আশুরা
বানান বিশ্লেষণ:
আ+শ্+উ+র্+আ।
উচ্চারণ:
mo.ho.rɔm
(আ.শু.রা)।
শব্দ-উৎস:
হিব্রু āsōr>আরবি
عاشوراء (আশুরা)>বাংলা
আশুরা।
পদ: বিশেষ্য
অর্থ: আরবি আশরা শব্দের অর্থ দশ। আর মাসের দশ তারিখ অর্থে আশুরা। কিন্তু ইসলাম
ধর্মাবলম্বীদের কাছে আশুরা বলতে মহরম মাসের দশ তারিখকে বিশেষ অর্থে ব্যবহার করা হয়।
হিজরি
পঞ্জিকার
মহরম
মাসের দশ তারিখে
হজরত
মুহম্মদ (সাঃ)-এর
দৌহিত্র ইমাম হোসেন কারবালা প্রান্তরে শহিদ হন। এই কারণে মুসলমানরা যে শোক দিবস
পালন করে থাকেন, তাকে আশুরা বলা হয়।
শিয়া সম্প্রদায়ের কাছে এ দিনটি বিশেষ
মর্যাদাপূর্ণ। এরা মর্সিয়া ও মাতমের মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপন করে। মুসলমানদের
অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও এই দিনটিকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে থাকেন।
এছাড়া ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা কোরান-হাদিস অনুসারে এই দিনটিকে বিশেষ মর্যাদার
দিন হিসেবে স্মরণ করে থাকেন। ইসলাম ধর্মমতে যে সকল
কারণে এই দিনটিকে মর্যাদাপূর্ণ মনে করা হয়, তা হলো−
এই দিন আল্লাহ আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছিলেন।
এই দিনে আল্লাহ পৃথিবীর প্রথম মানুষ হযরত আদম (আ:) কে সৃষ্টি করেছিলেন।
এই দিনে আল্লাহ বিভিন্ন নবীদেরকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছেন।
এই দিনে আল্লাহ মুসা (আ:)-এর শত্রু ফেরাউনের বাহিনীকে নীল নদে ডুবিয়ে হত্যা করেছিলেন।
এই দিনে নূহ (আ:)-এর জাহাজ ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেয়েছিলএবং তিনি জুডি পর্বতশৃঙ্গে নোঙ্গর ফেলেছিলেন।
এই দিনে আল্লাহ দাউদ (আ:)-এর তাওবা কবুল করেছিলেন।
এই দিনে নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে ইব্রাহীম (আ:) উদ্ধার পেয়েছিলেন।
এই দিনে আইয়ুব (আ:) দূরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্ত হয়ে সুস্থ হয়েছিলেন।
এই দিনে আল্লাহ ঈসা (আ:)-কে ক্রুশবিদ্ধ দশা থেকে চতুর্থ আসমানে তুলে নিয়েছিলেন। ক্রুশে ঈসা (আ:)-এর শুধু দেহটাই ছিল।
এই দিনে কেয়ামত সংঘটিত হবে।
শোকের দিবস আশুরার কাহিনি
৬০ হিজরিতে (৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ) তৎকালীন খলিফা মুবায়িরা মৃত্যুর পর, তাঁর পুত্র
এজিদ নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসেবে ঘোষণা দেন।
হজরত
মুহম্মদ (সাঃ)-এর
দৌহিত্র ইমাম হোসেন এজিদের এই
ঘোষণাকে অস্বীকার করেন। কারণ, এজিদ অনেকদিন ধরে ইসলামের আদর্শ বিরোধী কার্যকলাপের
সাথে জড়িয়ে পড়েছিল। এজিদকে খলিফা হিসেবে অস্বীকার করে তিনি প্রথমে পরিবার-পরিজন
নিয়ে মদিনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন। এই সময় কুফার জনগণও এজিদকে খলিফা হিসেবে
অস্বীকার করেন এবং
ইমাম হোসেন-কে খলিফা হিসেবে গ্রহণ করে পত্র পাঠান। এই অবস্থায়
ইমাম হোসেন তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফায় সার্বিক পরিস্থিত সম্পর্কে
একটি চিঠি লিখে কুফাবাসীর কাছে পাঠান। এই সময় ইমাম হোসেন-এর পক্ষে প্রায় ১৮,০০০
সমর্থক ছিল। এই অবস্থায় ইমাম হোসেন মক্কা থেকে তিনি কুফার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
কিন্তু এজিদ বিষয়টি বুঝতে কুফার গভর্নর পরিবর্তন করে, তার অনুগত উবায়েদ ইবনে
জায়েদকে নিয়োগ দেন। নতুন গভর্নরের চর ইমাম হোসেনের পত্রদূত মুসলিম ইবনে আকিলকে
কুফাতে হত্যা করে। এরপর উবায়েদ ইবনে জায়েদ কুফায় প্রবেশে ইমাম হোসেনেকে বাধা দেন।
ফলে ইমাম হোসেন পথ পরিবর্তন করে কারবালা প্রান্তরে উপস্থিত হন।
এ সময় উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে চার হাজার সৈন্য কারবালায় প্রবেশ করে।
কয়েক ঘণ্টা পর শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বে আরো বহু নতুন সৈন্য এসে তার
সাথে যোগ দেয়৷ কারবালায় দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এই অসম যুদ্ধে ইমাম
হোসেন এবং তাঁর ৭২ জন সঙ্গী শাহাদৎ বরণ করেন। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি
নিজে
ইমাম হুসাইন (রা:)-এর
কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে হত্যা করে।
সেদিন ছিল হিজরী ৬১ সনের ১০ই মহরম (১০ অক্টোবর, ৬৮০ খ্রিষ্টাব্দ)।
উল্লেখ্য এই অনুষ্ঠানকে উপলক্ষ করে, বঙ্গদেশে জারি নামক লোকসঙ্গীতের সৃষ্টি হয়েছে।