অভি
বানান বিশ্লেষণ : অ+ভ্+ই+জ্+ঞ্+অ+ত্+আ+ব্+আ+দ্+অ।
উচ্চারণ : o.ig.g̃o.a.ba (.ভিগ্.গোঁ.তা.বাদ্)।

অভিজ্ঞতা=.ভিগ্.গোঁ.তা [উপসর্গ অভি ধ্বনিদ্বয় ও.ভি হিসেবে উচ্চারিত হয়। জ্+ঞ মিলিত হয়ে জ্ঞ উৎপন্ন হলেও, বাংলা উচ্চারণে তা গ্.গঁ হয়। এই কারণে পূর্ববর্তী ভি ধ্বনির সাথে গ্ যুক্ত হয়ে ভিগ্ ধ্বনি উৎপন্ন করে এবং অবশিষ্ট গোঁ ধ্বনি একাক্ষর হিসেবে প্রকাশ পায়। এর পরে আকারযুক্ত ত্ ধ্বনিটি তা হিসেবে প্রকাশ পায়]

বাদ্= বা-এর সাথে রুদ্ধ দ্ ধ্বনি যুক্ত হয়ে বাদ্ ধ্বনি উৎপন্ন করে।

শব্দ-উৎস: শব্দ-উৎস: সংস্কৃত भिज्ञतावाद (অভিজ্ঞতাাদ্)>বাংলাভিজ্ঞতাাদ্

রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:  অভিজ্ঞতা জ্ঞা  (জানা) + অন্ (ল্যুট) ভাববাচ্য }+ তা (তল্)ক্লীবলিঙ্গ।} +বাদ {বাদি {বদ্ (বলা)+অ (অণ্)}


পদ : বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা { | দার্শনিক মতবাদ | মতবাদ | বিশ্বাস | ্রজ্ঞা | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত-সত্ত | সত্তা |}

অর্থ:
অভিজ্ঞতাবাদ (empiricism) হচ্ছে জ্ঞানের উৎপত্তি বিষয়ক মতবাদ। এই মতবাদে বলা হয় অভিজ্ঞতাই হচ্ছে জ্ঞানের একমাত্র উৎস। প্রাচীন গ্রিসের পরমাণুবাদীরা এবং সোফিষ্টরা প্রথম অভিজ্ঞতাবাদের বিষয়ে আলোকপাত করেন। সোফিষ্টদের মতে জ্ঞানের প্রথম পর্যায় হলো- 'ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান'। জ্ঞানের এই পর্যায়ে মানুষ গভীর কোনো ধারণা তৈরি করতে সক্ষম হয় না। ফলে কোনো যুক্তিসিদ্ধ সিদ্ধান্তেও আসতে পারেন। কিন্তু একটি সাধারণ ধারণায় আসতে পারে। ফলে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের সূত্রে জন্ম নেয় 'ধারণাত্মক জ্ঞান'। এই পর্যায়ে ইন্দ্রিয়লব্ধ জ্ঞানকে মানুষ ধারণা, বিচার, অনুমান ইত্যাদির দ্বারা বিচার-বিশ্লেষণ করে। এই পর্যায়ে বস্তু সম্পর্কে জানার কাজটি হলো ইন্দ্রিয়ানুভূতির মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়।

প্রাথমিকভাবে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান বস্তুর পৃথক পৃথক দিক, বাহ্য রূপ এবং বহিঃসম্পর্কের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত থাকে। এরপর যুক্তি দিয়ে তা বিচার করার চেষ্টা করা হয়। ফলে যৌক্তিক জ্ঞানের উদ্ভব ঘটে। এক্ষেত্রে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানকে নিম্ন পর্যায়ের জ্ঞান, আর যৌক্তিক জ্ঞানকে উচ্চতর পর্যায়ের জ্ঞান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যৌক্তিক জ্ঞানে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তথ্যগুলিকে সাজিয়ে ও পুনর্গঠন করে সেগুলির সংশ্লেষণ করা। এর দ্বারা সৃষ্টি হয় 'ধারণাত্মক জ্ঞান'।

 

ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের উপর ধারণাত্মক জ্ঞান নির্ভরশীল। তাই ধারণাত্মক জ্ঞান নির্ভরযোগ্য। এখানে উল্লেখ্য যে, ভাববাদীরা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের উপর ধারণাত্মক জ্ঞানের নির্ভরশীলতা মানেন না। আবার কেউ কেউ বলেন ক্ষুধা, যৌনতা, ঈশ্বরের ধারণা সহজাত। কিন্তু মার্কসবাদী দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ এমন ধারণাগুলোকে খারিজ করে। মানুষের শরীরে রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলেই ক্ষুধা লাগে, আর তা সে অনুভব করে ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই, তাই এটি সহজাত ধারণা নয়। এবার আসা যাক যৌনতার প্রশ্নে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর মানুষের শরীরে পরিবর্তন আসে, তার যৌন অঙ্গগুলো তখন সপ্রতিভ হয়ে উঠে। এই পরিবর্তনের জ্ঞান মানুষ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই গ্রহণ করে, আর এসময়ে তার যৌন অঙ্গে (যে সব অঙ্গ যৌন অনুভূতি প্রকাশ করে) হাত বা অন্যকোন কিছুর স্পর্শে যৌন অঙ্গের আকার-আকৃতি পরিবর্তিত হয়, যা মূলত রাসায়নিক প্রক্রিয়া ঘটমান পরিবর্তন, এই পরিবর্তনের জ্ঞানও কিন্তু মানুষ তার ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই গ্রহণ করে। আর ঈশ্বরের ধারণা, পুরোপুরিই ভাববাদী ধারণা, এটি কখনোই সহজাতভাবে থাকে না, বরং পারিপার্শ্বিক অবস্থায় তা মানুষের মনে জায়গা করে নেয়, আর তা মানুষ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমেই গ্রহণ করে, তাও সহজাত নয়। এটি কেবলই ভাববাদীদের দ্বারা প্রচারিত, প্রকাশিত। এই ভাববাদী, প্রতিক্রিয়াশীলদের ভ্রান্ত ধারণাগুলোর মধ্যে “খ্রিষ্টীয় কমিউনিজম” বা “ইসলামিক সোস্যালিজম”-এর ধারণা অন্যতম।


অভিজ্ঞতা থেকেই জ্ঞানের সূচনা - এই হলো “জ্ঞানতত্ত্বের বস্তুবাদ”। যার মানে হলো - জ্ঞান সহজাত নয়, অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই মানুষ জ্ঞান লাভ করে। জ্ঞানকে গভীরতর করা দরকার, জ্ঞানের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পর্যায় থেকে ধারণাত্মক পর্যায়ে উন্নীত করা প্রয়োজন - এটাই “জ্ঞানতত্ত্বের দ্বন্দ্ববাদ”। এর মানে হলো- দ্বান্দ্বিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে জ্ঞানকে উচ্চতর স্তরে পৌঁছানো, যাতে যৌক্তিক জ্ঞানলাভ সম্ভব হয়।

অভিজ্ঞতাবাদীদের মতে, “জ্ঞান নিম্নতর, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পর্যায়ে থেমে থাকতে পারে এবং শুধুমাত্র ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানই নির্ভরযোগ্য।” কোনরূপ বিশ্লেষণ ছাড়া এমন “অভিজ্ঞতাবাদ” কেবল ঐতিহাসিক ভুলের পুনরাবৃত্তি করতেই শেখায়। ধারণাত্মক জ্ঞান নির্ভর করে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানের উপর এবং ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞানকে উন্নীত করতে হয় ধারণাত্মক জ্ঞানে - এটাই হচ্ছে “দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদের জ্ঞানতত্ত্ব”। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য থেকে ধারণাত্মক পর্যায়ে জ্ঞানের দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদী ধারা জ্ঞানের একটি ছোট প্রক্রিয়ার (যেমন- কোন একটিমাত্র বস্তু বা কাজ জানার) বেলায় যেমন সত্য; তেমনি জ্ঞানের একটা বৃহৎ প্রক্রিয়ার (যেমন- একটা গোটা সমাজকে, বা একটা বিপ্লবকে জানার) বেলায়ও সত্য। যা এই প্রক্রিয়ার সার্বজনীনতা প্রকাশ করে। প্রয়োগ থেকে জ্ঞানের শুরু হয় এবং প্রয়োগের মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানকে আবার অবশ্যই প্রয়োগে ফিরে আসতে হবে। জ্ঞানের উচ্চতর স্তরে পৌঁছানোর জন্য ও নির্ভুলতার জন্য অর্জিত জ্ঞানকে বারংবার প্রয়োগে যেতে হয়। প্রত্যেক প্রক্রিয়াই তার আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও সংগ্রামের কারণেই এগিয়ে যায় ও বিকাশ লাভ করে (বিপরীতের ঐক্য) এবং মানুষের জ্ঞানের গতিও সেই সাথে এগিয়ে যাওয়া ও বিকাশলাভ করা উচিৎ।