আলাউদ্দিন হুসেন শাহ
বাংলাদেশের
হুসেন শাহী রাজবংশের-এর
প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম শাসক।
অধিকাংশ ঐতিহাসিকদের মতে, আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ছিলেন আরবের অধিবাসী। পিতার নাম ছিল
সৈয়দ আশরাফ। শৈশবে তিনি তাঁর পিতার সাথে মুর্শিদাবাদ জেলার একানি-চাঁদপাড়া নামক
স্থানে বাস করতেন। তিনি নিজ প্রতিভার দ্বারা
হাবসী শাসনামলে প্রধানমন্ত্রীর পদ লাভ করতে সমর্থ হন। হাবসী কুশাসনের
ফলে বাংলাদেশে অরাজকতার সৃষ্টি হয়েছিল, এবং এই সূত্রে বাংলায় একটি বিদ্রোহহের সূচনা
হয়। পরে বিদ্রোহীরা হাবসী সুলতান মুজফ্ফরকে হত্যা করেন। এই
সূত্রে ১৪৯৩ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সিংহাসনে
হুসেন শাহ বসেন। এর দ্বারা সূচিত হয়,
হুসেনশাহী
রাজবংশের।
হুসেন শাহ সিংহাসনের পর, বাংলাদেশ থেকে হাবসী ক্রীতদাস এবং সৈন্যদের বিতারিত করেন।
এই সময় হাবসী সুলতান যে সকল আমীরকে বিতারিত করেছিলেন, তাঁদেরকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে
আসেন। এরপর তিনি কঠোর হাতে বিশৃঙ্খলা দমন করেন। বাংলার শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার
জন্য হুসেন শাহ যখন ব্যস্ত, সেই সময়ে
সিকান্দার লোদী জৌনপুরের হুসেন শর্কীর রাজ্য আক্রমণ করেন।
ফলে হুসেন শর্কী পালিয়ে বঙ্গদেশে আসেন। এই যুদ্ধের পর
সিকান্দার লোদী 'ত্রিহূত' ও 'বিহার' নিজ রাজ্যের অধিকারভুক্ত করতে সমর্থ হন। হুসেন শর্কীকে আশ্রয় দেওয়ার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে
সিকান্দার লোদী বঙ্গদেশ আক্রমণের উদ্যোগ নেন। সিকান্দরের সেনাবাহিনী
বাংলার সীমান্তে বারহ (বর্তমান পাটনা জেলার পূর্বাঞ্চল) নামক স্থানে শিবির স্থাপন
করনে। সুলতান হুসেন শাহ তাঁহার পুত্র দানিয়েলের অধীনে এক বিরাট সেনাবাহিনী প্রেরণ
করেন। সুলতান সিকান্দর লোদীর সেনাপতি মুহম্মদ লোদী ও মুবারক খান লোহানীর বিরাট
বাহিনী বাঙালি সৈন্যবাহিনীর উপস্থিতিতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ফলে বুদ্ধিমান সিকান্দর
লোদী সন্ধির প্রস্তাব করা হইল। অচিরে সন্ধিপত্র স্বাক্ষরিত হইল। পিতার
পক্ষে দানিয়েল প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, দিল্লির সম্রাট সিকান্দর লোদীর শত্রুকে
বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদান করা হবে না। এই চুক্তির দ্বারা বাংলা এবং দিল্লির
সীমান্তরেখা নির্ধারিত হয়েছিল। এরপর
সিকান্দার লোদী দিল্লীতে
ফিরে যান।
হুসেন শাহ সাহিত্যানুরাগী ছিলেন। মনসামঙ্গলের কবি বিজয়গুপ্ত ও বিপ্রদাস পিপিলাই তাঁর সময় জীবিত ছিলেন। ধারণা করা হয় উভয় কবি তাঁদের মনসামঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন ১৪৯৫ খ্রিষ্টাব্দে। হুসেন শাহের সেনাপতি ছিলেন পরাগল খাঁ'র। তাঁর নির্দেশে কবীন্দ্র পরমেশ্বর মহাভারতের অনুবাদ করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে পরাগল খাঁ'র পুত্র ছুটি খাঁর নির্দেশে শ্রীকর নন্দী মহাভারতের অশ্বমেধ পর্বের অনুবাদ করেন। এই সময় তাঁর দরবারে বিশিষ্ট পদকর্তা যশোরাজ খান চাকরি করতেন। তিনি ব্রজবুলিতে রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক পদ রচনা করেন। ব্রজবুলিতে রচিত এই জাতীয় রচনার প্রাচীনতম নমুনা হিসেবে, তাঁকে এই বিষয়ের প্রথম পদকর্তা বিবেচনা করা হয়।
সূত্র: