বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: তুমি আমার সকাল বেলার সুর
তুমি আমার সকাল বেলার সুর
হৃদয় অলস-উদাস-করা অশ্রু ভারাতুর॥
ভোরের তারার মত তোমার সজল চাওয়ায়,
ভালোবাসার চেয়ে সে যে কান্না পাওয়ায়
রাত্রি-শেষের চাঁদ তুমি গো বিদায়-বিধুর॥
তুমি আমার ভোরের ঝরা ফুল
শিশির-নাওয়া শ্রভ্র-শুচি পূজারিণীর তুল।
অরুণ তুমি, তরুণ তুমি, করুণ তারো চেয়ে
হাসির দেশে তুমি যেন বিষাদ-লোকের মেয়ে,
তুমি ইন্দ্র-সভার মৌন-বীণা নীরব নূপুর॥
-
ভাবসন্ধান:
মধুর মিলন রাতি শেষে, আসে ভোরের বিদায়বিধূর মুহূর্ত। কবি এই বেদনাকে
হৃদয়- অবসিত করা বেদনাবিধূর সকাল বেলার সুর হিসেবে উল্লেখ করেছেন। রাত্রি শেষের
তারা যেমন রাতের অভিসার শেষে ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে বিরহবিধূর হয়ে আলো ছড়ায়, তেমনি
প্রিয়তমার সজল চোখের চাওয়া। সে দৃষ্টিতে ভালোবাসার আনন্দরসের চেয়ে করুণ রসই প্রবল
হয়ে কবিচিত্তকে আবেশিত করে। কবি সে দৃষ্টিতে খুঁজে পান রাত্রির-শেষের
বিদায়বিধূর চাঁদের বেদনা।
বেদনার শিশিরে ধোয়া রাত্রি শেষের ফুল যেমন পূজারিণীর কাছে পূত-পবিত্র, প্রেয়সীও
তাঁর কাছে তেমনি। কবি প্রেয়সীকে অনুভব করেন নব সূর্যের তরুণ, কিন্তু বিদায় বেলায়
প্রয়সীর সেই মূর্তিই করুণ হয়ে ধরা দেয়। বিদায় সন্ধিক্ষণে কবির কাছে প্রেয়সীকে
মনে হয় আনন্দলোকে থাকা বিষাদলোকের মেয়ে। যেনো দেবরাজ ইন্দ্রের সঙ্গীতসভার স্তব্ধ
বীণা, অপ্সরার নীরব নূপুর।
এই গানটির বাণী আনন্দ ও বেদনা রসের দ্বন্দ্বে এক অপূর্ব দ্বৈত অনুভূতির মধ্যে
নান্দনিক রূপের জন্ম দেয়। প্রেয়সী কাছে ছিল, আছে এবং থাকবে না। এই তিনটি দশায় পাওয়া
এবং হারানোর দ্বৈত অনুভূতি হৃদয়কে যেভাবে ভাবে অলস-উদাস করে তোলে, স্থায়ীর সেই
ভাবটিই গানের অন্তরা, সঞ্চারী, আভোগকে আনন্দ ও বেদনা রসের দ্বন্দ্বে অভিষিক্ত করে।
-
রচনাকাল: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা
পত্রিকার শ্রাবণ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯৩৭) সংখ্যায় গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৮ বৎসর ২ মাস।
-
রেকর্ড:
এইচএমভি [ডিসেম্বর
১৯৩৯
খ্রিষ্টাব্দ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৯৩৮)।
এন.
১৭৪০২। শিল্পী:
সন্তোষ সেনগুপ্ত। সুর: শৈলেশ দত্তগুপ্ত।] [শ্রবণ
নমুনা]
এর জুড়ি গান: ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয় [তথ্য]
-
পত্রিকা:
সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা।
শ্রাবণ, ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট ১৯৩৭)। স্বরলিপি: নলিনী লাহিড়ী। সুরকার: নজরুল ইসলাম।
[নমুনা]
-
স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
- নলিনী লাহিড়ী। সঙ্গীত বিজ্ঞান প্রবেশিকা, শ্রাবণ, ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ (জুলাই-আগষ্ট
১৯৩৭)। পৃষ্ঠা: ১৪৭-১৪৯।
[নমুনা]
বিশেষ দ্রষ্ট্যব্য: ব্রহ্মমোহন
ঠাকুরের এর মতে-
স্বরলিপিধৃত সুরটি বিশেষ গুরুত্বপুর্ণ।
নজরুলের এই সুরটিকে সামান্য পরিবর্তন
করে শৈলেশ দত্তগুপ্ত তাঁর সুরে এইচ.এম.ভি.-তে সন্তোষ সেনগুপ্তকে দিয়ে
রেকর্ডে গাইয়েছিলেন (এন ১৭৪০২, ডিসেম্বর ১৯৩৯)। তুলনামূলক বিচারে নজরুলের
এই সুরটি অধিকতর বাণীর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অদ্যাবধি এই সুরটি অপ্রকাশিত ।
[সূত্র:
নজরুল-সঙ্গীত,
আদি স্বরলিপি সংগ্রহ (নজরুল ইনস্টিটিউট,
আশ্বিন ১৪০৬।
অক্টোবর ১৯৯৯) -এর ২০
সংখ্যক গান। পৃষ্ঠা: ৫১-৫৩।]
- সুরকার:
কাজী নজরুল ইসলাম।
-
পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: প্রেম
- সুরাঙ্গ: স্বকীয় বৈশিষ্ট্য