এ্যাকিলিস
গ্রিক
Ἀχιλλεύς
ইংরেজি
Achilles
>
বাংলা
এ্যাকিলিস।
গ্রিক পৌরাণিক চরিত্র।
মায়ের নাম জলদেবী (নেরেইদ)
থেটিস
এবং পিতা ছিলেন মিরমিডনের
রাজা পেলেউস।
থেটিস
অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন। এই
কারণে
জিউস এবং
পোসেইডোন তাঁকে বিবাহ
করার আগ্রহ দেখান।
কিন্তু
প্রাকৃতিক নিয়মকানুন নিয়ন্ত্রণকারিণী দেবী
থেমিস
এক ভবিষ্যৎ বাণীতে বলেন যে,
থেটিসের গর্ভজাত পুত্র তাঁর পিতার চেয়ে বেশি ক্ষমতাবান হবেন। তাই
জিউস এবং
পোসেইডোন
থেটিসকে বিবাহ করার ইচ্ছা ত্যাগ করেন। একই কারণে কোনো দেবতাই তাঁকে বিবাহ করতে রাজি
হন নি। তিনি দেবতার
পরিবর্তে মরণশীল মানবসন্তানকে বিবাহের সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত অনুসারে তিনি
বিবাহ করেন পেলেয়ুস নামক একজন মানবসন্তানকে। উল্লেখ্য কোন কোন মতে এই
ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন
প্রোমিথেয়ুসসসসস
বা ক্যাল্কাস। পেলেয়ুসের সাথে বিবাহের পর, তাঁরা পেলিওন
পর্বতে বিবাহ উৎসব পালন করেন এবং পেলেয়ুসের ঔরসে, তাঁর গর্ভে এ্যাকেলিসের জন্ম
হয়েছিল।
খ্রিষ্টীয় প্রথম শতকে স্ট্যাটিয়াস রচিত অ্যাকিলেইড-এর অ্যাকিলেইস খণ্ডাংশ থেকে
জানা যায়, অ্যাকিলিসের জন্মের পর, সন্তানকে অমর করার জন্য
থেটিস
এ্যাকেলিসের পায়ের গোড়ালি ধরে, স্টিক্স নদীতে একবার নিমজ্জিত করেন।
থেটিস
গোড়ালির যে অংশ ধরে ছিলেন, সেই অংশে নদীর পানি স্পর্শ না করায় অমরত্ব লাভ করতে
পারে নি।
এ্যাকিলিস যুদ্ধবিদ্যা শিখেছিলেন সেন্টায়ুর্সদের দলনেতা চিরোন-এর কাছে। অচিরেই তিনি
গ্রিকের প্রখ্যাত বীর হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। ট্রয়যুদ্ধের জন্য গ্রিকরা সমবেত হতে
থাকলে, গ্রিকরা এ্যাকিলিসের সন্ধান করতে থাকে। কিন্তু
থেটিস
আগে থেকেই জানতেন যে, ট্রয়যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলে, একিলিসের মৃত্যু হবে। তাই তিনি
এ্যাকিলিসকে রাজা লাইকোমেডেসে-র প্রাসাদে নারীর পোশাক পরিয়ে, প্রাসাদের নারীদের
ভিতর লুকিয়ে রাখেন। শেষ পর্যন্ত ওডিসিয়াস কৌশলে তাঁর সন্ধান পান এবং ট্রয়যুদ্ধে
অংশগ্রহণে রাজি করান।
হোমারের ইলিয়াড মহাকাব্যের শুরুতেই দেখা যায়, আকিয়ান বাহিনীর প্রধান সেনাপতি
আগামেনন এ্যাকিলিসকে অপমান করে। এই কারণে অ্যাকিলিসের যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে
নেন। উল্লেখ্য, আগামেনন ক্রিসেইস নামের একটি মেয়েকে ক্রীতদাসী করে রেখেছিলেন।
মেয়েটির বাবা ক্রিসেস ছিলেন অ্যাপোলোর পুরোহিত। তিনি আগামেননের কাছে নিজ কন্যাকে
ভিক্ষা চাইলে, অ্যাগামেনন তাকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন। এতে অ্যাপোলো ক্রুদ্ধ
হয়ে গ্রিকদের মধ্যে মহামারী প্রেরণ করেন। ভবিষ্যদ্বক্তা ক্যালকাস এই দুর্বিপাকের
কারণ সঠিকভাবে অনুধাবন করেন এবং ক্যালকাস ঘোষণা করেন যে ক্রিসেইসকে তার পিতার কাছে
ফেরত পাঠাতে হবে। আগামেনন রাজি হন। কিন্তু বদলে আদেশ করেন, এ্যাকিলিসের যুদ্ধোপহার
ব্রিসেইসকে ক্রিসেইসের বদলে তাঁর কাছে পাঠাতে হবে। এতে এ্যাকিলিস অসম্মানিত হন,
কারণ, অ্যাকিলিস ব্রিসেইসকে ভালবাসেন। এরপর এবং থেটিসের প্ররোচনায় এ্যাকিলিস যুদ্ধ
করতে বা তাঁর সেনাদের অন্যান্য গ্রিক সেনাদের সঙ্গে পরিচালনা করতে অস্বীকার করেন।
একিলিসের অনুপস্থিতিতে যুদ্ধ গ্রিকদের বিপক্ষে চলে যেতে থাকে। যুদ্ধে জয় লাভের জন্য
এ্যাকিলিসের যুদ্ধে যোগদান করাটা অপরিহার্য এমন ঘোষণা নেস্টর। আগামেনন বাধ্য হয়ে,
ওডিসিয়াস ও অন্য দুই গ্রিক প্রধানকে ব্রিসেইস ও অন্যান্য উপহার হিসেবে এ্যাকিলিসের
কাছে পাঠান। কিন্তু অ্যাকিলিস প্রত্যাখ্যান করেন এবং জানান যে গ্রিকদের স্বদেশে
প্রত্যাবর্তন করা উচিত।
ট্রয় সেনাপতি হেক্টরের নেতৃত্বে ট্রোজানরা গ্রিক বাহিনীকে হঠিয়ে সৈকত পর্যন্ত
নিয়ে আসে। সেখানে তাঁরা গ্রিক জাহাজগুলি লুণ্ঠন করেন। এমন অবস্থাতেও এ্যাকিলিস
কিন্তু তাঁবুতেই রয়ে যান। ধ্বংসের মুখোমুখি গ্রিক বাহিনীকে রক্ষার জন্য মিরমিডন
বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে আসেন প্যাট্রোক্ল্যাশ। প্যাট্রোক্ল্যাশ ট্রোজানদের
সৈকত থেকে হঠিয়ে দিতে সমর্থ হন। কিন্তু ট্রয় নগরীকে যথার্থভাবে জয় করার আগেই
হেক্টরের হাতে তিনি নিগত হন।
নেস্টরের পুত্র এ্যাকিলিসের কাছে প্যাট্রোক্ল্যাসের মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিনি শোকে
মূহ্যমান হয়ে পড়েন। এ্যাকিলিস তাঁর সম্মানে অন্ত্যেষ্টি ক্রীড়ার আয়োজন
করেন। এই সময় তাঁর মা থেটিস
শোকাহত এ্যাকিলিসকে সান্ত্বনা দিতে এলেন। তিনি হেফাস্টাসকে বলে একটি বর্ম নির্মাণ
করালেন। কারণ এ্যাকিলিসের যে বর্মটি পরে প্যাট্রোক্ল্যাস যুদ্ধে গিয়েছিলেন, সেটি
হেক্টর নিয়ে গিয়েছিলেন।
প্যাট্রোক্ল্যাসের মৃত্যুতে ক্রোধান্বিত অ্যাকিলিস মন পরিবর্তন করেন এবং যুদ্ধে
যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ক্রোধের বশে তিনি অনেককে হত্যা করেন এবং হেক্টরকে খুঁজতে
থাকেন। এমনকি এ্যাকিলিস নদীদেবতা স্ক্যামান্ডারের সঙ্গেও যুদ্ধে লিপ্ত হন।
স্ক্যামান্ডার ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কারণ এ্যাকিলিস নরহত্যা করে মৃতদেহ দিয়ে নদীপথ
রুদ্ধ করে দিচ্ছিলেন। স্ক্যামান্ডার এ্যাকিলিসকে ডুবিয়ে দিতে গেলে
হেরা
ও
হেফ্যাস্টাস
তাঁকে বাধা দেন। এই সময়
জিউস
স্বয়ং এ্যাকিলিসের ক্রোধে বিচলিত হয়ে ওঠেন এবং দেবতাদের পাঠিয়ে তাঁকে শান্ত করার
চেষ্টা করেন।
এথেনা
তিন বার হেক্টরের প্রিয় ভাই ডেইফোবাসের ছদ্মবেশে হেক্টরকে এ্যাকিলিসের সঙ্গে
সম্মুখসমরে যেতে নিষেধ করেন। এ্যাকিলিস ট্রয়ের প্রাচীরের চারিধারে তিন বার
হেক্টরকে ধাওয়া করেন। শেষপর্যন্ত হেক্টর যুদ্ধক্ষেত্রে এ্যাকিলিসের মুখোমুখী হন।
দীর্ঘ যুদ্ধের পর, এ্যাকিলিস হেক্টরকে হত্যা করেন। এরপর হেক্টরের দেহ নিজের রথের
সঙ্গে বেঁধে নয় দিন ধরে যুদ্ধক্ষেত্রময় তা হেঁচড়ে নিয়ে বেড়ান।
প্রিয়ামের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর অ্যাকিলিস আমাজনীয় যুদ্ধনায়িকা
পেন্থেসিলিয়াকে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করেন। প্রথমে পেন্থেসিলিয়ার রূপে মুগ্ধ
অ্যাকিলিস তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাননি। পরে তিনি বুঝতে পারেন পেন্থেসিলিয়ার
রণকৌশল তাঁর অপেক্ষাও উন্নত এবং তাঁর প্রতি আকর্ষণ অ্যাকিলিসের কাছে মারাত্মক হতে
পারে। এই কারণে তিনি যুদ্ধ করেন ও পেন্থেসিলিয়াকে হত্যা করেন। কিন্তু এমন সুন্দরী
নারীকে হত্যা করে তিনি শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন এবং বিলাপ করতে থাকেন।
ট্রয়যুদ্ধের শেষ
পর্যায়ে প্যারিশে নিক্ষেপিত বিষাক্ত তীর এ্যাকিলিসের পায়ের গোড়ালিতে আঘাত করে। এবং
এই আঘাতেই তার মৃত্যু হয়।
সূত্র:
- The
Encyclopedia of Mythology/Arthur Cotterell, 2006
-
greek myth/Robert Graves, cassel & comoany, fourth edition 1995