বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: কে দুরন্ত বাজাও ঝড়ের ব্যাকুল বাঁশি
কে দুরন্ত বাজাও ঝড়ের ব্যাকুল বাঁশি
আকাশ কাঁপে সে সুর শুনে সর্বনাশী॥
বন ঢেলে দেয় উজাড় ক'রে
ফুলের ডালা চরণ' পরে,
নীল গগনে ছুটে আসে মেঘের রাশি॥
বিপুল ঢেউয়ের নাগর-দোলায় সাগর দুলে
বান ডেকে যায় শীর্ণা নদীর কূলে কূলে
তোমার প্রলয় মহোৎসবে
বন্ধু ওগো, ডাকবে কবে?
ভাঙবে আমার ঘরের বাঁধন কাঁদন হাসি॥
-
ভাবসন্ধান: কোনো এক অদেখা অজানা পরমশক্তির ইচ্ছায় জগৎজুড়ে চলছে
ভাঙা-গড়ার খেলা। এই খেলার মধ্য দিয়ে জগতের নবতর কল্যাণ ও প্রশান্তির সূচনা হয়।
গানটির স্থায়ীতে প্রচলিত জরাজীর্ণতাকে ভেঙে নবতর সৃষ্টির উপকরণের প্রতীক হিসেবে
'দুরন্ত ঝড়'-কে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এই দুরন্ত ঝড়ে বাজে পরমসত্তার বাঁশীর সুর। সে বাঁশীর সর্বনাশী সুরের আঘাতে কাঁপে আকাশ।
এখানে আকাশ হলো- সামগ্রিক পরিস্থিতর অবস্থা বা দশার প্রতীক।
প্রথম অন্তরাতে, উপস্থাপিত হয়েছে পরমসত্তার চরণে প্রশান্তি ও ভক্তির নিবেদেনের
প্রতীক হিসেবে বনভূমির নিবেদিত ফুলের ডালা। এই পরমমসত্তার কাছে দুরন্ত ঝড়ের মেঘ
ছুটে আসে নীলাকাশে স্নিগ্ধ প্রশান্তির অর্ঘ হয়ে।
গানটির সঞ্চারীতে কবি উপস্থাপন করেছেন পরমসত্তার একটি সামগ্রিক রূপের
অংশবিশেষকে। কবি মনে করেন, পরমাসত্তার ইচ্ছাতেই- বিপুল ঢেউয়ের নাগর-দোলায় সাগর
দোলে, শীর্ণা নদীর কূলে কূলে
বান ডেকে যায়। গানের শেষাংশে এসে কবি তাঁর এই প্রলয় মহোৎসবের
অংশভাগী হতে চেয়েছেন। তিনি প্রতীক্ষায় আছেন, কবে পর্মসত্তা তাঁকে বন্ধু বলে কাছে
ডেকে নেবেন। কবে কবির যাপিতজীবনের কান্না-হাসির বন্ধন থেকে মুক্ত করে- নবততর
মহিমান্বিত জীবন দান
করবেন। যেখানে তিনি সকল সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে পরমসত্তার সাথে পরমানন্দে বিলীন
হয়ে যাবেন।
-
রচনাকাল ও স্থান: গানটির
রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৩৪১ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ) গানটি
গানের মালা
প্রথম সংস্করণে অন্তর্ভুক্ত হয়ে
প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের
বয়স ছিল ৩৫ বৎসর ৪ মাস।
- গ্রন্থ:
- গানের মালা প্রথম সংস্করণ আশ্বিন ১৩৪১ বঙ্গাব্দ (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দ)।
৩৬। হিন্দোল মিশ্র-তেওড়া
-
নজরুল রচনাবলী। জন্মশতবর্ষ সংকলন ষষ্ঠ খণ্ড। বাংলা একাডেমী, ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৯, জুন ২০১২। গানের মালা।
৩৬। হিন্দোল মিশ্র-তেওড়া। পৃষ্ঠা
২১৩- ২১৪]
- পত্রিকা:
মোহাম্মদী [৩০শ বর্ষ, ৭ম সংখ্যা। বৈশাখ ১৩৬৬ (এপ্রিল-মে ১৯৫৯)। নজরুল-গীতি।
(খেয়াল)। হিণ্ডোল-ত্রিতাল। কথা: কাজী নজরুল ইসলাম।
- রেকর্ড: টুইন [জুন ১৯৩৫ (জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় ১৩৪২)। এফটি ৩৯৭৫। শিল্পী: দেবেন বিশ্বাস]
[শ্রবণ নমুনা]
- স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
সুধীন দাশ।
[নজরুল-সঙ্গীত
স্বরলিপি, দ্বাদশ খণ্ড।
প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আশ্বিন ১৪০৪/অক্টোবর ১৯৯৩। দশম গান।]
[নমুনা]
- সুরকার:
কাজী নজরুল ইসলাম
- পর্যায়:
- বিষয়াঙ্গ: ধর্মসঙ্গীত। সাধারণ। পরমসত্তা। প্রত্যাশা
- সুরাঙ্গ:
ধ্রুপদাঙ্গ