অরূপ, তোমার বাণী
অঙ্গে আমার চিত্তে আমার মুক্তি দিক্ সে আনি॥
নিত্যকালের উৎসব তব বিশ্বের দীপালিকা—
আমি শুধু তারি মাটির প্রদীপ, জ্বালাও তাহার শিখা
নির্বাণহীন আলোকদীপ্ত তোমার ইচ্ছাখানি ॥
যেমন তোমার বসন্তবায় গীতলেখা যায় লিখে
বর্ণে বর্ণে পুষ্পে পর্ণে বনে বনে দিকে দিকে
তেমনি আমার প্রাণের কেন্দ্রে নিশ্বাস দাও পুরে,
শূন্য তাহার পূর্ণ করিয়া ধন্য করুক সুরে—
বিঘ্ন তাহার পুণ্য করুক তব দক্ষিণপাণি ॥
তোমার অরূপবাণী
আমার মাঝে রূপ নিয়েছে
এই যেন গো জানি।
নিত্যকালের উৎসব এই
বিশ্বের দীপালিকা
আমি শুধু তারি মাটির প্রদীপ
জ্বলুক তাহে শিখা
নির্বাণহীন আলোকছটায় তোমার ইচ্ছাখানি॥
[সূত্র: পাণ্ডুলিপি 478] [নমুনা]
এরপর রবীন্দ্রনাথ জাগ্রেভ থাকে বুখারেস্ট আসেন এবং এই গানটির অনেকটাই পরিবর্তন করে একটি ভিন্নতর পাঠ তৈরি করেন। পাণ্ডুলিপিতে এই পরিবর্তনের তারিখ ও স্থান লেখা আছে '২১ নভেম্বর বুখারেস্ট'। এই পাঠটির আদি নমুনা পাওয়া যায়, 'তব অমূর্ত্ত বাণী' শিরোনামে পাণ্ডুলিপি 'Ms.027' [নমুনা] । এই পাঠটি তৈরির সময় রবীন্দ্র প্রচুর কাটাকুটি করেছেন। এরই চূড়ান্ত রূপ পাওয়া যায় 'পাণ্ডুলিপি Ms.028'। উল্লেখ্য, পাণ্ডুলিপি 437-এর পাঠাটিও [প্রথম নমুনা, দ্বিতীয় নমুনা] একই রকম। 'পাণ্ডুলিপি Ms.028-এর [নমুনা]পাঠ্যরূপটি নিচে দেওয়া হলো।
তব অমূর্ত্ত বাণী
অঙ্গে আমার চিত্তে আমার মুক্তি দিক্ সে আনি॥
নিত্যকালের উৎসব তব বিশ্বের দীপালিকা,
আমি শুধু তারি মাটির প্রদীপ, জ্বালাও তাহার শিখা
নির্বাণহীন আলোকদীপ্ত তোমার ইচ্ছাখানি ॥
যেমন তোমার বসন্তবায় গীতলেখা যায় লিখে
বর্ণে বর্ণে পুষ্পে পর্ণে বনে বনে দিকে দিকে
তেমনি আমার প্রাণের কেন্দ্রে নিশ্বাস দাও পূরে,
শূন্য তাহার পূর্ণ করিয়া ধন্য করুক সুরে,
বিঘ্ন তাহার পুণ্য করুক তব দক্ষিণপাণি ॥এরপর এর সংশোধিত চূড়ান্ত রূপ গৃহীত হয়, ১৩৩৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত গীতবিতানের তৃতীয় খণ্ডের, প্রথম সংস্করণে (শ্রাবণ ১৩৩৯)। এই সংস্করণে গানটির প্রথম পংক্তি 'তোমার অরূপবাণী' হয়ে যায় 'অরূপ তোমার বাণী'।
১৩৮১ বঙ্গাব্দে 'বৈকালী'র পাঠের সাথে গীতবিতানের কিছু পাঠ লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
অরূপ তোমার বাণী
অঙ্গে আমার চিত্তে আমার মুক্তি দিক্ সে আনি [গীতবিতান (শ্রাবণ ১৩৩৯)]
তব অমূর্ত বাণী
অঙ্গে আমার চিত্তে আমার মূর্তি পেয়েছে জানি। [বৈকালী (১৩৮১)]
আমি শুধু তারি মাটির প্রদীপ, জ্বালাও তাহার শিখা [গীতবিতান ((শ্রাবণ ১৩৩৯)
আমি তারি শুধু একটি প্রদীপ, জ্বালাও তাহার শিখা [বৈকালী (১৩৮১)]