বিক্রমপুর পরগনা
বাংলাদেশের
ঢাকা বিভাগের
অন্তর্গত এই
পরগনাটি
বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চল হিসেবে এই পরগনার কোনো স্বীকৃতি নেই। অবশ্য মুন্সিগঞ্জ জেলার বিস্তৃত অংশের
আদি অধিবাসীরা নিজেদেরকে বিক্রমপুরের অধিবাসী বলে দাবি করে থাকেন।
বিক্রমপুর নামটি কিভাবে এসেছে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট দালিলিক
প্রমাণ নেই। কথিত আছে, হিন্দু পৌরাণিক রাজা বিক্রমাদিত্যের নামানুসারে এই এলাকার
নাম হয়েছিল বিক্রমপুর। অন্যদিকে ইতিহাস ভিত্তিক গবেষণার সূত্রে
বলা হয়-
পাল রাজবংশীয়
রাজা
ধর্মপাল
(৭৭০-৮১০ খ্রিষ্টাব্দ)-এর অপর নাম ছিল
বিক্রমশীল। তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিহার
‘শ্রীমদ্-বিক্রমশীল-দেব-মহাবিহার’ নামে অভিহিত হয়েছে। হয়তো
ধর্মপালের বিক্রমশীল
উপাধি অনুসরণে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছিল বিক্রমপুর। এই অঞ্চল
পাল রাজবংশীয়
রাজাদের সুনজরে ছিল। এঁরা বাংলার অন্যান্য অঞ্চলে
মতো এখানেও বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেছিলেন। যতদূর জানা যায় রাজা
দেবপাল
(৮১০-৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ) রঘুরামপুরে একটি বৌদ্ধবিহার নির্মাণ
করেছিলেন। বর্তমানে এই গ্রামটি মুন্সিগঞ্জ জেলার রামপাল ইউনিয়নে অবস্থিত।
৭৭০ থেকে ৮১০ খ্রিষ্টাব্দের ভিতরে
পাল রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা
ধর্মপাল
(৭৭০-৮১০ খ্রিষ্টাব্দ) পর্যন্ত তার রাজত্বকালে বিক্রমপুরে একটি বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করেন।
ঐতিহাসিকভাবে এই বিহারটি
অতীশ দীপঙ্করের
ধর্মচর্চার
সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই সময় এই অঞ্চলটি ছিল বৌদ্ধ ধর্ম শিক্ষার কেন্দ্রবিন্দু এবং
চীন, তিব্বত, নেপাল ও থাইল্যান্ডের মত দূরবর্তী অঞ্চল থেকেও প্রায় ৮০০০ অধ্যয়নকারী ও
অধ্যাপক এখানে অধ্যাপনা করতে আসতেন। অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন
(Agrasar Bikrampur Foundation)
নামক একটি স্থানীয় সমাজ-সাংস্কৃতিক সংগঠন কর্তৃক চালানো দীর্ঘ ৪ বছরব্যাপী এক
প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানের পর ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে মার্চ তারিখে,
অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যৌথভাবে
এই নিদর্শনটি আবিষ্কারের ঘোষণা দেয়। বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এই প্রত্নতাত্ত্বিক
খননের জন্য অর্থের যোগান দেয়। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৩শে
মার্চ, বিক্রমপুর অঞ্চলের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক,
১০০০ বছর পুরোনো এই বৌদ্ধ বিহারটি আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাস পর্যন্ত,
এখান থেকে পাওয়া প্রায় ১০০ এরও বেশি মূল্যবান মূর্তি ও ভাস্কর্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।
১১৬২ খ্রিষ্টাব্দে
পাল রাজবংশের
শাসন শেষ হওয়ার পরে
সেন রাজবংশের রাজত্বকাল
শুরু হয়। যদিও
পাল রাজবংশের
আমলেই ১১২৫ খ্রিষ্টাব্দেই সেনবংশের প্রথম রাজা
বিজয় সেন রাজত্ব
কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু সমগ্র বাংলাদেশের উপর অধিকার পাল রাজাদের ছিল।
পাল রাজবংশের অন্তিম দশায়, ১১৫৮ খ্রিষ্টাব্দের দিকে
সেন রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা
বল্লাল সেন
প্রকৃষ্ট অর্থে বাংলার রাজা হয়ে উঠেন। এই কারণে
পাল রাজবংশের
পরে সেন রাজাদের
শাসনামল ধরা হয়।
সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা
বিজয় সেনের (১০৯৭-১১৬০ খ্রিষ্টাব্দ) সময়কালের একটি তাম্রলিপি ১৯১১
খ্রিষ্টাব্দে ভারতের ব্যারাকপুরে পাওয়া যায়। এই লিপিতে বিক্রমপুরকে ওই অঞ্চলের
রাজধানী হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয়েছিল। সেন রাজত্বের পুরোটা সময় জুড়েই বিক্রমপুর এই রাজ্যের রাজধানী ছিল। তুর্কি
সেনাপতি
ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজি (১২০৫-১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ)
লক্ষ্মণ সেনকে (১১৭৯-১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ) নদীয়ায় পরাজিত করলে,
লক্ষ্মণ সেন বিক্রমপুরে পালিয়ে আসেন। এরপর তার দুই পুত্র
বিশ্বরূপ সেন এবং কেশব সেন (১২০৬-১২৩০ খ্রিষ্টাব্দ)
এই অঞ্চল শাসন করেন। তবে তাদের শাসনকালের তাম্রলিপিতে বিক্রমপুরকে রাজধানী হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয় নি।
বিশ্বরূপসেনের তাম্রশাসনে সূর্যসেন ও কুমার পুরুষোত্তম সেনের নামের উল্লেখ
আছে। সম্ভবত এঁরা বিশ্বরূপসেনের পুত্র ছিলেন। তবে তাঁদের কেউ রাজত্ব করেছিলেন কিনা
তা জানা যায় না। ঐতিহাসিক মিনহাজ যে সময় লক্ষ্মণাবতীতে আসেন (১২৪৪-৪৫ খ্রিষ্টাব্দে),
তখনও লক্ষ্মণসেনের বংশধরগণ পূর্ববাংলায় রাজত্ব করছিলেন। সুতরাং মনে হয় কেশবসেনের
পরেও একাধিক সেনরাজা পূর্ববাংলায় বিশেষ করে বিক্রমপুরে রাজত্ব করেছিলেন।
রাজা দশরথদেবের আদাবাড়ি তাম্রশাসন হতে জানা যায় যে, ত্রয়োদশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে সেন
শাসনের পতন ঘটেছিল এবং সেন শাসনের কেন্দ্রস্থল বিক্রমপুর দেববংশের হস্তগত হয়।
বিক্রমপুর থেকে প্রকাশিত এই তাম্রশাসনে রাজা দশরথদেবের নাম পাওয়া যায়। তিনি
পরমেশ্বর, পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ, অরিরাজ দনুজ মাধব উপাধি গ্রহণ করেছিলেন।
ঐতিহাসিক জিয়াউদ্দীন বারাণীর বিবরণে উল্লিখিত সোনারগাঁয়ের দনুজ রায় ছিলেন সম্ভবত এই
দশরথদেব।
১২৬৬ খ্রিষ্টাব্দে গৌড়ের অধিপতি ছিলেন
গিয়াসউদ্দিন বলবন ছিল। তিনি আমিন খাঁকে শাসনকর্তা এবং
মুঘিসউদ্দিন তুঘ্রালকে সহকারী-শাসনকর্তা পদে নিযুক্ত করেন। আমিন খাঁ নামে মাত্র
শাসনকর্তা ছিলেন। তাঁর নামে বাংলার শাসক হয়ে উঠেন তুঘ্রাল। তিনি ঢাকা, ফরিদপুর এবং
ত্রিপুরা দখলের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে জানা যায়।
এছাড়া তিনি বরিশাল অঞ্চলে দনুজ রাই নামক কায়স্থ রাজার সাথে যুদ্ধ
করেছিলেন। এই যুদ্ধের ফলাফল সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায় না। উড়িষ্যা আক্রমণ করে
সেখানে লুটতরাজ চালান। বাংলদেশের রাঢ় অঞ্চলেও তিনি অভিযান চালিয়ে দখল করেন।
মুঘিসউদ্দিন তুঘ্রালের এই সকল বিজয়ের পর তিনি নিজেকে অত্যন্ত শক্তিশালী শাসক
হিসেবে ভাবা শুরু করেন। এর ভিতর
গিয়াসউদ্দিন বলবনের
মিথ্যা মৃত্যু সংবাদ প্রচারতি হলে,
তুঘ্রাল নিজেকে স্বাধীন সুলতান হিসেবে ঘোষণা দেন এবং
আমিন খাঁকে বিতারিত করেন। ফলে ১২৮০ খ্রিষ্টাব্দে
তুঘ্রালকে শায়েস্তা করার জন্য
গিয়াসউদ্দিন বলবন বাংলা আক্রমণ করেন।
তুঘ্রাল দিল্লীর সেনাবাহিনীর মুখোমুখী না হয়ে লক্ষ্মণাবতী ত্যাগ
করেন। সুলতানের বাহিনী লক্ষ্মণাবতী দখল করেন এবং তুঘ্রালকে বন্দী করার জন্য তাঁর
পশ্চাদানুসরণ করেন। উড়িষ্যা সীমান্তের কাছে, সুলতান বাহিনী তাঁকে আকস্মিকভাবে
আক্রমণ করেন। যুদ্ধে তিনি পরাজিত হলে, তাঁকে বন্দী করে লক্ষ্মণাবতীতে আনা হয়।
গিয়াসউদ্দিন বলবনএই অভিযানের সময় দনুজ রায়ের
সাহায্য গ্রহণ করেছিলেন।
সুতরাং ত্রয়োদশ শতকের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে বাংলায় সেনবংশীয় রাজাদের শাসন এই
বিক্রমপুর থেকে চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যায়।
মুঘল সম্রাট
আকবরের
(১৫৫৬-১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ) শাসনামলে ১৫৭২ – ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দের প্রশাসনিক সংস্কারের সময়
বিক্রমপুরকে একটি পরগণা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা
হয়। এটি ছিল সুবা বাংলার সোনারগাঁও সরকারের ৫২টি পরগণার মধ্যে একটি।
১৫৮২ খ্রিষ্টাব্দে টোডরমল বাংলার জমিদারদের থেকে রাজস্ব নেওয়ার রীতি প্রচলন করেন।
এই সময় এই পরগনা থেকে বাৎসরিক রাজস্ব প্রদান করা হতো ৮৩,৩৭৬ টাকা।
১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়ে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ১,০৩,০০১ টাকা।
এরপর এই পরগনা থেকে দুটি নতুন পরগনা রাজনগর ও বৈকুণ্ঠপুর তৈরি করা হয়। ফলে ১৭৬৩
খ্রিষ্টাব্দের দিকে এর রাজস্ব কমে দাঁড়ি্য়েছিল ২৪,৫৬৮ টাকা।
আকবরের
আমলে চাঁদ রায় এবং কেদার রায় বিক্রমপুরের জমিদার ছিলেন। বারো
ভূঁইয়াদের বিরুদ্ধে অভিযান চলাকালে মুঘল সুবেদার মান সিংহ ১৬০০
খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে কেদার রায়কে হত্যা করেন।
আওরঙ্গজেবের রাজত্বকাল শেষে নবাব
মুরশিদকুলি খাঁর সময়ে বিক্রমপুরকে ৮টি তালুকে বিভক্ত করা হয়। এগুলো ছিল- ভাগ্যকূল,
শ্রীনগর, মাইঝপাড়া, সিনহাপাড়া, তালতলা, সিরাজদিখান, লৌহজং এবং বালিগাঁও। প্রতিটি তালুকের
একজন করে জমিদার ছিল। গোবিন্দ প্রসাদ রায় একসময় মাইঝপাড়ার জমিদার ছিলেন।
১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দের একটি মানচিত্রে দেখা যায়, কালিগঙ্গা নদী এ অঞ্চলের মাঝখান দিয়ে প্রবাহিত
ছিল। এই বিচারে আদি বিক্রমপুর অঞ্চলটি দুটি ভাগে বিভাজিত হয়েছিল। এই ভাগ দুটি হলো- উত্তর বিক্রমপুর এবং দক্ষিণ বিক্রমপুর। এ সময় বিক্রমপুরের বিস্তৃতি ছিল পূর্ব–পশ্চিমে প্রায় ৩০–৪০ মাইল এবং উত্তর–দক্ষিণে প্রায় ৮–১০ মাইল। ক্রমাগত নদী ভাঙ্গনের ফলে প্রাচীন বিক্রমপুর শহর এবং এর পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ প্রায় পুরোটাই কালের আবর্তে বিলীন হয়ে গেছে।
ধারণা করা হয় এক সময় কোনো বিশেষ নগরী হয়তো বিক্রমপুর নামে পরিচিতি লাভ করছিল। এই
নগরীর কোনো সুনির্দিষ্ট পরিচয় এখন অব্দি পাওয়া যায় নি। নিতান্তই ধারণা থেকে বলা হয়
এই নগরের পশ্চিমে পদ্মানদী, উত্তর ও পূর্বে ধলেশ্বরী নদী এবং দক্ষিণে আড়িয়াল খাঁ ও মেঘনা নদী।
অনেকে বিক্রমপুর শহরের অবস্থানকে মুন্সিগঞ্জের আধুনিক শহর থেকে
অনতিদূরে রামপাল অঞ্চলের সঙ্গে শনাক্ত করে থাকেন। অঞ্চলটির প্রত্মতাত্ত্বিক
নিরীক্ষণের ভিত্তিতে অনুমেয় যে, প্রাচীন রাজধানীটি প্রায় ১৫ বর্গ মাইল জুড়ে বিস্তৃত ছিল।
প্রায় ১৭/১৮টি গ্রাম নিয়ে এই প্রশাসনিক কেন্দ্রীয় অঞ্চল গড়ে উঠেছিল। প্রাচীন নদীর
স্রোতোধারার সমান্তরালে পূর্ব-পশ্চিমে প্রসারিত বেশ উঁচু পাঁচিলের ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়।
পূর্ব দিকে ব্রহ্মপুত্রের প্রাচীন স্রোত প্রবাহিত। পশ্চিম ও দক্ষিণে দুটি প্রশস্ত পরিখা রয়েছে যা
বর্তমানে যথাক্রমে মিরকাদিম খাল ও মাকুহাটি খাল নামে পরিচিত। ২০০ ফুট প্রশস্ত পরিখা দ্বারা বেষ্টিত
মাটির দুর্গে অবস্থিত বল্লালবাড়ি রাজপ্রাসাদটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত।
রামপালের চারপাশে প্রাক-মুসলিম যুগের অনেক পুকুর দেখা যায়। তবে স্থাপত্যের দিক দিয়ে বিভিন্ন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ছাড়া সেযুগের অন্য কোন ইমারত কদাচিৎ নজরে পড়ে। ১৯২৯
খ্রিষ্টাব্দে এন.কে ভট্টশালী প্রায় ৩০টি ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করেন। তিনি ধীপুর ও সোনারং নামে দুটি গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরস্থলের কথা উল্লেখ করেন। রাখাল দাস ব্যানার্জীও রঘুরামপুরের সন্নিকটে কিছু কাঠামো দেখেন। পার্শ্ববর্তী বজ্রযোগিনী গ্রাম ছিল প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ
পণ্ডিত অতীশ দীপঙ্করএর জন্মস্থান।
সমগ্র অঞ্চলটিতে অতি মূল্যবান প্রাচীন নিদর্শনসমূহ দেখা যায় যেমন, মূল্যবান ধাতুতে নির্মিত নিখুঁত কারুকার্যপূর্ণ হিন্দু ও বৌদ্ধ ভাস্কর্যসমূহ। এ
অঞ্চলের চুরাইন থেকে প্রাপ্ত একটি রূপার বিষ্ণুমূর্তি বর্তমানে ভারতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
দীর্ঘ কাষ্ঠখণ্ড নির্মিত অপ্সরা আকৃতির এগারো শতকের একটি স্তম্ভ পাওয়া গেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। ভাস্কর্য অলঙ্করণসহ আরও দুটি
কাঠের স্তম্ভ বিখ্যাত রামপাল দিঘি (২২০০ ফুট ৮৪০ ফুট) থেকে পাওয়া গেছে।
সম্ভবত চারদিকের নদীর গতিধারা পরিবর্তনের কারণে এই নগরী বিলুপ্তি হয়ে গিয়েছিল। রামপালে
মধ্যযুগীয় একটি মসজিদ ও বাবা আদম শহীদ এর সমাধির ধ্বংসাবশেষ বর্তমানে একমাত্র দর্শনীয়
ঐতিহাসিক নিদর্শনরূপে দাঁড়িয়ে আছে।
রামপালের সাথে উক্ত নামের বিখ্যাত পাল রাজার কোন সম্পর্ক রয়েছে কিনা তা নির্ণয় করা কঠিন। লিপি উৎকীর্ণ সংক্রান্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, বর্মমন রাজা ভোজবর্মন বা সামলবর্মন হাতি ও রথ প্রদানের মাধ্যমে পাল রাজা রামপালের বন্ধুত্ব লাভ করেন। এমন হতে পারে যে, রামপাল বিক্রমপুরে গিয়েছিলেন এবং প্রাসাদের নিকটবর্তী যেস্থানে তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে বরণ করা হয়েছিল, সে এলাকা তাঁর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছিল। জনশ্রুতি আছে যে, রামপালের নাম স্থানীয় জনৈক ব্যবসায়ীর নামানুসারে করা হয়েছিল।
তিনি বল্লালসেনের শাসনকালে রাজপরিবারের মুদি ছিলেন। এই সূত্রে তিনি প্রচুর ধনসম্পদের অধিকারী হন।
তিনি রাজপ্রাসাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বসতি স্থাপন করে তিনি একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিরূপে স্বীকৃতি লাভ করেন। যখন বল্লালসেন তাঁর দিঘি খনন করেন তখন তা রামপালের বাসস্থান পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।
সূত্র :
- Dilip K Chakrabarti, Ancient Bangladesh, Dhaka, 1992;
- যোগেন্দ্রনাথ গুপ্ত, বিক্রমপুরের ইতিহাস, তৃতীয় সংস্করণ, কলকাতা, ১৪০৫ বাংলা
সন (১৯৯৮)।
- https://bn.banglapedia.org