শ্বেতকি
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { রাজা | পৌরাণিক সত্তা | কাল্পনিকসত্তা | কল্পনা | সৃজনশীলতা | দক্ষতা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

হিন্দু পৌরাণিক কাহিনি মতে জনৈক ধার্মিক রাজা বিশেষ। বহুকাল ধরে তিনি যজ্ঞানুষ্ঠান করায়, যজ্ঞের ধুয়ায় পুরোহিতদের চোখ পীড়িত হয়ে পড়ে এবং যজ্ঞের নিয়মাবদ্ধ রীতিনীতিতে দীর্ঘদিন অতিবাহিত করার কারণে পুরোহিতরা অসহিষ্ণুও হয়ে পড়েন। তাই তাঁরা যজ্ঞানুষ্ঠানে পৌরহিত্য করার অপারগতা প্রকাশ করেন। এতে শ্বেতকি ক্ষিপ্ত হয়ে, অন্যান্য পুরোহিতদের দিয়ে যজ্ঞ শেষ করেন।

এর কিছুদিন পর শ্বেতকি শতবর্ষব্যাপী এক দীর্ঘসত্রের আয়োজন করেন। কিন্তু এই যজ্ঞ সম্পন্ন করার জন্য কোনো পুরোহিতকে পেলেন না। অনেক অনুনয়-বিনয় করার পরও পুরোহিতরা শ্বেতকির ডাকে সাড়া তো দিলেনই না, উপরন্তু তাঁকে মহাদেবকে দিয়ে যাজনকার্য করার কথা বলে ব্যঙ্গ করেন। এরপর শ্বেতকি কৈলাসে গিয়ে
মহাদেবের আরাধনা করতে থাকেন। দীর্ঘদিনের কঠোর আরাধনায় সন্তুষ্ট হয়ে মহাদেব শ্বেতকিকে বর প্রার্থনা করতে বলেন। উত্তরে শ্বেতকি  মহাদেবকে যজ্ঞের পুরোহিত হওয়ার অনুরোধ করেন। মহাদেব বলেন যে, যদি শ্বেতকি বার বৎসর সমাহিত ও ব্রহ্মচারী হয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘি দ্বারা অগ্নিকে পরিতৃপ্ত করতে পারে, তবে শ্বেতকি যে বিষয় প্রার্থনা করবে, তাই তিনি দান করবেন। এরপর শ্বেতকি বার বৎসর তপস্যা শুরু করেন। এবারও মহাদেব শ্বেতকির তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে জানান যে, যাজনকার্য পারে এমন ব্রাহ্মণ দ্বারা যজ্ঞ সম্পন্ন করতে হবে। এক্ষেত্রে মহাদেব যোগ্য পুরোহিত হিসেবে  দুর্বাসা মুনির কথা বলেন। এরপর দুর্বাসা 'র পৌরহিত্যে এই যজ্ঞ সম্পন্ন হয়

এই যজ্ঞে অতিরিক্ত ঘি পান করার ফলে তার অগ্নি রোগাগ্রস্ত (অগ্নিমান্দ্য) হয়ে পড়েছিলেন। পরে খাণ্ডববন  দগ্ধ করে অগ্নি এই রোগ দূর হয়।
            [সূত্র: মহাভারত। আদিপর্ব। ২২৩ অধ্যায়]