শ
আন্তর্জাতিক ধ্বনিলিপি :
ʃɔ
ইউনিকোড: u+09B6
বিশেষ্য
ঊর্ধ্বক্রমবাচকতা
{|
বর্ণ
|
বর্ণচিহ্ন |
লিখিত প্রতীক
|
প্রতীক
|
সঙ্কেতচিহ্ন
|
যোগাযোগ |
বিমূর্তন
|
বিমূর্ত
সত্তা
|
সত্তা
|}
সমার্থকশব্দসমূহ
(synonyms):
শ।
এই বর্ণের নাম
-শ
।
বাংলা বর্ণমালার
চত্বারিংশ (৪০)
বর্ণ,
ব্যঞ্জনবর্ণের
২৯ সংখ্যক
বর্ণ।
শ-এর
উচ্চারণ বিধি
এটি
পশ্চাৎ
দন্ত্যমূলীয়,
উষ্ম,
অঘোষ,
স্বল্পপ্রাণ ধ্বনি।
স্বাধীনভাবে উচ্চারণযোগ্য
রূপ হলো- শ্ +অ=শ।
[শ্রবণ নমুনা]
ঙ বা ং ব্যতীত শ- অন্য
বর্ণের পরে যুক্ত হয়ে যুক্ত ধ্বনি তৈরি করে না। নাসিক্য এই ধ্বনির সাথে শ যুক্ত
হলে, তার উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে। যেমন
অংশ [অঙ্.শো]
[ɔŋ.ʃo]
এরূপ: অংশী, অংশু, বংশ ইত্যাদি।
লক্ষণীয় বিষয় হলো, এই ক্ষেত্রে শ্য থাকলেও তা দ্বিত্ব হয় না। যেমন: অংশ্যমান।
অন্য ধ্বনি এই ধ্বনির সাথে যখন যুক্ত হয়, তখন এর উচ্চারণে নানা রকমের পরিবর্তন
লক্ষ্য করা যায়। এর যুক্তবর্ণগুলো
শব্দের আদি, মধ্য বা
অন্ত্যে হতে পারে। এইভাবে এর যুক্ত বর্ণের শ্রেণিকরণ করার পিছনে প্রধান কারণ হলো-
এই যুক্তধ্বনি শব্দের আদি, মধ্য বা অন্ত্যের বিচারে ধ্বনিগত বিচারে পরিবর্তিত
হয়।
আদ্য শ-যুক্ত যুক্তধ্বনি:
-
ঋ-কার:
ঋ-কার
যুক্ত শ, স্নিগ্ধ শ বা স-এর মতো উচ্চারিত হয়। যেমন−
শৃঙ্গ
[সৃঙ্.গো] [sriŋ.go]
শব্দতালিকা: শৃগাল, শৃঙ্খল, শৃঙ্গ, শৃঙ্গবের, শৃঙ্গাটক, শৃঙ্গার, শৃঙ্গী।
-
ব-ফলা:
ব-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের আদিতে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে। যেমন−
শ্বদন্ত
[শ.দন্.তো্] [ʃɔ.d̪ɔn.t̪o]
শব্দতালিকা: শ্ব, শ্বদন্ত, শ্বন, শ্ববৃত্তি, শ্বশুর, শ্বশ্রূ, শ্বসন, শ্বা,
শ্বাপদ, শ্বাস, শ্বেত, শ্বেতি, শ্বৈত্য।
-
ম-ফলা:
ম-ফলা যুক্ত শ,
শব্দের আদিতে থাকলে, শ-এর সহগ অ ধ্বনি সানুনাসিক হয়। ফলে এর উচ্চারণ
চন্দ্রবিন্দুযুক্ত শ-এর মতো শোনায়। যেমন−
শ্মাশান [শঁশান্] [ʃɔ̃ʃan]
শব্দতালিকা: শ্মশ্রু, শ্মশ্রুল।
- য-ফলা: শ-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের আদিতে থাকলে, দেখা যায় এর সাথে আকার বা একার যুক্ত থকে।
-
শ্যা ধ্বনি: আকার-যুক্ত 'শ্য' -এর উচ্চারণ হয় শ্+এ্যা
হিসেবে। যেমন−
শ্যামল
[শ্যা.মোল্] [ʃæmol]
শব্দতালিকা: শ্যাকরা, শ্যাঙল, শ্যাঙাত, শ্যাম, শ্যামক, শ্যামল, শ্যামা,
শ্যামাঙ্গ, শ্যামাঙ্গিনী, শ্যামাঙ্গী, শ্যাম্পু, শ্যাম্পেন, শ্যালক।
-
শ্যে ধ্বনি: আকার-যুক্ত 'শ্য' -এর উচ্চারণ হয়, শ্+এ। এই বানানে
একটি মাত্র শব্দ পাওয়া যায়। এই শব্দটি হলো−
শ্যেন [শেন্] [ʃen]
-
র ফলা:
বাংলায় 'র' হলো কম্পিত ধ্বনি (Trilled/Rolled)
আর। শ-এর সাথে
র
যুক্ত হলে, শ-এর ধ্বনির
সাথে কম্পনজাত র যুক্ত করে দিলে, র-এর প্রভাবে শ ধ্বনি স্নিগ্ধ স-এ পরিণত হয়।
এই স-কে বলা হয়, শ-এর পূরক ধ্বন
(allophone)।
যেমন-
শ্রম [স্রোম্] [srom]
উল্লেখ্য, এখানে র-ফলার প্রভাবে আদ্য স্র ধ্বনির সাথে ওকার যুক্ত হয়।
শব্দতালিকা: শ্রদ্ধা, শ্রব, শ্রবণ, শ্রবণা, শ্রবণীয়, শ্রব্য, শ্রম, শ্রমণ,
শ্রমিক, শ্রমী, শ্রমপোজীবী, শ্রয়, শ্রয়ণ, শ্রাদ্ধ, শ্রান্ত, শ্রান্তি, শ্রাবক,
শ্রাবণ, শ্রাবিত, শ্রাব্য, শ্রিত, শ্রী, শ্রুত, শ্রুতি, শ্রয়মান, শ্রেঢ়ী,
শ্রেণি, শ্রেয়, শ্রেষ্ঠ, শ্রেষ্ঠী, শ্রোণি, শ্রোতব্য, শ্রোতা, শ্রোত্র,
শ্রোত্রিয়, শ্রৌত।
ল- ফলা:
বাংলায় 'ল' হলো পার্শ্বিক ধ্বনি (leteral)।
এই
বর্ণটির উচ্চারণ প্রকৃতিকে
তরল ধ্বনি
নামেও চিহ্নিত করা হয়।
শ-এর সাথে
ল
যুক্ত হলে, শ-এর ধ্বনির
সাথে পার্শ্বিক ল ধ্বনি যুক্ত হলে, ল-এর প্রভাবে শ ধ্বনি স্নিগ্ধ স-এ পরিণত হয়।
যেমন-
শ্লথ [স্লো.থো] [slo.t̪ʰo]
শব্দতালিকা: শ্লথ, শ্লাঘা, শ্লিপ, শ্লিষ্ট, শ্লীপদ, শ্লীল, শ্লেষ,
শ্লেষ্মা, শ্লোক, শ্লোগান।
মধ্য ও অন্ত্য যুক্ত
যুক্তধ্বনি:
-
ছ-ফলা:
চ, ছ-ফলা
যুক্ত শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে। যেমন−
শিরোশ্ছেদ
[শি.রোশ.ছেদ্] [ʃi.roʃ.cʃʰed̪]
শব্দতালিকা: নিশ্চয়, পশ্চাৎ, পশ্চিম, পাশ্চাত্য, শিরোশ্ছেদ।
-
ন-ফলা:
ন-ফলা যুক্ত শ,
শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু দ্বিত্ব রূপ
লাভ করে। শ্ব -এর সাথে অ-কার ধ্বনি থাকলে তা ওকারান্ত হয়। যেমন−
প্রশ্ন
[প্রোশ্.নো] [proʃ.no]
শব্দতালিকা: প্রশ্ন, শিশ্ন ইত্যদি।
-
ব-ফলা:
ব-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু
দ্বিত্ব রূপ লাভ করে। শ্ব -এর সাথে অ-কার ধ্বনি থাকলে তা ওকারান্ত হয়। যেমন−
অশ্ব [অশ.শো]
[ɔʃ.ʃo]
শব্দতালিকা: অগ্নিশ্বর, অধীশ্বর, অশ্ব, অশ্বত্থ, অশ্বারূঢ়, অশ্বিনী, আশ্বস্ত,
আশ্বাস, আশ্বিন, ঈশ্বর, নশ্বর, বিশ্ব, বিশ্বস্ত, বিশ্বাস ইত্যদি।
-
ম-ফলা:
ম-ফলা যুক্ত শ,
শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু দ্বিত্ব রূপ
লাভ করে। তবে শেষের শ ধ্বনি সানুনাসিক হয়। যেমন−
রশ্মি
[রোশ্.শিঁ] [roʃ.ʃĩ]
শব্দতালিকা: অশ্ম, রশ্মি।
ব্যতিক্রম : কাশ্মীর [কাশ্.মির্]
-
য-ফলা:
য-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরিবর্তিত থাকে, কিন্তু
দ্বিত্ব রূপ লাভ করে। যেমন−
বৈশ্য
[বোইশ্.শো] [boiʃ.ʃo]
শব্দতালিকা: অবশ্য, আবশ্যক, কশ্যপ, কার্কশ্য, দৃশ্য, প্রকাশ্য, বৈশ্য।
-
র-ফলা:
র-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ স হয়, দ্বিত্ব রূপ লাভ করে।
যেমন−
জনশ্রুতি
[জ.নোস্ স্রু.তি] [ɟɔ.no.sru.t̪i]
শব্দতালিকা: অপশ্রুতি, অভিশ্রুতি, অশ্রু, আশ্রয়, প্রশ্রয়, বিশ্রদ্ধ, বিশ্রম্ভ,
বিশ্রান্ত, বিশ্রাম, বিশ্রী, বিশ্রুতি, মিশ্রিত ।
-
রেফ:
রেফ-যুক্ত শ, শব্দের
মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ অপরবর্তিত থাকে এবং শ দ্বিত্ব রূপ লাভ করে।
যেমন−
দর্শক
[দর্শ্.শোক্] [d̪ɔrʃ.ʃok]
-
শব্দতালিকা: অর্শ, দর্শন,
বর্শা।
-
ল-ফলা:
ল-ফলা
যুক্ত শ, শব্দের মধ্য বা শেষে থাকলে, শ-এর উচ্চারণ স হয় এবং দ্বিত্ব রূপ লাভ
করে। তবে এই দ্বিত স, ল-এর পূর্বে বসে। যেমন−
অশ্লীল
[অস্.স্লিল্] [ɔs.slil]
শব্দতালিকা: অশ্লেষা, আত্মস্লাঘা [আত্মোস্-স্লাঘা], বিশ্লিষ্ট, বিশ্লেষণ,
বিশ্লেষিত।
ত্রি-বর্ণীয় উচ্চারণ:
র্শ্ব =র্+শ্+ব। এক্ষেত্রে রেফ্ এবং ব-ফলার কারণে শ্ ধ্বনি দ্বিত্ব হবে। এবং
ব-ধ্বনি অনুচ্চারিত থাকবে। যেমন:
পার্শ্ব [পার্শ্. শো] [parʃ.ʃo]
শ-এর
লিপি পরিচিতি
অন্যান্য
বাংলা লিপির মতই
ব্রাহ্মীলিপি
থেকে শ-বর্ণটির
উদ্ভূত হয়েছে।
খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় থেকে প্রথম শতাব্দীর ভিতরে এই বর্ণটি বিভিন্ন চিহ্ন দ্বারা
প্রকাশ করা হয়েছে।
নিচের ছকে এই বিবর্তিত রূপগুলোর নির্দশন তুলে ধরা হলো।
কুষাণলিপিতে এই
বর্ণটির আকার দাঁড়িয়েছিল ইংরেজি এ-অক্ষরের মতো। গুপ্তলিপিতে এই
বর্ণের আকারের রকমেফর দেখা যায়।নিচের
চিত্রে
ব্রাহ্মীলিপি
থেকে
গুপ্তলিপি
পর্যন্ত শ-বর্ণের রূপান্তরের নমুনা দেখানো হলো―
কুটিললিপির শ-বর্ণটি ছিল নাগরী শ-এর মতো।
১০ম-১৬ শতাব্দী পর্যন্ত এই বর্ণটি চেহারা দাঁড়িয়েছিল অনেকটা ল-এর মতো।
আধুনিক শ-বর্ণটি পাওয়া গেছে ১৭শ শতাব্দীর দিকে।
নিচের ছকে
কুটিললিপি
থেকে আধুনিক কালপর্যন্ত শ-এর ক্রমবিবর্তনের ধারা তুলে ধরা হলো।
শ
সংস্কৃত কৃৎপ্রত্যয়। এই প্রত্যয়জাত
বিভিন্ন সংস্কৃত বাংলাতে ব্যবহৃত হয়।
দেখুন :
শ (প্রত্যয়)
সূত্র :
- চলন্তিকা। রাজশেখর বসু। এমসি সরকার অ্যান্ড সন্স প্রাইভেট লিঃ।
১৪০৮।
- ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব । মুহম্মদ আবদুল হাই রচনাবলী
প্রথম খণ্ড। বাংলা একাডেমী ঢাকা। আষাঢ় ১৪০১/জুন ১৯৯৪।
- পাণিনীয় শব্দশাস্ত্র । ড. সত্যনারায়ণ চক্রবর্তী। সংস্কৃত পুস্তক
ভাণ্ডার। ভগবান যিশুর আবির্ভাব তিথি, ২০০৩।
- বঙ্গীয় শব্দকোষ (প্রথম খণ্ড)। হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। সাহিত্য
অকাদেমী। ২০০১।
- বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান। মার্চ ২০০৫।
- বাংলা একাডেমী সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান । আবু ইসহাক। চৈত্র
১৪০৯/এপ্রিল ২০০৩।
- বাংলা বানান চিন্তা (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড)। অধ্যাপক পি.
আচার্য। জুলাই ১৯৯৭।
- বাঙ্গালা ভাষার অভিধান (প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ড)। জ্ঞানেন্দ্রমোহন
দাস। সাহিত্য সংসদ। নভেম্বর ২০০০।
- বাঙ্গালা শব্দকোষ। যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি। ভূর্জপত্র।
দোলযাত্রা ১৩৯৭।
- বাংলা একাডেমী সমকালীন বাংলা ভাষার অভিধান (ক থকে ঞ)। আবু ইসহাক।
ফাল্গুন ১৪০৪/ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮।
- ব্যাবহারিক বাংলা উচ্চারণ অভিধান। আনিসুজ্জামান, ওয়াহিদুল হক, জামিল
চৌধুরী, নরেন বিশ্বাস। জাতীয় গণমাধ্যম ইনসটিটিউট। ৮ ফাল্গুন ১৩৯৪
- ভাষাপ্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। রূপম। মে
১৯৮৯।
- শব্দবোধ অভিধান। আশুতোষ দেব। দেব সাহিত্য কুটির। মার্চ ২০০০।
- শব্দসঞ্চয়িতা। ডঃ অসিতকুমার বন্দোপাধ্যায়। নিউ সেন্ট্রাল বুক
এজেন্সি প্রাঃ লিমিটেড। ২৩শে জানুয়ারি, ১৯৯৫।
- শব্দার্থ প্রকাশিকা। কেশবচন্দ্র রায় কর্মকার। দেব সাহিত্য কুটির।
মার্চ ২০০০।
- সংসদ বাংলা অভিধান। সাহিত্য সংসদ। শৈলেন্দ্র বিশ্বাস। মার্চ ২০০২।
- সমগ্র ব্যাকরণ কৌমুদী। সাহিত্য সংসদ। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।
ডিসেম্বর ২০০৩।
- সরল বাঙ্গালা
অভিধান। সুবলচন্দ্র
মিত্র।
- সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা।
ডঃ রামেশ্বর শ'। পুস্তক বিপণি। ৮ই ফাল্গুন, ১৩৯৪/২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮।
-
wordnet 2.1