পূর্ব-ঘোষণা মতে, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা শাহাবাগের আন্দোলনে শৈথিল্য আনেন এবং তারা শাহাবাগ থেকে ঘরে ফিরে যান। জুমার নামাজের আগে ও পরে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ, পল্টন, কাঁটাবন ও মিরপুর এলাকায় আজ শুক্রবার তাণ্ডব চালায় ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে চড়াও হয়। এর মধ্যে পাঁচজন সংবাদকর্মীকে বেধড়ক পেটানোর খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এসব এলাকায় কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
এই সময় তারা দেশের বিভিন্ন স্থানের গণজাগরণ মঞ্চ পুড়িয়ে দেয় এবং শহীদ মিনারে হামলা চালায়। জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার খবের প্রচারের পর― অনলাইন সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলসহ ফেসবুক ও ব্লগে এ খবর জেনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তরুণরা। বেলা আড়াইটা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তরুণেরা আবারও শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেন। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্লোগান ও মিছিল চলতে থাকে। কিন্তু বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে স্লোগান দিতে দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে জড়ো হন। তারা শাহবাগ দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। রাস্তায় লাল রং দিয়ে ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি’ এবং ‘ধর্মভিত্তিক উগ্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি’ লিখে তাঁরা। সন্ধ্যার কিছু আগে, আন্দোলনের সংগঠক ছাত্রনেতারা এবং ব্লগার ইমরান এইচ সরকারও নবজাগরণ মঞ্চে আসেন। সন্ধ্যায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে প্রদেয় ঘোষণায় বলা হয়― আবারও তারা ২৪ ঘণ্টা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে থাকবে। একই সঙ্গে এই সহিংসতার নেপথ্যে দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকাকে চিহ্নিত করে এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়া। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে শহিদ মিনারে হামলাকারী এবং জাতীয় পতাকা অবমাননাকারীদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রজন্ম চত্বরের মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনকারীরা জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই কর্মসূচি অনুযায়ী সব মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াতের নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার দুপুর থেকে মিডিয়া সেলে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচি
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রজন্ম চত্বরের মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনকারীরা জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই কর্মসূচি অনুযায়ী সব মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াতের নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার দুপুর থেকে মিডিয়া সেলে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়। এখনো ওই কর্মসূচি চলছে।
এছাড়া গতকাল শহীদদের স্মরণে দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দোয়ার কর্মসূচি ছিল। ওই কর্মসূচি অনুযায়ী, দেশের অনেক মসজিদে গতকাল শহীদদের স্মরণে দোয়া হয়। এ ছাড়াও রাজধানীর বৌদ্ধ মন্দিরে শহীদদের স্মরণে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বৌদ্ধ মন্দিরের চার ভিক্ষু এ প্রার্থনা পরিচালনা করেন। তাঁরা জানান, গণজাগরণ মঞ্চের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ও ভাষা আন্দোলনে শহীদ এবং সাম্প্রদায়িকতার কারণে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের আত্মার শান্তি চেয়ে তাঁরা প্রার্থনা করছেন।
পূর্ব-ঘোষণা মতে, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা শাহাবাগের আন্দোলনে শৈথিল্য আনেন এবং তারা শাহাবাগ থেকে ঘরে ফিরে যান। জুমার নামাজের আগে ও পরে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদ, পল্টন, কাঁটাবন ও মিরপুর এলাকায় আজ শুক্রবার তাণ্ডব চালায় ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের ওপর ইটপাটকেল ছোড়েন এবং লাঠিসোঁটা নিয়ে চড়াও হয়। এর মধ্যে পাঁচজন সংবাদকর্মীকে বেধড়ক পেটানোর খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ এসব এলাকায় কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
এই সময় তারা দেশের বিভিন্ন স্থানের গণজাগরণ মঞ্চ পুড়িয়ে দেয় এবং শহীদ মিনারে হামলা চালায় এবং জাতীয় পতাকার অবমাননা করে। পাবনায় জামায়াতের আধা বেলা হরতালের সমর্থনে সকাল ছয়টা থেকে নেতা-কর্মীরা বাঙ্গাবাড়ীতে পাবনা-ঢাকা মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেন। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের অবরোধ তুলে নিতে বলে। এতে তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশের ওপর চড়াও হন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষ পাল্টাপাল্টি গুলি ছোড়ে এবং প্রায় ঘণ্টা খানেক গুলি বিনিময় হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই দুজন নিহত হন। এছাড়া ৫০ জন আহত হন।
জামায়াত-শিবিরের সহিংসতার খবের প্রচারের পর― অনলাইন সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলসহ ফেসবুক ও ব্লগে এ খবর জেনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন তরুণরা। বেলা আড়াইটা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে তরুণেরা আবারও শাহবাগে জড়ো হতে শুরু করেন। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্লোগান ও মিছিল চলতে থাকে। কিন্তু বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে স্লোগান দিতে দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে জড়ো হন। তারা শাহবাগ দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। রাস্তায় লাল রং দিয়ে ‘যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি’ এবং ‘ধর্মভিত্তিক উগ্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি’ লিখে তাঁরা। সন্ধ্যার কিছু আগে, আন্দোলনের সংগঠক ছাত্রনেতারা এবং ব্লগার ইমরান এইচ সরকারও নবজাগরণ মঞ্চে আসেন। সন্ধ্যায় শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে প্রদেয় ঘোষণায় বলা হয়― আবারও তারা ২৪ ঘণ্টা শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে থাকবে। একই সঙ্গে এই সহিংসতার নেপথ্যে দৈনিক ‘আমার দেশ’ পত্রিকাকে চিহ্নিত করে এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়া। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে শহিদ মিনারে হামলাকারী এবং জাতীয় পতাকা অবমাননাকারীদের দ্রুততম সময়ে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে তারা।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রজন্ম চত্বরের মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনকারীরা জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই কর্মসূচি অনুযায়ী সব মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াতের নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার দুপুর থেকে মিডিয়া সেলে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচি
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রজন্ম চত্বরের মহাসমাবেশ থেকে আন্দোলনকারীরা জামায়াত-শিবিরের নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য সরকারকে ২৬ মার্চ পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ওই কর্মসূচি অনুযায়ী সব মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াতের নিষিদ্ধের দাবিতে শুক্রবার দুপুর থেকে মিডিয়া সেলে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি শুরু হয়। এখনো ওই কর্মসূচি চলছে।
এছাড়া গতকাল শহীদদের স্মরণে দেশের সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দোয়ার কর্মসূচি ছিল। ওই কর্মসূচি অনুযায়ী, দেশের অনেক মসজিদে গতকাল শহীদদের স্মরণে দোয়া হয়। এ ছাড়াও রাজধানীর বৌদ্ধ মন্দিরে শহীদদের স্মরণে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। বৌদ্ধ মন্দিরের চার ভিক্ষু এ প্রার্থনা পরিচালনা করেন। তাঁরা জানান, গণজাগরণ মঞ্চের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ও ভাষা আন্দোলনে শহীদ এবং সাম্প্রদায়িকতার কারণে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের আত্মার শান্তি চেয়ে তাঁরা প্রার্থনা করছেন।
এই দিন ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের ডাকা হরতালে রাজধানী ঢাকার জনজীবনে তেমন প্রভাব পড়েনি। দোকানপাট খুলেছে, রাস্তায় যান চলাচল করছে। তবে ব্যক্তিগত গাড়ীর (প্রাইভেট কার) চলাচল কম ছিল। নগরজুড়ে নেওয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তাব্যবস্থা। সড়কে সড়কে পুলিশ-র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। হরতাল ডেকে তেমন মাঠে নেই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতা-কর্মীরা। তবে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল বের করার চেষ্টা করেন। পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ছাড়া দৈনিক বাংলা মোড়ের পানির ট্যাংকির কাছে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। সেখান থেকে মতিঝিল থানার পুলিশ সাত-আটজনকে আটক করে।
বেলা সাড়ে তিনটায় ঢাকাস্থ রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ মহাসমাবেশ শুরু হয়। এই মহাসমাবেশে জাতীয় পতাকা হাতে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ যোগ দেন। বিশেষ করে জাফরাবাদ আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট কলেজ, ওয়েস্ট ধানমন্ডি ইউসুফ হাইস্কুল, জিগাতলা বিকাশ কেন্দ্র, কিশলয় বালিকা উচ্চবিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী মিছিল করে সমাবেশে যোগ দেয়।
বিকেল
পাঁচটা ২০ মিনিটে উপস্থিত জনতাকে নিয়ে শপথ করেন ব্লগারস অ্যান্ড অনলাইন
নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার। পূর্ব ঘোষিত রবিবারের জামায়াত-শিবিরের
হরতাল প্রতিরোধের আহ্বান জানানো হয়। এই হরতলা প্রতিরোধে ইমরান এইচ সরকার
‘একাত্তরে যে শক্তি বিরোধিতা করেছিল, বাংলাদেশে আজ ৪২ বছর পর সেই অপশক্তি তাদের
হিংস্র নখর দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করছে বাংলাদেশকে। তারা আজ শহীদ মিনারে হামলা
চালিয়েছে। জাতীয় পতাকা ছিঁড়ে পদদলিত করেছে। এসব দেখে আজ মনে হচ্ছে, জাতির
পতাকা খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেই শকুনদের পরাজিত
করব। রোববার জামায়াত-শিবির যে হরতাল ডেকেছে, প্রতিটি গ্রাম, ইউনিয়ন, উপজেলা,
জেলা ও পাড়া-মহল্লায় আপনারা জামায়াত-শিবিরের সেই হরতালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ
গড়ে তুলুন। আমাদের পবিত্র এই দেশের এক ইঞ্চি জায়গাও জামায়াত-শিবিরকে ছাড়বেন
না।’
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম,
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান, বিপ্লবী ছাত্র
সংহতির সভাপতি রাশিদুল হাসান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক
মেহেদি হাসান, জাসদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম, ছাত্রমৈত্রীর
সভাপতি সালমান রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ
ও ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সামিয়া রহমান।
সমাবেশ পরিচালনা করেন ব্লগার মারুফ রসুল। নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ,
অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী, সাংবাদিক অঞ্জন রায় ও যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক
সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী
জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংসদ ফজলে নূর তাপস, সিপিবির নেতা আহসান হাবিব ও জাসদের
নেত্রী শিরীন আখতার সমাবেশে সংহতি জানিয়েছেন।
এদিন নিহত ব্লগার ও শাহবাগ আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজা পরিচালনাকারী ইমামকে হত্যার হুমকির অভিযোগে ফারাবী নামের এক যুবককে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
এদিন মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার গোবিন্ধল গ্রামে হরতাল সমর্থক ও গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চারজন নিহত হন। এই সময় সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ ৩০-৩৫ জন আহত হন। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর ডাকে আজ সকাল সাতটার দিকে মানিকগঞ্জ-সিঙ্গাইর সড়কে অবস্থান নেন হরতাল সমর্থকেরা। ‘ইসলামের অবমাননা করা হয়েছে’—এমন অভিযোগ এনে তাঁরা গোবিন্ধল গ্রামের কিছু লোককে বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে প্রলুব্ধ করেন।
রবিবার দিবাগত রাতে, বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে একুশের বইমেলায় অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৪২টি সটল পুড়ে যায়। এই অগ্নিকাণ্ডের পিছনে জামাত-শিবিরের হাত আছে বলে অনেকে ধারণা করেন। আবার অনেকের মতে বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে এই আগুন ধরেছিল।
আজ শাহবাগের আন্দোলনকারীরা বিকাল সাড়ে পাঁচটায়, মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বরে, সমাবেশের আয়োজন করে। এই সমাবেশে প্রায় লক্ষাধিক লোক সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করে। এই সমাবেশে সরকারের প্রতি তীব্রভাবে ধিক্কার জানিয়ে বলেন- ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করতে হবে; এটাই শাহবাগের দাবি।...‘এই নব্য রাজাকারকে ধরতে কিসের এত দ্বিধা?’। এদিনও তিনি জামাত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানান। উপস্থিত জনতাকে নিয়ে তিনি এদিনও শপথ বাক্য বাঠ করেন। এই বাক্যগুলো ছিলো-
মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে জাগরণ সমাবেশ শেষে নতুন কর্মসূচি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এই কর্মসূচির উল্লেখযোগ্য নতুন বিষয় ছিল- মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আগামি মঙ্গলবার বিকেল চারটায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে। তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এবং আগামি বুধবার মতিঝিলে তৃতীয় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গণজাগরণ মঞ্চ, আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় আজ সোমবার ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
এদিন সন্ধ্যায় ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন যে, শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন কোনো ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধের জন্য নয়। কোনো ধর্মের সঙ্গে এ আন্দোলনের কোনো বিরোধ নেই। এ আন্দোলনের কর্মীরা সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। এ আন্দোলন চলছে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ধর্মের অপপ্রচার নিয়ে কোনো কথা হয়নি।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক ধর্মভিত্তিক অধিকাংশ দলের আদর্শগত বিরোধ রয়েছে এবং চলমান কর্মসূচি নিয়েও দলটির সঙ্গে কোনো ধরনের ‘ঐক্য’ নেই বলে, এই সকল ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতারা জানান। খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টির নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা জানান, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পক্ষে তাঁরা। তবে এ বিচার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হোক এটাই তাঁরা চান।
আগামি বৃহস্পতিবার [২৮ ফেব্রুয়ারি] আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, জামায়েত-ই-ইসলামী'র নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী'র বিচারের রায় দেওয়া হবে। আদালত কর্তৃক এই ঘোষণার পর, জামায়েত-ই-ইসলামী সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের আহ্বান করে। সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে কুড়িলে একটি হিউম্যান হলারে অগ্নিসংযোগ করে আগামি দিনের হরতালকারীরা। এছাড়া সন্ধ্যায় ধানমন্ডির একটি হিউম্যান হলারে আগুন লাগানো হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানিয়েছে, ফায়ার সার্ভিস পৌঁছানোর আগেই স্থানীয় লোকজন আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
এদিন শাহবাগের আন্দোলনকারীরা ১০টা থেকে শাহবাগে গণস্বাক্ষর কর্মসূচী চালু
রাখে। বিকেল ৩টায় এরা তাদের পূর্বঘোষিত মতিঝিলের শাপলা চত্বরের মহা-সমাবেশে
যোগদান করে। সমাবেশের শুরুতে পবিত্র কোরআনসহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ করা
হয়। এরপর উপস্থিত জনতা দাঁড়িয়ে সমস্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর
সমাবেশে বিভিন্ন ছাত্রনেতারা বক্তব্য দেন। সমাবেশে শেষের দিকে বক্তব্য দেন
ইমরান এইচ সরকার। তিনি তাঁর বক্তব্যে পাকিস্তানি হানাদার ও এ-দেশীয় রাজাকারের
নামে বাংলাদেশে যত রাস্তা, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে, তার নামফলক ভেঙে
গুঁড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান এইচ সরকার। তিনি এই সমাবেশ থেকে,
জামায়েত-ই-ইসলামী' কর্তৃক আহুত আগামি বৃহস্পতিবার [২৮
ফেব্রুয়ারি] হর্তাল প্রত্যাখ্যানের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
একই সাথে তিনি জানান যে আগমি বৃহস্পতিবার ১০টায় শাহবাগ থেকে হরতাল
প্রত্যাখ্যানের জন্য বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে বলে জানান। এই বিক্ষোভ মিছিলে
অংশগ্রহণের জন্য সবাইকে আহ্বান জানান তিনি। আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, জামায়েত-ই-ইসলামী'র নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী'র মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করে। এই বিচারে ২০টি অভিযোগের মধ্যে ৮ টি অভিযোগ সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণিত। এই দণ্ড ঘোষণার পর শাহবাগ চত্বরের জনতা বিপুল উল্লাস প্রকাশ করে এবং নিজেদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করে। এই সময় সারা দেশের স্বাধীনতা পক্ষীরাও উল্লসিত হয়।
এই দণ্ড ঘোষণার পর জামায়েত-শিবির সারা দেশ ব্যাপী ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে। ঢাকা শহরে হরতাল ততটা সফল হয় নি। এবং ঢাকাতে তাদের কার্যক্রম ততটা ছিল না। ঢাকার তেজগাঁও কলেজের সামনে পুলিশের সাথে জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষ। ৫ জন আটক, একজন পুলিশ আহত। বেলা ৩টার দিকে রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলের সামনের ফুটপাত থেকে পুলিশ একটি গ্রেনেড উদ্ধার করে। পরে পুলিশ এই গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করে। এই বিচারের প্রতিবাদে জামায়েত-ই-ইসলামী' আগামি রবিবার ও সোমবার হরতাল ডাকে।
সহিংসতা
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, নাটোর, চাঁপাইনবাব গঞ্জে এরা ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। পুলিশের সাথে জামায়েত-শিবিরের সংঘর্ষে― রংপুরে ২ দিনাজপুরে ২ নাটোরে ১ চট্টগ্রামে ১ এবং কক্সবাজারে ১ জন মৃত্যুবরণ করে। এদিনের ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের ভিতরে ছিল-
লোহাগাড়া উপজেলার বটতলী স্টেশনে অতর্কিত হামলা ও ভাঙচুর শুরু করেন জামাত কর্মীরা। এ সময় দূরপাল্লার গাড়িসহ ব্যাংক এশিয়া, ইউসিবিএল, সোনালী ব্যাংক, বেসরকারি হাসপাতাল ও স্থানীয় বিপণিবিতানে এলোপাতাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ শতাধিক গুলি ছোড়ে। গুলিতে মিছবাহ উদ্দিন নামের শিবিরের এক কর্মী নিহত হন। গুলিবিদ্ধ হন আরও আটজন।
চিকিৎসাধীন অবস্থায় সন্ধ্যায় মারা যান পুলিশ কনস্টেবল মো. তারেক। সন্ধ্যায় বাঁশখালী উপজেলার দক্ষিণজলদি ধোপাপাড়ায় জামায়েতকর্মীরা আগুন দেয়। এতে আহত হয়ে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুজন মারা যান। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন দয়ালহরি (৪০), অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
বিকেল পাঁচটার দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পিটিআই সড়কে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে শিবিরের কর্মীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় গুলিতে শিবিরের এক কর্মী নিহত হন। বিকেলে শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদ এলাকায় নির্মাণাধীন পর্যটন মোটেলে আগুন দেয় জামায়াত-শিবির। এ সময় তিনতলা ভবনের ছাদ থেকে তৌহিদুল ইসলাম নামের এক প্রকৌশলীকে নিচে ফেলে দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় পল্লবীর কালসি সড়কে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিছিল বের করেন। এ মিছিল থেকে অন্তত ১০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এ সময় শটগানের গুলি ছুড়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শেওড়াপাড়া এলাকার রোকেয়া সরণিতে ৮-১০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশ এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। রাত পৌনে আটটার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর ফলপট্টির মোড়ে স্থাপিত গণজাগরণ মঞ্চে ঢিল ছোড়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা। এরপর লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে রাস্তায় বের হয়।