ছন্দ
সংস্কৃত ভাষায় ছন্দের রূপতাত্ত্বিক বিন্যাস হলো −√ ছন্দ্(আচ্ছাদন করা) + অ (অচ্) কর্মবাচ্য। এই অর্থে যা কোনো কর্মকে আচ্ছাদিত করে তাই ছন্দ। কিন্তু ভট্টোজিদীক্ষিত প্রণীত 'বৈয়াকরণসিদ্ধান্তকৌমুদী' গ্রন্থের মতে 'আনন্দ দান করে বলেই ছন্দ'। এই জাতীয় উদ্ধৃতি দিয়ে সংজ্ঞার স্বরূপ নির্ধারণ করা যায় না।

সুর জগতে প্রাচীন ভারতের সংগীত গুরুরা অনাহত নাদের ধারণা দিয়েছিলেন। তাঁদের ভাষায় অনাহত নাদ শ্রবণেন্দ্রিয় দ্বারা অনুভব করা যায় না। সঙ্গীতে সুরের সাধনা করতে গেলে মনের বীণায় সুরকে ধারণ করতে হয়। মনোবীণায় বাঁধা অনাহত নাদই, কণ্ঠস্বরের মধ্য দিয়ে আহত নাদ হিসেব এ প্রকাশিত হয়। ছন্দের বিষয়টিও তেমনি। মনের ভিতরে যে ছন্দের লীলা অব্যক্ত দশায় বিরাজ করে, তাই ধ্বনিময় হয়ে প্রকাশিত হয়। তালবাদকদের তাল পরিবেশনের আগে, তার মনোজগতে ছন্দের অব্যক্ত রূপ ধ্বনিত হয় অনাহত নাদে। এই অব্যক্ত ছন্দক্রিয়াই ফুটে ওঠে বাদনশৈলীর ভিতর দিয়ে। তাই ছন্দ বা তালের দুটি রূপকে মেনে নিতেই হয়। তা হলো- অব্যক্ত ছন্দ ও অব্যক্ত ছন্দ।

ছন্দ হলো যে কোনো কর্মের সুসমন্বিত দোলা, যা উপলব্ধি করে 'আমি'। তাই ছন্দকে প্রথমেই ধরে নেওয়া হয় বিমূর্ত এবং মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। ছন্দের দোলা আছে বলেই এর দোলনকাল আছে। মানুষের মনে যে প্রতিনিয়ত স্বস্তি-অস্বস্তির খেলার স্পন্দন চলছে, তার নিরিখে যে গড় মান তৈরি হয়, সেটা স্বাভাবিক। বাতাসের ভিতরে থেকে মানুষ যেমন বাতাসকে প্রায় ভুলে থাকে, তেমনি স্বস্তি-অস্বস্তির স্বাভাবিক গড়মানে থেকে 'আমি' স্বস্তি-অস্বস্তিকে ভুলে থাকে। বাতাসের অস্বাভাবিক উপস্থিতির উদ্ভব হলে, মানুষ যেমন বাতাসের উপস্থিতিকে তীব্রভাবে অনুভব করে। তেমনি স্বস্তি-অস্বস্তির তীব্রতা 'আমি' অনুভব করে। এই অনুভূতির ভিতর দিয়ে 'আমি' আনন্দ-বেদনার দশায় উপনীত হয়। ছন্দ অনুভবের বিষয়টি দুটি বিশেষ শর্তে কাজ করে থাকে। এই দুটি শর্ত হলো- ছন্দের প্রাথমিক উপাদান হলো- দোলা। অবিরাম দোলা মানুষের মনে বৈচিত্র্যহীন একঘেয়ে নিরানন্দ দশার সৃষ্টি করে। যেমন ঘড়ির ক্রমাগত ধ্বনিত টিক্ টিক্ ধ্বনি। এই একঘেয়ে দোলাগুলোকে গুচ্ছ ভিন্নভাবে দোলায়িত করে,বড় দোলা সৃষ্টি করলে ছন্দের অবয়ব পাওয়া যায়।

ঘড়ির সেক্ন্ডের শব্দ অনুসরণে সৃষ্ট ১ ২ ৩ ৪ ৫ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫...অনন্ত দোলা। একে যদি নিজের মতো করে গুচ্ছবদ্ধ করে বড় দোলা তৈরি করা যায়, তা হলে নতুন ধরনের বড় দোলা তৈরি হবে। এই বড় দোলাগুলোই হলো ছন্দের আদিরূপ। যেমন-
     ১  ২  ৩। ৪  ৫  ৬। ৭ ৮ ৯। ১০  ১১  ১২। ১৩ ১৪ ১৫।

এখানে কিছু গুচ্ছবদ্ধ দোলাকে নিয়ে বড় দোলা তৈরি করা হয়েছে। এই বড় দোলাগুলোকে যদি পৃথক বড় দোলা তৈরি করা যায়, তা হলে তা হবে ছন্দ। যেমন-
১   ২  ৩। ৪   ৫   ৬।
৭   ৮  ৯। ১০  ১১  ১২।
১৩ ১৪ ১৫। ১৬  ১৭  ১৮।
১৯ ২০ ২১। ২২  ২৩  ১৪।
এই ছন্দের বড় ছক হয়েছে ৬টি দোলা দিয়ে। এই ৬টি দোলা বিভাজিত হয়েছে ৩টি দোলার দ্বারা। কবিতার ক্ষেত্রে ৬ মাত্রার দোলার খণ্ডিত অংশগুলোকে বলা হয় পর্ব। গানের ক্ষেত্রে এর নাম পদ। ছন্দের পর্ব বা পদগুলো নানা ধরনের দোলায় সাজানো যেতে পারে। এরই সূত্রে ছন্দের প্রকৃতি পালটে যায়। ৬টি দোলা নিয়ে তৈরি ছন্দ হতে পারে- ।৬।, ২/৪, ৩/৩, ৪/২ ইত্যদি।

সময়ের নিরিখে ছন্দের মানকে প্রাথমিকভাবে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ দুটি হলো- অনিয়মিত ও নিয়মিত।

দোলার নিয়মিত বা অনিয়মিত গুচ্ছব্দ্ধ রূপই ছন্দের রূপকে প্রকাশ করে। শিল্পকর্মের প্রকরণভেদে ছন্দের প্রকাশিতরূপে ভিন্নতা তৈরি করে। যেমন গানের ছন্দ, কবিতার  ছন্দ, চিত্রকর্মের ছন্দ দোলার আদর্শিক রূপ এক হলেও শিল্পকর্মের মাধ্যমের বিচারে তা ভিন্ন ভিন্ন মনে হয়।

সুরের ছন্দ
সুরের ছন্দ তৈরি হয় সুরের প্রবাহের সূত্রে। সুরের মৌলিক ধ্বনিগত উপাদন হলো স্বর, আর সময় মাপক একক হলো মাত্র। 

ধরা যাক, বংশীবাদক ১৬টি আনন্দদায়ক সুর বাজালেন। এই স্বরগুলো হতে পারে

সা দা পা দা মা পা জ্ঞা মা পা মা জ্ঞা মা জ্ঞা ঋ সা সা।

এই স্বরগুলোর প্রতিটির ভিতরের সময় দূরত্ব যদি সমান হয়, তা হলে প্রতিটি স্বরের সমন্বয়ে একটি দোলা কাজ করবে। এই দোলার নকশা নিচের চিত্রের মতো হতে পারে।

প্রতিটি স্বরের মধ্যবর্তী সময় যতটা ছোটো হবে, তার দোলাও ততট কম হবে। এই কারণে রাগসঙ্গীতে দ্রুত সপাট তান যান্ত্রিক মনে হয়। কিন্তু বহু আনন্দ মিলে একটি মিশ্র আনন্দের জন্ম দেয়। ফলে সপাট তান শুনে কান জুড়িয়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে 'আমি' এই দোলাকে অনুভব করতে পারে না। ছন্দের খেলা অনুভব করা যায় বড় বড় দোলে। কারণ আমি তাকে শনাক্ত করতে পারে স্বস্তির সাথে।

দোলাকে অনুভব করতে হলে, প্রতিটি দোলার ভিতরে একটি বিরতি রাখা দরকার। এই বিরতি আনন্দের এক ঘেঁয়েমি থেকে মুক্তি দিয়ে, বৈচিত্র্য প্রদান করে। শিল্পী এই কাজটি করবেন সৌন্দর্য সৃষ্টির জন্য। সৌন্দর্যের উপাদানসমূহের ভিতরে বিরতি থাকাটা দরকারি। চিত্রশিল্পে দর্শন-বিরাম যেমন দরকার, সঙ্গীতের ক্ষেত্রের শ্রবণ-বিরামটা দরকার। এর জন্য স্বর-উৎপাদন বন্ধ করার প্রয়োজন হতে পারে। কণ্ঠের উচ্চতা-সামান্যতা বা স্বরক্ষেপণ কৌশল দিয়েও তৈরি করা যায়। সঙ্গীতে স্বরসমূহের দ্বারা যে সৌন্দর্য তৈরি করা হয়, তাতে বৈচিত্র্য আনার জন্য, আনন্দের ছোটো ছোটো গুচ্ছ তৈরি করা হয়। এর ফলে বড় বড় দোলার সৃষ্টি হয়। ধরা যাক উপরের স্বরগুলোর ভিতর থেকে চারটি করে স্বর নিয়ে চারটি দল করা হলো। এক্ষেত্রে এর রূপ হবে

সা দা পা দা   |    মা পা জ্ঞা মা    |   পা মা জ্ঞা মা   |    জ্ঞা ঋা সা সা।

এর ফলে চারটি দোলা নিয়ে চারটি দল তৈরি হবে। একে বলা যেতে পারে গুচ্ছদোলা। গানের পরিভাষায় হবে চার মাত্রার দল। এর দ্বারা হবে চতুর্মাত্রিক দোলা। সুরের বিচারে চতুর্মাত্রিক ছন্দ। এক্ষেত্রে নকশাটা একটু পাল্টে যাবে। নন্দনতত্ত্বের বিচারে সময়ের ভিত্তিতে স্বরে পরিবর্তনের  গুচ্ছদোলা তৈরি করবে আনন্দের দোলা। সঙ্গীতের ক্ষেত্রে বলা হবে মাত্রাগুচ্ছের দোলা তৈরি করবে ছন্দের দোলা। তালের বিচারে এই গুচ্ছবদ্ধ দোলাকে বলা হবে পদ।

কবিতার ছন্দ
কবিতার ছন্দ হলো- কবিতার ধ্বনিসমূহের শৃঙ্খলিত নান্দনিক রূপবিন্যাস। কবিতার প্রতিটি চরণে যে বর্ণসমূহ রয়েছে, তার উচ্চারণে ধ্বনি-দোলা তৈরি করে। এই দোলাসমূহ গুচ্ছবদ্ধ করে ছন্দ তৈরি করে। ধরা যাক একটি কবিতার চরণ- .মহাভারতের কথা অমৃত সমান'।

হা ভা তে থা মৃ মা
১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪

এখানে ১৪টি ধ্বনি নিয়ে ধ্বনিগুচ্ছ তৈরি হয়েছে, তা হবে একটি অখণ্ড ছন্দ। এর প্রতিটি দোলাকে বলা হবে মাত্রা। এবার ১৪ মাত্রার এই ছন্দের মধ্যে একটি বিরতি দিয়ে ছন্দটিকে ভাগ করা যায়, তাহলে এর লিখিত রূপ হবে-

হা ভা তে থা মৃ মা
  ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪

এক্ষেত্রে কবিতার প্রতিটি ধ্বনিগুচ্ছ দুটি ছন্দে বিভাজিত হয়ে যাবে। পুরো বাক্যটি হবে ৬/৪ ছন্ধে নিবদ্ধ। কবিতার ক্ষেত্রে প্রতিটি ভাগকে বলা হয় পর্ব। এই বিচারে কবিতার এই চরণটির ছন্দ হিসেবে বলা হবে- ৬/৪ পর্বের ছন্দ। ছন্দের বিরতিকে বলা হবে 'ছন্দ-যতি'। সাধারণ কবিতার মাঝের যদি হয় অল্পক্ষণের জন্য। একে বলা হয় অল্প-যতি। কিন্তু কবিতার একটি চরণ শেষ হওয়ার পর একটু বড় যতি নেওয়া হয়। একে বলা হয় দীর্ঘ যতি। কবিতার  হ্রস্ব যতি নেওয়া অংশকে বলা হয় পর্ব। কবিতার পর্বগুলো উচ্চারণের সময় পর্বের প্রথম বর্ণের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়। একে বলা হয় শ্বাসাঘাত। এই বিচারে  মহাভারতের কথা অমৃত সমান'-এর ধ্বনিলিপি হবে-

                         
হা ভা তে থা মৃ মা
  ১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪

কবিতার মাত্রা নির্ধারণে ধ্বনি-ঝোঁক একটি বড় ভূমিকা রাখে। এই ধ্বনি-ঝোঁককে বলা হয় অক্ষর। উল্লেখ্য, কবিতায় বর্ণ আর অক্ষর সমার্থক নয়। এখানে বর্ণ হলো- ধ্বনির মৌলিক ধ্বনিসংকেত। অ, আ, ক্, খ্‌, গ্ ইত্যাদি হলো বর্ণ। পক্ষান্তরে অক্ষর হলো- স্বল্পতম প্রয়াসে বা এক ঝোঁকে শব্দের যে অংশটুকু উচ্চারিত হয়। এর সমার্থক ইংরেজি শব্দ হলো- syllable। বিষয়টি নির্ভর করে ধ্বনিটি কিভাবে উচ্চারিত হবে। ধরা যাকটি শব্দ 'আঁধার'।

কবিতার মাত্রার সময়, গানের মাত্রার সময়ের মতো কঠোর নিয়মে বাঁধা নয়। কবিতার মাত্রা নির্ধরিত হয়-এক বর্ণ বা একক অক্ষরের বিচারে। এতে প্রতিটি বর্ণ বা অক্ষর যে একই সময় বিরতীতে উচ্চারিত হবে এমন বাঁধাধরা নিয়ম নেই।

সাধারণভাবে অক্ষর এই নির্ধরিত হলেও বাংলা কবিতায় ছন্দের পাঠ একই রকমের হয় না। বর্ণ বা অক্ষরের এককের বিচারে বাংলা কবিতাকে ৩টি ভাগে ভাগ করা হয়। এই ভাগ তিনটি হলো- স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্ত।

ভারতীয় কাব্যশাস্ত্রের ক্রমবিকাশের ধারা
ভারতীয় আর্যদের কাব্য ও সঙ্গীতের উৎস হিসেবে বিবেচনা করা হয় বেদকে। এর শুরু হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১২০০ অব্দের দিকে ঋগ্বেদের আদি সূক্তের মাধ্যমে। এই সময় আর্যপল্লীর লৌকিক গান এবং অনর্যদের লোকসঙ্গীতের ছন্দ কিরূপ ছিল- প্রমাণাভাবে তা জানা যায় না। তাই ভারতীয় কাব্যশাস্ত্রের ছন্দের প্রামাণ্য রূপ হিসেবে- বেদের ছন্দকেই উল্লেখ করতে হয়।

ভাষার ক্রমবিবর্তনের ধারায় বৈদিক ভাষা রূপান্ত্রিত হয়েছিল সংস্কৃত ভাষায়। একই সাথে সংস্কৃত ভাষার সাথে অনার্যভাষার সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছিল প্রাকৃত ভাষার। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাকৃতি ভাষাগুলো থেকে জন্ম নিয়েছিল বাংলা, হিন্দ, অহমিয়া, উড়িয়া ইত্যাদি স্বতন্ত্র ভাষা। ভারতীয় ভাষার ক্রমবিবর্তনের ধারায়- ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের ছন্দবদ্ধ লোকসাহিত্যের ধারায় সৃষ্টি হয়েছিল স্বতন্ত্র ছন্দ। এই ছন্দগুলোকে শনাক্ত করার জন্য আমরা প্রায়ই ব্যবহার করে থাকি ভাষার নামে। যেমন- বাংলা ছন্দ, মৈথিলি ছন্দ, হিন্দি ছন্দ ইত্যাদি।

বাংলা কাব্যের ছন্দের সূচনা হয়েছিল চর্যাপদের মধ্য দিয়ে। তারপর ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছিল বাংলার আদি ছন্দগুলো। সেখানে সংস্কৃত ছন্দের অক্ষর ও তার মাত্রাভিত্তিক বিন্যাসের কোনো প্রভাব নেই। যদিও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মতো কেউ কেউ সংস্কৃত ছন্দের আদলে বাংলা কবিতা রচনা করেছিলেন, কিন্তু তা শেষ প্রযন্ত প্রতিষ্ঠা বা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে নি।

সংস্কৃত ছন্দের অক্ষরভিত্তিক ছন্দবিন্যাসের আদলে নজরুল রচনা করেছিলেন ৯টি তাল। এই তালগুলোর প্রকৃতি বিশ্লেষণ করতে গেলে- সংস্কৃতি ছন্দ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা থাকা আবশ্যক। আবার বাংলার গানের ছন্দ বুঝতে গেলে- বাংলা কাব্যের ছন্দ সম্পর্কে কিছুটা জানা থাকা প্রয়োজন। কারণ রবীন্দ্রসৃষ্ট তালের মূলে ছিল বাংলা কবিতার ছন্দানুসারে গানে তালের ব্যবহার।

কাব্যের ছন্দ ও সঙ্গীতের ছন্দ
কাব্যের ধ্বনি প্রবাহের দোলাকে সমন্বিত করার মাধ্যমে কবিতার ছন্দ তৈরি হয়। পক্ষান্তরে সুরের প্রবাহের দোলাকে  সমন্বিত করে সঙ্গীতের ছন্দ তৈরি করে। কবিতার ছন্দ সমসময়ের আবর্তিত হয় না, সঙ্গীতের ছন্দ সম-সময়ের আবর্তিত হয়। সম সময়ের সমপ্রকৃতির ছন্দের আবর্তনে যে কোনো তাল হয়ে উঠতে পারে।

সঙ্গীতের তাল ও ছন্দ
সম-সময়ে সম-প্রকৃতির ছন্দের আবর্তিত প্রবাহকে সঙ্গীতশাস্ত্রে তাল বলা হয়। সুরের ছন্দিত প্রবাহকে শৃঙ্খলিত করা জন্য, তালের ব্যবহার করা হয়। অসীম গুচ্ছদোলার প্রবাহে সৃষ্ট ছন্দ, কিছু বিধি দ্বারা শৃঙ্খলিত এবং রূপান্তরিত দশায় সঙ্গীতে তাল হয়ে ওঠে। সঙ্গীতের তাল এ ক্ষেত্রে যে বিধিগুলো দ্বারা শৃঙ্খলিত হয়, তা হলো-

১. তাল ধ্বনিময়। একে কখনো কখনো ইশারায় প্রকাশ করা যায় বটে, কিন্তু ধ্বনি ছাড়া তা পূর্ণাঙ্গতা পায় না।
২. তালের রয়েছে সুনির্দিষ্ট ছন্দ, যা সম-সময়ে আবর্তিত হয়।
৩. আবর্তিত ছন্দসমূহ প্রবাহিত হয়, সুরের প্রবাহকে সুষম গতির শৃঙ্খলে।
৪. তালের মাত্রাসমূহের সময় মানকে বলা হয় লয়। একটি সুনির্দিষ্ট লয়ে বাঁধা তালকে কখনো কখনো দ্বিগুণ, তিনগুণ, চারগুণ ইত্যাদি করা যায় বটে, তবে আদি লয়ের আদর্শে করা হয়।

তালের ছন্দ হলো- কিছু দোলার সমষ্টি। যেমন ১, ২, ৩,, ৫, ৬... একটি দোলা প্রবাহ। এই দোলা প্রবাহী অসীম। এই দোলা প্রবাহ থেকে সুনির্দিষ্ট সংখ্যক দোলা নিয়ে যখন গুচ্ছবদ্ধ একটি বড় দোলার তৈরি করা হয়, তখন তা ছন্দে পরিণত হয়। এক্ষেত্রে আমরা ছন্দের দোলাকে দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি।
        ১. মৌলিক দোলা: এই দোলা স্বাধীনভাবে একক সত্তা নিয়ে অবস্থান করে।
        ২. যৌগিক দোলা: যা একাধিক দোলার সমন্বয়ে বড় দোলার সৃষ্টি করে।

এক্ষেত্রে যৌগিক দোলা নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি যতি বা বিরাম তৈরি করতে হয়। যেমন- একটি অসীম দোলা থেকে যদি তিনটি দোলা নিয়ে একটি দোলাগুচ্ছ তৈরি করা যায়, তবে তা হবে-
                            |১, ২, ৩|
এই দোলাগুচ্ছ একটি ছন্দ তৈরি করবে। এই অসীম দোলা প্রবাহকে একটি ছকে ফেলে দেবে। আর এই ছক তৈরি হবে একটি যতির মাধ্যম। যেমন-
                             |১, ২, ৩| ৪, ৫, ৬| ৭, ৮, ৯| ১০, ১১, ১২|.....অসীম

এক্ষেত্রে প্রতিটি ৩টি দোলাবিশিষ্ট দোলাগুচ্ছের পর একটি করে যতি দিতে হবে, তাহলেই  ৩টি দোলাবিশিষ্ট বড় দোলাটি ছন্দে পরিণত হবে।  এই বড় দোলাটি যখন আবর্তিত হবে, তখন তা তালে পরিণত হবে।

ছন্দ:  ধা গে তে টে। না ক ধি না।
এখানে ছন্দ আছে কিন্তু আবর্তন নেই। তাই এটি তাল নয়।

তাল:  ধা গে তে টে। না ক ধি না। ধা
এখানে ৪।৪ মাত্রার ছন্দকে আবর্তনের পথ দেখিয়েছে 'ধা'।

চিত্রের ছন্দ
রেখা ও রঙ ছবির ছন্দের মূল উপাদান। সচল দৃশ্যের গতি বোঝা যায়, তার চলনের মধ্য দিয়ে। মন না চাইলেও বলতেই হয়, দৃশ্যটির ভিতরে গতি আছে। কিন্তু অচল দৃশ্যের গতি লুকিয়ে থাকে। ত্রিমাত্রিক জগতের বিচারে অচল দৃশ্য বলি বটে, কিন্তু গতিময় মনে তাই সচল হয়ে উঠে। রঙ ও রেখার ভিতর দিয়ে মনোলোকে আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। আন্দোলনের সুসমন্বিত দোলায় ছবির ছন্দ প্রকাশ পায়।

প্রকৃতির দৃশ্যমান জগতে অফুরন্ত ছন্দের খেলা যতটা না প্রকৃতির, তার চেয়ে বেশি মনের। প্রকৃতির ছন্দকে মানুষ ভালোবাসতে শিখেছে সহজাত প্রবৃত্তিতে। মানুষের ক্রমবিবর্তনের ধারায় এই ছন্দকে উপভোগ করার ক্ষমতা জন্মেছে বহুকাল ধরে। মানুষের জিনকোডে এই ছন্দ উপভোগের ক্ষমতা লিখিত হয়েছে নানা আঙ্গিকে।

প্রকৃতির বিভিন্ন উপকরণসমূহের স্থানান্তরের মধ্য দিয়ে যে ছন্দের সৃষ্টি হয়, তাকে বলা যায় সচল ছন্দ। এই ছন্দ 'আমি' উপভোগ করে উড়ন্ত পাখির ডানা ঝাপটানো, ঝর্নার জল গড়িয়ে পড়া, নদীর ঢেউ, বাতাসে গাছের শাখার আন্দোলন, মৌমাছির ফুলে ফুলে আনাগোনা ইত্যাদি দেখে। আর অচল ছন্দ উপভোগ চাঁদ কিম্বা চাঁদের আলো, সারিবদ্ধ দূর-পাহাড়ের দৃশ্য, খোলা আকাশ ইত্যাদি দেখে।

চিত্রের ছন্দ উপস্থাপিত হয় রঙ ও রেখায়। এর সাথে যুক্ত থাকে অন্যান্য সহায়ক উপকরণ। তবে গুরত্বের বিচারে কোনটিই ফ্যালনা নয়।

রেখার ছন্দ
চিত্রের আদি উপকরণ বিন্দু। কিন্তু একক বিন্দু কোনো ছন্দের সৃষ্টি করে না। একাধিক বিন্দু দিয়ে ছন্দের সৃষ্টি হয়, তাতে রেখাটাই মূখ্য ভূমিকা পালন করে। এক্ষেত্রে বিন্দুগুলো একত্রে মিশে গিয়ে দৃশ্যত একটি রেখা তৈরি করে। যে ক্ষেত্রে বিন্দুগুলো বাস্তব রেখা তৈরি করে না, সেখানে মন বিন্দুসমূহের ভিতরে ফাঁকা জায়গা পূরণ করে রেখার জন্ম দেয়।

 

ধরা যাক, একটি সাদা কাগজে চোখে পড়ার মতো একটি কালো বিন্দু আছে। কেউ যখন এই বিন্দুর দিকে তাকাবে তখন সাদা প্রেক্ষাপটে কালো বিন্দুটি ভালো লাগবে। অবশ্য সাদা রঙের সাথে কালোরঙের বিন্দু দেখার যুগপৎ একটি গতি পাওয়া যাবে। কিন্তু বিন্দুর বিচারে দৃশ্যটি হবে প্রকৃতই স্থির। সাদা রঙকে অগ্রাহ্য করলে এই একটি বিন্দু হবে স্থির এবং একাগ্রতার প্রতীক। এবার যদি পাশাপশি দুটি বিন্দু আঁকা যায়। তাহলে দৃষ্টি দুদিকেই যাওয়া আসা করবে। ফলে একটি আনোগোনার গতি সঞ্চারিত হবে। এর ভিতর দিয়ে একধরনের রৈখিক গতি লাভ করবে। এই রৈখিক গতিই জন্ম দেবে একটি কল্প রেখা। বিন্দু নানাভাবে মনকে রেখা আঁকতে সাহায্য করে। ধরা যাক দুটি অনুভূমিক বিন্দুর নিচে আর একটি বিন্দু আঁকা হয়েছে। দৃষ্টি তিনটি বিন্দুকেই দেখবে একটি চলমান প্রক্রিয়ায়। দৃষ্টির গতির সূত্রে তিনটি রৈখিক গতির সৃষ্টি হবে।

রাতের আকাশে যে বিন্দু বিন্দু তারার আলো ফুটে থাকে, জ্যোতির্বিজ্ঞানীর তার অনেকগুলো তারার বিন্দুকে রৈখিক অনুভূতি দিয়ে নান রকম চিত্র কল্পনা করে নিয়েছেন। এর কোনোটি মেষের মতো কোনোটি ষাঁড়ের মতো। এই সব বিন্দু মূলত দেখার ভিতরে গতির সঞ্চার করে। এবং এর ভিতর দিয়ে মনের প্রেক্ষাপটে রেখার জন্ম দেয়।

সাধারণ জ্যামিতিতে রেখাকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়। এর একটি সরল, অপরটি বক্র। সরলরেখার গতি একমুখি, তাই তার ছন্দটা ধরা পড়ে না। কিন্তু চলমান সরলরেখার গতিপথের দিক পরিবর্তন ঘটলে, ছন্দটা অনুভব করা যায়। সমদূরত্বে যদি গতিপথের পরিবর্তন ঘটে তাহলে একটি সমদোলার সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে একটি উদাহরণ হতে পারে জিগজ্যাগ রেখা

এই রেখার বিন্যাসে দেখার কার্যক্রমে তরঙ্গের সৃষ্টি করে। কিন্তু এর গড় মান থাকে মধ্যবর্তী অনুভূমিক রেখা অনুসরণ করে। দেখার ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি দোল সৃষ্টি হয় বক্র রেখার তরঙ্গে। নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করলে তা অনুভব করা যায়।

কিন্তু শিল্পীর হাতে বক্র রেখা যে কতটা ছন্দময় হয়ে উঠতে পারে, তার কয়েকটি নমুনা নিচে দেখানো হলো।
 


ছবির মিল (Harmony)
রেখা এবং রঙ দিয়ে যে ছবি তৈরি হয়, তার ভিতরে দৃশ্যমান যা থাকে, সেগুলো ছবির উপাদান। এর একটি হলো কাঠামোগত উপাদান। যেমন একটি পাখির কাঠামোগত হবে এর রেখা এবং এর রঙ। কিন্তু উভয় মিলে তৈরি হবে পাখি নামক একটি চিত্র সত্তা। একইভাবে তৈরি হবে গাছ, মেঘ ইত্যাদি। এখন একটি ছবিতে যদি পাখি, গাছ ও মেঘ থাকে। তাহলে এক্ষেত্রে তিনটি দৃশ্যত পূর্ণ উপাদান ব্যবহার করা হবে। এই তিনটি উপাদানের বাইরে যা কিছু থাকবে, তা হবে তার প্রেক্ষাপট। প্রেক্ষাপটের রঙ হবে এই ছবির ক্ষেত্রে কাঠামোগত উপাদান। এই তিনটি পূর্ণ উপাদান এবং একটি কাঠামোগত উপাদানকে এমনভাবে সাজাতে হবে যেনো দর্শক তা দেখে আনন্দলাভ করতে পারে। আবার মূল ছবিতে একটি বিশিষ্টমাত্রা যুক্ত করার জন্য বাড়তি কিছু যুক্ত করা হয়। যেমন একটি ছবির চারপাশে সীমারেখাকে অনেক সময় নানা উপাদান যুক্ত করা হয়। একে বলা হয়, আলঙ্করিক উপাদান। ছবির ক্ষেত্রে এ সবই করা হয়, মনের গভীরে আনন্দের দোলা সৃষ্টি করার জন্য। আর এর জন্য প্রয়োজন হয় সজ্জাকরণ। ছবির সকল উপাদানের নিজস্ব আনন্দ থাকে। আর সকল আনন্দের সমন্বয়ে যে দোলার সৃষ্টি হবে, সেটাই হবে ছবির ছন্দ। আর এই সমন্বয় করা বা সাজানোর কাজকে বলা হয় সজ্জাকরণ
(arrangement)

বিভিন্ন প্রয়োজনে চিত্রশিল্পী পূর্ণ-উপাদান, প্রেক্ষাপট এবং আলঙ্করিক উপাদান সাজিয়ে থাকেন। সাজানোর ক্ষেত্রে শিল্পীরা যে বিষয়গুলোর দিকে বিশেষভাবে নজর দেন, তা হলো ভারসাম্য, সজ্জারীতি ও সমানুপাত।
  • ভারসাম্য (Balance): দাড়িপাল্লার একটি প্রান্তে ভারি কিছু রেখে, অন্য প্রান্তে অপেক্ষাকৃত হাল্কা বস্তু রাখলে, এর পাল্লা একদিকে নেমে পড়ে। এই অবস্থায় ভারসাম্য রক্ষ হয় নি বলেই ধরে নেওয়া হয়। চিত্রের ক্ষেত্রে ভারসাম্যটাও সেই রকম। চিত্রের কেন্দ্রবিন্দু থেকে উভয় দিকে অবস্থিত লক্ষ্যবস্তুর ভারসাম্য রক্ষা করা হয়, তাদের আকার এবং ওজনের বিচারে। প্রকৃতিতে ভারসাম্য লক্ষ্য করা যায় প্রজাপতি বা পতঙ্গের পাখার অবস্থানে। এদের দেহকাণ্ড কেন্দ্রে থাকে। প্রসারিত পাখা থাকে দুই পাশে ছড়ানো।

প্রজাপতির ছবি আঁকতে গেলে, শিল্পী এই ভার সাম্য রাখেন প্রকৃতিকে অনুসরণ করে। কিন্তু নানা রকমের বস্তু দিয়ে শিল্পী যখন একটি চিত্রকর্ম করেন, তখন ভারসাম্যটা তিনি রাখেন, ছবির ছন্দপতন রোধ করার স্বার্থে। এই ভারসাম্যকে মূলত তিনটি সূত্রে রক্ষা করা হয়। এগুলো হলো

  • প্রত্যক্ষ ভারসাম্য (Formal balance): এই জাতীয় ভারসাম্যের কেন্দ্রের দুই পাশে সম আকার এবং সম ওজনের বস্তু রাখা হয়। এর ফলে একটি সুষম ছন্দের সৃষ্টি হয়।

  • অপ্রত্যক্ষ ভারসাম্য (Informal balance): কোনো কেন্দ্রের দুই পাশে যদি দুটি অসম আকার এবং অসম ওজনের বস্তু রাখা হয়। তাহলে একটি ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়। এই অসুবিধা দূর করার জন্য প্রথমে পুরো চিত্রের একটি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। এরপর হাল্কা বা ছোটো বস্তুকে রাখা হয় কেন্দ্র থেকে দূরে এবং ভারি বা বড় বস্তুকে রাখা হয় কেন্দ্রের কাছে। তবে কেন্দ্র থেকে উভয় বস্তুর কোনটি কতদূরে রাখা হবে, তা নির্ধারণ করবেন শিল্পী তার ছন্দবোধ থেকে।

উপরের ছবির মতো করে শিল্পী ছবির কেন্দ্রকে চিহ্নিত করে দেন না। অভিজ্ঞ দর্শক এই জাতীয় ছবির কেন্দ্র কোথায় হতে পারে বিবেচনা করে নেন। একটি নদীর ছবিতে একটি নৌকা কোথায় আঁকলে ছবির ভারসাম্য রক্ষা পাবে, তা শিল্পী মাত্রই জানেন। কিন্তু সেই সাথে দর্শকের যদি এ বিষয়ে ধারণা থাকে, তা হলে ছবি, শিল্পী এবং দর্শক একই ছন্দের তরঙ্গে অবগাহন করতে পারবেন। 

  • অক্ষীয় ভারসাম্য (Radial Balance): উপরের দুটি ভারসাম্য বিবেচনা করা হয়, দৈর্ঘ্য-প্রস্থের বিচারে। কিন্তু বৃত্তাকার বস্তুর ভারসাম্য বিবেচনা করা হয়, বৃত্তের কেন্দ্রের বিচারে।

  • সজ্জাশৈলী (arrangement style)
    প্রকৃতির ছন্দের আদলে মানুষ যে ছন্দ তৈরি করে, তাকে কৃত্রিম ছন্দ বলা যায়। কৃত্রিম ছন্দশিল্পী প্রথমে মনের প্রেক্ষাপটে আঁকে, তারপর তাকে বাস্তব কোনো প্রেক্ষাপটে চিত্রিত করে। নানাভাবে শিল্পী চিত্রের ছন্দকে উপস্থাপন করেন। যেমন
     

    • পুনরাবৃত্তিজনিত ছন্দ: এক্ষেত্রে একই চিত্রকে বার বার ব্যবহার করে, দৃষ্টির মধ্যে গতি আনা হয়। এর ফলে একটি ছন্দের সৃষ্টি হয়। পুনরাবৃত্তির প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, ছন্দের নানা প্রকরণ হতে পারে। যেমন

    • সম-পুনরাবৃত্তিজনিত ছন্দ: এক্ষেত্রে একই চিত্রের অভিমুখ না পাল্টিয়ে বার বার ব্যবহার করে, দৃষ্টির মধ্যে গতি আনা হয়। এর ফলে একটি সুষম ছন্দের সৃষ্টি হয়। বাড়ির দেওয়ালে কোনো মূল চিত্রের চারাপাশে বা আল্পনাতে এই পুনরাবৃত্তিজনীত ছন্দ লক্ষ্য করা যায়।  পুনরাবৃত্তির প্রকৃতির উপর নির্ভর করে, ছন্দের নানা প্রকরণ হতে পারে। যেমন

  • ক্রমবৈপরীতের পুনরাবৃত্তিজনীত ছন্দ: এক্ষেত্রে একই চিত্রের অভিমুখ পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করে ছন্দ তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে একটি চিত্রের অভিমুখ পাল্টিয়ে দৃষ্টিতে বৈচিত্র্য সৃষ্টি করা হয়। ফলে একঘেয়েমি থেকে চোখ কিছুটা বিরাম পায়। ক্রমবৈপরীত্যের সৃষ্ট চিত্রকল্পে ছন্দের দোলা চলে উলম্ব এবং অনুভূমিক দিকে পর্যায়ক্রমিক দোলে। কিন্ত একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, দুটি বিপরীতমুখী লক্ষ্যবস্তু একটি 'একক' সৃষ্টি করে এবং এই 'একক'টিরই পুনরাবৃত্তি ঘটে। এই ক্ষেত্রে দুই ধরনের ছন্দ সচল থাকে। ফলে কোন ছন্দটি সে গ্রহণ করবে, তা বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে দর্শকের। নিচে এর একটি নমুনা দেওয়া হলো।
  • ক্রমোন্নতির ছন্দ: এক্ষেত্রে একটি  চিত্রের অভিমুখ ঠিক রেখে পর্যায়ক্রমে আকার পরিবর্তন করে ছন্দ তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রেও একঘেয়েমি থেকে চোখ কিছুটা মুক্তি দেয়, কিন্তু ছন্দ একটি অসীম লক্ষ্যের দিকে ছুটে চলে।