স্মৃতি
বানান বিশ্লেষণ: +ম্+ঋ+ত্+ই।
উচ্চারণ:
smrĩ..t̪i  (স্রিঁ.তি)

স্মৃ.তি [শব্দের আদিতে স্ম-এর সাথে ঋ-কার যুক্ত হওয়ায়, যৌগিক ধ্বনি স্রিঁ হিসেবে উচ্চারিত হবে। অবশিষ্ট তি ধ্বনি একাক্ষর হিসেবে উচ্চারিত হবে।]

শব্দ-উৎস: সংস্কৃত स्मृति (স্মৃতি>বাংলা স্মৃতি।
রূপতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ:
Öস্মৃ (স্মরণ) + তি (ক্তিন্), ভাববাচ্য
অর্থ: তথ্য হিসেবে যা সঞ্চিত থাকে এবং যা পরে ব্যবহার করা যায়।

পদ: বিশেষ্য

ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা {  | তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা | জ্ঞান-প্রক্রিয়াকরণ | জ্ঞান | মনস্তাত্ত্বিক বিষয় | বিমূর্তন | বিমূর্ত সত্ত | সত্তা |}

দর্শনশাস্ত্রে স্মৃতি
স্মৃতি হলো মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। এই কারণেই স্মৃতি মাত্রেই বিমূর্ত।  'আমি' নামক সত্তা তার ইন্দ্রিয়, দেহাভ্যন্তরীণ স্নায়ু দ্বারা নানা ধরনের সঙ্কেত মস্তিষ্কের পারস্পরিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে পায়। এর দ্বারা 'আমি' ওই সঙ্কেত সম্পর্কে অবগত হয়। এইভাবে অবগত হওয়ার মধ্য দিয়ে জ্ঞানের জন্ম হয়। এই জ্ঞান তাৎক্ষণিকভাবে মনে রেখাপাত করে হারিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। মস্তিষ্ক এই জ্ঞানকে একটি বিশেষ প্রক্রিয়ায় তথ্য সঙ্কেতে পরিণত করে। একে বলা যেতে পারে জ্ঞান-প্রক্রিয়াকরণ। এই প্রক্রিয়া শেষে মস্তিষ্ক আর একটি বিশেষ কাজ করে, তা হলো সংরক্ষণ। মস্তিষ্কের সুনির্দিষ্ট অংশে সাঙ্কেতিক মানে রূপান্তরিত তথ্যকে যথাযথ স্থানে রাখার ব্যবস্থা করে। একই সাথে সংরক্ষিত তথ্য প্রয়োজনে ব্যবহার করা ব্যবস্থাও রাখা হয়। তথ্যকে সংরক্ষণ এবং তাকে পুনরায় ব্যবহার করার উপযোগী করে রাখার ব্যব্স্থাকে বলা হয় 'তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থা'। আর এই ব্যবস্থায় যে সকল তথ্য মস্তিষ্কে সংরক্ষিত হয়, তাকে বলা হয় স্মৃতি। এই বিচারে বলা যায় তথ্য গ্রহণ, তথ্যের সংকেতায়ন, সংরক্ষণ এবং তাকে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী থাকার গুণের সমন্বয়ে প্রাপ্ত তথ্যই হলো স্মৃতি।

সকল স্মৃতি মস্তিষ্কের একই জায়গায় থাকে না। প্রত্যাহিক কর্মকাণ্ড, ভাষা, আবেগ, দৃশ্য, শব্দ সম্পর্কিত সকল তথ্য সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন স্থান রয়েছে। আবার বিভিন্ন সংরক্ষিত তথ্যের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য স্নায়ুকোষগুলো কাজ করে। স্মৃতি রক্ষার সময় মস্তিষ্ক এমনভাবে তথ্যের সংকেতায়ন করে, যাতে প্রয়োজনের সময়, একই তথ্য বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।

কোনো কিছু দেখা বা শোনার পরে, যখন তা স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষরণের জন্য কিছুটা সময় লাগে। কিছু মানুষের মস্তিষ্কে এই কাজটি দ্রুত হয়। কারও একটুও দেরীতে হয়। কোনো একটি বিষয় মানুষ মনে রাখতে পারে বেশ দ্রুতই। একটি ছবিতে একটি কাকের ছবি দেখিয়ে, ১ সেকেন্ড সরিয়ে নিয়ে যদি জিজ্ঞাসা করা যায়, কে দেখলে, সে উত্তরটা ঠিকই দেবে। যদি একটি কাক একটি ঘুঘুর ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন করা যায়। তার উত্তরটাও ঠিকই পাওয়া যাবে। এরপর যদি ওই ছবির বিষয়বস্তু ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করা যায়। এক সময় ওই ব্যক্তি সবগুলো বিষয়ের উত্তর দিতে পারবে না। কারণ, এর তার দেখা অনেক বিষয়বস্তুই স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষিত হওয়ার আগেই। মানুষ ১ সেকেন্ড কোনো দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে যতগুলো বিষয়বস্তুকে সে স্মৃতিতে রাখতে পার তাকে বলা হয় সংবেদী স্মৃতি। সাধারণত দেখা যায় একজন মানুষ সর্বোচ্চ ১২টি সংবেদী স্মৃতি মানুষ ধারণ করতে পারে। অবশ্য অনেক মানুষের ক্ষেত্রে এর কমও হতে পারে।

সংবেদী স্মৃতি তিন ধরনের হয়। কিছু দেখার মাধ্যমে যে সংবেদী স্মুতি জমা হয় তা আইকনিক সংবেদী স্মৃতি। বৃষ্টির সময় বিজলি । কিছু শোনার ফলে যে সংবেদী স্মৃতির জমা হয় তা ইকোইক সংবেদী স্মৃতি। কাঠে গর্ত করার সময় পেরেকের উপর হাতুড়ির আঘাতের শব্দ। স্পর্শের কারণে সৃষ্ট সংবেদী স্মৃতি হল হ্যাপ্টিক সংবেদী স্মৃতি। আইকনিক স্মৃতি ১ সেকেন্ডের ও কম সময়ের জন্য স্থায়ী হয় । ইকোইক স্মৃতি ২-৩ সেকেন্ডের জন্য স্থায়ী হয় ।