মনসামঙ্গল
মঙ্গলকাব্যের প্রকরণ বিশেষ।

মনসা হলেন সর্পদেবী। দ্রাবিড়দের সর্পদেবী 'মনচা অম্মা' বা 'মনেমাঞ্চী' শব্দ থেকে বাংলা 'মনসা' শব্দটির প্রচলন ঘটেছে। দক্ষিণ ভারত থেকে আগত সেন রাজাদের আমলে এই দেবীর পূজা বাংলাদেশে প্রচলিত হয়। বৌদ্ধ সর্পদেবী 'জাঙ্গুলী'র পূজার রীতিও মনসা পূজায় বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা যায়। এছাড়া মহাভারতের কশ্যপ পত্নী কদ্রুর গর্ভজাত নাগ, জনমজেয় রাজার সর্পসত্রের কাহিনি, আস্তীক মুনির সর্পসত্র নিবারণ ইত্যাদি, নাগ পূজা তথা মনসা পূজায় প্রভাব ফেলেছিল। এ সকল উপদানের সাথে বাংলা চাঁদ সওদাগরের লৌকিক কাহিনির সমন্বয়ে সৃষ্টি হয়েছিল 'মনসামঙ্গল' উপাখ্যান।

মনসামঙ্গলের আদি কবি হিসেবে কানা হরিদত্তের নাম পাওয়া যায়। মনসামঙ্গলের প্রখ্যাত কবি বিজয়গুপ্ত ১৪৮৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দে ভিতরে রচনা করেছিলেন 'পদ্মপুরাণ' ও 'মনসামঙ্গল'। এই কবির রচনা থেকে জানা যায় যে, কানা হরিদত্ত তাঁর পূর্বর্তী কবি ছিলেন। এই সূত্রে অনুমান করা যায়, যে তিনি ১৪৫০ থেকে ১৪৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে তাঁর কাব্য রচনা করেছিলেন। বিজয়গুপ্তর আগে নারায়ণ দেব নামে আরও একজন কবির সন্ধান পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, নারায়ণ দেব কানা হরিদত্তের সমসাময়িক ছিলেন।

হুসেনশাহী রাজবংশের শাসনামলে (১৪৯৩-১৫৩২) মনসামঙ্গলের কবি বিজয়গুপ্তবিপ্রদাস পিপিলাই-এর কথা জানা যায়। উল্লেখ্য এই রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন হুসেন শাহ (১৪৯৩-১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দ) ছিলেন সাহিত্যানুরাগী। বিজয়গুপ্ত  ১৪৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলায় 'পদ্মপুরাণ' রচনা শুরু করেন এবং ১৫২৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে গ্রন্থটি শেষ করেন। এই ছাড়া মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। এই কাব্যটি ঢাকা, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলে বিশেষ জনপ্রিয় ছিল। ১৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বরিশালে এই গ্রন্থটি মুদ্রিত হয়েছিল। একই সময়ে বিপ্রদাস পিপিলাই মনসামঙ্গল রচনা করেন।

১৭৭৫-১৮২৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে রচিত একটি মনসামঙ্গল রচিত হয়েছিল। এর রচয়িতা ছিলেন বিষ্ণুপাল। সুমুমার সেনের সম্পাদনায় গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দে।


সূত্র: