বিষয়:
নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম
:
পরজনমে দেখা হবে প্রিয়
রাগ: পরজ, তাল একতাল
পরজনমে দেখা হবে প্রিয়।
ভুলিও মোরে হেথা ভুলিও॥
এ জনমে যাহা বলা হ’ল না,
আমি বলিব না, তুমিও ব’লো না।
জানাইলে প্রেম করিও ছলনা,
যদি আসি ফিরে, বেদনা দিও॥
হেথায় নিমেষে স্বপন ফুরায়,
রাতের কুসুম প্রাতে ঝ’রে যায়,
ভালো না বাসিতে হৃদয় শুকায়,
বিষ-জ্বালা-ভরা হেথা অমিয়।
হেথা হিয়া ওঠে বিরহে আকুলি’
মিলনে হারাই দু’দিনেতে ভুলি’,
হৃদয়ে যথায় প্রেম না শুকায়
সেই অমরায় মোরে স্মরিও॥
- ভাবার্থ: পার্থিব প্রেমে বীতশ্রদ্ধ কবির বেদনা এই গানে
উপস্থাপিত হয়েছে। কবির কাছে ক্ষণস্থায়ী এই পৃথিবীর প্রেম শাশ্বত নয়।
পরজনমের প্রেম অক্ষয়, অম্লান এবং সত্য। এই বিশ্বাস নিয়েই স্থায়ীতে অভিমানী
কবি তাঁর প্রেমিকাকে বলছেন- তাদের দেখা হবে পরজনমে। তাই তাঁর প্রেমিকা যেন
এই পার্থিব প্রেমের কথা ভুলে যান।
এই অভিমানের সূত্রে অন্তরাতে, কবি তাঁর প্রেমিকাকে বলছেন- এ জনমে প্রেম
নিবেদনে যা কিছু অব্যক্ত রয়ে গেল, তা কবি নিজেও বলবেন না, প্রেমিকাও যেন তা
না বলেন। যদি কখনো কবি প্রেম নিবেদন করেও থাকেন, প্রেমিকা যেন তাঁর সাথে
ছলনা করেন। ভুল করেও যদি কখনো কবি তাঁর প্রেমিকার কাছে আসে, তাহলে
প্রত্যাখ্যানের বেদনা দিয়ে তাঁকে যেন ফিরিয়ে দেন।
এ জনমের প্রেম কেন শাশ্বত নয়, তারই ব্যাখ্যা করা হয়েছে সঞ্চারীতে। রাতের
প্রস্ফুটিত ফুল যেমন সকালে ঝরে যায়, পার্থিব জীবনের প্রত্যাশার স্বপ্নও
তেমনি মিলিয়ে যায়। পূর্ণতায় পৌঁছার আগেই হৃদয়েই ভালোবাসার অপমৃত্যু ঘটে।
কারণ পার্থিব জগতের প্রেমের অমৃতে রয়েছে প্রেমঘাতী বিষ। সে বিষদহনে আছে
হৃদয় দগ্ধ হয়। তাতে প্রাপ্তির প্রশান্তি নেই।
পার্থিব জীবনে প্রেমের প্রতি কবির বিতৃষ্ণা, আভোগে আবার ফিরে পাওয়া যায়। কবি
অনুভব করেন- এ জগতে বিরহ-দহনে প্রেমিকের হৃদয় আকুলিত হয়ে উঠে, মিলনে
আত্মহারা হয়, আবার দুদিনেই তা বিস্মৃত হয়। তাই কবি মনে করেন- এ জনমের প্রেম
শাশ্বত নয়। পরকালের যে অমরালোকে প্রেমের মৃত্যু নেই, সেখানে প্রেমিকা যেন
কবিকে স্মরণ করেন। সেখানেই উভয়েই পাবেন শাশ্বত প্রেমের সন্ধান।
- রচনাকাল ও স্থান:
গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৩৬ বঙ্গাব্দের
অগ্রহায়ণ (ডিসেম্বর ১৯২৯) মাসে
প্রকাশিত 'চোখের চাতক' সঙ্গীত-সংকলনে গানটি অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
এই সময় নজরুলের
বয়স ছিল ৩০ বৎসর ৬ মাস।
- গ্রন্থ
-
চোখের চাতক।
- প্রথম সংস্করণ [অগ্রহায়ণ ১৩৩৬ (ডিসেম্বর ১৯২৯)। গান ৩৫। পরজ- একতালা]
- নজরুল-রচনাবলী, দ্বিতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ফাল্গুন ১৪১৩। ফেব্রুয়ারি ২০০৭। চোখের চাতক। গান ৩৫।
পরজ- একতালা। পৃষ্ঠা: ২১৮]
-
নজরুল গীতিকা
- প্রথম সংস্করণ [ভাদ্র ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ। ২ সেপ্টেম্বর ১৯৩০। পরজ- একতালা। পৃষ্ঠা ১৩৭]
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। তৃতীয় খণ্ড [বাংলা একাডেমী, ঢাকা
ফাল্গুন ১৪১৩/মার্চ ২০০৭।] নজরুল গীতিকা। খেয়াল । ১১০। পরজ- একতালা। পৃষ্ঠা:
২৪৯]
- নজরুল-সংগীত সংগ্রহ [রশিদুন্ নবী সম্পাদিত। কবি নজরুল ইন্সটিটিউট।
তৃতীয় সংস্করণ দ্বিতীয় মুদ্রণ, আষাঢ় ১৪২৫। জুন ২০১৮। গান সংখ্যা ১৮৮১।
তাল: ফের্তা (দ্রুত-দাদ্রা ও কাহার্বা)। পৃষ্ঠা: ৫৬৭]
-
নলিনীকান্ত সরকার। [সুর-মুকুর,
(ডি. এম. লাইব্রেরী, জ্যৈষ্ঠ ১৪০৬। মে ১৯৯৯)
১৭ সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৭৭-৭৯]
- পত্রিকা: উত্তরা। অগ্রহায়ণ ১৩৩৭
(নভেম্বর-ডিসেম্বর
১৯৩০)
- সঙ্গীতবিষয়ক তথ্যাবলি:
- স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
- পর্যায়: