বিষয়: রবীন্দ্রসঙ্গীত।
শিরোনাম: খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে
পাঠ ও পাঠভেদ:
- গীতবিতান (বিশ্বভারতী, কার্তিক ১৪১২)-এর পাঠ: নাট্যগীতি পর্যায়ের ৫২ সংখ্যক গান।
খাঁচার
পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে, বনের পাখি ছিল বনে।
একদা কী
করিয়া মিলন হল দোঁহে, কী ছিল বিধাতার মনে।
বনের
পাখি বলে, ‘খাঁচার পাখি ভাই, বনেতে যাই দোঁহে মিলে।’
খাঁচার
পাখি বলে, ‘বনের পাখি আয়, খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।’
বনের
পাখি বলে, ‘না, আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।
খাঁচার
পাখি বলে, ‘হায়, আমি কেমনে বনে বাহিরিব।’
বনের
পাখি গাহে বাহিরে বসি বসি বনের গান ছিল যত,
খাঁচার
পাখি গাহে শিখানো বুলি তার― দোঁহার ভাষা দুইমত।
বনের
পাখি বলে, ‘খাঁচার পাখি ভাই, বনের গান গাও দেখি।’
খাঁচার
পাখি বলে, ‘বনের পাখি ভাই, খাঁচার গান লহো শিখি।’
বনের
পাখি বলে, ‘না,
আমি শিখানো গান নাহি চাই।’
খাঁচার
পাখি বলে, ‘হায়
আমি কেমনে বনগান গাই।’
বনের
পাখি বলে, ‘আকাশ ঘন নীল কোথাও বাধা নাহি তার।’
খাঁচার
পাখি বলে, ‘খাঁচাটি পরিপাটি কেমন ঢাকা চারি ধার।’
বনের
পাখি বলে, ‘আপনা ছাড়ি দাও মেঘের মাঝে একেবারে।’
খাঁচার পাখি বলে, 'নিরালা কোণে বসে বাঁধিয়া রাখো আপনারে।’
বনের
পাখি বলে, ‘না,
সেথা কোথায় উড়িবারে পাই!’
খাঁচার
পাখি বলে, ‘হায়, মেঘে
কোথায় বসিবার ঠাঁই।’
এমনি
দুই পাখি দোঁহারে ভালোবাসে, তবুও কাছে নাহি পায়।
খাঁচার
ফাঁকে ফাঁকে পরশে মুখে মুখে, নীরবে চোখে চোখে চায়।
দুজনে
কেহ কারে বুঝিতে নাহি পারে, বুঝাতে নারে আপনায়।
দুজনে
একা একা ঝাপটি মরে পাখা―
কাতরে কহে, ‘কাছে আয়!’
বনের
পাখি বলে, ‘না,
কবে খাঁচায় রুধি দিবে দ্বার!’
খাঁচার
পাখি বলে, ‘হায়, মোর
শকতি নাহি উড়িবার।’
RBVBMS 129
[নমুনা:
প্রথমাংশ,
দ্বিতীয়াংশ,
তৃতীয়াংশ]
RBVBMS 426
(ii)
[নমুনা
প্রথমাংশ,
দ্বিতীয়াংশ
শেষাংশ]
পাঠভেদ:
স্বরবিতান ত্রয়স্ত্রিংশ (৩৩, কাব্যগীতি) খণ্ডের (অগ্রহায়ণ ১৪১৩)
পাঠভেদ অংশে এর একটি পাঠভেদ রয়েছে।
খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে
খাঁচার
পাখি গাহে শিখানো বুলি তার...
বনের গান গাও দেখি...
খাঁচার পাখি বলে নিরালা কোণে বসে
: কাব্যগীতি (১৩২৬)
খাঁচার পাখি পড়ে শিখানো বুলি তার...
বনের
গান গাও দিখি...
খাঁচার পাখি বলে, নিরালা গৃহকোণে
:
গীতবিতান
(আশ্বিন ১৩৩৮)
তথ্যানুসন্ধান
-
ক. রচনাকাল ও স্থান:
রবীন্দ্রনাথের পাণ্ডুলিপি
RBVBMS 129
-এবং
RBVBMS 426
(ii) থেকে এই গানটির রচনার স্থান ও তারিখ পাওয়া যায়-
সাহাজাদপুর, ১৯ আষাঢ়। ১৮৯২খ্রিষ্টাব্দ (১২৯৯ বঙ্গাব্দ)।
এই সময় রবীন্দ্রনাথের বয়স ছিল,
৩১ বৎসর ৩ মাস।
এ গানের রচনা সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের জীবনস্মৃতি গ্রন্থে
[রবীন্দ্র রচনাবলী
সপ্তদশ খণ্ড (বিশ্বভারতী,
আষাঢ় ১৩৯৩) পৃষ্ঠা ২৭১ ।] যা নিম্নরূপ-
"বাড়ির বাহিরে আমাদের যাওয়া বারণ
ছিল, এমন-কি, বাড়ির ভিতরেও আমরা সর্বত্র যেমন-খুশি যাওয়া-আসা করিতে পারিতাম
না। সেইজন্য বিশ্বপ্রকৃতিকে আড়াল-আবডাল হইতে দেখিতাম। বাহির বলিয়া একটি
অনন্ত-প্রসারিত পদার্থ ছিল যাহা আমার অতীত, অথচ যাহার রূপ শব্দ গন্ধ
দ্বার-জানলার নানা ফাঁক-ফুকর দিয়া এদিক-ওদিক হইতে আমাকে চকিতে ছুঁইয়া যাইত।
সে যেন গরাদের ব্যবধান দিয়া নানা ইশারায় আমার সঙ্গে খেলা করিবার নানা
চেষ্টা করিত। সে ছিল মুক্ত, আমি ছিলাম বদ্ধ―
মিলনের উপায় ছিল না, সেইজন্য প্রণয়ের আকর্ষণ ছিল প্রবল। আজ সেই খড়ির গণ্ডি
মুছিয়া গেছে, কিন্তু গণ্ডি তবু ঘোচে নাই। দূর এখনো দূরে বাহির এখনো
বাহিরেই। বড়ো হইয়া যে কবিতাটি লিখিয়াছিলাম তাহাই মনে পড়ে–
খাঁচার পাখি ছিল সোনার খাঁচাটিতে,
বনের পাখি ছিল বনে।
একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে,
কী ছিল বিধাতার মনে।
বনের পাখি বলে, "খাঁচার পাখি,আয়,
বনেতে যাই দোঁহে মিলে।"
খাঁচার পাখি বলে, "বনের পাখি, আয়,
খাঁচায় থাকি নিরিবিলে।"
বনের পাখি বলে, "না,
আমি শিকলে ধরা নাহি দিব।"
খাঁচার পাখি বলে, "হায়,
আমি কেমনে বনে বাহিরিব।"
খ. প্রকাশ ও গ্রন্থভুক্তি:
- কাব্যগীতি (পৌষ ১৩২৬ বঙ্গাব্দ)।
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরকৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত হয়েছিল।
কাব্যগ্রন্থ
কাব্যগ্রন্থাবলী
[আদি ব্রাহ্মসমাজ প্রেস, ১৩০৩।
সোনার তরী। শিরোনাম: দুই পাখী। পৃষ্ঠা
৩০৭]
[নমুনা]
গান
গীতবিতান
বাঙ্গালীর গান
(১৩১২ বঙ্গাব্দ)।
রবীন্দ্রগ্রন্থাবলী (হিতবাদী ১৩১১) গান সংখ্যা ১১৫। কীর্তনের সুর। পৃষ্ঠা: ৯৯৩।
[নমুনা
শতগান।
৬ সংখ্যক গান, ভৈরবী-রূপক (১৩০৭ বঙ্গাব্দ)। সরলাদেবী-কৃত স্বরলিপি-সহ মুদ্রিত। পৃষ্ঠা: ২০-২৫।
সোনার তরী
-
প্রথম সংস্করণ [সাহিত্য-যন্ত্র, ১৩০০ বঙ্গাব্দ। শিরোনাম: দুই পাখী। পৃষ্ঠা
: ৫২-৫৪] [নমুনা
প্রথমাংশ,
শেষাংশ]
- রবীন্দ্ররচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড)। বৈশাখ ১৩৭১। বিশ্বভারতী। সোনার তরী।
শিরোনাম: দুই পাখি। পৃষ্ঠা: ৪৩-৪৫।
স্বরবিতান ত্রয়স্ত্রিংশ
(৩৩) খণ্ডের (অগ্রহায়ণ ১৪১৩ বঙ্গাব্দ) ১৮ সংখ্যক
গান। পৃষ্ঠা ৬৩-৬৮
[নমুনা]
পত্রিকা:
-
আনন্দ সঙ্গীত
পত্রিকা (আশ্বিন-কার্তিক ১৩২১ বঙ্গাব্দ)।
- ভারতী ও বালক,
খাঁচা ও বনের পাখী (চৈত্র ১২৯৯)। সরলা দেবী-কৃত স্বরলিপিসহ মুদ্রিত।
- ভারতী, নরনারী (অগ্রহায়ণ
১২৯৯ বঙ্গাব্দ)।
গ. সঙ্গীত বিষয়ক তথ্যাবলী:
- স্বরলিপি:
- স্বরলিপিকার:
দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর
[স্বরবিতান ত্রয়স্ত্রিংশ
(৩৩) অগ্রহায়ণ ১৪১৩ বঙ্গাব্দ)]।
- রাগ ও তাল:
- সঙ্গীত
বিষয়ক তথ্যাবলী:
স্বরবিতান ত্রয়স্ত্রিংশ (৩৩) খণ্ডে (ভাদ্র ১৪১৪ বঙ্গাব্দ)-এ গৃহীত স্বরলিপিতে রাগ-তালের কোন উল্লেখ নেই। উক্ত স্বরলিপিটি ৩।৪ মাত্রা ছন্দে রূপক তালে নিবদ্ধ।
- অঙ্গ: কীর্তন। তাল: তেওরা। [রবীন্দ্রসংগীত: রাগ-সুর নির্দেশিকা। সুধীর চন্দ। প্যাপিরাস, ডিসেম্বর ২০০৬। পৃষ্ঠা: ৪৮]
- কীর্তন। তাল: রূপক (৩/৪)। [রাগরাগিণীর এলাকায় রবীন্দ্রসংগীত। প্রফুল্লকুমার চক্রবর্তী। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সংগীত আকাদেমি, জুলাই ২০০১। পৃষ্ঠা: ৮৭।]
- গ্রহস্বর : সা।
- লয় : মধ্য।