিত করে। ১০৫৪ খ্রিষ্টাব্দে কোপ্‌পামের যুদ্ধে রাজরাজ আহত হন এবং পরে এই আঘাত থেকে তাঁর মৃত্যু হয়। এই সময় রাজেন্দ্র (দ্বিতীয়) সিংহাসন লাভ করেন এবং যুদ্ধা চালিয়ে যেতে থাকেন এবং শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করেন। এই যুদ্ধে জয়লাভের পর চালুক্যরাজ সোমেশ্বর দুইবার বেঙ্গী ও গঙ্গাবদি আক্রমণ করেন। কিন্তু জয়লাভে ব্যর্থ হন। কুড়ালির যুদ্ধে রাজেন্দ্র চালুক্যবাহিনীকে পরাজিত করেন। তিনি নিজ কন্যাকে পূর্ব চালুক্য রাজের সাথে বিবাহ দেন। এর ফলে পূর্ব চালুক্য চোল রাজ্যের সাথে যুক্ত হয়ে যায়।

১০৬২ খ্রিষ্টাব্দে রাজেন্দ্রের (দ্বিতীয়) মৃত্যুর পর সিংহাসন লাভ করেন বীররাজেন্দ্র। বীরাজেন্দ্রের শাসনামলেও চোল-পশ্চিম চালুক্যের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত ছিল। ১০৬৬ খ্রিষ্টাব্দে চালুক্যরাজ সোমেশ্বর বেঙ্গী আক্রমণ করে। তুন্দ্রভদ্রায় উভয় পক্ষের যুদ্ধ হয় এবং যথারীতি চালুক্য বাহিনী পরাজিত হয়। এরপর সোমেশ্বর তাঁর বাহিনী পুনর্গঠনের চেষ্টা করে। বীররাজেন্দ্র বেজওয়াদার যুদ্ধে তাঁকে পরাজিত করে। এই সময় তাঁর করদ চের রাজ্য স্বাধীন হওয়ার চেষ্টা করলে, তিনি কঠোর হস্তে তা দমন করেন।

১০৭০ খ্রিষ্টাব্দে বীররাজেন্দ্র মৃত্যুবরণ করেন। সিংহাসন লাভ করেন অধিরাজেন্দ্র। অধিরাজেন্দ্র অত্যাচারী রাজা হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেন এবং আততায়ীর হাতে মৃত্যুবরণ করেন। এর সিংহাসন লাভ করেন কুলোতুঙ্গ।

১০৭০ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে কুলোতুঙ্গ সিংহাসনে আরোহণ করেছিলেন। এঁর শাসনামলে পাণ্ড্য চেররা বিদ্রোহ করলে, কুলোতুঙ্গ তা কঠোর হাতে দমন করেছিলেন।  ১১২০ খ্রিষ্টাব্দে কুলোতুঙ্গ মৃত্যুবরণ করলে, রাজরাজ (দ্বিতীয়) সিংহাসন লাভ করেন। তিনি কোনো মতে রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলেও ধীরে ধীরে রাজশক্তি দুর্বল হতে থাকে। ১১৭৩ খ্রিষ্টাব্দে রাজরাজ (দ্বিতীয়) মৃত্যুবরণ করলে, রাজত্ব লাভ করেন রাজাধিরাজ (দ্বিতীয়)। ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজাধিরাজ (দ্বিতীয়) -এর মৃ্ত্যুর পর রাজাধিরাজ (তৃতীয়) সিংহাসন লাভ করেন। এই সময় পাণ্ড্যরা অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠে। এরা চোল রাজ্য আক্রমণ করে তাঞ্জোর দখল করে নেয়। এরপর চোল রাজ্য এত দুর্বল হয়ে পড়ে যে, এরা পাণ্ড্যদের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। রাজাধিরাজ (তৃতীয়) কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করে রাজ্যের কিছু অংশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৩৫৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজাধিরাজ (তৃতীয়) -এর মৃত্যুর পর চোল রাজ্য বিলুপ্ত হয়ে যায়।