বিষয়: নজরুল সঙ্গীত
শিরোনাম: কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া
কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া
কুহরিল মহুয়া-বনে
চমকি জাগিনু নিশীথ শয়নে॥
শূন্য ভবনে মৃদুল সমীরে
প্রদীপের শিখা কাঁপে ধীরে ধীরে
চরণ-চিহ্ন রাখি দলিত কুসুমে
চলিয়া গেছ তুমি দূর-বিজনে॥
বাহিরে ঝরে ফুল আমি ঝুরি ঘরে
বেণু-বনে সমীরণ হাহাকার করে
ব’লে যাও কেন গেলে এমন ক’রে
কিছু নাহি ব’লে সহসা গোপনে॥
- ভাবার্থ: শীতের জরাজীর্ণ দশা শেষে- প্রকৃতিতে বসন্ত আনে
যৌবন-উচ্ছ্বাস। এরই ছোঁওয়া লাগে প্রকৃতির সন্তান মানুষের মনে। এই গানে
যুগলবন্দীতে পাওয়া যায় তারই আভাস। এই গানে উভচয়ই যেন উভয়ের অনুষঙ্গী হয়ে ধরা
দিয়েছে সমব্যথী হয়ে।
কবি ছিলেন যৌবন-নিস্পৃহ সুপ্তি দশায়। হঠাৎ মহুয়া বনে ডেকে ওঠা কোকিলের ডাকে-
সুষুপ্তিতে নিমগ্ন কবি চমকে জেগে উঠলেন যৌবনের আবেগে বসন্ত সঙ্গীতমুখর ভবনে।
কিন্তু এই জাগরণ তাঁর কাছে উপভোগ্য হয়ে উঠলো না। কারণ, তিনি দেখলেন তাঁর
যৌবনসঙ্গী তাঁরই যৌবনকুসমকে পদদলিত করে চলে গেছে দূর-বিজনে। তারই অভিঘাতে শূন্য
ভবনে মৃদু বাতাসে কম্পিত প্রদীপ শিখা কাঁপে ধীরে ধীরে- তাঁর প্রণয়ের শেষ শিখার
মতো। সঙ্গীহীন কবি, অন্তরবেদনায় ক্রন্দসী হয়ে ওঠেন গৃহকোণে। যেমনটা ঘরের
বাইরে ব্যর্থ প্রেমে ব্যথিত হয়ে পুষ্পরাশি কান্নার মতই ঝরে পড়ে। এই যুগল বেদনার
হাহাকার ওঠে বেনুবনের সমীরণে। কবি গভীর হাহাকারের ভিতরে স্বগোক্তিতে বলেন- 'ব'লে
যাও কেন গেলে এমন ক'রে, কিছু না ব'লে সহসা গোপনে'। উত্তর না-পাওয়ার বেদনায় কবি
মনে ও গৃহকোণে ঝুরে মরে।
- রচনাকাল ও স্থান: গানটির রচনাকাল সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানা যায় না। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৭)
মাসে হিন্দুস্তান রেকর্ড কোম্পানি থেকে গানটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এই সময় নজরুলের বয়স ছিল ৪১ বৎসর ৪ মাস।
- রেকর্ড:
হিন্দুস্থান [অক্টোবর ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দ (আশ্বিন-কার্তিক ১৩৪৭)] এইচ ৮৫৭।
শিল্পী:
শচীন দেববর্মণ। সুর: নজরুল। শ্রেণি: ঠুংরী]
- বেতার:
ঠুংরীর জলসা
(ঠুমরী গানভিত্তিক অনুষ্ঠান)।কলকাতা বেতার কেন্দ্র। [২৯ নভেম্বর ১৯৪১ (শনিবার ১৩ অগ্রহায়ণ ১৩৪৮),
সময়: সন্ধ্যা ৭.৫০-৮.২৯ মিনিট।
- সূত্র:
- বেতার জগৎ। ১২শ বর্ষ ২২শ সংখ্যা। পৃষ্ঠা: ১৩৫৬
- The Indian Listener Vol VI No. 22.page 87
স্বরলিপি ও স্বরলিপিকার:
আহসান মুর্শেদ
[নজরুল
সঙ্গীত স্বরলিপি, ছাব্বিশ খণ্ড, নজরুল ইন্সটিটিউট, ঢাকা। আশ্বিন, ১৪১২ বঙ্গাব্দে
/সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ] পঞ্চম গান। [নমুনা]
সুরকার: নজরুল ইসলাম
পর্যায়: