সদারঙ্গ
১৬৭০-১৭৪৮ খ্রিষ্টাব্দ
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের 
কলাকর নিয়ামৎ খাঁ-এর ছদ্মনাম। 
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অন্যতম ধারা 
খেয়াল। 
এই ধারাকে উৎকর্ষ সাধনের জন্য তাঁকে  আধুনিক খেয়ালের 
জনক বলা হয়।
সদারঙ্গের বংশ পরিচয়ে 
তানসেনের
 
কন্যাবংশীয় সন্তান হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 
সম্রাট আকবরের
সভা-গায়ক 
তানসেনের
 দুজন স্ত্রী ও পাঁচজন সন্তানের খবর পাওয়া যায়। 
				সন্তানদের নাম ছিল শরৎসেন, সুরতসেন, তরঙ্গসেন, বিলাস খাঁ  ও সরস্বতী।  
কন্যা সরস্বতী'র বিবাহ হয়েছিল মহারাজ সমুথন সিং-এর পুত্র মিশ্রী সিং-এর (নৌবাদ খাঁ) 
সাথে। উল্লেখ্য, নৌবাদ খাঁ'র গানে মুগ্ধ হয়ে সম্রাট আকবর তাঁকে শাহ উপাধি প্রদান 
করেছিলেন।
নৌবাদ খাঁ'র দুই পুত্রের নাম ছিল সের খাঁ এবং হাসান খাঁ। বংশলতিকায় দেখা যায়- হাসান 
খাঁ'র পুত্রের নাম ছিল হোসেন খাঁ, হোসেন খাঁর পুত্র বাজিত খাঁ, বাজিত খাঁ-এর পুত্র 
নাজির খেসাল (খুসলাল) খাঁ, নাজির খেসাল খাঁ-এর পুত্র লাল খাঁ এবং  লাল খাঁ-এর 
পুত্র নিয়ামত খাঁ বা সদারঙ্গ। উল্লেখ্য সদারঙ্গের পুত্র ফিরোজ খাঁ 
(অদারঙ্গ) খেয়াল 
গানে বিশেষ সুখ্যাতি অর্জন করেছিলেন।  
এর আগে জৌনপুরের চুট্কল্' নামক একপ্রকার সংকীর্ণ শ্রেণীর প্রবন্ধ গানের সাথে 
আমির খসরু(১২৫৩-৫৪-
১৩২৫ খ্রিষ্টাব্দ)কাওয়াল গানের মিশ্রণ ঘটিয়ে তৈরি 
করেছিলেন চুটকলা খেয়াল।
সম্রাট
আকবর, রাজত্বকাল (১৫৩০-১৬০৫ 
খ্রিষ্টাব্দ) ছোটো ছোট তানযুক্ত করে 
হাল্কা চালের কাওয়ালি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এই সময়ের প্রখ্যাত 
কাওয়ালি গাওয়করা ছিলেন- চাঁদ খাঁ, সুরজ খাঁ, বজবাহাদুর, শেখ বহাউদ্দিন, চীর মহম্মদ 
প্রমুখ। এই ধারার সাথে ধ্রুপদের সংমিশ্রণে সদারঙ্গ তুই তুকের খেয়াল তৈরি করেন।
দ্বাদশ মোগল সম্রাট 
মুহাম্মদ শাহের
রাজত্বকালে (১৭১৯-১৭৪৮), সদারঙ্গ তাঁর দরবারের বীণাবাদক ছিলেন। 
এবং বংশের ধারা অনুসারে তিনি ধ্রুপদ শিল্পী ছিলেন। তাঁর হাতেই ধামার অঙ্গের গানের 
সূচনা হয়েছিল। তিনি নিজে বহু ধামার রচনা করেন এবং তিনি তাঁরে শিষ্যদের মাধ্যমে 
ধামারকে জনপ্রিয় করে তোলেন।এই সময় তিনি বেশকিছু ধ্রুপদও 
রচনা করেছিলেন।
সদারঙ্গ তিনিনিজে গান গাইতেন এবং
অন্যান্য কণ্ঠশিল্পীদের সাথে অনুসঙ্গী-যন্ত্রী হিসেবে 
বীণা বাজাতেন। সে সময়ে দরবারে জৌনপুরের সুলতান হুসেন 
শাহ্ শর্কী 'র উদ্ভাবিত বিলম্বিত তথা বড় খেয়াল গানের প্রচলন ছিল।  সদারঙ্গ 
এইধ্রুপদের সাথে চুটকল খেয়ালের মিশ্রণ ঘটিয়ে মধ্য ও দ্রুত লয়ের 
খেয়াল তৈরি করে সম্রাটে শোনান। নতুন ধরনের খেয়াল শুনে সম্রাট  মুহাম্মদ শাহ মুগ্ধ  হন 
এবং তাঁকে শাহ এবং সদারঙ্গ উপাধি প্রদান করেন।  
সদারঙ্গ ধ্রুপদের অনুকরণে বিলম্বিত খেয়াল প্রবর্তন করেছিলেন। প্রথম দিকে বিলম্বত 
খেয়াল ধ্রুপদের মতো সীমাবদ্ধ পরিসরে পরিবেশিত হতো। এতে সঙ্গীত শিল্পীরা নিজের মতো 
রাগের নানা রূপ পরিবেশন করতে পারতেন না। ফলে রাগ-রূপায়ণে সীমাবদ্ধ দশার দশার সৃষ্টি 
হয়েছিল। এছাড়া তাল ছন্দের গতি ও নানাবিধ লয়করী সুযোগ ছিল না। শিল্পীর স্বাধীনতা ছিল 
খেয়ালে। এর বাইরে শিল্পীরা মধ্য ও দ্রুত লয়ের খেয়ালে ছন্দের আনন্দে শিল্পীরা 
রাগোৎসবের সন্ধান পেয়েছিল। তাই ধীরে ধীরে ধ্রুপদ ও বিলম্বিত খেয়ালের বন্ধন ছেড়ে 
মধ্য ও দ্রুত লয়ের খেয়ালে উৎসাহী হয়ে উঠেছিল। 
সদারঙ্গের খেয়াল শৃঙ্গার রসপ্রধান ও বাদশাহর 
প্রশস্তিমূলক। ধ্রুপদী গায়করা এই নতুন খেয়ালকে'স্ত্রী লোকের গীত' বলে উপহাস করতে 
লাগলেন। দরবারের গায়িকারা বাদশাহর কাছে এই নতুন গানের তালিম নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ 
করলে মোহাম্মদ শাহ তাতে সম্মতি প্রদান করেন। ওস্তাদ নিয়ামত খাঁ বাদশাহর 
বিরাগভাজন হতে সাহসী না হয়ে আত্মসম্মান রক্ষার জন্য এক বিশেষ কৌশল অবলম্বন করেন। 
তিনি তাঁর প্রিয় শিষ্য হসনঘাটির ওপর দরবারি গায়িকাদের শিক্ষার ভার দেন। 
এর মাধ্যমে সম্রাটের অন্তর মহলে খেয়াল গান প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল।
সদারঙ্গ মূলত ধ্রুপদ ও কাওয়ালী গানের মিশ্রণে নতুন যে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ধারার 
সৃষ্টি করলেন, কালক্রমে তা খেয়াল নামে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। তিনি তাঁর এই সৃষ্টিতে 
ধ্রুপদের মীড়, গমক রাখলেন। পাশাপাশি যুক্ত করলেন দ্রুত গতির তান ও গিটকিরি মতো লঘু 
অলঙ্কারও যুক্ত করলেন। তিনি সে সময়ের প্রচলিত ধ্রুপদের চার তুকের পরিবর্তে দুই 
তুকের ব্যবহার নির্দিষ্ট করে দিয়েছিলেন। 
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতে সদারঙ্গে সার্বিক অবদান।
	- ধ্রুপদাঙ্গের ধামার 
	গানের প্রবর্তক
- আধুনিক খেয়াল গানের 
	প্রবর্তক। 
- খেয়াল, ধ্রুপদ ও  
	ধামার গানের রচয়িতা
- সেতারের তিন তারের 
	পরিবর্তে সাতটি তারের সংযোজিত করেন। এছাড়া সেতারে ধ্রুপদ-ভাঙা বিলম্বিত গৎ 
	প্রবর্তন করেন।
সদারঙ্গের রচিত খেয়াল 
	- পিউ পল ন লাগে মোরি আঁখি। রাগ গৌর সারঙ্গ। তাল: ত্রিতাল। 
	[নমুনা]