গণজাগরণের সূত্রপাত এবং এর ধারাক্রম (১ মার্চ থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত)
শাহবাগের গণজাগরণ-এর
আদ্যপাঠ
৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি
১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি
২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি
-
রাজিব হত্যাকারীদেরকে
গ্রেফতার
রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ রাজধানীর কয়েকটি এলাকায়
অভিযান চালিয়ে, ৫ জন হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করে।
বিস্তারিত প্রথম আলো |
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ ১ মার্চ [শুক্রবার] :
পঞ্চবিংশ
দিন
পূর্ব-ঘোষণা মতে, জুমার নামাজের পর
একাত্তরের স্বাধীনতা আন্দোলনের সব শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে সব মসজিদে
দোয়া করা হয়। এছাড়া দেশের সকল মন্দির, গির্জা ও প্যাগোডায়ও তাঁদের জন্য
প্রার্থনা করা হয়। পূর্বদিনের কর্মসূচি অনুযায়ী এদিন বিকেলে প্রজন্ম চত্বরে
সমাবেশ হয়। এই চত্বরে নতুন ঘোষণায় বলা হয়, শনিবার [২ মার্চ] সব
স্কুল-কলেজ-বাসা-বাড়ি, গাড়িসহ সব জায়গা থেকে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের
কর্মসূচি দেওয়া হয়। একই দিন বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সব
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ সমাবেশের আহ্বান জানানো হয়েছে। এছাড়া আগামি রবিবার
ও সোমবারের জামায়েত ইসলামীর ঢাকা হরতাল প্রতিরোধের জন্য শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চ
থেকে ডাক দেওয়া হয়।
এই দিন বিকালে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, গুলশানের
দলীয় কার্যালয়ে, আগের দিনে পুলিশের গুলিতে নিহত জামায়েত-শিবিরের হরতালকারীদের
প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে, একে গণহত্যা হিসাবে চিহ্নিত করেন। তিনি আগের তিনটি
রায়ের তীব্র সমালোচনা করে বলেন '‘আমরা বার বার পরিষ্কারভাবে বলেছি,
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচার আমরা চাই। সেই বিচার হতে হবে স্বচ্ছ এবং দেশি ও
আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে। আমরা বিচারের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের
পক্ষপাতী নই।’
এই সময় শাহবাগ গণজাগরণকে তীব্র সমালোচনা করেন। এ ছাড়া তিনি এই ‘গণহত্যা’র
প্রতিবাদে আগামী মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল কর্মসূচি
ঘোষণা করেন। তবে বেগম খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলন ডাকলেও, সাংবাদিকদের কোন
প্রশ্নের জবাব দেন নি। তিনি লিখিত বক্তব্য পেশ করেন এবং এরপর সাংবাদিকেরা
প্রশ্ন করতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ কোনো প্রশ্ন নয়। সব প্রশ্নের উত্তর এখানে
(লিখিত বক্তব্য) আছে। আবার আরেক দিন দেব।’
ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই, এদিন সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে
জামায়াতে ইসলামী ও বিএনপির ডাকা টানা তিন দিনের হরতাল প্রত্যাহারের দাবি
জানায়।
সহিংসতা
- গতকাল গাইবান্ধা উপজেলার পুলিশ তদন্ত
কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে পুলিশের ছয়জন সদস্যকে প্রহার করে জামায়াত-শিবিরের
কর্মীরা। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। আহত অন্য তিনজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আজ ভোরে কনস্টেবল
তোজাম্মেল মারা যান। আজ সকালে জামায়াত-শিবির নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে
শান্তিরাম ইউনিয়নের গংসারহাট বাজারে হঠাত্ শরিফুল ইসলামের পানের দোকানে হামলা
চালিয়ে, তাঁরা শরিফুলকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। এর ফলে ঘটনাস্থলেই তিনি
মারা যান। এরপর পুলিশ গাইবান্ধায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
- চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার
শাহবাজপুরে আজ বেলা পৌনে ১১টার দিকে জামায়েত কর্মীদের সাথে স্থানীয় লোকজনের
সংঘাত হয় এবং ঘটনাস্থলে একজন জামায়েত সমর্থক মৃত্যুবরণ করেন।
- চট্টগ্রাম কক্সবাজার সড়কের লোহাগাড়া,
সাতকানিয়া, চুনতি, আধুনগর, আমিরাবাদ এলাকায় সকালে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা
যানবাহন ভাঙচুর ও গাছ ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে
ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারমুখী এবং কক্সবাজার-টেকনাফ থেকে ঢাকা ও
চট্টগ্রামগামী কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে।
- রাজশাহী শহরের জামায়াত-শিবিরের
কর্মীরা জুমার নামাজ শেষে নগরের বিনোদপুর বাজার থেকে মিছিল নিয়ে রাজশাহী-নাটোর
সড়কে ওঠার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ভিতর সংঘর্ষ
হয়। এই সময় পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে,
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা পালিয়ে যায়। এ সময় দায়িত্ব পালনরত মোহনা টেলিভিশনের
রাজশাহী প্রতিনিধি মেহেদী হাসান ও চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের ক্যামেরাম্যান তারেক
মাহমুদ রাসেল রাবার বুলেটে আহত হন।
- নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনী
বাজার এলাকার ফেনী-নোয়াখালী সড়কে জুমার নামাজ শেষে জামায়াত-শিবিরের সমর্থক
একটি মিছিল বের কর, রেলগেট এলাকায় ভাঙচুর চালায়। এই সময় মিছিল থেকে
জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা একটি ব্রোকার হাউস, তিনটি বাণিজ্যিক ব্যাংক,
১৬টি ট্রাক, একটি পিকআপ ও একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে
ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ধাওয়া করলে তাঁরা পালিয়ে যান।
- ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ ২ মার্চ [শনিবার] :
ষড়বিংশ
দিন
আজ সারাদিন বেগম খালেদা জিয়ার সাংবাদিক সম্মেলনের আলোচনা
সারাদেশ জুড়ে ছিল।
সব সরকারি, বেসরকারি ও আবাসিক ভবনে এবং গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে শাহবাগের
আন্দোলনের প্রতি আজ শনিবার একাত্মতা প্রকাশ করে সারা দেশের মানুষ। ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আজ জাতীয় সংগীতের সাথে জাতীয়
পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়
বিক্ষোভ সমাবেশ। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে দাঙ্গাবাজদের প্রতিরোধের ডাক
ও আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামি কাল
রোববার সকাল ১০টায় শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে হরতালবিরোধী মিছিল বের করা
করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে বিকেলে তিনটায়
পূর্বঘোষিত সমাবেশ সকলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
এই
দিন দিবাগত রাতের দিকে জামায়েত কর্মীরা চাঁদের ভিতর
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী'র
ছবি দেখা গেছে এমন দাবি করে ফেসবুক এবং বিভিন্ন জামাত-পন্থি ব্লগে প্রচারণা করা
হয়। এই গুজবের বিষয়টি সারারাত ধরে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়।
সহিংসতা
- ঢাকার নয়াপল্টন, শান্তিনগর ও মালিবাগ
এলাকায় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে, নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের
সামনে থেকে একটি মিছিল বের হয়। মিছিলটি শান্তিনগরে টুইন টাওয়ারের সামনে
পৌঁছালে একপর্যায়ে মিছিল থেকে বিএনপির নেতা-কর্মীরা ভাঙচুর শুরু করেন। এ সময়
তারা একটি বাসে আগুন দেয় ও টুইন টাওয়ারের কাচ ভাঙচুর করার চেষ্টা করে। এ সময়
পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। বিএনপির মিছিল থেকেও পুলিশকে
লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। একপর্যায়ে বিএনপির মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে
যায়।
বিকেলের দিকে সিদ্ধেশ্বরীতে একটি গাড়ি পোড়ানো হয়। সন্ধ্যার দিকে ঢাকার
ধানমন্ডিস্থ ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে একটি গাড়ি পোড়ানো হয়। মিরপুর ১০
নম্বরে রাত নয়টার দিকে একটি বিস্ফোরণের ঘটনা হয়।
- রাজশাহী রেলস্টেশনে দাঁড়ানো অবস্থায়
ঢাকা থেকে আসা আন্তনগর সিল্কসিটি ট্রেনটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
- চাঁদপুর বেলা ১২টায় জেলা বিএনপির
সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ আহমেদের নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল
বের হয়। পরে এই মিছিলের সহযোগী হিসেবে জামায়াত-শিবিরের কয়েক শ নেতা-কর্মী
শহরের মিশন রোড এলাকায় মিছিল বের করেন। ট্রাক রোড এলাকায় শিবিরের কার্যালয়ের
সামনে তাঁরা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান। এ ছাড়া সেখানে রাস্তায় টায়ার
জ্বালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন শিবিরের কর্মীরা। এ সময় শিবিরের হামলায় দুই পুলিশ
আহত হয়।
- লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলায়
বেলা ১২টার দিকে সোলাখালী ব্রীজের পশ্চিম পাশ থেকে যুবদল নেতা-কর্মীরা একটি
মিছিল বের করে। একপর্যায়ে এর পুলিশকে লক্ষ্য করে যুবদলের নেতা-কর্মীরা
ইটপাটকেল ও ককটেল ছোড়া শুরু করে। পরে এদের সাথে শিবিরের কর্মীরাও যোগ দেয়। এ
ঘটনায় পাঁচ জন পুলিশ আহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ ২৪টি
কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে।
- সিলেটে বেলা তিনটার দিকে
জামায়াত-শিবিরের দুই শতাধিক নেতা-কর্মী আম্বরখানা মোড়ে জড়ো হয়। পরে
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে একটি দল, দরগাগেট এলাকায়
‘বসুন্ধরা মটরস’ শো-রুমের সামনে এসে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ইটপাটকেল ছোড়ে। এই সময়
বসুন্ধরা মোটরসাইকেলের শো-রুমে প্রবেশ করে সামনের সারির ছয়টি মোটরসাইকেলে আগুন
ধরিয়ে দিলে ভেতরের আরও ১৬টি মোটরসাইকেল পুড়ে যায়। সেখান থেকে তাঁরা লাইফ
কেয়ার ক্লিনিকসহ ২০টি দোকান ভাঙচুর করেন। পূর্ব দরগাগেট এলাকায় সোনালী
ব্যাংকের সামনে একটি পাজেরো জিপে আগুন দিয়ে এ দলটি চলে যায়। মটরসের দরগাগেট
শাখার ব্যবস্থাপক আতিকুর রহমান বলেন, ২২টি নতুন মোটরসাইকেল ও ১৪টি জেনারেটর
পুড়ে তাঁদের প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এই দলের অপর ২টি ভাগের ১টি দল আম্বারখানা মোড় থেকে সুবিদবাজার এলাকায় এবং অপর
দলটি শাহি ঈদগাহ এলাকায় গিয়ে একই সময়ের মধ্যে এলোপাতাড়িভাবে ঢিল ছোড়ে। এ
সময় সুবিদবাজারের মার্কেন্টাইল ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ফাস্ট
সিকিউরিটি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জীবন বীমা করপোরেশন, ডেল্টা লাইফ ইনস্যুরেন্স
শাখাসহ শতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ঢিল ছোড়ে ভাঙচুর করা হয়। এ সময় আম্বরখানা
থেকে চৌহাট্টায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভাঙচুরকারীদের ছবি তুলতে গেলে
ফটোসাংবাকিদকেরও তাড়িয়ে দেওয়া হয়। পুলিশ আম্বরখানায় তাণ্ডব চালানোর সময়
দুজন শিবিরকর্মীকে আটক করা হয়েছে।
- মংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুনীর
উল গিয়াস বলেন, জোহরের নামাজ শেষে শহরে লাঠিসোঁটা নিয়ে ঝটিকা মিছিল বের করে
জামায়াত-শিবির। বাগেরহাট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আবদুল ওয়াদুদ ও মংলা পৌর
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান মানিকের নেতৃত্বে মিছিলটি শহরের
তাজমহল রোড এলাকায় পৌঁছালে পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে
জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এতে দুই
পুলিশসহ জামায়াত-শিবিরের ২২ নেতা-কর্মী আহত হন। পুলিশ বাগেরহাটের বিষ্ণুপরের এ
হাসান কবির ও খুলনার বৈঠাঘাটা উপজেলার নুরুল ইসলাম নামে ছাত্রশিবিরের দুই
কর্মীকে আটক করেছে।
- পিরোজপুরে জামায়াত-শিবিরের
নেতা-কর্মীরা পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কের পাশে থাকা সাঈদী ফাউন্ডেশনের
মসজিদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের দিকে যাওয়ার
সময় পিরোজপুর সদর উপজেলা পরিষদের কাছ থেকে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশ এ সময়
মিছিল থেকে জামায়াত-শিবিরের সাতজন কর্মীকে আটক করে। এদিকে জামায়াতের মিছিল
বের হওয়ার খবর শহরে ছড়িয়ে পড়লে, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা
লাঠিসোঁটা নিয়ে জামায়াতকে প্রতিরোধ করার জন্য উপজেলা পরিষদের দিকে রওনা হয়।
পুলিশি বাধায় জামায়াতের কর্মসূচি পণ্ড হয়ে গেছে। সকালে জিয়ানগর উপজেলার
চণ্ডিপুর জমাদ্দার হাট এলাকায় জামায়াতের কর্মীরা মিছিল নিয়ে স্থানীয়
আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করে। এ খবর পেয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন একই
এলাকায় থাকা স্থানীয় বিএনপির একটি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়।
- ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ ৩ মার্চ [রবিবার] :
সপ্তবিংশ
দিন
পূর্ব-ঘোষিত কর্মসূচী অনুসারে, বেলা ১১টার দিকে হরতালবিরোধী মিছিল শুরু
হয়। মিছিলটি শাহবাগ থেকে কাঁটাবন, নীলক্ষেত, পলাশী মোড় হয়ে বুয়েট
ক্যাম্পাস, চানখাঁরপুল, শহীদুল্লাহ হলের সামনে দিয়ে দোয়েল চত্বর ও টিএসসি
হয়ে আবারও শাহবাগে এসে শেষ হয়।
গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কে একটি সমাবেশের আয়োজন
করে। এই মহাসমাবেশে আগামি ৮ই মার্চ (আন্তর্জাতিক
নারী দিবস) শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে নারী জাগরণী সমাবেশ করার ঘোষণা
দেওয়া হয়। এই নারী জাগরণী সমাবেশে বিভিন্ন নারী সংগঠন ও দেশের সর্বস্তরের
নারীদের উপস্থিত হওয়ার জন্য সমাবেশ থেকে আহ্বান জানানো হয়।
আজ ছিল জামাত-শিবিরের ৪৮ ঘণ্টার হরতালের প্রথম দিন। জামায়েত কর্মীরা
চাঁদের ভিতর
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী'র
ছবি দেখা গেছে এমন দাবি করে ফেসবুক এবং বিভিন্ন জামাত-পন্থি ব্লগে প্রচারণা
করার কারণে, ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সাঈদীকে অলৌকিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচনা করা
শুরু করে। বিশেষ করে বগুড়াতে মাইকযোগে এই প্রচারণা চালনো হয়। এরই সূত্রে এই
দিনে জাময়েত-শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। নিচে এই দিনের
এই হরতালে ঘটিত সহিংসতার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে তুলে ধরা
হলো।
সহিংসতা
- বগুড়া : রাত তিনটার দিকে জেলা
শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মাইকযোগে সবাইকে বের হয়ে তা দেখার জন্য আহ্বান
জানানো হয়। এভাবে জড়ো হয়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ভোর থেকেই মিছিল শুরু
করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙচুর চালাতে থাকেন। সকাল সাতটার দিকে
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা শাজাহানপুর থানায় হামলা করেন। বাধা দিতে গেলে
পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে
পুলিশ একপর্যায়ে গুলি ছোড়ে। এতে দুজন নারীসহ পাঁচজন নিহত হন। শাজাহানপুর
থানায় আক্রমণের পর পুলিশ ও থানা রক্ষা করার জন্য, জেলা প্রশাকের অনুরোধে
সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে যায়। এরপর আন্দোলকারীরা পিছু হটে যায়।
শহরের চক লোকমান এলাকায় বগুড়া-১ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ আবদুল মান্নান, উপশহর
এলাকায় সাবেক সাংসদ ও প্রবীণ সাংবাদিক আমানুল্লাহ খানের বাসায় হামলা চালিয়ে
ভাঙচুর করা হয়। শেরপুর সড়কে এস এ পরিবহনের কার্যালয়, করতোয়া কুরিয়ার সার্ভিস,
এটিএন বাংলা ও এটিএন ইলেকট্রনিকসের শোরুমে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর, লুটপাট ও
অগ্নিসংযোগ করা হয়। একই সময়ে শহরের কালীতলায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ
উদ্দিনের বাসায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বাসার নিচে থাকা দুটি গাড়ি পুড়িয়ে
দেয় দুর্বৃত্তরা। এখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়।
সকাল সাড়ে সাতটার দিকে জেলা সদরের ইয়াকুবিয়া স্কুলের মোড়ে র্যাবের গাড়িতে
হামলা চালায় হরতালের সমর্থকরা। আক্রমণাত্মক হরতালকারীদের উপর র্যাবের সদস্যরা
গুলি বর্ষণ করলে, চারজন নিহত হন। শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলায় পুলিশের সঙ্গে
জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সংঘর্ষে দুজন নিহত হন। এছাড়া জেলা সদর, শাজাহানপুর,
নন্দীগ্রাম, দুপচাঁচিয়া ও শিবগঞ্জ উপজেলায় আজ দিনভর তাণ্ডব চালিয়েছেন
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। তাঁরা কয়েকটি এলাকায় বর্তমান ও সাবেক দুই সাংসদের
বাসা, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কার্যালয়, আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়ি ও দলীয়
কার্যালয় ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন।
- রাজশাহী :
গোদাগাড়ী উপজেলার মহিষালবাড়ী এলাকায়
সকাল সাড়ে নয়টার দিকে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায়
সংঘর্ষ হয়। এতে উপজেলার মহিষালবাড়ী এলাকার মোজাহিদ ও হাটপাড়া এলাকার নয়
বছরের শিশু রফিকুল ইসলাম নিহত হয়। আহত হন আরও সাতজন। পরে এই উপজেলায় ১৪৪ ধারা
জারি করা হয়।
- গাজীপুর : ঢাকা-ময়মনসিংহ
মহাসড়কে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকায় পিকেটিং করার সময়,
গাজীপুরগামী একট ট্রাক ভাঙচুর করতে গেলে, ট্রাকের চালক বেপরোয়াভাবে গাড়ি
চালায়। এতে ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে গুরুতর আহত হন শ্রীপুর উপজেলা (দক্ষিণ)
শিবিরের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক (৩০)। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
নেওয়ার পথে তাঁর মৃত্যু হয়।
- দিনাজপুর: সদর উপজেলার রানীগঞ্জ
উত্তর মহেশপুর গ্রামে ১২টি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কৃষক পরিবারের বাড়ি ও খড়ের
গাদা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা।
- জয়পুরহাট : জয়পুরহাট-বগুড়া
সড়কের সদর উপজেলার হিচমী এলাকায় সকাল থেকেই জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা গাছের
গুঁড়ি ও বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে রাস্তা অবরোধ করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একটি
মিছিল শহরের দিকে রওনা দিলে র্যাব-পুলিশ বাধা দেয়। এই সময় জামায়াত-শিবিরের
অপর একটি দল পেছন থেকে র্যাব-পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে পুলিশ সুপার
হামিদুল আলমসহ র্যাব-পুলিশের সদস্যরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দুপুর ১২টার দিকে
বিজিবির জয়পুরহাট ক্যাম্পের অধিনায়ক লে. কর্নেল খসরু ইসলামের নেতৃত্বে
বিজিবির একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর র্যাব-পুলিশ-বিজিবি যৌথভাবে গুলি ও
কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে জামায়াত-শিবিরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। এ সময়
গুলিবিদ্ধ হয়ে ৬জন নিহত হন। অপরদিকে, পাঁচবিবি উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আগত
জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মী মিছিল করে পাঁচবিবি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ
কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এই সময়, জামায়াত-শিবিরের মিছিলের
একটি অংশ থানার সীমানাপ্রাচীর টপকে থানার ভেতরে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়
এবং পুলিশ কোয়ার্টারের পিছনে আগুন ধরিয়ে দেয়।
- ঝিনাইদহ : বেলা ১১টার দিকে
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা হরিণাকুণ্ডু উপজেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
তাঁরা আকস্মিকভাবে দোকানপাট, আওয়ামী লীগ অফিস, কৃষি অফিস, মত্স্য অফিস ও
এলজিইডির অফিস ভাঙচুর করেন। এদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ রাবার বুলেট ও
কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে তাঁরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে ধাওয়া
করেন। একপর্যায়ে পুলিশ পিছু হটে। এ সময় পুলিশের ওপর জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা
সশস্ত্র হামলা চালান। তাঁরা পিটিয়ে ও কুপিয়ে ওমর ফারুক (৩৮) নামের এক পুলিশ
কনস্টেবলকে আহত করেন। তাঁকে বাঁচানোর চেষ্টা করতে গেলে ওসিসহ পুলিশের আরও ১০ জন
সদস্য আহত হন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঝিনাইদহ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে
গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেন। এরপর
তাঁরা কনস্টেবল ফারুকের মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
- সাতক্ষীরা :
বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার রইচপুর
এলাকায় বিজিবির দুটি টহলযানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবির। এ সময়
বিজিবির গুলিতে ১জন নিহত হন এবং আহত হন ৪ জন। আহত হন বিজিবির তিন সদস্য। ঘটনার
পরপরই দিগন্ত টিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জিল্লুর রহমান ঘটনাস্থলে গেলে
জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তাঁর মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন। এ ছাড়া হরতালের
সমর্থকেরা দেবহাটার গাজীরহাটে ও সদরের খানপুরে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর
করে। তারা সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকাত হোসেনের মোহনপুর
গ্রামের বাড়িতে হামলা চালায়।
- কুষ্টিয়া: শান্তিডাঙ্গা এলাকার
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে কাঠবোঝাই একটি ট্রাক ও বারখাদা এলাকার
কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কে একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় হরতালের সমর্থনকারীরা।
এ সময় হরতালের সমর্থনকারীরা তিনটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পিকেটিং করার সময়
শিবিরের চার কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
- চুয়াডাঙ্গা : জীবননগর উপজেলার
উথলীতে হরতালের সমর্থকেরা আজ রোববার দুপুরে দূরপাল্লার একটি যাত্রীবাহী বাসে
আগুন দেয়।
- গাইবান্ধা : হরতালের
সমর্থনকারীরা বিভিন্ন জায়গায় গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। এ ছাড়া
ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। বগুড়ায় ট্রেনের লাইন উপড়ে ফেলায় গাইবান্ধায়
সকাল থেকে দুটি ট্রেন আটকে থাকে দীর্ঘ সময়। দুপুরে হরতালের বিরুদ্ধে স্লোগান
দিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠন। গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার
কামদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিস ও আওয়ামী লীগের সমর্থকদের দোকানপাটে ভাঙচুর
করা হয়। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী সড়কের মাঠেরহাটে সকাল ১০টার দিকে তিনটি ককটেলের
বিস্ফোরণ ঘটায়। এছাড়া গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছের
গুঁড়ি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেয় হরতালের সমর্থনকারীরা।
- ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ ৪ মার্চ [সোমবার] :
অষ্টবিংশ
দিন
জামায়াতের ডাকা হরতাল প্রতিহত করতে মিছিল করেছেন শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের
আন্দোলনকারীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মিছিলটি শুরু হয়। এতে যোগ দেন বিভিন্ন
শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ। মিছিলটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে বাংলামোটর, কারওয়ান
বাজার মোড় ঘুরে দুপুর ১২টার দিকে আবারও শাহবাগে ফিরে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম সমাবর্তনে যোগ দেন, ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব
মুখোপাধ্যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ
ডিগ্রি দেওয়া হয়।
- জামাত বিরোধী আলেমদের হত্যা
পরিকল্পনা : চট্টগ্রামের ষোলশহর এলাকার জামিয়া আহমেদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া
মাদ্রাসার ১০ আলেমকে হত্যার উদ্দেশ্যে রেকি (ঘটনাস্থল পরিদর্শন) করার সময় আজ
সোমবার বিকেলে এক শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পাঁচলাইশ থানার পুলিশ। তাঁর নাম
মাহমুদুল হাসান। এ সময় মাহমুদুলের পকেটে একটি তালিকা পাওয়া যায়, যেখানে ওই
দশ আলেমের নাম রয়েছে। তাঁর বক্তব্যের সূত্র ধরে চট্টগ্রামের কালামিয়া বাজারের
ইসহাক ভবন থেকে পুলিশ আরও সাত শিবিরকর্মীকে গ্রেপ্তার করে। সুন্নিয়া
আলিয়া মাদ্রাসার ১০ আলেম হলেন আশরাফুজ্জামান আল কাদেরী, জালাল উদ্দিন আল
কাদেরী, উবায়দুল হক নয়মী, জয়নাল আবেদীন জুবাইর, ছগীর আহমদ উসমানী, অছিয়ার
রহমান, আবুল কাশেম নুরী, আবদুল ওয়াজেদ, মুফতী ইউনুস, মো. তাওহীদ। [সূত্র :
প্রথম আলো]
আজ ছিল জামাত-শিবিরের ৪৮ ঘণ্টার হরতালের দ্বিতীয় দিন।
সহিংসতা
- ভোর সাড়ে ছয়টার দিকে বাংলাবাজার
লালকুঠি এলাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায় শাখা ছাত্রশিবিরের ১৪-১৫ জন কর্মী
কয়েকটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায় এবং একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুপুরে পুরান
ঢাকায় বোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণে আহত হয় এক যুবক।
দুপুর দুইটার দিকে কোনো একটি চলন্ত যানবাহন থেকে সার্ক ফোয়ারার মোড়ে একটি
ককটেল ছুড়ে মারা হয়। উল্লেখ্য এই ফোয়ারার নিকটবর্তী সোনারগাঁও হেটেলে ভারতের
রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় অবস্থান করছিলেন।
রাজধানীর রামপুরায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের (বিটিভি) ফটকে একটি ককটেল ছুড়ে
মারে হরতাল সমর্থকেরা। রাতে তিনটি গাড়িতে আগুন দেয়। এছাড়া রাত সাড়ে আটটার
দিকে রাজধানীর ফার্মগেটে যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুন দেয়।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গাবতলীর মাজার রোডে একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়।
মিরপুরের সাড়ে ১১ নম্বর বাসস্ট্যান্ডেশিকড় পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়।
সন্ধ্যার সময় তেজগাঁও এলাকায় হরতাল সমর্থকের ককটেলের আঘাতে মাসুদুর রহমান ওরফে
মাসুদ নামে এক পথচারী আহত হন। পরে গুরুতর অবস্থায় মাসুদকে জাতীয় অর্থোপেডিক
হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। এছাড়া রমনা
ভবনের সামনে, মিরপুর, ফকিরাপুল, বিজয়নগর, মালিবাগ ও পল্টন এলাকায় অন্তত ১০টি
ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। কমলাপুর রেলস্টেশনে হরতালকারীরা বিকাল পৌনে
পাঁচটায় ট্রেনে আগুন দেয় এবং এই সময় গুলিস্তানে একটি হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটে।
- চট্টগ্রামের বটতলী পুরাতন রেলস্টেশনের
পশ্চিম দিক থেকে সাত নম্বর লাইনে দাঁড়ানো একটি ইঞ্জিনে কয়েকজন দুর্বৃত্ত আগুন
লাগানোর চেষ্টা করার সময়, জামাতকর্মীরা পাঁচটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। ঘটনাস্থল
থেকে একজনকে আটক করেছে পুলিশ।
- গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কুশলা
ইউনিয়নের লাকিরপাড় গ্রামের সাতকান্দি-তে, রাত পৌনে আটটার সার্বজনীন
কালিমন্দিরে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। মন্দিরে আগুন দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে রাত
সাড়ে নয়টার দিকে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে গোপালগঞ্জ শহরের ‘প্রজন্ম মঞ্চ’ থেকে
শহরে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়।
সূত্র :
ইন্টারনেট, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা এবং অনুশীলনের সদস্যদের সংগৃহীত তথ্য।