সাজসজ্জা (মেকআপ)
makeup
[অভিধান সাজসজ্জা]

সাজের (সজ্জিত করার উপকরণ) সজ্জা (বিন্যাসন), এই অর্থে দেহশ্রী বা মুখশ্রীকে নান্দনিকভাবে উপস্থাপনের উপযোগী করার কার্যক্রম হলো সাজসজ্জা। অন্যান্য অর্থ: মেকআপ, সাজগোজ, সাজসজ্জা

সামগ্রিক দেহশ্রীর সাজসজ্জার মধ্যে রয়েছে মুখমণ্ডল, কেশরাশি, কণ্ঠদেশ, বাহু, দেহকাণ্ড (বক্ষদেশ, উদর), নিতম্ব, পদযুগল। এর উপকরণ হিসেবে রয়েছে- অঙ্গরাগ, অলঙ্কার, পোশাক ও সুগন্ধী। সাধারণভাবে এ সকল উপকরণ ব্যবহার করা যায়। যেমন ঘর থেকে বাইরের বের হওয়ার আগে নিজেকে সাধারণভাবে একটু সাজিয়ে নেওয়া। বিশেষভাবে কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান বা অংশগ্রহণের জন্য বিশেষভাবে সাজসজ্জা বা মেকাআপ করা হয়। সামাজিক অনুষ্ঠান (বিবাহাদি, বিবাহ বার্ষিকী ইত্যাদি), শিল্পানুষ্ঠানে (নৃত্য, নাটক) অংশগ্রহণকারীদের বিশেষ ধরনের সাজসজ্জা লক্ষ্য করা যায়। ক্ষেত্র বিশেষে - অঙ্গরাগ, অলঙ্কার, পোশাক ও সুগন্ধীর প্রয়োগ বিশেষভাবে করা হয়। মূলত অনুষ্ঠানের প্রকৃতি অনুসারে বিশেষভাবে সাজসজ্জা করা হয়। যেমন বিয়ের কনে যে ধরনের সাজসজ্জা করেন, উক্ত অনুষ্ঠানের অভ্যাগত অতিথিরা তেমন সাজগোজ করেন না।

সাজসজ্জার প্রক্রিয়া
১. আদ্য (primer): সাজসজ্জার আগে মুখে ব্যবহৃত বিশেষ ধরণের অঙ্গরাগ ব্যবহার করা হয়। মুখের কপোল, কপাল, চোখের পাতা, ওষ্ঠাধর ইত্যাদির ক্ষেত্রে আদ্য সাজসজ্জার জন্য বিশেষ ধরনের অঙ্গরাগ ব্যবহার করা হয়। যেমন
কপোল, কপাল, চিবুকের ত্বকের উপরের অংশে একটি স্বচ্ছ, মসৃণ স্তর তৈরি করার জন্য বিশেষ ধরণের অঙ্গরাগ ব্যবহার করা হয়। ত্বকের আর্দ্রতা, তৈলাক্তভাব দূরীকরণে আদ্য অঙ্গরাগ বিশেষ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট (ভিটামিন এ, সি এবং ই সমৃদ্ধ উপকরণ) অঙ্গরাগ, আঙ্গুরের বীচির নির্যযাস, সবুজ চা পাতা ব্যবহৃত হয়। আদ্য অঙ্গরাগ হতে পারে জল-ভিত্তিক বা সিলিকন ভিত্তিক। এতে থাকতে পারে সাইক্লোমেথিকোন ও ডাইমেথিকন উপাদান। 

২. আচ্ছাদক
(Concealer)  আদ্য অঙ্গরাগের পরে ব্যবহৃত ক্রিম বা তরল উপকরণ। এই উপকরণটি ত্বকের মূল রূপকে আচ্ছাদিত করে। এর ফলে ত্বকের দাগ জাতীয় ত্রুটিকে লুকানো সম্ভব হয়। ব্যবহারকারীর ত্বকের রঙ অনুসারে ব্যবহৃত আদ্য অঙ্গরাগের সাথে সমন্বয় করতে পারে এমন আচ্ছাদক উপকরণ ব্যবহার করা হয়। রঙের গভীরতা আনার জন্য আচ্ছাদকের পুরু প্রলেপ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে এই পুরুত্ব নির্ভর করে মুখমণ্ডল, কণ্ঠদেশ, কণ্ঠদেশের নিম্নভাগ, হাত ইত্যাদি অংশের ত্বক প্রকৃতির উপর। যেমন চোখের পাতার উপরে হাল্কা আচ্ছাদক ব্যবহার করা হয়। সেই তুলনায় হাত, কণ্ঠদেশ, কপোল ইত্যাদিতে অপেক্ষাকৃত পুরু আচ্ছাদক ব্যবহার করা হয়।

৩. ভিত্তি
(Foundation): আচ্ছাদকের উপরে  ক্রিম, তরল, পাউডার জাতীয় অঙ্গরাগ ব্যবহার করা হয়। ত্বকের রঙ এবং মসৃণতা তৈরির জন্য মুখের সম্পূর্ণ অংশে এর প্রয়োগ করা হয়। 

৪. রুজ, ব্লাশ বা ব্লাশার
(Rouge, blush, or blusher): ক্রিম বা তরল জাতীয় অঙ্গরাগ। চিবুক, কপোলকে বিশেষভাবে রঞ্জিত করার জন্য এর ব্যবহার করা হয়। মুখের এ সকল অংশকে অধিকতর আকর্ষণীয় করার জন্য ব্যবহার করা হয় গোলাপী, লালচে, বাদামী ছায়াযুক্ত রঙের আভা আনা হয়।

৫. ব্রোঞ্জার
(Bronzer): ত্বকে তাম্রবর্ণে আভা যুক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এগুলো পাউডার, ক্রিম বা তরল উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

৬. উচ্চকিতকারক (Highlighter):
মুখমণ্ডলের কোনো অংশের উচ্চবিন্দুকে বিশেষভাবে প্রদর্শনের জন্য তরল, ক্রিম বা পাউডার জাতীয় কিছু অঙ্গরাগ ব্যবহার করা হয়। এসকল অঙ্গরাগ ব্যবহার করা হয় ভ্রু, নাক এবং গালের উচ্চস্থানে।

৭. ভ্রু-সজ্জা:
প্রাথমিকভাবে ভ্রুর অনিয়মিত লোমগুলোকে কেটে বা উপরে ফেলে একটি সাম্যরূপ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে মুখের গড়ন এবং অবস্থানের বিচারে একটি নানন্দনিক রূপ দেওয়া হয়। এরপর এতে ভ্রুকে গাঢ় কালো রঙে রঞ্জিত করার জন্য বিশেষ ধরনের পেন্সিল ব্যবহার করা। ভ্রূসজ্জা দৃঢ় করার জন্য ক্রিম বা মোম জাতীয় পদার্থ ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে ভ্রু ঘিরে থাকা ত্বকের রঙ অপরবর্তি রাখা হয়। অনেকে ভ্রুর সকল লোম তুলে ফেলে নিজের পছন্দমতো ভ্রু অঙ্কন করে নেন।

৮. অক্ষি-ছায়া
(Eyeshadow): চক্ষুকে আকর্ষণীয় করার জন্য পাউডার, ক্রিম বা তরল পিগমেন্টযুক্ত অঙ্গরাগ চোখের চারপাশের, চোখের পাতায় এবং ভ্রুর নিচের দিকে হালকা রঙের ব্যবহার করা হয়। এরূপ রঞ্জনের আঙুলের মাথায় রং লাগিয়ে প্রাথমিক রূপ দেওয়া হয়। পরে ব্রাশ ব্যবহার করে রঙের মসৃণ রূপ দেওয়া হয়। অক্ষি-ছায়া অঙ্কনে নানা ধরনের রং ও নানা ধরনের ঔজ্জ্বল্য আনা হয়। একদম সাদামাটা অনুজ্জ্বল রূপ থেকে চকচকে, ঝলমলে রঙ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

৯. অক্ষিরেখায়ন:
চোখের আপাত আকার বা গভীরতা বাড়াতে ও লম্বা করতে চোখের পাতার পাপড়ি সংলগ্ন অংশে বিশেষভাবে রেখা অঙ্কন করা হয়। এই রেখা চোখের দুই প্রান্ত সূক্ষ্মকৌণিক রূপ লাভ করে। কোনো কোনো কর্ণাভিমুখী প্রান্তের দিকে চোখের রেখাকে প্রলম্বিত করা হয়। অক্ষি রেখায়নে পেন্সিল জেল বা তরল কাজল ব্যবহার করা হয়। অক্ষি রেখায়নে কালো রঙ ব্যবহার করা হয়। তবে বাদামী, সাদা এবং নীল সহ নানা রঙের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

১০. অক্ষিপক্ষ্ম (eyelashes):
অক্ষিপক্ষ্ম হলো চোখের পাতার লোমসমূহ। সাধারণত চোখের পাতাগুলোকে কালো রঙে রঞ্জিত করা হয়। লোমগুলোকে প্রকটীত করার জন্য মোম বা তেল দিয়ে দৃঢ়তর করা হয়। অনেক সময় চোখের পাতায় কৃত্রিম লোম যুক্ত করা হয়। এগুলোতে থাকে মানবদেহের চুল বা কৃ্ত্রিম লোম। এগুলোকে আঠা ব্যবহার করে অক্ষিলোমের রেখা অনুসরণে যুক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রে মাস্কারা নামক ক্রিম ব্যবহার করা হয়। স্পাইরাল ব্রিসটল মাস্কারা ব্রাশ দিয়ে মাস্কারা ব্যবহার করা হয়। চোখের লোম কালো, লম্বা, ঘন বা উন্নত করার জন্য মাস্কারা ব্যবহার করা হয়। সাধারণত কালো বর্ণের মাস্কার ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। তবে অনেক সময় ভিন্ন রঙের মাস্কারও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

১১. লিপস্টিক:
ওষ্ঠাধরকে রঞ্জিত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই অঙ্গরাগটি শীতকালে ওষ্ঠাধর ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।

১২. মুখমণ্ডলের পাউডার:
পাউডার সাজসজ্জার ভিত্তি বা আচ্ছাদক এবং সাধারণ রূপচর্চায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মুখমণ্ডলের রঙ পাল্টানো, আর্দ্রতা রোধ করা, ত্রুটিযুক্ত দাগ লুকানোর ক্ষেত্রে পাউডার ব্যবহার করা হয়।

১৩. নখরঞ্জনী
একপ্রকার ঘন তরল রঞ্জক পদার্থ। নখ মজবুত করতে স্বচ্ছ, বর্ণহীন নেইলপলিশ ব্যবহার করা হয়। তবে প্রসাধনের জন্য রঙিন নখরঞ্জনী ব্যবহার করা হয়। নখরঞ্জনী নানা রঙে হতে পারে। মোটামুটি এর স্থায়ীত্ব লক্ষ্য করা যায়। নখের পুরানো রঙ তুলে ফেলার জন্য রঙ-অপসারক উপকরণ ব্যবহার করা হয়।