মেঘালয়
ভারত
প্রজাতন্ত্রের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রদেশ।
ভৌগোলিক
স্থানাঙ্ক : ২৫°৫৭′উত্তর
৯১°৮৮′পূর্ব।
সংস্কৃত মেঘালয় শব্দের অর্থ হলো- মেঘের নিবাস (মেঘের আলয়)।
এই রাজ্যটি লম্বায় প্রায় ৩০০ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ১০০ কিলোমিটার। এই রাজ্যের
রাজধানীর নাম শিলং।
ইতিহাস
পূর্বে
মেঘালয়
আসামের অংশ ছিল। ঊনবিংশ শতকে এই অঞ্চলে খাচি, গারো এবং জয়ন্তীয়া অঞ্চলে পৃথক
রাজ্য ছিল। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে এই তিনটি অঞ্চলকে
আসামের সাথে যুক্ত করা হয়। তারপরেই
এই অঞ্চলের কিছু অংশ স্বাধীন রাজ্যের মতোই ছিল। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড কার্জন
বঙ্গভঙ্গ করার সময় মেঘালয়কে পূর্ব বঙ্গ এবং
আসামের সাথে যুক্ত করা হয়েছিল। পরে এই
আইন বাতিল হলে, মেঘালয়
আসামের অংশ হিসেবে থেকে যায়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে
ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের সময় মেঘালয় আসামের অংশ হিসেবে ভারতের অংশে পড়ে। ১৯৭o
খ্রিষ্টাব্দের
২ এপ্রিল, মেঘালয়কে
স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়।
এই সময় ৩৭টি সংসসদীয় আসনসহ মেঘালয়ের বিধানসভা গঠিত হয়। ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ভারতীয়
সংসদে
"North-Eastern Areas
(Reorganization) Act, 1971"
পাশ হয়। সেই মোতাবেক ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২১ শে জানুয়ারি খাচি, গারো আর জয়ন্তিয়া
জেলা নিয়ে নতুন মেঘালয় রাজ্য গঠিত হয়।
মেঘালয়ের
সীমানা
এই রাজ্যের উত্তর ও উত্তরপূর্বে ভারতের
আসাম রাজ্য এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে
বাংলাদেশ।
এটি একটি স্থলবেষ্টিত রাজ্য। এর মোট আয়তন ২২,৪২৯ বর্গ কিলোমিটার।
মেঘালয়ের ভূ-প্রকৃতি
এই রাজ্যটি মূলত পার্বত্য অঞ্চল হিসেবেই পরিচিত। এই রয়েছে একটি মালভূমি। এর
সর্বনিম্ন উচ্চতা ১৫০ মিটার আর সর্বোচ্চ উচ্চতা ১৯৬১ মিটার। এই স্থানে রয়েছে ১৯৬১
মিটার উচ্চ শিলং শৃঙ্গ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ
গারো পাহাড়ের শৃঙ্গ হলো নকরেক শৃঙ্গ। এর উচ্চতা ১৫১৫
মিটার।
এই মালভূমির মধ্যভাগে রয়েছে খাচি অঞ্চল আর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত জয়ন্তিয়া অঞ্চল।
এছাড়া এর দক্ষিণভাগ জুড়ে রয়েছে গারো পার্বত্য অঞ্চল। পুরো অঞ্চল জুড়ে রয়েছে প্রচুর
গাছপালা। অত্যধিক বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্টি হয়েছে ছোটো বড় পাহাড়ি নদী আর ঝর্না।
মেঘালয়ের গারো পার্বত্য অঞ্চলের উল্লেখযোগ্য নদীগুলো হলো‒
ডরিং, সান্দা, বন্দরা, ভোগাই, ডারেং, সিমসাং, নিতাই, ভূপাই। জয়ন্তিয়া অঞ্চলের
উল্লেখযোগ্য নদীগুলো হলো‒
উমখির, ডিগারু উমিয়াম, মাউপা, বরাপানী, মাইনৎডু আর মাইংত। খাচি অঞ্চলের দক্ষিণাংশে
রয়েছে কেইবাটাও জলপ্রপাত।
মেঘালয়ের জনসাধারণ
মেঘালয়ের মোট জনসংখ্যা ২৯,৬৪,০০৭ (২০১৪ খ্রিষ্টাব্দ)। মেঘালয়ের জনসংখ্যার সিংহভাগ
হলো খাচি জনগোষ্ঠীর। এছাড়া অন্যান্য জগনগোষ্ঠীগুলো হলো‒
গারো, জয়ন্তিয়া, কোচ, বড়ো, হাজং, ডিমাছা, কুকি, লাখার, মিকির, রাভা, নেপালি আর
হমার। জাতি সত্তার বিচারে পূর্ব খাচি এবং জয়ন্তিয়া পাহাড়ের রয়েছে নেপালি লোক। এদের
প্রধান জীবিকা কৃষিকাজ। এই অঞ্চলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত গুর্খা সৈন্যরা
বাস করে। শিলঙের নেপালিরা ব্যবসার সাথে জড়িত।
মেঘালয়ের প্রায় ৭০.২৫% লোক খ্রিষ্টান ধর্মের। ১৩.২৭% লোক হিন্দু, ১১.৫২%
প্রকৃতি পূজারী, ৪.২৭% মুসলমান এবং ০.৭১% শিখ, জৈন, বৌদ্ধ।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হাজংদের ৯৭.২৩% হিন্দু, কিন্তু গারোদের প্রায় সকলেই খ্রিষ্টান।
মেঘালয়ের ভাষা
মেঘালয়ের প্রধান ভাষা খাচি। প্রায় ৯ লক্ষ লোক এই ভাষায় কথা বলে। এই ভাষার কোনো
লিপি নাই।
মেঘালয়ের প্রশাসনিক ব্যবস্থা
প্রশাসনিক কাজের সুবিধার জন্য মেঘালয়কে ১১টি জেলায় বিভক্ত করা
হয়েছে। এগুলি হলো‒
জয়ন্তিয়া অঞ্চল
খাচি অঞ্চল
গারো অঞ্চল
শিলং
(Shillong)
:
মেঘালয়ের রাজধানী। ১,৪৯৬ মিটার উচ্চতায় নগরটি অবস্থিত। একে এক সময় বলা হতো
স্কট্ল্যান্ড অব দ্য ইস্ট। এই শিলং পাহাড়কে কেন্দ্র করেই রবীন্দ্রনাথ রচনা
করেছিলেন তাঁর 'শেষের কবিতা'। রবীন্দ্রনাথের বসত বাড়ি 'মালঞ্চ' এখন সরকারি আর্ট ও
ক্র্যাফ্ট্ সেন্টার। আর ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের স্মৃতি বিজরিত বাড়িটি এখন
সার্কিট হাউস। এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম গলফ ক্লাবটিও এখানেই অবস্থিত। শহরের
প্রাণকেন্দ্রে কৃত্রিম হ্রদ সবুজের ছাওয়া ওয়ার্ড লেক। আর রয়েছে উদ্ভিদ উদ্যান,
রাজভবন, প্রজাপতি মিউজিয়াম, উইলিয়মসন সংমা স্টেট মিউজিয়াম, মেঘালয় কটেজ
ইন্ডাস্ট্রিজ ও সেন্ট্রাল লাইব্রেরি, ডন বসকো ক্যাথিড্রাল।
শিলং-এর অন্যতম আর্কষণ শহরের আশেপাশের অজস্র ঝর্ণা। এরমধ্যে শিলং-চেরাপুঞ্জি পথে
এলিফ্যান্ট জলপ্রপাত, শহর থেকে ৫কিমি দূরে বিডন ও বিশপ জলপ্রপাত, দেড় কিমি দূরে
ক্রিনোলাইন জলপ্রপাত প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। শিলং থেকে গুয়াহাটির পথে ১৬কিমি দূরে
বিশালাকার হ্রদ উমিয়াম। স্থানীয়দের কাছে বড়াপানি নামেও পরিচিত। শহর থেকে ২২কিমি
দূরে বিরল প্রজাতির অর্কিডের রাজ্য।
চেরাপুঞ্জি
(Cherrapunji)
শিলং থেকে ৫৪কিমি দূরে ১,৩০০ মিটার
উচ্চতায় চেরাপুঞ্জি অবস্থিত। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতও হয় এই চেরাপুঞ্জিতে
। কমলালেবুর বাগান, মধু আর চুনাপাথরের গুহার জন্য চেরাপুঞ্জি বিখ্যাত।
চেরাপুঞ্জির কাছে খাসি পাহাড়ের ঢালে অবস্থিত মৌসিনরামের খ্যাতিও বৃষ্টির জন্য।
মৌসিনরামের আরণ্যক পরিবেশে চুনাপাথরের গুহাটিও দেখার মতো। চেরাপুঞ্জি থেকে ২কিমি
দূরে মৌসমাই জলপ্রপাত। প্রায় দু'হাজার ফুট ওপর থেকে রামধনু রং ছড়িয়ে ঝাঁপিয়ে
পড়ছে জলধারা। মৌসমাই-এর কাছেই আর এক আকর্ষণীয় জলপ্রপাত নোহ-কালিকাই।
সূত্র :
https://meghalaya.gov.in:8443/megportal/
http://www.amaderchhuti.com/info/meghalaya.php