ভাগীরথী
এই নামে ভারতে দুটি উল্লেখযোগ্য নদী রয়েছে। ভারতীয় পৌরাণিক কাহিনি মতে সগর রাজার বংশধর তথা সগরবংশীয় রাজা দিলীপের পুত্র রাজা ভগীরথ মর্ত্যলোকে গঙ্গা নদীর পথপ্রদর্শক ছিলেন বলে গঙ্গার অপর নাম ভাগীরথী।

১. তিব্বত সীমান্তের নিকটবর্তী, ভারতের উত্তরাখণ্ড প্রদেশের উত্তরাখণ্ড জেলার শিবলিঙ্গ শৃঙ্গের পাদদেশে অবস্থিতি একটি প্রসিদ্ধ গঙ্গোত্রি হিমবাহ থেকে এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে। এই হিমবাহ থেকে গলিত জলরাশি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৩২০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই হিমবাহ থেকে গোমুখ নামক জলনিঃসরণ পথ ধরে ভাগরথী নামে প্রবাহিত হয়েছে। ভাগীরথীর উৎসমুখের উচ্চতা ৩,৮৯২ মি (১২,৭৬৯ ফু)। এই নদীটি পরে উত্তরাখণ্ডের দেবপ্রয়াগে অলকানন্দের সাথে মিলিত হয়েছে। পরে এই মিলিত শ্রোত গঙ্গা নামে প্রবাহিত হয়েছে। 

২. গঙ্গার মূল স্রোতধারা পশ্চিমবঙ্গের সমভূমিতে প্রবেশ করেছে, রাজমহল পাহাড়ের উত্তর-পশ্চিমে তেলিগড় ও সকরিগলির সংকীর্ণ গিরিপথটি ঘেঁষে মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুর মহকুমায়। এরপর ধুলিয়ান শহরের কাছে গঙ্গা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এর ভিতরে বাংলাদেশের রাজাশাহী জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত শাখার নাম পদ্মা। পক্ষান্তরে মুর্শিদাবাদের ভিতর দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত স্রোতধারাটি ভাগীরথী নামে প্রবাহিত হয়েছে।

ভাগীরথী মুর্শিদাবাদ জেলাকে দুটি ভাগে বিভাজিত করেছে। এর পূর্বভাগ  বাগড়ি এবং পশ্চিমভাগ রাঢ় নামে পরিচিত। মুর্শিদাবাদ থেকে নবদ্বীপ পর্যন্ত এই নদীর নাম ভাগীরথী। এরপর নবদ্বীপ থেকে এই নদী হুগলী নামে দক্ষিণ দিকে
হুগলি জেলা এবং উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। কলকাতার ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই নদীর সাথে দামোদর নদ মিলিত হয়ে হুগলী নামেই প্রবাহিত হয়েছে।এই নদীটি হালিশহর, চুঁচুড়া, শ্রীরামপুর, কামারহাটি ইত্যাদি শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে  কলকাতা শহরের দক্ষিণ-পশ্চিমে উপকণ্ঠে পৌঁছেছে। এরপর কলকাতা এবং হাওড়ার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সাগরদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে গঙ্গাসাগরের মোহনা সৃষ্টি করেছে। এরপর সাগর মোহনায় প্রায় ২০ মাইল  চওড়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে।