বাগদাদ
Baghdad
আরবি بغداد

টাইগ্রিস (দজলা) নদীর তীরে অবস্থিত আধুনিক ইরাকের রাজধানী ও প্রধান শহর।

স্থানাঙ্ক: ৩৩°২০ উত্তর ও ৪৪°২৩পূর
্ব।
আয়তন
:  মোট ২০৪.২ কিমি২ (৭৮.৮ বর্গমাইল) উচ্চতা: ৩৪ মিটার (১১২ ফুট)
জনসংখ্যা
: আনুমানিক ৬৬,৪৩,০০০ (২০১৮)

আরবীয় মান সময়
: ইউটিসি+৩
ডাক সঙ্কেত: ১০০০১ থেকে ১০০৯০


প্রাচীন মেসোপটেমিয়া সভ্যতার অংশ হিসেবে টাইগ্রিস নদীর তীরবর্তী উর্বর ভূমিতে এই অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিল। খ্রিষ্টীয় ৮ম শতাব্দীতে এখানে পারশ্যবাসীদের জনবসতি গড়ে উঠে। ফসল সমৃদ্ধ অঞ্চল এবং নদী পথে ব্যবসার সুবাদে, এই অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। অনেকে মনে করেন, ফার্‌সি বাঘ (ঈশ্বর) এবং দাদ (প্রদত্ত) এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছিল বাঘদাদ (
Baghdad)। সে সময়ে এর অর্থ ছিল 'ঈশ্বর প্রদত্ত'। বাংলা ভাষায় এই শহরটি নাম বাগদাদ।

প্রথম মুসলিম রাজবংশ উমাইয়াদের পতনের পর, বিজয়ী আব্বাসীয় শাসকরা নিজস্ব রাজধানী স্থাপন করতে মনস্থির করে। এই সূত্রে ৭৬২ খ্রিষ্টাব্দে আব্বাসীয় খলিফা আবু জাফর আল মনসুর,তার নতুন রাজকীয় আবাসস্থল ও প্রাসাদ হিসেবে এই স্থানে একটি নগর পত্তন করেন। তিনি এই স্থানের নাম দিয়েছিলেন মদীনাতুস সালাম (শান্তির শহর)। সে সময় রাষ্ট্রীয় মুদ্রায়, বাটখারায় এবং অন্যান্য সরকারি কাজে এই নাম ব্যবহৃত হতো। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে শহরটি 'বাঘদাদ' নামেই পরিচিত ছিল। খ্রিষ্টীয় একাদশ শতাব্দীর ভিতরে সর্বস্তরে শহরটি বাগদাদ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে।

পরিকল্পনা অনুসারে প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নগর তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ৭৬৪ খ্রিষ্টাব্দে এবং শেষ হয়েছিল ৭৬৮ খ্রিষ্টাব্দে। এর জন্য মনসুর বিভিন্ন স্থান থেকে সবচেয়ে ভালো প্রকৌশলী, সমীক্ষক এবং শিল্প নির্মাতাদের একত্রিত করেন। গ্রহ-নক্ষত্র অনুসরণে কাজ শুরু করা ইসলামে নিষিদ্ধ থাকলেও- দুজন জ্যোতিষ নওবখত আহওয়াজী এবং মাশাল্লাহ নগর তৈরি সময় নির্ধারণ করেছিলেন নক্ষত্রের শুভাশুভ অবস্থান বিচার করে। জ্যোতিষযিরা বিশ্বাস করতেন যে, শহরীত সিংহরাশির অবস্থানকালে তৈরি করা উচিৎ। শহরটি তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়েছিল চার ইঞ্চির (৪৬০ মিমি) ঘনক আকৃতির ইট। এই সময় মানুষের ব্যবহারের জন্য এবং ইট তৈরির জন্য একটি খাল খনন করা হয়েছিল। শহরের ভবন তৈরিতে মার্বেলও ব্যবহৃত হয় এবং মার্বেলের তৈরি ধাপগুলো নদীর ধার পর্যন্ত নামানো হয়েছিল। প্রাথমিক কাজ শেষ হওয়ার পর ৯১২ খ্রিস্টাব্দের ভিতরে বাগদাদকে একটি বৃত্তাকার নগরে পরিণত করা হয়েছিল। এর ভিতরে শহরের মূল কাঠামোটি রচনা করা হয়েছিল প্রায় ১৯ কিলোমিটার (১২ মাইল) ব্যাসের দুটি বড় অর্ধবৃত্ত নিয়ে। এই কারণে বাগদাদ "বৃত্তাকার শহর" নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। সে সময় শহরের অভ্যন্তরে প্রচুর উদ্যান, ভিলা এবং বেড়ানোর পথ রাখা হয়েছিল। শহরের কেন্দ্রস্থলে ছিল মসজিদ এবং রক্ষীদের জন্য নির্মিত সদর।।

বাগদাদের চারপাশ চারটি প্রতিরক্ষা প্রাচীর। এই প্রাচীরগুলোতে ছিল সিংহদুয়ার। এই দুয়ার দিয়ে চারটি নগরীতে যাওয়ার পথ রচিত হয়েছিল। গন্তব্য স্থানের নামে এই সিংহপ্রাচীরের নামকরণ করা হয়েছিল- কুফা, বাসরা, খুরাসান এবং সিরিয়া। এই সিংহদুয়ারগুলোর মধ্যে দূরত্ব ২.৪ কিমি (১.৫ মাইল)-এর থেকে কিছুটা কম ছিল। প্রতিটি ফটকে ছিল লোহার তৈরি ভারি দরজা। প্রাচীরগুলোর মাটির কাছে (ভিত্তিতে) প্রায় ৪৪ মিটার পুরু এবং শীর্ষে প্রায় ১২ মিটার পুরু ছিল। প্রতিটি প্রাচীর ছিল ৩০ মিটার উঁচু। শ্রেণীবদ্ধকরা প্রাচীরের একটি শক্ত অংশ সাধারণত গোলা-মুখ এর জন্য ছিদ্র করা থাকতো। এই প্রাচীরটি ৫০ মিটার পুরু অন্য একটি প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত ছিল। দ্বিতীয় প্রাচীরটিতে দুর্গ এবং গোলাকার মার্লোন ছিল, যা দুর্গগুলিকে ঘিরে ছিল। এই বাইরের ছিল ইট এবং চুন দিয়ে তৈরি নিরেট ঢাল দ্বারা সুরক্ষিত ছিল প্রাচীর। বাইরের প্রাচীরের বাইরে ছিল পানিপূর্ণ পরিখা।

নগরটি প্রতিষ্ঠার পরপরই জ্ঞানবিজ্ঞানের তীর্থক্ষেত্র হিসেবে যে খ্যাতি লাভ করেছিল, নানা যুদ্ধবিগ্রহের কারণে ধ্বংসে পথে চলে যায়। বিশেষ করে


যে সকল অবরোধ এবং যুদ্ধে বাগদাদ জড়িত ছিলেন নিচে তার তালিকা দেওয়া হলো: বাগদাদ অবরোধ (৮১২-৮১৩), চতুর্থ ফিতনা (খলিফা গৃহযুদ্ধ) বাগদাদ অবরোধ (৮৬৫), আব্বাসীয় খিলাফতের গৃহযুদ্ধ (৮৬৫-৮৬৬) বাগদাদ যুদ্ধ (৯৪৬), বুয়িদ – হামদানিদ যুদ্ধ বাগদাদ অবরোধ (১১৫৭), আব্বাসীয় – সেলযুক যুদ্ধ বাগদাদ অবরোধ (১২৫৮), মঙ্গোলদের বাগদাদ বিজয় তৈমুর লং এর বাগদাদ অবরোধ (১৪০১) বাগদাদ নিয়ন্ত্রণ (১৫৩৪), উসমানীয় সাম্রাজ্য (অটোমান) – সাফাভি রাজবংশের মধ্যে যুদ্ধ বাগদাদ নিয়ন্ত্রণ (১৬২৩), উসমানীয় সাম্রাজ্য (অটোমান) – সাফাভি রাজবংশের মধ্যে যুদ্ধ বাগদাদ অবরোধ (১৬২৫), উসমানীয় সাম্রাজ্য (অটোমান) – সাফাভি রাজবংশের মধ্যে যুদ্ধ বাগদাদ নিয়ন্ত্রণ (১৬৩৮), উসমানীয় সাম্রাজ্য (অটোমান) – সাফাভি রাজবংশের মধ্যে যুদ্ধ বাগদাদের পতন (১৯১৭), প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ১৯৪১ সালের ইরাকি অভ্যুত্থান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাগদাদ যুদ্ধ (২০০৩), যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণ ১০৫৮ সালে 'উকায়লিদ কুরাইশ'দের নিয়ে ইসমাইলিদের অনুগামী তুর্কি জেনারেল আবু'ল-হারিথ আরসালান আল-বাসাসিরির নেতৃত্বে ফাতেমীয়রা বাগদাদের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।[৫৩] বাগদাদে সেলজুকদের আগমনের কিছুকাল আগে, আল-বাসাসিরি ইসমাইলি ইমামের পক্ষে বাগদাদ জয় করার ব্যাপারে তাকে সমর্থন করার জন্য ফাতেমীয় ইমাম-খলিফা আল-মুস্তানসিরের কাছে আবেদন করেন। সম্প্রতি জনা যায় খ্যাতিমান ফাতিমীয় দা'ঈ আল-মু'আয়াদ আল-শিরাজী, আল-বাসাসিরিকে সরাসরি সমর্থন করেন এবং জেনারেলকে মসুল, ওয়াসিত ও কুফা জয় করতে সহায়তা করেন।[৫৪] এর পরপরই ১০৫৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাগদাদে শিয়া আযান (নামাযের আহ্বান) চালু করা হয় এবং ফাতেমীয় ইমাম-খলিফার নামে খুতবা (ধর্মোপদেশ বক্তৃতা) প্রদান করা হয়।[৫৪] শিয়াদের প্রতি ঝোঁক থাকা সত্ত্বেও আল-বাসাসিরি সুন্নি ও শিয়াদের সমান সমর্থন পেয়েছেন, যার ফলে সেলযুক শক্তির বিরুদ্ধে সার্বজনীন সমর্থন পেয়েছেন।[৫৫] ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে মঙ্গোলদের বাগদাদ বিজয়। বাগদাদ অবরোধের সময় ১২৫৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি চেঙ্গিজ খানের (গেঙ্ঘিস খান) নাতি হালাকু খানের (হুলেগু) নেতৃত্বে মঙ্গোলরা বাগদাদ দখল করে।[৫৬] অনেক বাসস্থান আগুনে পুড়ে, অবরোধ বা লুটপাটের ফলে ধ্বংস হয়ে যায়। মঙ্গোলরা খলিফা আল-মুস্তা’সিম সহ শহরের বেশিরভাগ বাসিন্দাদের হত্যা করে এবং শহরের বিশাল অংশ ধ্বংস করে দেয়। শহরের সেচ ব্যবস্থার খাল এবং বাঁধসমূহও ধ্বংস করে ফেলে। এ সময় বাগদাদে খ্রিস্টান এবং শিয়াদের কিছু করা হয়নি, অন্যদিকে সুন্নিদের সাথে পশুর ন্যায় আচরণ করা হয়।[৫৭] বাগদাদের ধ্বংসসাধন আব্বাসীয় খিলাফতের অবসান ঘটায়।[৫৮] এটিকে ইসলামী স্বর্ণযুগের সমাপ্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এমন এক আঘাত পায় যা থেকে ইসলামী সভ্যতা আর কখনই পুরোপুরি উঠে দাড়াতে পারেনি।[৫৯] মধ্য এশীয় তুর্কি-মঙ্গোল বিজেতা তৈমুর লং শহরটিকে ধ্বংস করে দেয় এবং প্রায় কাউকেই রেহাই দেয়নি। এ সময়ে বাগদাদকে মঙ্গোল সাম্রাজ্যের একটি বিচ্ছিন্ন রাজ্য ইরান থেকে ইলখানাতরা শাসন করে। ১৪০১ সালে মধ্য এশীয় তুর্কি বিজেতা তৈমুর লং ("টেমরলেন") কর্তৃক বাগদাদ আবারও ধ্বংসসাধিত হয়।[৬০] তার বাহিনী যখন বাগদাদ দখল করে তখন তিনি প্রায় কাউকেই রেহাই দেন নাই এবং তার প্রতিটি সৈন্যকে দু'জন মানুষের কাঁটা মাথা নিয়ে ফিরে আসার আদেশ দেন।[৬১] বাগদাদ মঙ্গোল জালাইরিদ (১৪০০-১৪১১), তুর্কি কারা কয়ুনলু (১৪১১-১৪৬৯), তুর্কি আক কয়ুনলু (১৪৬৯–১৫০৮) এবং ইরানী সাফাভি (১৫০৮-১৫৩৪) রাজবংশ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত একটি প্রদেশের রাজধানী ছিল। উসমানীয় সাম্রাজ্য (অটোমান) যুগ (ষোড়শ থেকে উনবিংশ শতক) আরও দেখুন: বাগদাদ এয়ালেত এবং বাগদাদ বিলায়েত ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদ এয়ালেত। ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দে বাগদাদ বিলায়েত। বাগদাদের সৌক, ১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দে। ১৫৩৪ সালে উসমানীয়রা (অটোমান তুর্কিরা) বাগদাদ দখল করে। উসমানীয়দের অধীনে থাকাকালে এর শাসক এবং শহরের সুন্নি নিয়ন্ত্রণকে মেনে না নেওয়া ইরানি সাফাভিদের মধ্যে দ্বন্দের ফলে বাগদাদের পতন অব্যাহত ছিল। পুনরায় উসমানীয়দের হাতে পড়ার আগে ১৬২৩ থেকে ১৬৩৮ সাল পর্যন্ত এটি ইরানী শাসনে ফিরে আসে। বাগদাদ প্লেগ ও কলেরায় মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হয়েছিল[৬২] এবং একসময় এর জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল৷[৬৩] এক সময় বাগদাদ মধ্য প্রাচ্যের বৃহত্তম শহর ছিল। মামলুক সরকারের অধীনে ১৮শ শতাব্দীর শেষভাগে শহরটির তুলনামূলকভাবে পুনর্জাগরণ ঘটে। ১৮৩১ সালে আলী রাজা পাশা কর্তৃক পুনরায় সরাসরি উসমানীয় শাসনে আসে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে ১৮৫১ থেকে ১৮৫২ এবং ১৮৬১ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত মেহমেদ নামিক পাশা বাগদাদ শাসন করেন।[৬৪] নুত্তল এনসাইক্লোপিডিয়া’র মতে ১৯০৭ সালে বাগদাদের জনসংখ্যা ছিল ১৮৫,০০০ জন। বিংশ এবং একবিংশ শতক আরও দেখুন: ব্রিটিশ প্রশাসনের অধীনে ইরাক রাজতন্ত্র এবং ইরাক রাজতন্ত্র বাগদাদের সাবন্দর ক্যাফে, ১৯২৩ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে আসার আগপর্যন্ত বাগদাদ ও দক্ষিণ ইরাক ১৯১৭ সাল পর্যন্ত উসমানীয় শাসনের অধীনে ছিল। ১৯২০ সালে বাগদাদ মেসোপটেমিয়ায় ব্রিটিশ মেন্ডেটের অধীনে রাজধানী হয়। প্রশাসনিক কাজকে আরও শক্তিশালী করার জন্য একাধিক স্থাপত্য ও পরিকল্পনা প্রকল্প চালু করা হয়।[৬৫] ১৯৩২ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর ইরাক রাজতন্ত্রের রাজধানী হয়। ১৯০০ সালে শহরের জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ১৪৫,০০০ যা ১৯৫০ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৫৮০,০০০ জনে। ম্যান্ডেটের সময় বাগদাদে যথেষ্ট পরিমাণে ইহুদি সম্প্রদায়ের লোক বাস করতো, নগরীর এক চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী ছিল ইহুদিরা।[৬৬] ১৯৪১ সালের ১ এপ্রিল, "গোল্ডেন স্কয়ার" এর সদস্যরা এবং রশিদ আলী বাগদাদে অভ্যুত্থান ঘটান। ব্রিটিশপন্থী শাসক আবদুল ইলাহকে সরিয়ে রশিদ আলী একটি জার্মান ও ইতালিয়ানপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। ফলস্বরূপ অ্যাংলো-ইরাকি যুদ্ধের পর রশিদ আলী ও তার সরকার পালায়ন করলে ৩১ শে মে বাগদাদের মেয়র ব্রিটিশ এবং কমনওয়েলথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৫৮ সালের ১৪ জুলাই ইরাক সেনাবাহিনীর সদস্যরা আব্দুল করিম কাসেমের অধীনে ইরাকের রাজত্বন্ত্রের পতনের জন্য অভ্যুত্থান ঘটায়। অভ্যুত্থানের সময় রাজা দ্বিতীয় ফয়সাল, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নূরী আল-সাইদ, প্রাক্তন শাসক প্রিন্স আবদুল ইলাহ, রাজপরিবারের সদস্য এবং অন্যান্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। নিহতদের অনেকের লাশ বাগদাদের রাস্তা দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধ বাগদাদের কেন্দ্রস্থলে তাহরির চত্ত্বরে ১৯৭০ এর দশকে ইরাকের প্রধান রফতানিদ্রব্য পেট্রোলিয়ামের দাম তীব্র বৃদ্ধি পাওয়ায় বাগদাদ সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। এই সময়ে আধুনিক পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা, পানি এবং মহাসড়ক সুবিধাসহ নতুন অবকাঠামো নির্মিত হয়। পোলসার্ভিসের মধ্যস্থতায় পোল্যান্ডের পরিকল্পনা সংস্থা মিয়াস্তো প্রজেক্ট-ক্র্যাকো শহরের মাস্টারপ্ল্যানগুলি (১৯৬৭, ১৯৭৩) সরবরাহ করে।[৬৭] তবে ১৯৮০-এর দশকের ইরান-ইরাক যুদ্ধ শহরটির জন্য একটি কঠিন সময় নিয়ে আসে, কারণ সাদ্দাম হুসাইন সেনাবাহিনীকে অর্থ বরাদ্ধ করে এবং কয়েক হাজার বাসিন্দা এই যুদ্ধে নিহত হয়। সাদ্দাম হুসাইন কর্তৃক তেহরানের আবাসিক এলাকায় ধারাবাহিকভাবে বোমা হামলার প্রতিশোধ নিতে ইরান বাগদাদে বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ১৯৯১ ও ২০০৩ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং ২০০৩ এর ইরাক আক্রমণের সময় মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটের ব্যাপক বিমান হামলার কারণে বাগদাদের পরিবহন, বিদ্যুৎ এবং স্যানিটারি অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। এছাড়াও ২০০৩ সালে শহরে ছোটখাটো দাঙ্গার (যা ২১ জুলাই সংঘটিত হয়) কারণে জনমনে কিছুটা অশান্তির সৃষ্টি হয়। নগরীর ঐতিহাসিক "আসিরিয়ান কোয়ার্টার" দোরায়, ২০০৩ সালে ১৫০,০০০ আসিরিয় সম্প্রদায়ের লোক বাস করতো, তখন রাজধানীর আসিরিয় জনসংখ্যা ৩% এরও বেশি ছিল। এই সম্প্রদায়টি আল-কায়েদা এবং অন্যান্য বিদ্রোহী গোষ্ঠীর দ্বারা অপহরণ, মৃত্যুর হুমকি, বর্বরতা এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার শিকার হয়। ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ মাত্র ১,৫০০ জন আসিরিয় দোরায় বাস করতো।[৬৮] প্রধান দর্শনীয় দজলার পাশে মুতানাব্বি সরণির শেষ মাথায় আল-মুতানাব্বি ভাস্কর্য। নগরীর দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরাকের জাতীয় জাদুঘর এবং বিজয় তোরণের প্রতীকী হাত। ২০০৩ সালের আক্রমণের সময় জাদুঘরের অমূল্য নিদর্শনগুলি লুট করা হয়। তোরণ ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ হিসাবে থাকবে না ভেঙে ফেলা উচিত তা নিয়ে একাধিক ইরাকি দলের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। সাদ্দামের আদেশে জাতীয় গ্রন্থাগারের হাজার হাজার প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ধ্বংস করে ফেলা হয়। মুতানব্বি সরণি মূল নিবন্ধ: মুতানাব্বি সরণি মুতানাব্বি সরণি (আরবি: شارع المتنبي) বাগদাদের পুরাতন অংশের কাছে আল রশিদ সরণিতে অবস্থিত। এটি বাগদাদের বই বিক্রির ঐতিহাসিক কেন্দ্র, সরণিটি এবং বহিরঙ্গন বইয়ের দোকানে ভরা। দশম শতাব্দীর ধ্রুপদী ইরাকি কবি আল-মুতানাব্বির নামে এটির নামকরণ করা হয়েছে।[৬৯] এই রাস্তাটি বই বিক্রির জন্য সুপ্রতিষ্ঠিত এবং বাগদাদের সাহিত্য ও বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের হৃদয় ও প্রাণ হিসাবে পরিচিত। বাগদাদ চিড়িয়াখানা মূল নিবন্ধ: বাগদাদ চিড়িয়াখানা প্রাণীবিদ্যাবিষয়ক উদ্যানটি মধ্য প্রাচ্যের বৃহত্তম। ২০০৩ এর আক্রমণে আট দিনের মধ্যে ৬৫০ টি প্রাণীর মধ্যে মাত্র ৩৫ টি বেঁচে ছিল। কিছু প্রাণী মানুষ খাবারের জন্য চুরি করার কারণে এবং কিছু খাঁচায় বন্দী প্রাণীর খাবারের অভাবের কারণে এটি ঘটে। দক্ষিণ আফ্রিকার লরেন্স অ্যান্থনি এবং চিড়িয়াখানার কিছু রক্ষক পশুদের যত্ন নেন এবং মাংসাশী প্রাণীদের স্থানীয়ভাবে ক্রয়করা গাধার মাংস খাওয়াতেন।[৭০][৭১] অবশেষে ইরাকের জোটের অস্থায়ী কর্তৃপক্ষের ১১ মে ২০০৩ থেকে ২৮ জুন ২০০৪ পর্যন্ত পরিচালকের দায়িত্ব পালনকালে পল ব্রেমার চিড়িয়াখানাটি সংরক্ষণ করার আদেশ দেন এবং মার্কিন প্রকৌশলীরা এটি পুনরায় চালু করতে সহায়তা করে।[৭০] প্রধান উৎসব চত্ত্বর প্রধান উৎসব চত্ত্বরটি জনসাধারণের উৎসবের মূল চত্ত্বর। এখানে ইরাকি শহীদ সেনাদের এবং যুদ্ধ বিজয়ের স্মরণে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিসৌধের অবস্থান; এগুলো হলো আল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, বিজয় তোরণ এবং অজানা সৈনিকের স্মৃতিস্তম্ভ।[৭২] আল-শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ আল-শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ (আরবি: نصب الشهيد) শহীদ স্মৃতি হিসাবেও পরিচিত। এটি ইরান-ইরাক যুদ্ধে মারা যাওয়া ইরাকি সেনাদের স্মৃতিতে উত্সর্গীকৃত একটি স্মৃতিসৌধ। তবে বর্তমানে ইরাকিরা সাধারণত ইরাকের সমস্ত শহীদদের জন্য এটিকে বিবেচনা করে থাকে, কেবলমাত্র ইরান-ইরাক যুদ্ধে নয় বিশেষত যারা ইরান ও সিরিয়ার সাথে মিলে বর্তমানে আইএসআইএস-এর সাথে যুদ্ধ করছে তাদেরকেও স্মরণ করে। এই স্মৃতিসৌধটি ১৯৮৩ সালে উন্মুক্ত করা হয়, ইরাকি স্থপতি সামান কামাল এবং ইরাকি ভাস্কর এবং শিল্পী ইসমাইল ফাতাহ আল তুর্ক এটির নকশা করেন। ১৯৭০ এবং ১৯৮০ এর দশকে সাদ্দাম হুসাইনের সরকার নতুন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মানে প্রচুর অর্থ বরাদ্ধ করে, এর মধ্যে আল শহীদ স্মৃতিস্তম্ভও অন্তর্ভুক্ত ছিল।[৭৩] আল-শহীদ, (শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ), জাওরা পার্ক, বাগদাদ বিজয় তোরণ (সরকারীভাবে কাদিসিয়ার তরোয়াল নামে পরিচিত) কুশলা কুশলা ক্লক টাওয়ার কুশলা (বা কিশলা, আরবি: قشلة) সবার জন্য উন্মুক্ত একটি চত্ত্বর, এটি দজলা নদীর তীরে রুসফা’র উপকন্ঠে অবস্থিত ঐতিহাসিক কমপ্লেক্স। কুশলা এবং এর আশেপাশের জায়গাসমূহের ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্যসমূহ এবং মুতানাব্বি সরণি থেকে শুরু করে আব্বাসীয় যুগের প্রাসাদ ও সেতু, উসমানীয় যুগের মসজিদ, মুসতানসিরিয়া মাদ্রাসা পর্যন্ত একিভূত করে এটি বাগদাদের সাংস্কৃতিক রাজধানীতে পরিনত হয়েছে। চত্ত্বরটি উসমানীয় যুগে সামরিক ব্যারাক হিসাবে গড়ে উঠে। আজ এটি এমন এক জায়গা যেখানে বাগদাদের নাগরিকরা গাজেবস’তে কবিতা পড়ার মতো অবকাশ পান।[৭৪] এটি পঞ্চম জর্জের দান করা আইকনিক ক্লক টাওয়ার দ্বারা বৈশিষ্টমন্ডিত। পুরো অঞ্চলটি বর্তমানে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান (ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট)-এর পরীক্ষামূলক তালিকায় জমা দেওয়া হয়েছে।[৭৫] কাধিমাইনের মসজিদ মূল নিবন্ধ: আল-কাজিমিয়া মসজিদ আল-কাজিমিয়া মসজিদ বাগদাদের কাধিমাইন অঞ্চলে অবস্থিত একটি সমাধিস্থল। এতে মুসা আল কাজিম এবং মুহাম্মদ আত-তাকী যথাক্রমে সপ্তম ও নবম দ্বাদশবাদি শিয়া ইমামের সমাধি রয়েছে, যারা কাজিমায়ন (আরবি: كَـاظِـمَـيـن, "এমন দুজন যারা তাদের ক্রোধ গ্রাস করেছেন") উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন।[৭৬][৭৭][৭৮] তাদের স্মরণে অনেক শিয়া বহুদূর থেকে মসজিদ দর্শণে আসে। আবু হানিফার মসজিদ মূল নিবন্ধ: আবু হানিফা মসজিদ ইমাম আবু হানিফার স্মৃতিবিজড়িত মসজিদটি সুন্নি প্রধান অঞ্চল আদহামিয়াহতে অবস্থিত। আল-আ'যামিয়্যাহ (আরবি: الأَعـظَـمِـيَّـة) নামটি আবু হানীফার উপাধি আল-ইমাম আল-আ’যম (আরবি: الإِمَـام الأَعـظَـم, মহান ইমাম) থেকে প্রাপ্ত।[৭৯][৮০] ফিরদৌস চত্ত্বর ফিরদৌস চত্ত্বরটি বাগদাদে একটি সর্বজনীন উন্মুক্ত স্থান। প্যালেস্টাইন হোটেল এবং শেরাটন ইশতার নামের সর্বাধিক পরিচিত হোটেল দুটির অবস্থান এখানেই, দুটিই বাগদাদের সবচেয়ে উঁচু দালান।[৮১] এই চত্ত্বরটিতে সাদ্দাম হুসাইনের ভাস্কর্য স্থাপন করা ছিল যা মার্কিন জোট বাহিনী ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের সময় টেনে নামিয়ে ফেলে এবং দৃশ্যটি সেসময় ব্যপকভাবে টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। প্রশাসনিক বিভাগ আরও দেখুন: বাগদাদের এলাকা (পাড়া বা অঞ্চল) ও জেলাসমূহের তালিকা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে দেখা বাগদাদ প্রশাসনিকভাবে বাগদাদ গভর্নোরেট জেলায় বিভক্ত যা আবার উপ-জেলায় বিভক্ত। গভর্নোরেট ৯ টি পৌরসভায় বিভক্ত, স্থানীয় বিষয়গুলোর দায়-দায়িত্ব পৌরসভার। আঞ্চলিক সেবাগুলির সমন্বয় এবং তদারকি পৌরসভার মেয়র অধীনে পরিচালিত হয়। এখানে কোনও একক নগর পরিষদ নেই যা পৌরসভা পর্যায়ে এককভাবে বাগদাদকে পরিচালনা করে। গভর্নোরেট পরিষদ গভর্নোরেট-ব্যাপী কর্মপন্থার জন্য দায়বদ্ধ থাকে। নগরীর সরকারী মহকুমা পৌরসভার সেবা সরবরাহের প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসাবে কাজ করে, তবে ২০০৩ অবধি রাজনৈতিক কোন কাজ ছিল না। ২০০৩ সালের এপ্রিল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণাধীন সাময়িক জোট কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) এগুলির জন্য নতুন কাজকর্ম তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রক্রিয়াটি প্রাথমিকভাবে এলাকার ককাস দ্বারা নির্বাচিত সরকারী এলাকাগুলোর পরিষদের নির্বাচনে নিবদ্ধ কর হয়। স্থানীয় সরকারকের ব্যাখ্যা, ককাস নির্বাচন প্রক্রিয়া বর্ণনা এবং অংশগ্রহণকারীদের এগুলো প্রচার করতে এবং বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন এবং প্রতিবেশীদের পরবর্তী সভায় নিয়ে আসতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সিপিএ প্রতিটি পাড়ায় একাধিক সভার আয়োজন করে। প্রতিটি প্রতিবেশ প্রক্রিয়া শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত বৈঠকের সাথে শেষ হয় যেখানে নতুন এলাকার কাউন্সিলের প্রার্থীরা নিজেদের উপস্থাপিত করে এবং নাগরিকদেরকে তাদের ভোট দেওয়ার জন্য আহ্বান করে। একবার ৮৮ টি (পরে ৮৯ টিতে উন্নীত হয়েছে) আঞ্চলিক পরিষদের সবগুলো গঠিত হলে, নগরের নয়টি জেলা পরিষদের একটিতে দায়িত্ব পালন করার জন্য প্রতিটি আঞ্চলিক পরিষদ তাদের সদস্যদের মধ্য থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। একটি জেলা পরিষদে আঞ্চলিক প্রতিনিধির সংখ্যা অঞ্চলটির জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা হয়। পরবর্তী পদক্ষেপ হলো নয়টি জেলা পরিষদের প্রতিটি তাদের সদস্য থেকে ৩৭ সদস্যের বাগদাদ নগর পরিষদের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচন করা। স্থানীয় সরকারের এই তিন স্তরের ব্যবস্থা বাগদাদের মানুষকে অঞ্চল, এরপর জেলা এবং তারপর নগর পরিষদ (সিটি কাউন্সিল) পর্যন্ত তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে সংযুক্ত করে। একই প্রক্রিয়া শহরের বাইরে বাগদাদ প্রদেশের অন্যান্য এলাকার নিজস্ব প্রতিনিধি পরিষদ গঠন করতে ব্যবহৃত হয়। সেখানে ২০ টি এলাকা (নাহিয়া) থেকে স্থানীয় পরিষদ নির্বাচিত হয় এবং এই পরিষদগুলি তাদের সদস্যদের ছয়টি জেলা পরিষদ (ক্বাদা) তে দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। শহরের মধ্যে যেমন জেলা পরিষদগুলি ৩৫ সদস্যের বাগদাদ আঞ্চলিক পরিষদের জন্য তাদের সদস্যদের মধ্যে থেকে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। বাগদাদ প্রদেশের জন্য স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ ছিল বাগদাদ প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন। পূর্বের ন্যায়, প্রাদেশিক কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা তারা প্রতিনিধিত্ব করেন এমন জেলাগুলির জনসংখ্যার অনুপাতে নিম্ন কাউন্সিল থেকে তাদের সহকর্মীদের দ্বারা নির্বাচিত হন। ৪১ সদস্যের প্রাদেশিক পরিষদ ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে। এরপর একটি নতুন প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচিত হয়। ১২৭ টি পৃথক পরিষদের এই পদ্ধতিটি অতিরিক্ত জটিল বলে মনে হতে পারে; তবে বাগদাদ প্রদেশে প্রায় ৭০ লক্ষ লোকের বসবাস। নিম্নতম স্তরের প্রতিটি আঞ্চলিক পরিষদ গড়ে ৭৫,০০০ জন লোকের প্রতিনিধিত্ব করে। নয়টি জেলা উপদেষ্টা পরিষদ (ডিএসি) নিম্নরূপ:[৮২] আদহামিয়াহ কার্খ (সবুজ অঞ্চল)[৮৩] কাররাদা[৮৪][৮৫] কাধিমিয়া[৮৬] মনসুর সদর সিটি (থাওরা)[৮৭] আল রশিদ[৮৮] রুসাফা নতুন বাগদাদ (তিসা নিসান) (৯ এপ্রিল)[৮৯] নয়টি জেলা ৮৯ টি ছোট ছোট অঞ্চলে বিভক্ত হয়েছে যা উপরের যে কোন জেলার শাখা তৈরি করতে পারে। কিছু নির্বাচিত অঞ্চলের নাম ‍নিম্নে দেওয়া হলো (সম্পূর্ণ তালিকার পরিবর্তে): আল-ঘাযালিয়া আল-আমিরিয়া দোরা কাররাদা আল-জাদরিয়া আল-হেবনা যাইয়ুনা আল-সাঈদিয়া আল-সা’দুন আল-সু’আলা আল-মাহমুদিয়া বাব আল-মোয়াথাম আল-বাইয়া’ আল-জাফরানিয়া হেই উর সা’ব হেই আল-জামি’য়া আল-আদেল আল-খাধরা হেই আল-জিহাদ হেই আল-আ’মেল হেই আউর আল-হুরিয়া হেই আল-সুরতা ইয়ারমুক জসর দিয়ালা আবু দিসের রঘিবা খাতৌন আরব জিবর আল-ফাথেল আল-উবেদি আল-ওয়াসাস আল-ওয়াজিরেয়া ভূগোল শহরটি দজলা নদী দ্বারা দ্বিখণ্ডিত বিস্তীর্ণ সমভূমিতে অবস্থিত। দজলা বাগদাদকে দুইভাগে বিভক্ত করেছে, পূর্বের খন্ডটি "রিসাফা" এবং পশ্চিম খন্ডটি "কার্খ" নামে পরিচিত। প্রায় পুরোপুরি সমতল এবং অপেক্ষাকৃত নিচু ভূমির উপর শহরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, নদীতে প্রতিবছর বৃহৎ বন্যা হওয়ার ফলে পলি পড়ে সমতলভূমিটি গড়ে উঠেছে। বাগদাদ দিয়ে প্রবাহিত টাইগ্রিস নদীর প্যানোরামিক দৃশ্য জলবায়ু বাগদাদের জলবায়ু উষ্ণ মরুময় (কোপেন বিডাব্লুএইচ), অত্যন্ত গরম বৈশিষ্ট্যযুক্ত, শুষ্ক গ্রীষ্মকাল এবং হালকাগরম শীতকাল। জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত গ্রীষ্ম কালে সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ৪৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (১১১° ফাঃ) এর সাথে গনগনে রৌদ্র থাকে। প্রকৃতপক্ষে বছরের এই সময়ে অর্ধ ডজনেরও কম বার বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে এবং এর পরিমান কখনও ১ মিলিমিটার (০.০৪ ইঞ্চি) এর বেশি হয়না।[৯০] এমনকি গ্রীষ্মের রাতের তাপমাত্রাও ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৭৫° ফাঃ) এর নীচে খুব কমই নামে। জুলাই ২০১৫ সালে বাগদাদের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) রেকর্ড করা হয়।[৯১] দক্ষিণ ইরাকের জলাভূমি এবং পারস্য উপসাগরের উপকূল থেকে বাগদাদের দূরত্ব বেশি হওয়ার কারণে গ্রীষ্মে আর্দ্রতা সাধারণত ৫০% এর নিচে থাকে এবং গ্রীষ্মের সময় পশ্চিমের মরুভূমি থেকে ধূলিঝড় হওয়া একটি স্বাভাবিক ঘটনা। শীতকালীন তাপমাত্রা উষ্ণমন্ডলীয় জলবায়ুর ন্যায়। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাগদাদের সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা ১৫.৫ থেকে ১৮.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (৫৯.৯ থেকে ৬৫.৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট) থাকে, যদিও সর্বোচ্চ তাপামাত্রা ২১ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের (৭০° ফাঃ) এর বেশি উঠে না। প্রতি বছরই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গড়ে কয়েকবার শূণ্য ডিগ্রির নীচে নামে।[৯২] নভেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ বৃষ্টিপাত সীমাবদ্ধ থাকে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ১৫০ মিলিমিটার (৫.৯১ ইঞ্চি), সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৩৩৮ মিমি (১৩.৩১ ইঞ্চি) এবং সর্বনিম্ন ৩৭ মিমি (১.৪৬ ইঞ্চি) এর চেয়ে বেশি।[৯৩] ১১ জানুয়ারী ২০০৮ তারিখে ১০০ বছরের মধ্যে প্রথম বাগদাদে হালকা তুষারপাত হয়।[৯৪] বাগদাদ-এর আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য মাস জানু ফেব্রু মার্চ এপ্রিল মে জুন জুলাই আগস্ট সেপ্টে অক্টো নভে ডিসে বছর সর্বোচ্চ °সে (°ফা) গড় ১৬٫০ (৬১) ১৯٫০ (৬৬) ২২٫০ (৭২) ২৯٫০ (৮৪) ৩৬٫০ (৯৭) ৪১٫০ (১০৬) ৪৩٫০ (১০৯) ৪৪٫০ (১১১) ৪০٫০ (১০৪) ৩৪٫০ (৯৩) ২৫٫০ (৭৭) ১৮٫০ (৬৪) ৩০٫৬ (৮৭) দৈনিক গড় °সে (°ফা) ১০٫০ (৫০) ১২٫৫ (৫৫) ১৬٫০ (৬১) ২২٫০ (৭২) ২৮٫০ (৮২) ৩২٫০ (৯০) ৩৪٫০ (৯৩) ৩৪٫৫ (৯৪) ৩১٫০ (৮৮) ২৫٫০ (৭৭) ১৮٫০ (৬৪) ১১٫৫ (৫৩) ২২٫৮৮ (৭৩٫৩) সর্বনিম্ন °সে (°ফা) গড় ৪٫০ (৩৯) ৬٫০ (৪৩) ৯٫০ (৪৮) ১৫٫০ (৫৯) ২০٫০ (৬৮) ২৩٫০ (৭৩) ২৫٫০ (৭৭) ২৫٫০ (৭৭) ২১٫০ (৭০) ১৬٫০ (৬১) ১১٫০ (৫২) ৫٫০ (৪১) ১৫ (৫৯) গড় বৃষ্টিপাত মিমি (ইঞ্চি) ২৬ (১٫০২) ২৮ (১٫১) ২৮ (১٫১) ১৭ (০٫৬৭) ৭ (০٫২৮) ০ (০) ০ (০) ০ (০) ০ (০) ৩ (০٫১২) ২১ (০٫৮৩) ২৬ (১٫০২) ১৫৬ (৬٫১৪) বৃষ্টিবহুল দিনের গড় ৫ ৫ ৬ ৪ ২ ০ ০ ০ ০ ১ ৫ ৬ ৩৪ গড় আর্দ্রতা (%) ৭১ ৬১ ৫৩ ৪৩ ৩০ ২১ ২২ ২২ ২৬ ৩৪ ৫৪ ৭১ ৪২٫৩ মাসিক গড় সূর্যালোকের ঘণ্টা ১৯২٫২ ২০৩٫৪ ২৪৪٫৯ ২৫৫٫০ ৩০০٫৭ ৩৪৮٫০ ৩৪৭٫২ ৩৫৩٫৪ ৩১৫٫০ ২৭২٫৮ ২১৩٫০ ১৯৫٫৩ ৩,২৪০٫৯ উৎস #১: বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা (জাতিসংঘ)[৯৫] উৎস #২: জলবায়ু ও তাপমাত্রা[৯৬] জনসংখ্যা ২০১৫ সালে বাগদাদের জনসংখ্যা ছিল আনুমানিক ৭.২২ মিলিয়ন। ঐতিহাসিকভাবে এই শহরটি মূলত সুন্নি অধ্যুষিত ছিল, তবে একবিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে এই শহরের জনসংখ্যার প্রায় ৮২% ছিল ইরাকি শিয়া। একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে প্রায় দেড় মিলিয়ন মানুষ বাগদাদে পাড়ি জমান, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ হলো শিয়া আর সামন্য কিছু সুন্নি। সুন্নি মুসলমান ইরাকের জনসংখ্যার ২৩%, তবে পশ্চিম ও উত্তর ইরাকে এখনও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। ২০০৩ সালের প্রথমদিকে দেখা যায় শহরের প্রায় ২০ শতাংশ শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে মিশ্র বিবাহিত লোক: তাদের প্রায়শই "সুশিস" নামে অভিহিত করা হয়।[৯৭] যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দখলের সময় ইরাকের সুন্নি ও শিয়া মিলিশিয়া গ্রুপগুলির মধ্যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পর শহরের অধিবাসীদের সিংহভাগই ছিল শিয়া। সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত সুন্নিদের পুনর্বাসনের বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতি দিলেও এটির বাস্তবায়ন হয়েছিল খুব সামান্যই। ২০১৪ সালে আইএসআইএস-এর আক্রমণ পরবর্তী ইরাকি গৃহযুদ্ধের ফলে হাজার হাজার অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত মানুষ এই শহরে পালিয়ে আসে। শহরটিতে বর্তমানে সুন্নি, শিয়া, আসিরিয়/ ক্যালডিয় / সিরিয়, আর্মেনীয় এবং মিশ্র ধরনের মানুষ বসবাস করে। শহরটিতে একটি বৃহৎ ইহুদি সম্প্রদায়ের বসবাস ছিল এবং নিয়মিত শিখ তীর্থযাত্রীরা দর্শনে আসে। অর্থনীতি বাগদাদ টাওয়ার, ২০১৮ বাগদাদের কেন্দ্রস্থলের দৃশ্য, মার্চ ২০১৭ বাগদাদের কেন্দ্রস্থলে আল-মামুন টেলিযোগাযোগ কেন্দ্র বাগদাদ ইরাকের জনসংখ্যার ২২.২ শতাংশ এবং দেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (পিপিপি) ৪০ শতাংশ ধারন করে। ইরাকের জাতীয় বিমান সংস্থা ইরাকি এয়ারওয়েজের সদর দফতর বাগদাদের বাগদাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবস্থিত।[৯৮] আল-নাসের এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় বাগদাদের কাররাদায় অবস্থিত।[৯৯] পুনর্গঠন প্রচেষ্টা আরও তথ্য: আগ্রাসন পরবর্তী ইরাকে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ নগর অবকাঠামো পুনরুদ্ধার ও মেরামতের জন্য বেশিরভাগ ইরাকি পুনর্গঠন প্রচেষ্টা ‍নিযুক্ত করা হয়। বেসরকারী উন্নয়নের মাধ্যমে পুনর্নির্মাণের আরও দৃশ্যমান প্রচেষ্টাগুলোর মধ্যে আছে স্থপতি এবং নগর নকশাবিদ হিশাম এন. আশকৌর’র বাগদাদ নবজাগরণ পরিকল্পনা এবং সিন্দাবাদ হোটেল কমপ্লেক্স ও সম্মেলন কেন্দ্র।[১০০] ২০০৮ সালে একটি সরকারি সংস্থা একটি পর্যটন দ্বীপ পুনর্নির্মাণের জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব পেশ করে।[১০১] ২০০৯ এর শেষদিকে, বাগদাদের কেন্দ্রস্থলকে পুনর্নির্মাণের জন্য একটি নির্মাণ পরিকল্পনা প্রস্তাব করা হয়, তবে এতে দুর্নীতি জড়িত থাকায় পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়নি।[১০২] ২০০৮ সালের আগস্টে বাগদাদে ১৯৮ মিটার (৬৫০ ফুট) উঁচু বিরাট নাগরদোলা ‘বাগদাদের চোখ’ নির্মানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। সে সময় তিনটি সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিত করা হয়, তবে সম্ভাব্য ব্যয় বা নির্মান সম্পূর্ণ হওয়ার সম্ভাব্য সময় বলা হয়নি।[১০৩][১০৪][১০৫][১০৬] ২০০৮ সালের অক্টোবরে আল-জাওরা পার্কটিকে এই কাজের জন্য নির্বাচিত করা হয় বলে জানা যায়[১০৭] এবং মার্চ ২০১১ সালে সেখানে একটি ৫৫ মিটার (১৮০ ফুট) উঁচু নাগরদোলা স্থাপন করা হয়।[১০৮] ইরাকের পর্যটন কর্তৃপক্ষও বাগদাদের দজলা নদীতে "রোমাঞ্চকর" দ্বীপ উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগকারী খুুঁজছিলেন যা একসময় ইরাকি নবদম্পতিদের কাছে মধুচন্দ্রিমার জন্য জনপ্রিয় ছিল। প্রকল্পে একটি ছয়তারা হোটেল, স্পা, একটি ১৮-গর্তের গল্ফ মাঠ এবং একটি কাউন্ট্রি ক্লাব অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও নগরীর আর্থিক কেন্দ্র কাদেমিয়ার উন্নয়নের লক্ষ্যে দজলা বরাবর বহুসংখ্যক অনন্য স্থাপত্যময় আকাশচুম্বী ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।[১০৩] ২০০৮ সালের অক্টোবরে বাগদাদ মেট্রো পুনরায় চালু হয়। এটি শহরের কেন্দ্রের সাথে দোরার দক্ষিণাঞ্চলকে সংযুক্ত করে। ২০১০ সালের মে মাসে বাগদাদ গেট নামে একটি নতুন আবাসিক এবং বাণিজ্যিক প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়া হয়।[১০৯] এই প্রকল্পটি কেবল বাগদাদে নতুন আবাসিক এলাকার জরুরী প্রয়োজনকেই মিটায়নি বরং যুদ্ধবিধ্বস্ত নগরীর অগ্রগতির বাস্তব প্রমাণ হিসাবেও কাজ করে, কারণ কয়েক দশক ধরে বাগদাদ এই মাপের প্রকল্প দেখেনি।[১১০] শিক্ষা আব্বাসীয় খলিফা আল-মুস্তানসির ১২২৭ সালে মুস্তানসিরিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। নামটি পরিবর্তন করে ১৯৬৩ সালে আল-মুস্তানসিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় করা হয়। বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় ইরাকের বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরব বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। উপসাগরীয় যুদ্ধের আগে বাগদাদে একাধিক আন্তর্জাতিক স্কুল পরিচালিত হতো, যার মধ্যে রয়েছে: ইকোলে ফ্র্যান্সিসে ডি বাগদাদ[১১১] ডয়চে শুলে বাগদাদ[১১২] বাগদাদ জাপানী স্কুল (バ グ ダ ッ ド 日本人 学校), নিহোনজিন গাক্কো[১১৩] বিশ্ববিদ্যালয় বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয় আল-মুস্তানসিরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইরাকি বিশ্ববিদ্যালয় নাহরাইন বিশ্ববিদ্যালয় আলবাইয়ান বিশ্ববিদ্যালয় প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইরাক সংস্কৃতি আরও দেখুন: বাগদাদি আরবি ও ইরাকের সংস্কৃতি ১৯৫৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ইরাকি জাতীয় সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা, ২০০৭ সালের জুলাই মাসে ইরাকে একটি কনসার্ট পরিবেশন করছে। বাগদাদ সবসময় আরব সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বেশ কয়েকজন উল্লেখযোগ্য লেখক, সংগীতশিল্পী এবং চিত্র শিল্পী নিজস্ব ক্ষেতে অবদান রেখেছেন। এই নগরীর বিখ্যাত আরব কবি ও গায়কদের মধ্যে আছেন নিজার কাব্বানী, উম্মে কুলছুম, ফাইরুজ, সালাহ আল-হামদানি, ইলহাম আল-মাদফাই প্রমুখ। স্থানীয় বাগদাদি আরবি ভাষা আজ ইরাকের অন্যান্য বৃহৎ নগরগুলির ভাষার চেয়ে আলাদা, যা যাযাবর আরবি উপভাষার চেয়ে আরও বৈচিত্রময় (ভার্সটিঘ, আরবি ভাষা)। মধ্যযুগের শেষদিকে একাধিকবার ধ্বংসপ্রাপ্তির কারণে গ্রামীণ বাসিন্দাদের শহরে পুনর্বাসনের ফলে এটি ঘটেছে বলে মনে করা হয়। বাগদাদ সম্পর্কে রচিত কাব্যগ্রন্থের জন্য দেখতে পারেন রিউভেন স্নির সম্পাদিত বাগদাদ: কবিতার শহর (হার্ভার্ড, ২০১৩)।[২] ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বাগদাদ সাহিত্যের নগর হিসাবে ইউনেস্কোর সৃজনশীল শহরের নেটওয়ার্কে যোগদান করে।[১১৪] সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ২০০৭ সালে ইরাকি জাতীয় ব্যালে (যা বাগদাদে অবস্থিত) এর দুই ব্যালে নর্তকী ইরাকে একটি ব্যালে শোতে ব্যালে প্রদর্শন করছে। বাগদাদ কনভেনশন সেন্টারে অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় নগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাতীয় নাট্যশালা, এটি ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের সময় লুট করা হয়, তবে নাট্যশালাটি পুনঃস্থাপনের চেষ্টা চলছে।[১১৫] ১৯৯০ এর দশকে যখন জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার ফলে বিদেশী চলচ্চিত্রের আমদানি সীমাবদ্ধ হয়ে যায় তখন সরাসরি নাট্যপ্রদর্শনী জনপ্রিয় হয়। প্রায় ৩০ টি প্রেক্ষাগৃহ সরাসরি নাটক প্রচারের জন্য রূপান্তরিত হয় এবং বিভিন্ন ধরনের কৌতুকাভিনয় এবং নাটকীয় নাটক প্রযোজিত হয়।[১১৬] বাগদাদে সাংস্কৃতিক শিক্ষা প্রদানকারী সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে বাগদাদ সঙ্গিত ও ব্যালে স্কুল এবং বাগদাদ চারুকলা ইনস্টিটিউট। ইরাকি জাতীয় সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা বাগদাদে সরকারী অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা। আইএনএসও মূলত শাস্ত্রীয় ইউরোপীয় সংগীত পরিবেশন করে, পাশাপাশি ইরাকি এবং আরব বাদ্যযন্ত্র এবং সংগীতের উপর ভিত্তি করে মূল রচনাগুলিও পরিবেশন করে। বাগদাদে অনেকগুলি যাদুঘর রয়েছে যেখানে প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন এবং পুরাকির্তী রাখা ছিল; এর মধ্যে অনেকগুলি চুরি হয়ে যায় এবং মার্কিনসেনা শহরে প্রবেশের পরপরই ব্যাপক বিশৃঙ্খলা চলাকালে জাদুঘরগুলি লুট হয়ে যায়। ২০০৩ সালে ইরাক দখলের সময় এএফএন ইরাক ("ফ্রিডম রেডিও") বাগদাদ এবং অন্যান্য এলাকায় সংবাদ এবং বিনোদন সম্প্রচার করে। এছাড়াও "দিজলাহ" (দজলা নদীর নামানুসারে) নামে একটি বেসরকারী রেডিও স্টেশন রয়েছে যেটি ২০০৪ সালে ইরাকের প্রথম স্বাধীন আলাপন রেডিও স্টেশন হিসাবে যাত্রা শুরু করে। বাগদাদের জামিয়া এলাকায় অবস্থিত রেডিও দিজলাহর অফিসে বিভিন্ন সময়ে হামলা হয়েছে।[১১৭] সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস ইরাকের জাতীয় জাদুঘরের নিদর্শনগুলির অমূল্য সংগ্রহ ২০০৩ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের সময় লুট করা হয়। সাদ্দামের আদেশে এবং দখলদার জোট বাহিনীর অবহেলার কারণে জাতীয় গ্রন্থাগারের হাজার হাজার প্রাচীন পাণ্ডুলিপি ধ্বংস করা হয়।[১১৮] খেলাধুলা বাগদাদে ইরাকের কয়েকটি সফল ফুটবল দল (সকার) রয়েছে যার মধ্যে বৃহত্তম হ'ল আল-শরতা (পুলিশ), আল-কোওয়া আল-জাভিয়া (বিমানবাহিনী ক্লাব), আল-জাওরাআ এবং তালাবা (শিক্ষার্থীরা)। বাগদাদের বৃহত্তম স্টেডিয়াম আল-শাব স্টেডিয়াম ১৯৬৬ সালে উন্মুক্ত করা হয়। এই শহরে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ঘোড়দৌড়ের শক্তিশালী ঐতিহ্য আছে যা বাগদাদীদের কাছে সাধারণভাবে 'রেস' হিসাবে পরিচিত। রেস সম্পর্কিত জুয়ার কারণে এই ঐতিহ্যবাহী ঘোড়দৌড়টি বন্ধ করার জন্য ইসলামপন্থীদের চাপ প্রয়োগ করার অভিযোগ পাওয়া যায়।[১১৯] প্রধান সড়কসমূহ মেডিকেল সিটি হাসপাতাল থেকে দেখা দজলা নদীর উপর দিয়ে হাইফা সরণি প্যালেস্টাইন মেরিডিয়ান হোটেল এবং ইশতার শেরাটন হোটেল বাগদাদের একটি রাস্তা, ২০১৫ হাইফ সরণি হিল্লা রোড – দক্ষিণ থেকে ইয়ারমুক (বাগদাদ) হয়ে বাগদাদে চলে গেছে খলিফা সরণি – ঐতিহাসিক মসজিদ এবং গীর্জার অবস্থান সাদুন সরণি – স্বাধীনতা চত্ত্বর থেকে মাসবাহ পর্যন্ত প্রসারিত মোহাম্মদ আল-কাসিম মহাসড়ক আদহামিয়াহ’র এর নিকটবর্তী আবু নুওয়াস সরণি - জুমহুরিয়া ব্রিজ থেকে ১৪ জুলাই মুলতবি করা ব্রিজ পর্যন্ত দজলার তীর বরাবর চলে গেছে দামেস্ক সরণি - দামেস্ক চত্ত্বর থেকে বাগদাদ বিমানবন্দর রোড পর্যন্ত মুত্তানাব্বি সরণি - দশম শতাব্দীর ইরাকি কবি আল-মুত্তানাব্বি এর নামানুসারে, অসংখ্য বইয়ের দোকান সহ একটি রাস্তা রাবিয়া সরণি আরবতাশ তমুজ (১৪ জুলাই) সরণি (মসুল রোড) মুথানা আল-শাইবানী সরণি বোর সাঈদ (পোর্ট সৈয়দ) সরণি থাওরা সরণি আল কানাত সরণি - বাগদাদের উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত আল খাত আল সারেয়া - মোহাম্মদ আল কাসিম (উচ্চ গতির পথ) - বাগদাদের উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত আল সিনা সরণি (শিল্প সরণি) প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বারা পরিচালিত - বাগদাদে কম্পিউটার ব্যবসায়ের কেন্দ্রবিন্দু আল নিধল সরণি আল রশিদ সরণি - বাগদাদ শহরের কেন্দ্র আল জামহুরিয়া সরণি - বাগদাদ শহরের কেন্দ্র ফিলিস্তিন সরণি তারিক এল মুয়াস্কার - (আল রাশিদ ক্যাম্প রোড) আখরোট সরণি বাগদাদ বিমানবন্দর রোড[১২০]

১২৫৮
খ্রিষ্টাব্দেঙ্গোল আক্রমণে সাম্রাজ্যের হাতে শহরটির বেশিরভাগ ধ্বংস হয়ে যায়, ফলে বহু শতাব্দী ধরে ঘন ঘন প্লেগ রোগ এবং একাধিক সাম্রাজ্যের উত্থানের কারণে ক্রমশ এর পতন ঘটতে থাকে। ১৯৩৮ সালে ইরাককে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে (প্রাক্তন মেসোপটেমিয়ায় ব্রিটিশ মেন্ডেট) স্বীকৃতি দেওয়ার পর বাগদাদ ধীরে ধীরে আরব সংস্কৃতির একটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হিসাবে তার পূর্বের কিছু খ্যাতি ফিরে পায়। বিভিন্ন হিসাব অনুযায়ি ৬ বা ৭ মিলিয়নেরও বেশি জনসংখ্যা নিয়ে বাগদাদ ইরাকের বৃহত্তম শহর।[note ১] সমসাময়িক সময়ে, ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ এবং পরবর্তীকালে ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী ইরাক যুদ্ধের ফলে শহরটি অবকাঠামোগত বহু ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, শহরটি প্রায়শই বিদ্রোহিদের হামলার শিকার হচ্ছে। যুদ্ধের ফলে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলিরও যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতি হয়। ২০১৮ সালের হিসাব মতে, বাগদাদকে বসবাসের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে নিম্ন বসবাসযোগ্য স্থানগুলির মধ্যে একটি হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম মানবসম্পদ মার্সারের করা তালিকায় জীবনযাত্রার-মান বিশ্বের ২৩১টি বড় শহরের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।[৭]