সাতবাহন রাজবংশের
রাজা
কৃষ্ণের
মৃত্যুর
পর সাতকর্ণী সিংহাসন লাভ করেন। অনেকের মতে তাঁর পিতা ছিলেন
সাতবাহন রাজবংশের
প্রতিষ্ঠাতা
সিমুক। আবার অনেকের মতে
তিনি ছিলেন
সিমুক ভাই রাজা
কৃষ্ণের সন্তান।
সাতকর্ণীর আম্ভীয় বংশীয় দেবী নাগনিকা বা নায়নিকাকে বিবাহ করে প্রথম রানির মর্যাদা দেন। এই রানির নানঘাট শিলালিপি থেকে সাতকর্ণীর কৃতিত্বের বিষয় জানা যায়।
এছাড়া হাতিগুম্ফা লিপিতে তাঁর বিষয়ে জানা যায়। সিংহাসন লাভের পর তিনি নর্মদা
উপত্যাকা, বিদর্ভ, পশ্চিম মালব জয় করেছিলেন। এ সকল জয়ের মধ্য দিয়ে তিনি 'দক্ষিণাপথপতি'
ও 'অপ্রতিহত চক্র' উপাধি ধারণ করেছিলেন।
খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে তিনি তাঁর এই বিশাল অংশের অধিপতি হন। তাঁর রাজ্যের
রাজধানী ছিল প্রতিষ্ঠান পুর।
তাঁর মৃত্যুকাল সম্পর্কে জানা যায়। তাঁর মৃত্যুর পর রানি নায়নিকা তাঁর নাবালক দুই
পুত্র বেদশ্রী ও শক্তিশ্রীর পক্ষে রাজত্ব করেন। তাঁর রাণি নায়নিকা এবং এবং তাঁর দুই
পুত্রের শাসনকাল বা কোনো কৃতিত্বের কথা বিশেষ জানা যায় না। এরপর শুরু হয়
শকদের আক্রমণ। এরা
মূলত
শকদের পশ্চিম-দক্ষিণ
শাখার আক্রমণের শিকার হয়। ফলে সাতবাহন রাজ্য ক্রমান্বয়ে
সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে
শকরা পল্লব রাজ্যের অন্যতম নগর
নাসিক আক্রমণ করে দখল করে এবং সেখানে তাঁদের রাজধানী
স্থাপন করে। এরপর শকদের আক্রমণে সাতবাহনরা পশ্চিম
দাক্ষিণ্যত্যের উপর অধিকার হারিয়ে ফেলে। ফলে এরা পূর্ব দিকে অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে চলে
যায়। এরপর শকদের রাজা নহপান এবং এবং তাঁর জামাতা ঋষভদত্ত সাতবাহনদের মহারাষ্ট্র থেকে
বিতারিত করে। এসব কারণে খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে
সাতবাহন রাজ্য বিলুপ্ত
হওয়ার উপক্রম হয়। সাতবাহনদের এই দুরবস্থা থেকে উদ্ধার করেন সাতকর্ণী গৌতমী।
এই সাতকর্ণী গৌতমী বালাশ্রীর নামক রানির পুত্র ছিলেন। তাই ইতিহাসে তিনি
গৌতামী সাতকর্ণী নামে অভিহিত হয়ে থাকেন। ধারণা করা হয় গৌতমী সাতকর্ণী সিংহাসনে
আরোহণ করেছিলেন ১০৬ খ্রিষ্টাব্দে। প্রথমে তিনি তাঁর ক্ষুদ্র রাজ্যকে সুসংহত করেন।
এর হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার জন্য ধীরে ধীরে একটি শক্তিশালী সেনাবহিনী গড়ে তোলেন।
প্রথমেই তিনি আশপাশের অঞ্চলগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করেন। ফলে
অচিরেই শকরা সাতকর্ণী রাজ্য বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী প্রেরণের উদ্যোগ নেন। এর ফলে
১২৪-১২৫ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে শকদের রাজা নহপান শকরাজ্য আক্রমণ করেছিলেন। এই যুদ্ধে
সাতকর্ণী নহুপানকে পরাজিত করে, হৃত রাজ্যের বিশাল অংশ দখল করতে সক্ষম হন। এই
উদ্ধারকৃত অংশের ভিতরে ছিল সৌরাষ্ট্র, গুজরাট, মালব, বেরার ও উত্তর কঙ্কন। এছাড়া
তিনি নর্মদা উপত্যাকা এবং কৃষ্ণা উপত্যাকার উপর আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম
হয়েছিলেন। এ সকল স্থান অধিকারের পর তিনি মহারাষ্ট্রের গোবর্ধন অঞ্চলের কোচকণ্টক নগরী
নির্মাণ করেন এবং রাজরাজ উপাধি ধারণ করেন।
১২৯ খ্রিষ্টাব্দের দিকে নহপানের মৃত্যু হলে, শকদের 'কর্দমক'
শাখার রাজা চষ্টন
এবং তাঁর পৌত্র রুদ্রদামন
সাতবাহনদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধাভিযান শুরু করেন।
১৩০
খ্রিষ্টাব্দে রুদ্রদামন
সাতকর্ণীকে পরাজিত করেন। টলেমির রচনা ও জুনাগড় শিলালিপি সুত্রে
জানা যায় শকবীর রুদ্রদমন সাতবাহনদের পরাজিত করে মালব পুনরাধিকার করেন। এই
পরিস্থিতিতে শকদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করার উদ্দেশ্যে
সাতকর্ণী নিজ পুত্রের সাথে (বশিষ্টিপুত্র)
রুদ্রদামনের কন্যার বিবাহ দেন।
এর মধ্য দিয়ে শক আক্রমণ থেকে সাতকর্ণী রাজ্য রক্ষা করতে
সক্ষম হয়েছিলেন। ১৩০ খ্রিষ্টাব্দ সাতকর্ণী জীবদ্দশায় পুলমায়িকে রাজ্য চালনায় অংশভাগী
করে নেন।
১৩১ খ্রিষ্টাব্দে গৌতমী
সাতকর্ণী মৃত্যবরণ করেন। এরপর ১৫৪ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত পুলমায়ি রাজত্ব
করেছিলেন। সাতকর্ণী অপর পুত্রকে ইতিহাসে বশিষ্টিপুত্র নামে অভিহিত হয়েছেন। মূলত এই
বশিষ্টিপুত্র ও পুলমায়ী সহদোর ছিলেন। তবে কোনো লিপিতে বশিষ্টিপুত্রের রাজত্বের কথা
জানা যায় না।