বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: বিরহী বেণুকা যেন বাজে সখি ছায়ানটে
রাগ: ছায়ানট, তাল: ত্রিতাল
বিরহী বেণুকা যেন বাজে সখি ছায়ানটে।
উথলি' উঠিল বারি শীর্ণা যমুনাতটে॥
নীরব কুঞ্জে
কুহু
গেয়ে ওঠে মুহু
মুহু,
আঁধার মধু বনে বকুল চম্পা ফোটে॥
সহসা সরস হল বিরস বৃন্দাবন,
চন্দ্রা যামিনী হাসে খুলি মেঘ-গুণ্ঠন।
সে এলো, তারে
নিরখি'
পরান কি রবে
সখি,
আবেশে অঙ্গ মম থরথর কেঁপে ওঠে॥
-
পাঠভেদ:
- বিরহী বেণুকা যেন
বাজে সখি ছায়ানটে
উথলি' উঠিল
বারি শীর্ণা যমুনাতটে [নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ
(নজরুল ইন্সটিটিউট। ফেব্রুয়ারি ২০১২)।
বিরহী বেণুকা কেন বাজে সখি ছায়ানটে
উথলি' উঠিল
বারি শীর্ণা যমুনা-তটে
[পাণ্ডুলিপি]
- সহসা সরস হল বিরস বৃন্দাবন
চন্দ্রা যামিনী হাসে খুলি মেঘ-গুণ্ঠন।
সে এলো, তারে নিরখি'
পরান কি রবে সখি,
নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ
(নজরুল ইন্সটিটিউট। ফেব্রুয়ারি ২০১২)।
সহসা সরসা হল বিরস বৃন্দাবন
চন্দ্রা-যামিনী হাসে খুলি মেঘ-গুণ্ঠন।
সে এলে, তারে নিরখি'
পরাণ কি রবে সখি,
[পাণ্ডুলিপি]
- ভাবসন্ধান:
যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের ৮টি রাগাশ্রয়ী গানের
ষষ্ঠ গানটিই ছিল
'বিরহী বেণুকা যেন বাজে সখি ছায়ানটে।
এই
গানের শুরুতে যাম যোজনায় ছায়ানট রাগের রূপ বর্ণনা করা হয়েছে। নিচে নজরুলের
পাণ্ডুলিপি থেকে এই বিষয়ক পাঠ তুলে ধরা হলো।
পূরবী পুরিয়া প্রভৃতি রাগের কান্নার পর, রাত্রি যেমন ঘনিয়ে এল
অমনি চাঁদের চাঁদ-মুখ দেখে রাতের চোখে ফু'টে উঠ্ল হাসি।
তীব্র মধ্যম নিয়ে এল চঞ্চল ছায়ানটকে ধ'রে। নটের মত
এর আঁকা-বাঁকা গতি, মধুর অঙ্গ-ভঙ্গী কী অপরূপ
তার আভাস পাবেন এই সুরের গানে।
মূলত
যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম' গীতি-আলেখ্যের জন্য রচিত এই গানটিতে ছায়ানট রাগের
রূপ বর্ণনা করা হয়েছে রূপকতার আশ্রয়ে। এটি রাত্র প্রথম প্রহরের রাগ। 'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম'
গীতি-আলেখ্যে, ছায়ানটে রাগকে উপস্থাপন করার
জন্য এই গানটি লেখা হয়েছিল। গানটির শুরুতেও, কাজী নজরুল ইসলাম
ছায়ানট রাগের সুরাবেশের বিষয় এনে সখিকে বলা হচ্ছে- হে সখি,
বেদনাবিধুর বাঁশি কেন ছায়ানট রাগে বাজে। এই রাগের প্রভাবে শীর্ণা যমুনার জল
উদ্বেলিত হয়ে উঠে। কবিকল্পনায় কল্পনাতে কবি
অনুভব করেন নীরবকুঞ্জে কোকিলে কুহুকুহু রব, অন্ধকার মধুবনে বকুল-চম্পার
প্রস্ফুটন।
ছায়ানটের আনন্দ-আবেশে কবি অনুভব করেন, অনবগুণ্ঠিতা সহাস্য চন্দ্রশোভিত রাত্রির
শোভা। এমনই রভসরসরাত্রিতে যদি প্রেয়সীর আবির্ভাব হয়, যখন সমগ্র চিত্ত
কামনা-বিহ্বলতায় কম্পিত হয় হঠাৎ-পাওয়া সৌন্দর্য-সুখে তখন কি মনকে স্থির রাখা
যায়।
-
রচনাকাল ও স্থান:
গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭), সন্ধ্যা
৬.৫৫টায় কলকাতা বেতারকেন্দ্র থেকে
'যাম-যোজনায় কড়ি মধ্যম'
নামক গীতি-আলেখ্য প্রচারিত হয়। এই গীতি-আলেখ্যে গানটি প্রথম প্রচারিত হয়েছিল।
এই সময় নজরুল ইসলামের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ১ মাস।
-
পাণ্ডুলিপির নমুনা
- গ্রন্থ:
- নজরুল-সঙ্গীত সংগ্রহ (নজরুল ইন্সটিটিউট । ফেব্রুয়ারি ২০১২)। ১৫৮৬ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৪৭৫।
- নজরুল গীতি, অখণ্ড -আব্দুল আজীজ আল-আমান সম্পাদিত (হরফ প্রকাশনী। জানুয়ারি ২০০৪)। গান: ৯১২ রাগ-প্রধান। ছায়ানট─ত্রিতাল। পৃষ্ঠা: ২২৯।
- নজরুল যখন বেতারে-আসাদুল হক (বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, ঢাকা। মার্চ ১৯৯৯)।
- বেতার:
-
যাম যোজনায় কড়ি মধ্যম।
গীতি-আলেখ্য। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে জুন (শনিবার ৮ আষাঢ় ১৩৪৭),
সান্ধ্য অধিবেশন। ৬.৫৫-৭.৪৪।
সূত্র: বেতার জগৎ। ১১শ বর্ষ ১২শ সংখ্যা। ১৬ জুন, ১৯৪০। পৃষ্ঠা:
৬৫০-৬৫১
-
প্রহর
পরিচারিকা।
গীত্ চিত্র। কলকাতা বেতার কেন্দ্র। ১১ অক্টোবর, ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দ (শনিবার ২৫ আশ্বিন। ১৩৪৮)। সময়: রাত ৭.৪৫-৮.২৯
সূত্র: বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ১৯শ সংখ্যা। ১ অক্টোবর, ১৯৪১। পৃষ্ঠা:
১০৫৮
- সুরকার: কাজী নজরুল ইসলাম।