বিষয়: নজরুল সঙ্গীত।
শিরোনাম: নমঃ নমঃ নমো বাঙ্লাদেশ মম
নমঃ নমঃ নমো
বাঙ্লাদেশ মম
চির-মনোরম
চির মধুর
বুকে নিরবধি
বহে শত নদী
চরণে জলধির
বাজে নূপুর॥
গ্রীষ্মে নাচে বামা
কালবোশেখি ঝড়ে
সহসা বরষাতে
কাঁদিয়া ভেঙ্গে পড়ে
শরতে হেসে চলে
শেফালিকা-তলে
গাহিয়া আগমনী
গীতি বিধুর॥
হরিত অঞ্চল
হেমন্তে দুলায়ে
ফেরে সে মাঠে মাঠে
শিশির ভেজা পায়ে
শীতের অলস বেলা
পাতা ঝরারি খেলা
ফাগুনে পরে সাজ
ফুল-বধূর॥
এই দেশের মাটি
জল ও ফুলে ফলে
যে রস যে সুধা
নাহি ভূমণ্ডলে
এই মায়েরি বুকে
হেসে খেলে সুখে
ঘুমাবো এই বুকে
স্বপ্নাতুর॥
- ভাবসন্ধান: ষড়ঋতুর অপরূপ বৈভবে সমৃদ্ধ মাতৃরূপিণী বাংলাদেশ। কবি এই
গানের শুরুতেই- সাগরের জলনূপূরে কল্লোলিত, নদ-নদীবিধৌত চিরমনোরম, চিরমধুর
মাতৃরূপিণী বাংলাদেশকে প্রণাম জানিয়েছেন।
এই গানের ষড়ঋতু বহুরূপিণী নারী। এই নারী জননী বাংলাদেশের সহচরী হয়ে বাংলাদেশকে
নানারূপে আভরিত করে। গ্রীষ্মের কালবৈশাখীর ঝড়ে যে বামা (নারী, এখানে রুদ্র
প্রকৃতি) উদ্দাম নৃত্যে ভয়ঙ্করী হয়ে ওঠে, বরষাতে সে যেন আবার কান্নার অঝর বর্ষণে
ভেঙে পড়ে। শরতে এই সহাস্য সহচরী শেফালি বনে আগমনী গানের মূর্চ্ছনা ছড়িয়ে দেয়।
হেমন্তে এই সহচরী সবুজ বনাঞ্চলে, মাঠে মাঠে তার শিশির ভেজা পায়ে ছন্দের দোলা
ছড়িয়ে দেয়। তারপরে অলস শীতের বেলায় চলে তার বনে বনে পাতা ছড়ানোর খেলা। অবশেষে
বসন্তে আসে সে ফুলবধুর অপরূপ সাজে।
ষড়ঋতুর এই রূপবৈচিত্র্যে মুগ্ধ কবির কাছে মনে হয়, এই দেশের মতো এমন দেশ আর নেই।
তাই কবির বাসনা, অপরূপ স্বপ্নাবেশে কবি হেসেখেলে পরম সুখে জীবন অতিবাহিত করে এই
মায়ের বুকে পরম প্রশান্তিতে ঘুমাবেন।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে
সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না।
১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর (রবিবার ২৭ আশ্বিন
১৩৩৯) প্রকাশিত 'বনগীতি' গ্রন্থে
গানটি প্রথম অন্তর্ভুক্ত হয়ে প্রকাশিত হয়েছিল। এই
সময় নজরুলের বয়স ছিল ৩৩ বৎসর ৪ মাস।
- গ্রন্থ:
- বনগীতি
- প্রথম সংস্করণ [১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ অক্টোবর (রবিবার ২৭ আশ্বিন
১৩৩৯)]।স্বদেশী গান
- নজরুল রচনাবলী, জন্মশতবর্ষ সংস্করণ। পঞ্চম খণ্ড।
বাংলা একাডেমী। ঢাকা। জ্যৈষ্ঠ ১৪১৮
মে, ২০১১। ১৬ সংখ্যক গান। স্বদেশী গান।
- রেকর্ড: টুইন [ডিসেম্বর ১৯৩২ (অগ্রহায়ণ-পৌষ ১৩৩৯)]। এফটি
২৩১৯। শিল্পী: আব্বাসউদ্দীন আহমদ
-
স্বরলিপিকার ও স্বরলিপি:
সুধীন দাশ।[নজরুল-সঙ্গীত
স্বরলিপি, সপ্তদশ খণ্ড। প্রথম সংস্করণ। নজরুল ইন্সটিটিউট আষাঢ়, ১৪০৩/ জুন, ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দ।
১৪ সংখ্যক গান।]
[নমুনা]
-
সুরকার: কাশেম মল্লিক
- পর্যায়: