নাস্তালিক লিপি
ফার্সি/উর্দু: نستعلیق, উচ্চারণ: নাস্তা’লীক) হলো উর্দু, ফার্সি, পাঞ্জাবি (শাহমুখী), এবং কাশ্মীরি ভাষা লেখার সবচেয়ে সুন্দর ও জনপ্রিয় লিপি।
১৩৪০- ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ইরানের তাবরিজ শহরে মীর আলী তাবরিজী (مير علي تبريزى) এই লিপি উদ্ভাবন করেন।কথিত
আছে نسخ (নাস্খ) + تعليق (তা’লীক) লিপির মিশ্রণে এই লিপি তৈরি করা হয়েছিল।
১৪০০-১৫০০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে তিমুরীয় যুগে (হেরাত, সমরকন্দ) অত্যন্ত জনপ্রিয়
ছিল। এই সময়ে ফার্সি শায়েরি ও রাজকীয় দলিলে এই লিপি ব্যবহৃত হতো।
১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে
মোগল সম্রাট বাবরের ভারতে মোগল সাম্রাজ্য স্থাপন করলে নাস্তালিক ভারতে আসে।
এই সময় থেকে দিল্লি, আগ্রা, লাহোর-লখনউ-তে এই লিপি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
১৬০৫-১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে
সম্রাট জাহাঙ্গীর ও
সম্রাট শাহজাহান-এর আমলে
এই লিপি ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। তাজমহলের ভিতরের আমানত খান শিরাজির নাস্তালিকে লেখা
ব্যবহার করা হয়েছিল।
সম্রাট জাহাঙ্গীরের
সময়
এলাহাবাদ স্তম্ভ শিলালিপি এই লিপি ব্যবহার করা হয়েছিল।
১৭০৭ থেকে ১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত আওধ (লখনউ) রাজ্যের আমলে নাস্তালিক
লিপি ব্যবহারের সবচেয়ে উজ্জ্বল সময় ধরা হয়।
লখনউকে “নাস্তালিকের দ্বিতীয় জন্মস্থল” বলা হয়।
এই সময় নবাবরা এই লিপি ব্যবহারের
পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন।
১৮৫৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা লখনউ দখল করলে অনেক নাস্তালিক
লিপিকার কলকাতা ও হায়দ্রাবাদে চলে যান। কিন্তু লখনউয়ে ঐতিহ্য টিকে যায়।
১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে রাষ্টভাষা উর্দু করা হলে, এই লিপির
উৎকর্ষ সাধিত হয় পাকিস্তানে। ভারতের উত্তরপ্রদেশে (বিশেষ করে লখনউ, রামপুর, আলিগড়) এখনো সবচেয়ে বেশি হাতে-লেখা নাস্তালিক দেখা যায়।
প্রখ্যাত নাস্তালিক লিপিকার
- মীর আলী তাবরিজী (আদি উদ্ভাবক)
- আমানত খান শিরাজি (তাজমহলের ক্যালিগ্রাফার)
- হাফিজ নূর মুহাম্মদ (লখনউ)
- গোলাম মুহাম্মদ (রামপুর)
লিপি লিখন পদ্ধতি
- মূলত এটি আরবি লিপির একটি শৈল্পিক রূপ।
- ডান থেকে বামে লেখা হয়।
- অক্ষরগুলো তির্যকভাবে মার্জিত শৈলীতে লেখা হয়।
বর্তমান ব্যবহার
- উর্দুতে সরকারি নোটিশ, সাইনবোর্ড এই লিপি লেখা হয়।
- বর্তমানে লখনউ, রামপুর, মোরাদাবাদ, বেরিলি, আলিগড়, মেরঠ, সাহারানপুর
অঞ্চলে দোকানের সাইনবোর্ডে এই লিপি ব্যবহার করা হয়।
- উর্দু দৈনিক: ইনকিলাব, রোজনামা হিন্দ, সিয়াসত, আভধনামা (লখনউ)