মুঘল সম্রাট
আকবরের
(১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ) শাসনামলে ১৫৭২ – ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দের প্রশাসনিক সংস্কারের সময়,
সম্রাট সমগ্র রাজ্যকে কিছু বড় প্রশাসনিক এককে বিভাজিত করেন। এর আয়তন ছিল একালের ভারত
প্রজাতন্ত্রের রাজ্যের সমান। এই প্রশাসনিক এলাকাকে বলা হতো সুবাহ। প্রতিটি সুবাহ
বিভাজিত করা হয়েছিল অনেকগুলো ছোটো ছোটো প্রশাসনিক এলাকায়। এর নাম ছিল সরকার। এর
আয়তন ছিল আগের বড় বড় জেলার সমান। প্রতিটি সরকার প্রধান নিজেদের সুবিধার্থে কিছু
ছোটো এলাকায় ভাগ করেছিলেন। এই ভাগগুলোর নাম ছিল পরগনা।
সে সময় সুবা বাংলার সোনারগাঁও সরকারের
অধীনে ৫২টি পরগনা ছিল।
পরগনার আয়তন ছিল কয়েকটি গ্রামের
আয়তন সমান। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রাক্তন মহকুমার চেয়ে বড়
ছিল। তবে মহকুমার চেয়ে বড় পরগনাকে বলা হতো তরফ।
পরগনার প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল সরকার নামক একটি প্রশাসনিক বিভাগের দ্বারা।
সরকার পরগনা প্রধানের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করলে, পরগনা প্রধানের স্থানীয় প্রথা,
অধিকার ইত্যাদিতে হস্তক্ষেপ করতেন না। পরগনার স্থানীয় রীতিকে বলা হতো পরগনা
দস্তুর। জমি দ্রব্যাদির পরিমাপের ব্যাপারেও পরগনাগুলো নিজস্ব নিয়মেই চলতও।
স্থানীয়ভাবে এগুলোকে বলা হতো পরগনা নিরিখ। নিরিখের বিচারে
সকল পরগনা একই মাপে ছিল না।
১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে টোডরমল বাংলার জমিদারদের থেকে রাজস্ব নেওয়ার রীতি প্রচলন করেন।
ইংরেজ শাসনামলের গোড়ার
দিকে পরগনা বহাল ছিল। ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দে চার্লস কর্নওয়েলস পরগনা
প্রথা বিলোপ করে, জমিদারি প্রথা চালু করেন। এই প্রথা অনুসারে কোনো স্থানীয় ভূস্বামী
কোনো বিশেষ এলাকা শাসন করতেন। জমিদাররা একটি নির্ধারিত রাজস্ব সরকারকে প্রদান
করতেন। এই সময় সমগ্র ভারতবর্ষের একক প্রশাসনিক রীতির ভিতরে আনার জন্য পরগনা দস্তুর
ও পরগনা নিরিখ বাতিল করা হয়। ব্রিটিশ সরকার প্রশাসনিক সুবিধার জন্য বিভিন্ন এলাকাকে
জেলায় বিভক্ত করেন। এই সব জেলাগুলো আবার কয়েকটি ছোটো ছোটো ভাগ ভাগ করেন। এগুলোর নাম
ছিল তহশিল বা তালুক। কিন্তু ভৌগোলিক বিবরণ, ভূমি জরিপ ইত্যাদির ক্ষেত্রে তখনো
পরগনার হিসাব ছিল। এছাড়া তোঙ্ক এবং গোয়ালিয়র -এর মতো কিছু নবাব শাসিত অঞ্চলে পরগনা
ব্রিটিশ শাসনের শেষ অব্দি ছিল। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত-পাকিস্তান বিভাজনের পর,
পরগনা পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এখন কিছু এলাকার নাম হিসেবে পরগনা শব্দটি পাওয়া
যায়। যেমন ২৪ পরগনা।
কতিপয় পরগনা
২৪ পরগনা
ইদ্রাকপুর পরগনা
বিক্রমপুর পরগনা
ভাওয়াল পরগণা