কুইপু
ইংরেজি Quipu
দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা সভ্যতায় সংখ্যলিখন পদ্ধতি বিশেষ। কুইপু স্প্যানিশ শব্দ। এই
শব্দটির আদি শব্দটি হলো খিপু
(khipu)। এই শব্দটির অর্থ হলো গিট। এই
শব্দটি কুয়েচুয়া (Quechua)
ভাষার কুসকো আঞ্চলিক ভাষার শব্দ। এই ভাষার মহাপ্রাণ খ
(kh)
ধ্বনিটি অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষায় ক হিসাবে উচ্চারিত হয়। এই বিচারে খিপু
(khipu)
শব্দটি দাঁড়ায় কিপু (kipu)।
ইনকা সাম্রাজ্য দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডর থেকে মধ্য চিলি পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এর
কেন্দ্র কুজকো (cuzco)
ছিল পেরুর দক্ষিণাঞ্চলের অন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলে। যতটুকু জানা যায় ইনকা সভ্যতায়
কোন বর্ণ বা চিত্রভিত্তিক সংখ্যা-লিখন পদ্ধতি ছিল না। এরা দড়িতে গিট দিয়ে সংখ্যা
নির্ধারণ বা গণন কার্য সমাধা করতো। এই গ্রন্থিলিপিকে বলা হয়ে থাকে কুইপু। এই
সভ্যতার সম্রাট থেকে সর্বসাধারণ এই লিখন পদ্ধতি ব্যবহার করতো। এ পর্যন্ত বিভিন্ন
যাদুঘর ও ব্যক্তিগত সংগ্রহে প্রায় ৬০০ কুইপুর সন্ধান পাওয়া গেছে।
এই পদ্ধতিতে একটি প্রাথমিক (primary
cord) রজ্জু ব্যবহার করা হতো। এই রজ্জু
থেকে অনেকগুলো রজ্জু ঝুলিয়ে রাখা হতো। এই সকল ঝুলন্ত রজ্জুর সাথে থাকতো কিছু
অতিরিক্ত রজ্জু। দড়িতে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে গিট দেওয়া হতো। এই রকম একরাশ
দড়িতে সংখ্যামানকে গিট-আকারে ঝুলিয়ে রাখা হতো। দড়ির প্রকৃতি ও গিটের রঙ অনুসারে
সংখ্যার পার্থক্য নিরূপণ করা হতো। ধারণা করা হয়, এই পদ্ধতিতে ইনকা সভ্যতার লোকেরা
জনসংখ্যা, সৈন্য সংখ্যা, বৎসর, কর নির্ধারণ ইত্যাদির জন্য হিসাব রাখতো।
এক্ষেত্রে একেক বিষয়ের হিসাব একেক ধরনের রঙিন সুতার দড়িতে রাখা হতো। রঙ হিসাবে এর বিষয় নির্ধারণ করা হতো। যেমন‒ লাল সুতা দ্বারা স্বর্ণ, যুদ্ধ বুঝানো হতো, অন্য দিকে সাদা সুতা দিয়ে শান্তি বা রূপা বুঝানো হতো। অর্থাৎ রঙের উপরে নির্ভর করতো বিষয়বস্তুর প্রকৃতি। সংখ্যা নির্ধারক দড়িগুলোর গিট দেওয়া হওয়া হতো ১০ ভিত্তিক মানের বিচারে। মারিকা (Marica) এবং রবার্ট আসচের (Robert Ascher) শতাধিক কুইপো পরীক্ষা করে ধারণা দেন যে, অধিকাংশ কুইপো সংখ্যাবাচক মান সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হতো। কুইপুর গিটগুলো ছিল অংক মান। এক্ষেত্রে দুই ধরনের গিট তিনটি প্রক্রিয়া রাখা হতো। এতে ব্যবহার করা হতো ওভারহ্যান্ড ও ফিগার এইট ধরনের গিট ব্যবহার করা হতো। পাশের এই প্রধান দুটি গিটের নমুনা দেখানো হল।
এই
গিটগুলো এক বা একাধিক আঙ্গিকে রাখা হতো এই প্রকারণগুলো ছিল নিচের চিত্রের মতো।
একক গিটগুলো তৈরি করা হতো ওভারহ্যান্ড গিট দ্বারা। কিন্তু দীর্ঘ গিটগুলো একই
গিটকে কেন্দ্র করে দুই বা ততোধিক পাক দিয়ে তৈরি করা হতো। এর ফলে একটি
সিলিন্ডারধর্মী গিটে পরিণত হতো, একই সাথে একটি কৌণিক অক্ষ তৈরি করতো।
সংখ্যাজ্ঞাপক কুইপুগুলোর গিটগুলোর অবস্থান দ্বারা সংখ্যামান নির্ধারিত হয়ে থাকে।
একক গিটগুলো থাকতে পারে একাকী বা গুচ্ছবদ্ধ হিসাবে। প্রতিটি একক গিট ১০, ১০০, ১০০০
বা এই জাতীয় ১০-সূচকমান দ্বারা নির্ধারিত হতো। উচ্চমান যুক্ত গিটগুলো দেওয়া হতো
প্রাথমিক রজ্জুর কাছে। আর সবচেয়ে নিচের গিটের মান হতো একক মান বিশিষ্ট। এই মান
থেকে উপরের মানগুলো ১০-সূচক দ্বারা বৃদ্ধি পেতো। এই মান নির্ধারণী গুচ্ছের নমুনা
পাশের চিত্রে দেখানো হলো।
ধরা যাক এই রজ্জুর নিচ থেকে তৃতীয় গুচ্ছে যদি তিনটি গিট থাকে, তবে তার মান হবে
৩১০০= ৩০০। রজ্জুর একক (unit ) মান দীর্ঘ গিট বা ফিগার-এইট দ্বারা প্রভাবিত হয়।
একটি সাধারণ সূত্রে একটি দীর্ঘ গিট বা ফিগার-এইট থাকতে পারে। আবার উভয় গিটই একই
রজ্জুতে যুক্ত হয়ে থাকতে পারে। এক্ষেত্রে ফিগার-এইট ১ সংখ্যক মান প্রদান করে।
কিন্তু দীর্ঘ-গিট অবস্থান দ্বারা ২ থেকে ৯ মান হতে পারে।
ধরা
যাক একটি রজ্জুর দীর্ঘ গিটে ৮টি আবর্ত রয়েছে। সুতরাং এর মান হবে ৮। কিন্তু দশকের
ঘরে রয়েছে ৪টি একক গিটের গুচ্ছ। সুতরাং এর মোট মান হবে‒
৪*১০ + ৮ = ৪৮। পাশের চিত্রে বিষয়টি দেখানো হলো।
সূত্র :
http://en.wikipedia.org/wiki/Quipu
http://www.ancientscripts.com/quipu.html