বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: এলো ফুলের মরশুম শরাব ঢালো সাকি
এলো ফুলের মরশুম শরাব ঢালো সাকি
বকুল শাখে কোকিল ওঠে ডাকি’॥
গেয়ে ওঠে বুলবুল আঙ্গুর-বাগে
নীল আঁখি লাল হলো রাঙা-অনুরাগে
আজি ফুল-বাসরে শিরাজির জল্সা
বরবাদ্ হবে না-কি॥
চাঁপার গেলাস ভরি' ভোমরা মধু পিয়ে
মহুয়া ফুলের বাসে আঁখি আসে ঝিমিয়ে।
পাপিয়া পিয়া পিয়া ডাকে বন-মাঝে
গোলাপ-কপোল রাঙে গোলাপী লাজে
হৃদয়-ব্যথার সুধা আছে তব কাছে
রেখো না তারে ঢাকি'॥
- ভাবার্থ: এটি প্রকৃতি পর্যায়ের বসন্তোৎসবের গান। সাকি, শিরাজি
শব্দের ব্যবহার এবং বাণীর বিন্যাসে এই গানে পারশ্যের গজলাঙ্গের ছায়া পড়ে বটে,
কিন্তু সুফিবাদী গানের মতো সন্ধ্যাভাষার নিগূঢ় ধর্মতত্ত্বকে উপস্থাপন করে না।
প্রকৃতির ফুল ফোটানোর খেলায়, বকুল শাখে বসন্তের পাখি কোকিলের আহ্ববানে কবি খুঁজে
পেয়েছেন বসন্তোৎসবের মোহনীয় মাদকীয় আবেশ। সেখানে সবাইকে বসন্তের এই মদির নেশাকে
উজ্জীবিত করার জন্য কবি সবাইকে আহ্বান করেছেন। এখানে সাকি হলো- মদির নেশাকে
উজ্জীবিত করার সকল প্রাকৃতিক অনুসঙ্গ। এখানে ফুল, পাখি, আকাশ ইত্যাদি প্রতীকী
অনুসঙ্গী মাত্র। গানটির স্থায়ীর এই মোহনীয় আবেশের ভিতর দিয়েই অন্তরাতে বসন্তের
অনুসঙ্গীদের ভূমিকা উপস্থাপিত হয়েছে। বসন্তোৎসবে আঙুরের বাগানে বুলবুলের গেয়ে
ওঠা গান, বর্ণাঢ্য পুষ্পরাশির প্রভাবে প্রকৃতির আঁখিরূপী নীলাকাশের লাল হয়ে ওঠা-
এ সবই বসন্তের অনুসঙ্গের ইঠ্গিত। এত আয়োজন সত্ত্বেও কবির সংশয় পুষ্পিত বসন্তের
মাদকীয় জলসা ব্যর্থ হবে কি-না।
সঞ্চারী ও আভোগে এই সংশয় থেকে কবি বেড়িয়ে এসে বসন্তের অপরাপর অনুসঙ্গীতের সরব
উপস্থিতিকে উপস্থাপন করেছেন। এই উৎসবে চাঁপা ফুলের মদির মধু পান করে ভোমরা
ঝিমিয়ে পড়ে, মহুয়া ফুলের সুবাসে প্রকৃতির আঁখিপাতে নেশার ঝিমুনি লাগে, প্রণয়ের
আহবানে পাপিয়ার ডাকে বনভূমি মুখরিত হয়, মিলনের সলাজ ছায়া পড়ে গোলাপের পাপড়িতে।
কবি মনে করেন বসন্তের এই মাদকীয় উৎসবে আছে হৃ্দয়-ব্যথা উপশমের সুধা আছে বসন্তের
সাকির কাছে। তাই সাকিরূপী সকল অনুষঙ্গীদের কাছে কবির নিবেদন- নিজেকে আর লুকিয়ে
না রেখে- মাদকীয় এই বসন্তোৎসবের অংশভাগী হতে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। জয়তী পত্রিকার 'বৈশাখ ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ'
(এপ্রিল-মে ১৯৩২) সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩২ বৎসর ১১ মাস।
- পত্রিকা: জয়তী। বৈশাখ ১৩৩৯ (এপ্রিল-মে ১৯৩২) । শিরোনাম- গজল-গুচ্ছ।
- গ্রন্থ:
- সুর-সাকী।
- প্রথম সংস্করণ [আষাঢ় ১৩৩৯ বঙ্গাব্দ। জুলাই ১৯৩২)]
গান সংখ্যা ১২। পাহাড়ি-দাদরা
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ, চতুর্থ খণ্ড। বাংলা একাডেমী,
ঢাকা। [জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮, মে ২০১১।
সুর-সাকী। ১২। পাহাড়ি-দাদরা। পৃষ্ঠা: ২২৯]
- রেকর্ড: টুইন [ সেপ্টেম্বর ১৯৩২ (ভাদ্র-আশ্বিন ১৩৩৯)] এফটি
২২১৭। শিল্পী: সুধীরা দাশগুপ্তা
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
সুধীন দাশ।
[নজরুল-সঙ্গীত
স্বরলিপি, ষষ্ঠ খণ্ড (নজরুল ইন্সটিটিউট, ফাল্গুন ১৪০৩। ফেব্রুয়ারি
১৯৯৭)-এর ৬ সংখ্যক
গান। পৃষ্ঠা: ৪০-৪৫]
[নমুনা]
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রকৃতি (ঋতু, বসন্ত)
- সুরাঙ্গ:
গজল
- তাল:
দাদরা
- গ্রহস্বর: মা