স্টাফ নোটেশান-এ স্বরের সঙ্কেত
 

পাশ্চাত্য স্বরলিপিতে এককভাবে স্বরের জন্য কোনো চিহ্ন নেই। স্বরপ্রকাশক চিহ্নসমূহ দুটি প্রধান বিষয়কে আশ্রয় করে করে উপস্থাপিত হয়। এই বিষয় দুটি হলো মাত্রামান সঙ্কেত এবং স্টাফ-এ  ওই মাত্রামানের অবস্থান।
 

পাশ্চাত্য রীতির স্বরলিপিকে লিখিত আকারে প্রকাশের জন্য একটি কাঠামো তৈরি করা হয়। এই কাঠামোতে ৫টি বা ১১টি অনুভূমিক সমান্তরাল রেখা টানা হয়। ফলে এই রেখাগুলোর ভিতর কিছু অনুভূমিক সমান্তরাল ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। এই রেখাগুলোকে বলা হয় স্টাফ বা স্টেভ রেখা। এর মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাগুলো ও স্টাফ রেখাসমূহ মিলিত হয়ে স্টাফ কাঠামো তৈরি হয়। এই স্টাফ কাঠামোকে ভিত্তি করে সঙ্গীতের স্বরে বিন্যাস করা হয়। 
 

ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতির মতো, স্টাফ নোটেশনে স্বরগুলোর জন্য কোনো পৃথক চিহ্ন নেই। মাত্রাজ্ঞাপক চিহ্নগুলো- স্টাফ বা স্বরপ্রকাশক অনুভূমিক রেখা সমন্বিত লেখচিত্রের উপর অবস্থান অনুসারে স্বর নির্দেশিত হয়ে থাকে। যেমন ক্রোচেট।  এর চিহ্ন । পাশ্চাত্য সঙ্গীতে ১ মাত্রা চিহ্নকে বলা হয় ক্রোচেট। কিন্তু এর পাশ্চাত্য সময়জ্ঞাপক মান হলো quarter note। এর অর্থ হলো কোনো স্বরের এক চতুর্থাংশ সময়মান। এই বিচারে ৪টি ক্রোচেটের সমান সময়মানকে বলা হয়ে whole note। এই কারণে whole note-এর মান ধরা হয় ১ এবং ক্রোচেট-এর মান ধরা হয় ১/৪। স্টাফের উপর অবস্থানের বিচারে এই চিহ্নটি ভিন্ন ভিন্ন স্বর হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করুন।

 

 

এখানে ৭টি ক্রোচেট রয়েছে। পৃথকভাবে বিবেচনা করলে এই ক্রোচেটগুলোর কোনো স্বরকে নির্দেশিত করছে না। উপরের চিত্রের স্টাফগুলোর বিচারে এর যে কোনো একটি ক্রোচেটকে যদি মধ্য সপ্তকের সা ধরি তাহলে তার পরবর্তী ক্রোচেটগুলো হবে রে গা মা পা ইত্যাদি।  উপরের চিত্রে একটি ক্রোচেটের সাথে G4 উল্লেখ আছে। এই ক্রোচেটটি হবে G4 স্কেলের সা। এর ডান দিকের ক্রোচেটগুলো হবে র গ ম। আর এর বাম দিকের চিহ্নগুলো হবে- ন্ ধ্ প্ ম্।

 

পাশ্চাত্য স্বরলিপি পদ্ধতিতে সুরকে স্বরলিপি দ্বারা প্রকাশের ক্ষেত্রে দুটি প্রধান বিষয়কে মান্য করা হয়। এর একটি হলো স্বর-সঙ্কেত, অপরটি তাল সঙ্কেত। এছাড়া বাড়তি উপাদান হিসেবে থাকতে পারে, সুরের কোনো বিশেষ অংশের উপর অল্প-বিস্তর জোর দেওয়ার বিষয়, সুরের বিরাম স্থান প্রকাশের বিষয়। ভারতীয় স্বরলিপি পদ্ধতিতে মূল সঙ্কেত হিসেবে ব্যবহৃত হয় স্বরসঙ্কেত। এর সাথে পরে যুক্ত করা হয় তাল সঙ্কেত। ভারতীয় স্বরলিপিভেদে সঙ্কেতের রকমফের দেখা যায় বটে। কিন্তু সূত্রটি একই থাকে। যেমন আকার মাত্রিক স্বরলিপিতে ষড়্‌জ-এর মূল সঙ্কেত স। এটি যদি একমাত্রার হয়, তা হলে স্বরসঙ্কেত হবে সা। এখানে া হলো একমাত্রার চিহ্ন। আবার অর্ধ-মাত্রা চিহ্ন : ঃ অর্ধমাত্রার ষড়্‌জ হবে সঃ।  পাশ্চাত্য স্বরলিপিতে স্বরের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট চিহ্ন নেই।

 

পাশের চিত্রে লক্ষ্য করুন, ক্রোচেট নামক একমাত্রা বিশিষ্ট চিহ্নটি স্টাফের তিনটি স্থানে থাকার কারণে, তিনটি স্বর হিসেবে বিবেচিত হবে। এছাড়া একই স্বরচিহ্ন মাত্রার বিচারে ভিন্ন আকার ধারণ করতে পারে। পাশের চিত্রের স্বরচিহ্নের সাথে একটি উলম্ব দণ্ড রয়েছে। এই উলম্ব দণ্ডের নিচে ডিম্বাকার অংশ রয়েছে। স্টাফ নোটেশনে সকল সময় এই দণ্ডের সাথে যুক্ত ডিম্বটি নিচে থাকে না। যদি কোনো চিহ্ন স্টাফের নিচের দিকে থাকে তাহলে এর ডিম্ব নিচে থাকে। পক্ষান্তরে ডিম্বটি যদি স্টাফের উপরের দিকে থাকে, তাহলে উলম্ব দণ্ডটি নিচের দিকে প্রসারিত হয়। এক্ষেত্রে সঙ্কেতর মাত্রা মানের হেরফের ঘটবে না। যেমন নিচের দুটো সঙ্কেতই ১ মাত্রা প্রকাশ করবে।

 

 

সময়মান ভিত্তিক এই স্বরচিহ্নগুলো, স্টাফের কাঠামোর উপর একটি ক্রমানুক্রমিক ধারায় স্থাপন করলে প্রতিটি স্বর একটি বিশেষ স্বর-নাম লাভ করে। এই বিষয়টি আবার নির্ভর করে, পাশ্চাত্য সঙ্গীতের স্কেল-এর উপর।
 

পাশ্চাত্য স্কেলের নিয়মে স-এর পরিবর্তে প্রথম স্বরটি স্কেলের আদ্য স্বরের নাম ব্যবহৃত হবে। যেমন C স্কেলের আদ্য স্বরটি C নামেই চিহ্নিত হবে। এক্ষেত্রে ভারতীয় পদ্ধতিতে C-কে স হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এই স্কেলটি ধরে একটি অক্টেভ তৈরি হলে প্রাথমিকভাবে যে সাতটি মৌলিক স্বর পাওয়া যাবে, তার নামগুলো হবে C D E F G A B। পাশ্চাত্যে এই সাতটি স্বরের পৃথক নামও আছে। ভারতীয় রীতিতে স্বরগুলোকে গাওয়ার সময় বলা হয় সা, রে, গা, মা, পা, ধা, নি, সা। পাশ্চাত্য সঙ্গীতে এই স্বরগুলোকে গাওয়া হয় do re mi fa so la ti do, আর স্টাফ নোটেশানে একে প্রকাশ করা হয় C D E F G A B C হিসেব। নিচের ছকে বিষয়টি দেখানো হলো।
 

ভারতীয় গায়ন পদ্ধতি সা রে গা মা পা ধা নি  সা
পাশ্চাত্য গায়ন পদ্ধতি do re mi fa so la ti do

পাশ্চাত্য স্বরলিপি পদ্ধতি

C D E F G A B C


ভারতীয় ও পাশ্চাত্য রীতিতে সকল সপ্তক বা বিকৃত স্বর একই নামে উচ্চারণ করা হয়। যেমন- দ্ ধ্  দ ধ র্দ র্ধ উচ্চারিত হয়। পাশ্চাত্য রীতিতেও স্বর গাওয়ার সময় ভিন্ন উচ্চারণ করা হয় না।

 

স্কেল অনুসারে সা বা do -এর অবস্থান পরিবর্তন হলেও এর নামের পরিবর্তন হয় না। যেমন  b flat স্কেলের প্রথম স্বরকে যদি সা বা do -এর অবস্থান হয়। তাহলে স্কেল অনুসারে স্বর সপ্তকের বিন্যাস হবে।

      সা    Do = b flat
    
রে   re = c natural
    
গা   mi = d natural
    
মা   fa = e flat
    
পা   so = f natural
    
ধা   la= g natural
    
নি  ti= a natural


পাশ্চাত্য রীতিতে স্বরগুলোকে স্বরের অবস্থানের বিচারে বলা
C -কে প্রথম স্বর বলা হয়। শুধু তাই নয় এই স্বরগুলোকে ভিন্নতর নামেও অভিহিত করা হয়। যেমন-

 

 First note         =C    =Tonic
 Second note     =D    =Supertonic
 Third note        =E    =Mediant
 Fourth note      =F    =Subdominant
 Fifth note        =G    =Dominant
 Sixth note        =A    =Submediant/Superdominant

 Seventh note    =B    =Leading Note/SubTonic

 

ভারতীয় সঙ্গীতশাস্ত্রে মূল স্বরকে বলা হয় শুদ্ধ স্বর। আর বিকৃত স্বরকে বলা হয় কোমল বা কড়ি। পাশ্চাত্য সঙ্গীতে শুদ্ধ স্বরকে বলা হয় ন্যাচারাল (Natural), আর বিকৃত স্বর যদি তীব্র হয় তবে তাকে বলা হবে Sharp বা আর কোমল হলে বলা হবে Flat অর্থাৎ পাশ্চাত্য সঙ্গীতে মূল স্বর বা শুদ্ধ স্বর থেকে এক ধাপ নিচের স্বরকে  বলা হয়  ফ্ল্যাট Flat আর এক ধাপ উপরের স্বরকে বলা হয় শার্প Sharp। এক্ষেত্রে পাশ্চাত্য সঙ্গীতে তিনটি মৌলিক চিহ্ন ব্যবহৃত হয়। এই চিহ্ন তিনটি হলো 


 

Natural Flat Sharp


এই চিহ্নগুলো স্বরের বামে স্থাপন করে স্বরের প্রকৃতি নির্ধারণ করা হয়। কখনো কখনো দুটো ফ্ল্যাট (
Flat) বা দুটো শার্প (Sharp) চিহ্ন বসিয়ে শুদ্ধ স্বরের দুই ধাপ নিচের বা দুই ধাপ উপরের স্বরচিহ্নকে বুঝানো হয়ে থাকে। সাধারণত শুদ্ধ স্বরের জন্য # চিহ্ন ব্যবহৃত হয় না।

 

Flat Double Flat Sharp Double Sharp

 

উল্লেখ্য এখানে  (ক্রোচেট) হলো কোনো একটি মাত্রাভিত্তিক স্বরচিহ্ন।

 

পাশ্চাত্য রীতিতে কোনো স্বরকে স হিসেবে ধরে নিলে, অবশ্যই তার স্কেলের নামটি উল্লেখ করতে হয়। পাশ্চাত্য দ্বাদশ সমগুণান্বিত স্বরবিন্যাস  (12 note of equal temperament) পদ্ধতিতে একটি স্বরাষ্টকে থাকে ১২টি স্বর। এই স্বরগুলো যদি পরপর সাজানো যায়, তাহলে যে স্কেলটি তৈরি হয়, তাকে ক্রোমাটিক স্কেল (Chromatic Scale) বলে। এই বিচারে উত্তর ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে স্বরের বিন্যাস হবে
               স ঋ র জ্ঞ গ ম হ্ম প দ ধ ণ ন র্স


কোনো একটি শুদ্ধ স্বরের বিচারে এর উপর নিচের স্বরগুলো শার্প বা ফ্ল্যাট হয়ে যেতে পারে। বিষয়টি নির্ভর করে সপ্তকের আরোহণ ও অবরোহণের উপরে। C স্কেলের আরোহণ ও অবরোহণের বিচারে বিষয়টি দেখানো হলো।

আরোহণ: C, C#, D, D#, E, F, F#, G, G#, A, A#, B, C
অবরোহণ:
C, B, Bb, A, Ab, G, Gb, F, E, Eb, D, Db, C

ভারতীয় স্বরলিপি পদ্ধতিতে যেকোনো সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনিই স হতে পারে এবং ওই স থেকে অন্যান্য স্বরগুলো নির্দেশিত হয়। পাশ্চাত্য সঙ্গীতে প্রতিটি সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি সুনির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের বিচারে স্বর হিসেবে নির্ধারিত। প্রতিটি স্বর আবার স্কেলের কাঠামোতে একটি সুনির্দিষ্ট নামে চিহ্নিত হয়ে থাকে। যেমন আধুনিক পাশ্চাত্য সঙ্গীতে ৪৪০ হার্টজকে A4 হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি সকল সময়ই A4 নামেই অভিহিত হবে। ভারতীয় পদ্ধতিতে স হিসেবে গণ্য হতে পারে A4, B4, C5ত্যাদির যে কোনোটি।


পাশ্চাত্য রীতিতে এই স্বরবিন্যাস প্রদর্শন করতে হলে স্বরনাম পাল্টে যাবে স্কেল অনুসারে। নিচের তুলনামূলক সারণির ভিতরে আরোহণের ক্রোমাটিক স্কেল অনুসারে স্বরের ক্রমবিন্যাস দেখানো হলো।

 

ভারতীয় পদ্ধতি   জ্ঞ হ্ম র্স
পাশ্চাত্য পদ্ধতি স্কেলের নাম                          
C C C# D D# E F F# G G# A A#  B C
C# C# D D# E F F# G G# A A#  B C C#
D D D# E F F# G G# A A#  B C C# D
D# D# E F F# G G# A A#  B C C# D D#
E E F F# G G# A A#  B C C# D D# E
F F F# G G# A A#  B C C# D D# E F
 F# F# G G# A A#  B C C# D D# E F F#
G G G# A A#  B C C# D D# E F F# G
G# G# A A#  B C C# D D# E F F# G G#
A A A#  B C C# D D# E F F# G G# A
A# A#  B C C# D D# E F F# G G# A A#
 B  B C C# D D# E F F# G G# A A# B


পাশ্চাত্য দ্বাদশ সমগুণান্বিত স্বরবিন্যাস  (
12 note of equal temperament) পদ্ধতিতে একটি স্বরাষ্টকে থাকে ১২টি স্বর। প্রতিটি স্বরের মধ্যবর্তী স্বরের দূরত্ব মানকে বলা হয় এক Half-tone বা  এক semitone। এই স্বরগুলোকে স্টাফ নোটেশনে উপস্থাপন করতে গেলে প্রাথমিক কিছু সূত্রকে অনুসরণ করার প্রয়োজন হয়।