গণজাগরণের সূত্রপাত এবং এর ধারাক্রম (১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত)
শাহবাগের গণজাগরণ-এর
আদ্যপাঠ
৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি
পরবর্তী অধ্যায় :
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি [মঙ্গলবার], জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি
জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২
এই রায় দেন। এই রায় প্রকাশের পর স্বাধীনতার স্বপক্ষীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
এরই ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয় শাহবাগ জনজাগরণ।
- ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ১১ ফেব্রুয়ারি [সোমবার] : সপ্তম
দিন
বিরামহীন
এই আন্দোলনে সপ্তম দিনে, বিভিন্ন স্কুল কলেজের
ছাত্রছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে এবং বিক্ষোভ
প্রদর্শন করে। এই সারা দেশবাসীর কাছে
আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা কামনা করা
হয়। সারাদেশের মানুষকে এই আন্দোলনের সাথে
সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য, পরবর্তী দিন (মঙ্গলবার)
বিকাল চারটায় তিনমিনিট নিরবতা পালনের আহ্বান
করা হয়।
বাংলাদেশের বৃহত্তম ঈদগাহ ময়দান
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার ইমাম আল্লামা ফরিদউদ্দিন মাসউদের (বাংলাদেশ ওলামা
মাশায়েখ পরিষদের সভাপতি) নেতৃত্বে শতাধিক মাওলানার একটি দল বেলা পৌনে দুইটার
দিকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যান এবং তিনি আন্দোলকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা
করেন। সংহতি প্রকাশ শেষে, তিনি উপস্থিত আন্দোলনকারীদের নিয়ে মোনাজাতও করেন
তিনি। এ সময় তিনি পরম করুণাময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে বলেন, 'হে আল্লাহ,
তুমি জালিমদের সঙ্গে থেকো না। যারা দেশের সঙ্গে বেইমানি করেছে, দেশের মানুষকে
হত্যা করেছে, মা-বোনদের ইজ্জত নিয়েছে, তাদের সঙ্গে তুমি থেকো না, খোদা'।
মোনাজাতে তিনি আরও বলেন, 'যারা দেশের সঙ্গে, দেশের মানুষের সঙ্গে বেইমানি
করেছে, আল্লাহ, তুমি তাদের শায়েস্তা করো।'
এই দিন শাহবাগ গণজাগরণের আবেদন গ্রামাঞ্চল
পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ার সংবাদ পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়। রাতের শাহবাগ মোমাবাতি ও মশালের আলোতে
আবার আলো-ছায়ার খেলায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠে। একসাথে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদী
বিক্ষোভে মুখরিত হয়। এবং এই আন্দোলন সারারাত ধরে চলে।
শাহবাগের গণজাগরণের সময়, কিছু
স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ফেসবুক ও ব্লগের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে
ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য, স্বাধীনতা-উত্তর কিছু অনিয়মের কথা তুলে
ধরে এবং এর সাথে ৭১'র অপরাধের সাথে তুলনা করার ধৃষ্টতা দেখায়। এরা
ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের সাথে বিচ্ছিন্ন কিছু
অপরাধকে তুলে এনে এই গণজাগরণকে ব্যাঙ্গ করে। সাইবার যুদ্ধে এই জাতীয়
একটি লিফলেটের প্রত্যুত্তরের একটি নমুনা নিচে দেওয়া হলো। |
|
- ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ১২ ফেব্রুয়ারি [মঙ্গলবার] : অষ্টম
দিন
বিরামহীন এই আন্দোলনে অষ্টম দিনে,
পূর্ণ গতিতে বিরামহীন বিক্ষোভ চলে। সকাল থেকেই নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে আন্দোলনকারীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ
করছেন। এর সাথে যোগ দিয়েছেন উদয়ন স্কুল, হলিক্রস কলেজ, ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি
স্কুলের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বেলা
সোয়া ১১টার কিছু পরে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত, গণজাগরণ মঞ্চে গিয়ে সংহতি প্রকাশ
করেন। এই সময় আবুল বারকাতের লেখা ‘বাংলাদেশে মৌলবাদের রাজনৈতিক অর্থনীতি’ বইটির
১০ হাজার কপি বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়।
দুপুরের দিকে কারওয়ান বাজার, মতিঝিলসহ
কয়েকটি এলাকায় শিবির ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। আশঙ্কা ছিল, এতে শাহবাগে
লোকসমাগম কমে যেতে পারে। তবে সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে শাহবাগে জনস্রোতের ঢল নামে।
মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে, বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে ঢাকার
শিক্ষা ভবন থেকে জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে যান এবং এ সময়
তাঁরা রাজাকারদের ফাঁসি চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
সারাদেশের মানুষকে এই আন্দোলনের সাথে
সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য, আগের দিন (সোমাবার) বিকাল চারটায় তিনমিনিট নিরবতা পালনের
আহ্বান করা হয়েছিল। তারই সূত্রে এই দিন বিকাল ৪টা থেকে পরবর্তী তিন মিনিট
পর্যন্ত স্তব্ধ থেকে সারাদেশের মানুষ এই আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে। এ
সময় রাজধানী ঢাকাসহ গোটা বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষ বাড়িতে, গাড়িতে, রাস্তায় বা
কর্মস্থলে দাঁড়িয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন। শাহবাগের
প্রজন্ম চত্বরে বিকেল চারটার এক মিনিট আগে থেকে শুরু হয় কাউন্ট ডাউন। হাজার
হাজার মানুষ কাউন্ট ডাউনের সঙ্গে গলা মেলান। এরপর বিকেল চারটায় স্তব্ধ হয়ে যায়
শাহবাগ-সহ সারাদেশ। এই নিরবতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন―
সরকারের মন্ত্রী. প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ প্রশাসনের সব স্তরের কর্মকর্তা ও
কর্মচারী।
এই প্রতীকী নিরবতা পালনের পর, আবার
আন্দোলনকারীরা শ্লোগান এবং বক্তৃতায় প্রজন্ম চত্বরকে মুখর করে তোলে। যথারীতি
সন্ধ্যার পর থেকে বিভিন্ন সংগঠন তাদের বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে এবং তা সারারাত ধরে
চলে।
ফাল্গুনের প্রথম দিনে (১৩
ফেব্রুয়ারি) কালো পোশাক পরে আসার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে—এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক
সংবাদ
ছড়িয়ে পড়েছিল কয়েক দিন ধরে। এদিন দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগের মঞ্চে ঘোষণা দেওয়া
হয়, কালো পোশাকের ব্যাপারে তাঁদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। ফলে পোশাকের ভিতর দিয়ে
আন্দোলনের একাত্মতা প্রকাশ বাতিল হয়ে যায়।
এই রাতে ব্লগার ও ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে ইমরান এইচ সরকার
নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণায় বলা হয়, শাহবাগের প্রজন্ম চত্ব্বরে
আগামীকাল বুধবার বেলা তিনটায় শুরু হবে বিপ্লবী গণসংগীত পরিবেশন। আর বৃহস্পতিবার
সন্ধ্যায় যে যেখানে থাকবেন, সেখানেই একটি করে মোমবাতি জ্বালিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের
সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানোর কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করবেন।
- ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ১৩ ফেব্রুয়ারি [বুধবার] : নবম
দিন
এই দিন ছিল বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে
বসন্ত কালের প্রথম দিন। এদিন বাসন্তী রঙের পোশাক পরে তরুণ তরুণীরা বসন্তকে
আবাহন করে। কয়েকদিন ধরে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়েছিল যে, এবারের ১লা ফাগুনে
কালো পোশাক পরে আসার জন্য শাহবাগের প্রজন্ম মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগের
দিন (মঙ্গলবার) ১২টার দিকে শাহবাগের মঞ্চে ঘোষণা দেওয়া হয়, কালো পোশাকের
ব্যাপারে তাঁদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তারপরেও এই দিন অনেকেই কালো শাড়ি এবং কালো
পাঞ্জাবি পড়ে সমাবেশে আসে।
পহেলা ফাল্গুনের সকাল থেকেই বসন্তঋতুর আবাহন
এবং বিক্ষোভের সংমিশ্রণে, আন্দোলন ভিন্নমাত্রা লাভ করে। স্লোগান, কবিতা, গান আর
দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনতার কণ্ঠে একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের ফাঁসির দাবি চলছে
আগের মতোই। আর এরসাথে যুক্ত হয়েছে বসন্তের রঙ, বাসন্তী রঙের শাড়ি আর মাথায় হলুদ
ফুলের বলয় পরা বিভিন্ন বয়সের নারী। এদিন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন বসন্ত উৎসবের
শোভাযাত্রা নিয়ে শাহবাগে এসে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। শাহবাগে প্রথম শোভাযাত্রা
আসে বিশ্ব কলাকেন্দ্র থেকে। এরপর ঢাকা ওয়েস্টার্ন কলেজের একটি শোভাযাত্রা আসে।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে জনসমাগম।
সন্ধ্যা সাতটায়, শাহবাগ মোড়ে মৎস্য
ভবনমুখী রাস্তায় শহীদ জননী
জাহানারা ইমাম-এর
৩৫ ফুটের বিশাল একটি প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়। এই সময় মূল মঞ্চে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের
সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার-আন্দোলনের এই অগ্রদূতের প্রতি
দাঁড়িয়ে এক মিনিট সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানান।
এর কিছুক্ষণ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের উদ্যোগে ফানুস ওড়ানো
হয়।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগসহ
বাংলাদেশের চলমান আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক
ওবামার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। হোয়াইট হাউসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই আহ্বন
জানিয়ে একটি আবেদন করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটের ‘দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন’ অপশনের ‘উই দ্য
পিপল’ অংশে এই আবেদনটি তৈরি করা হয়। ওয়েবসাইটে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ
জার্সির এস আই নামের একজন এ আবেদনটি করেছেন। আর আবেদনটির পক্ষে তিনিই প্রথম
স্বাক্ষর করেছেন।
- ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ১৪ ফেব্রুয়ারি [বৃহস্পতিবার] :
দশম
দিন
ব্লগার ও ফেসবুক অ্যাক্টিভিস্ট
নেটওয়ার্কের পক্ষ থেকে ইমরান এইচ সরকার বৃহস্পতিবার কর্মসূচির ঘোষণায় বলেছিলেন―
সন্ধ্যায় যে যেখানে থাকবেন, সেখানেই একটি করে মোমবাতি জ্বালিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের
সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানোর কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ করবেন।
এই অনুরোধে সাড়া দিয়ে, সন্ধ্যা
সাতটায় একসাথে সারা দেশে মোমবাতি জ্বলানো হয়। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট,
রাস্তার পথচারীরাও মোমবাত জ্বালিয়ে আন্দোলনে সাড়া দেন।
এই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে সংহিত
জানিয়েছেন- দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান আজ সকালে
শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনে সংহতি জানান। দুপুরের দিকে অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মুস্তাফা
শাহবাগে গিয়ে সংহতি জানান।
এই দিন দুপুরের দিকে খবর আসে,
কাদের মোল্লা ও অভিযুক্ত
কামারুজ্জামানের জাতীয় প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিল করা হয়। এই খবরের পর শাহবাগে
পৌঁছানোর পর সেখানে কিছু সময়ের জন্য আনন্দ বয়ে যায়। সমবেত জনতা এই ঘটনাকে
আন্দোলনের একটি জয় হিসাবে স্বাগত জানিয়েছে।
জাতীয় সংসদে শাহবাগের গণজাগরণের প্রভাবে সংসদ
সংশোধনের জন্য উত্থাপিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল (সংশোধন) বিল ২০১৩
যাচাই-বাছাই করে সংসদে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয়
কমিটি। আজ বৃহস্পতিবার কমিটির সভাপতি ফজলে রাব্বি মিয়া প্রতিবেদনটি উপস্থাপন
করেন।
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চর আহ্বানে আজ সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়
মোমবাতি জ্বালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন সাংসদ ও জাতীয়
সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীরা। এ সময় সংসদের অধিবেশন মুলতবি রাখা হয়। মোমবাতি
প্রজ্বালন অনুষ্ঠানে ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, সাংসদ তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন
আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, রাশেদ খান মেনন, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ
প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
- ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ১৫ ফেব্রুয়ারি [শুক্রবার] :
একাদশ
দিন
শাহবাগে গণজাগরণের একাদশ দিনের
বিকেল চারটা থেকে, প্রজন্ম চত্বরে শুরু হয় সমাবেশ। শাহাবাগের মহাসমাবেশ
আন্দোলন কর্মসূচি হিসাবে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। ব্লগার
অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের
আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার মহাসমাবেশের ঘোষণায় জানান―
প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে
রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে বলে ঘোষণা করা হয়। তবে কোনো বিশেষ প্রয়োজনে নোটিশ দেওয়া
হলে দলে দলে প্রজন্ম চত্বরে আসার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বলেও বলা হয়েছিল। এই
ঘোষণার সাথে অন্যান্য যে বিষয়গুলো ছিল, তা হলো
- আগামী রোববার সকাল
১০টায় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও জাতীয়
সংগীত পরিবেশন।
জেলা, গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় গণজাগরণ মঞ্চ গড়ে তোলা।
- যুদ্ধাপরাধীদের বিচার
বাধাগ্রস্ত করতে যেখানেই জামায়াতের নাশকতা দেখা যাবে, সেখানেই
প্রতিরোধে মানবদুর্গ গড়ে তোলা।
- চারদিকে সতর্ক নজরদারি
ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
- দেশের সর্বত্র ও
সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে স্বাধীনতাবিরোধী ও
যুদ্ধাপরাধীদের বয়কট করতে জনসংযোগ করা।
|
|
শাহবাগ
আন্দোলনের প্রথম জামাত-শিবিরের শিকার আহমেদ রাজিব হায়দার শুভ |
এই ঘোষণার কয়েক ঘন্টা পরে ব্লগার থাবা
বাবা (ব্লগের নাম) নিহত হন। তাঁর প্রকৃত নাম আহমেদ রাজিব হায়দার শুভ। তাঁর
পিতার নাম নাজিম উদ্দিন। বাসা পল্লবীর পলাশ নগরে।
শাহবাগ আন্দোলন থেকে মিরপুরের বাসায় ফেরার পথে খুন হন রাজীব। রাত
পৌনে দশটার দিকে তার মৃতদেহ বাসার কাছে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি
পেশায় স্থপতি ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০০০ সালে এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি থেকে
স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক (সম্মান) পাশ করেছিলেন। তাঁর মৃতদেহের
পাশে, তাঁর ল্যাপটপটি পড়ে ছিল।
তাঁর মৃত্য সংবাদ প্রজন্ম চত্বরে পৌঁছুলে, সেখানে শোকের ছায়া নেমে
এসেছে। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাত ১১টা ২২ মিনিটে এক মিনিট নীরবতা পালন করা
হয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা এক বৈঠকে বসেন এরপর কিছু
গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেন। এই
সিদ্ধান্তগুলো হলো―
- আগামীকাল শনিবার বাদ আছর
প্রজন্ম চত্বরে শাহবাগ আন্দোলনের কর্মী, ব্লগার ও স্থপতি আহমেদ
রাজিব হায়দারের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজিব হত্যার প্রতিবাদে কাল
সকালে কালোব্যাজ ধারণ করা হবে।
- জামায়াত-শিবির ঘোষিত আগামী
সোমবারের হরতাল প্রত্যাখান করে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কল-কারখানা খুলে রাখতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত
আহ্বান জানানো হয়েছে। জামায়াত-শিবির বাধা দিতে আসলে তাদের প্রতিহত
করার কথা বলা হয়েছে। জামায়াতের অর্থে পরিচালিত 'সোনারবাংলা ব্লগ'
অবিলম্বে বন্ধের দাবি করা হয়েছে।
|
- ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ১৬ ফেব্রুয়ারি [শনিবার] :
দ্বাদশ
দিন
মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরের
আন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সোনার বাংলা ব্লগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। দুপুর ১২টার দিকে শাহবাগের প্রজন্ম
চত্বরের মূল মঞ্চ থেকে এ বিষয়ে ঘোষণা দেওয়া হলে, সমবেত জনতা করতালি দিয়ে
সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।
১৫ ফেব্রুয়ারিতে জামাত-শিবিরের চোরাগুপ্ত হামলায় ব্লগার আহমেদ রাজিব হায়দার
শুভ-এর মৃত্যুর প্রতিবাদে, ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট
নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার ২৪ ঘণ্টা আন্দলনের ঘোষণা দিয়েছিল। এই
ঘোষণা অনুসারে শাহবাগে ২৪ ঘণ্টার আন্দোলন শুরু হয়। বিকাল ৫টার দিকে কফিন মোড়ানো
রাজীবের মরদেহ শাহবাগে আনা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের মর্গ থেকে। মৃতদেহ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে পোঁছার পর
আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এ সময় শাহবাগ ও এর আশপাশের এলাকায়
বেদনাবিধুর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। বিকেল ৫টা ৫৩ মিনিটে জানাজা পড়ান মাওলানা ড.
সৈয়দ এমদাদ উদ্দিন। সন্ধ্যা ছয়টার রাজীবের মরদেহবহনকারী গাড়ি শাহবাগ ত্যাগ
করে। রাজীবের মৃত্যুর কারণে এদিন কালো ব্যাজ ধারণ করা হয়েছিল সবাই। এদিনের
রাজীবের নামে নানা রকমের শ্লোগান দেওয়া হয়। যেমন- 'রাজীবের রক্ত, বৃথা যেতে দেব
না', 'এক রাজীব লোকান্তরে, লক্ষ রাজীব ঘরে ঘরে', 'মাগো তোমায় কথা দিলাম, রাজীব
হত্যার বদলা নেব'।
রাজীবের চাচা আবদুল হান্নান আজ শাহবাগের সমাবেশে সংহতি জানিয়েছেন। তাঁর স্মরণে
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে কবিতা আবৃত্তি করেছেন সাংসদ ও নাট্যব্যক্তিত্ব
আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়া আবৃত্তি করেছেন লুৎফর রহমান রিটন এবং গণসংগীত পরিবেশন
করেছেন ফকির আলমগীর। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়,
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে গিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন।
প্রজন্ম চত্বরের আহ্বানে সাড়া দেয় ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিকদের সংগঠন এবং
ব্যবসায়ীরা দোকানপাট খোলা ও পরিবহনের মালিকেরা যানবাহন চালু রাখার সিদ্ধান্ত
নেয়। উল্লেখ্য,
তিনি ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারের জানাজায় অংশ নেন।
- ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ১৭ ফেব্রুয়ারি [রবিবার] :
ত্রয়োদশ
দিন
এদিন ব্লগারদের ঘোষিত ২৪ ঘণ্টা আন্দোলনের কর্মসূচী তীব্রভাবে পালিত হয়
শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে। এই দিন সকাল থেকেই থেমে থেমে ঠাণ্ডা বাতাসসহ হালকা
বৃষ্টি হতে থাকে। পূর্বঘোষিত আহ্বানের সূত্রে (১৫ ফেব্রুয়ারি [শুক্রবার] :
একাদশ দিন), সকাল ১০টায় শাহবাগের আন্দোলনকারী নারী-পুরুষ সুশৃঙ্খলভাবে
দাঁড়িয়ে জাতীয় সংগীত গাইতে শুরু করেন এবং একই সঙ্গে জাতীয় পতাকা ধীরে ধীরে
উত্তোলিত হয়। প্রজন্ম চত্বরের পূর্বঘোষিত এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে
দেশের বিদ্যালয়-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত গেয়ে
জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে।
বেলা দুইটার দিকে বৃষ্টির বেগ বৃদ্ধি পায়। প্রাকৃতিক এই বৈরি পরিবেশের ভিতর
শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা প্রতিবাদের গান আর স্লোগানে মুখর করে
রাখে প্রজন্ম চত্বর। এইদিন এই চত্বর থেকে জামায়াত-শিবিরের ডাকা
আগামীকালের (১৮ ফেব্রুয়ারির) হরতাল প্রত্যাখ্যান করতে সাধারণ জনগণের প্রতি
আহ্বান জানানো হয়। একই সাথে গণজাগরণ মঞ্চ থেকে দেশের দোকানমালিকদের প্রতি
দোকানপাট খোলা রাখার জন্য আহ্বান করা হয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে
শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার এবং সব অফিস খোলা রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়।
এই আহবানে সাড়া দিয়েছে বিভিন্ন স্বাধীনতার স্বপক্ষী সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ। এর
পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের জন্য, সরকার রাত আটটায় রাজধানী ঢাকা শহরে
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করে।
আগামীকাল সোমবার সারা দেশে হরতাল ডেকেছে জামায়াতে ইসলামী। মানবতাবিরোধী
অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলা আন্দোলন থেকে কালকের
হরতাল প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। প্রজন্ম চত্বরের আহ্বানে সাড়া
দিয়েছে ব্যবসায়ী ও পরিবহন মালিকদের সংগঠন। ব্যবসায়ীরা কাল দোকানপাট খোলা ও
পরিবহনের মালিকেরা যানবাহন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিন সংসদের বিকেলের অধিবেশনে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর
সংশোধনী প্রস্তাব পাস হয়। এই সংশোধনী প্রস্তাবটি জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার ফলে,
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার ক্ষেত্রে
রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের সমান সুযোগ সৃষ্টি হয়। একই সঙ্গে আপিল নিষ্পত্তির জন্য
৬০ দিনের সময়সীমাও নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে সংশোধনীতে।
বিল পাস হওয়ার পর ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান
এইচ সরকার বলেন, 'আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনের সংশোধনী প্রস্তাব
পাস হওয়ায় জাতীয় সংসদকে স্বাগত জানাই। ... আমরা মনে করি এটি আন্দোলনের একটি
বড় বিজয়।' এই বিল পাসের পাশাপাশি জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে সরকার যাতে
দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, সে জন্য তিনি আহ্বান জানান। এদিনও যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির
দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় এই
চত্বর থেকে।
এইদিন আনুষ্ঠানিকভাবে তারুণ্যের এই প্রতিবাদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের
একটি দল। এ ছাড়া বদরুন্নেসা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দল গণজাগরণ মঞ্চের
আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। সংসদের অধিবেশন শেষে রাত নয়টার দিকে ৭০
জন সাংসদ শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।
এই আন্দোলনের একটি অভিনব সাড়া পাওয়া গেছে, এই দেশে বসবাসকারী বিহারী নামে
চিহ্নিত উর্দুভাষীদের কাছ থেকে। এই বিষয়ে প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদটি
নিচে তুলে ধরা হলো-
'রাজধানীর শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে চলমান
আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে উর্দুভাষী বিহারিরা (আটকে পড়া পাকিস্তানি)। এ
ছাড়া প্রজন্ম চত্বরের নেতাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘তাঁরা যদি চান, তবে
উর্দুভাষী বিহারিরা এ আন্দোলনে যোগ দেবেন।’ বাংলাদেশ উর্দুভাষী কল্যাণ সমিতির
পক্ষ থেকে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে।
সমিতির সভাপতি আশরাফুল হক বাবু রোববার মুঠোফোনে খুদে বার্তা (এসএমএস) ও লিখিত
চিঠিতে জানান, ৩০ লাখ শহীদের রক্তে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের জন্ম। মুক্তিযুদ্ধে
পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী নিরপরাধ বাঙালির ওপর নির্দয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
ভাষা ও সংস্কৃতি এক হওয়ায় অধিকাংশ বিহারি ওই সময় পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন
করে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের বিহারিরা এ দেশের সন্তান। তারা কেন পূর্বপুরুষের
সেই অপরাধের দায় বয়ে বেড়াবে।
প্রজন্ম চত্বরের চলমান সব কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে আশরাফুল হক ওই
চিঠিতে জানান, ‘এ দেশের কিছু ব্যক্তি তখন পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর সেজে
গণহত্যা, ধর্ষণসহ লুটতরাজ চালিয়েছে। তাই রাজাকারদের যথোপযুক্ত বিচার হতে হবে।
নতুন প্রজন্মের বিহারিরাও যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চায়, এ জন্য চলমান এই আন্দোলনে
আমরাও সহযাত্রী হতে চাই।’ [http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-02-17/news/329954
]
- ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ১৮ ফেব্রুয়ারি [সোমবার] :
চতুর্দশ
দিন
গতকালকের
জামায়েত-ই-ইসলামী'র
ডাকা হরতালের প্রতিবাদের ভিতর দিয়ে এদিনের আন্দোলন শুরু হয়। গত রাতের
আন্দোলনকারীদের সাথে এদিন সকাল থেকেই যোগ দেয় অগণিত মানুষ। গতকাল রোববারের
হালকা বৃষ্টির পর, এদিন সকাল থেকেই কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস ছিল। জামায়াতের ডাকা
হরতাল প্রত্যাখ্যান করায় দেশবাসীকে বারবারই ধন্যবাদ জানানো হয় শাহবাগের মঞ্চ
থেকে।
সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষক শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনের সঙ্গে
একাত্মতা প্রকাশ করেন। এ সময় তাঁরা মানবতাবিরোধী অপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজা
ফাঁসি এবং জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানান।
বেলা ১০টার দিকে প্রজন্ম চত্বর থেকে হরতালবিরোধী মিছিল বের হয়। মিছিলের অনেকেই
ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার প্রতিবাদে কালো ব্যাজ ধারণ করেছিলেন। এই
মিছিল থেকে জামায়াত-শিবিরকে প্রত্যাখ্যানের আহ্বান জানানো হয়। মিছিলটি শাহবাগ
থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি-কলাবাগান-কারওয়ান বাজার হয়ে আবার শাহবাগে আসে।
মিছিলে ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরাও অংশ
নেন। মিছিল থেকে পান্থপথে ইসলামী ব্যাংকের একটি বুথ ভাঙচুর করা হয়।
বেলা ১১টার দিকে ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যার প্রতিবাদে কালো ব্যাজ ধারণ
করেন, শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনকারীরা। এসময় রাজীবসহ এই আন্দোলনের সঙ্গে
জড়িত নিহত তিন কর্মীর স্মরণে কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়। এরপর শহীদদের প্রতি
শ্রদ্ধা জানিয়ে পালন করা হয় নীরবতা।
বিকেলে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে শাহবাগে আসেন অর্থমন্ত্রী
আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত 'ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট
নেটওয়ার্কে-এর একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে এছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার
বেলা ১১টায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ব্লগার ও কার্টুনিস্ট
তারিকুল ইসলাম শান্তর জানাজা, ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল চারটা ১৩ মিনিটে একাত্তরের
শহীদদের উদ্দেশে চিঠি লিখে বেলুনে উড়ানো, একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে
গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং একুশে
ফেব্রুয়ারি-তে বেলা ৩টায় মহাসমাবেশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিন টেলিভিশন নাটকের শতাধিক শিল্পী ও কলাকুশলীরা, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের
ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে চলা আন্দোলনের সঙ্গে এবার সংহতি জানান।
শাহবাগে শিল্পীরা
জামায়েত-ই-ইসলামী'র
সমর্থক হিসেবে পরিচিত সব গণমাধ্যম বর্জন করার ঘোষণা দেন। নির্মাতা অরণ্য
আনোয়ারের উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ,
ডিরেক্টরস গিল্ড ও অভিনয়শিল্পী সংঘের শতাধিক সদস্যের একটি দল প্রজন্ম চত্বরে
গিয়ে সংহতি জানায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ টেলিভিশন অ্যান্ড ফিল্ম
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুবর্ণা মুস্তাফা, মিতা চৌধুরী, ঝুনা চৌধুরী, আজিজুল
হাকিম, কার্টুনিস্ট তারিকুল ইসলাম শান্ত, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, গাজী রাকায়েত,
জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, শাহনাজ খুশি, সুমনা সোমা, শানারেই দে শানু, কুসুম
সিকদার, শম্পা রেজা, মোহন খান, আরাফান আহমেদ, শান্তা ইসলাম, তারিক আনাম খান,
রোকেয়া প্রাচী, হাসান মাসুদ, নাদের চৌধুরী, কে এস ফিরোজ, কুমকুম হাসান, এস এ
হক অলিক প্রমুখ।
- ২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ১৯ ফেব্রুয়ারি [মঙ্গলবার] :
পঞ্চদশ
দিন
ব্লগারদের ঘোষিত ২৪ ঘণ্টা আন্দোলনের কর্মসূচী তীব্রভাবে পালিত হয় এদিন।
পুরানো দাবি নিয়েই আন্দোলনকারীরা আন্দোলন চালিয়ে গেছে পূর্ণোদমে।
পূর্বদিনের ঘোষণা অনুসারে, বেলা ১১টায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে তরুণ নাট্যকার ও আন্দোলনকারী তারিকুল
ইসলাম-এর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। দুই দিনের কর্মসূচি শেষে গতকাল রাতে শাহবাগ
থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
এদিন বিচারপতি মিজানুর রহমান তাঁর কর্মচারী সিদ্দিকুর রহমানকে দিয়ে ব্লগার
রাজীব সম্পর্কে সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক একটি লেখা সুপ্রিম কোর্টে বিতরণ
করেছেন। এতে তিনি রাজীবকে মুরতাদ বলেছেন। তাঁর এ চিঠি প্রধান বিচারপতিসহ অন্য
বিচারপতিদের কাছেও পাঠানো হয়েছে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে সুপ্রিমকোর্টের খাম।
এ নিয়ে সংসদে প্রচণ্ড উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এ সময় আইনমন্ত্রী সফিক আহমেদ বলেন-
‘একজন বিচারপতি যে কাজ করেছেন, তা নিন্দনীয়, জঘন্য ও অসদাচরণমূলক। বিচারপতির
এমন আচরণ করা উচিত না। এ বিষয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করা সম্ভব।’
সাংসদদের এ দাবির বিষয়ে তিনি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে পরামর্শ করে যথাযথ
ব্যবস্থা নেবেন।
শাহবাগের আন্দোলনে সংহতি জানাতে কলকাতার ২১ সদস্যের একটি সাইক্লিস্ট দল
বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। এদিন দুপুরে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া
ঘাটে তাঁরা পৌঁছান। বন্ধুত্বের অকৃত্রিম নিদর্শন হিসেবে প্রত্যেকের সাইকেলের এক
হাতলে বিশেষভাবে টানানো ছিল বাংলাদেশের পতাকা। আর অন্য হাতলে ছিল ভারতের জাতীয়
পতাকা। ভারতীয় এই সাইক্লিস্ট দলের দলনেতা হিসেবে ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ক্রীড়া
ধারাভাষ্যকার মিহির দাস।
ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পী সুমন কবীর,
শাহবাগের আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে আজকে একটি নতুন গান রচনা করে, তাঁর
ওয়েবসাইটে ‘সুরের জন্য শহীদ’ শিরোনামে পোষ্ট করেন। উল্লেখ্য এই আন্দোলন
উপলক্ষে তিনি এদিন পর্যন্ত পাঁচটি গান রচনা করলেন। এই গান পাঁচটি হলো ‘গণদাবি’,
‘শাহবাগে রাতভোর’, ‘তিন মিনিট’, ‘শহীদ রাজীব’ ও ‘সুরের জন্য শহীদ’।
- ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ ২০ ফেব্রুয়ারি [বুধবার] :
ষোড়শ
দিন
ব্লগারদের ঘোষিত ২৪ ঘণ্টা আন্দোলনের কর্মসূচী তীব্রভাবে পালিত হয় এদিনও।
২১শে ফেব্রুয়ারিকে [ভাষা
শহিদ দিবস] সামনে রেখে আন্দোলন নব মাত্রায় উজ্জীবিত
হয়ে উঠে।
প্রজন্ম চত্বরের এই চলমান আন্দোলন নিয়ে জামায়াত-শিবিরের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে
সোচ্চার হওয়ার জন্য আন্দোলকারীদের পক্ষ থেকে আহ্বান করা হয়। মঞ্চ থেকে বলা
হয়, ‘জামায়াত-শিবির ফেসবুক ও ব্লগে এই আন্দোলন নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব
অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আপনারা সোচ্চার হোন। তাদের প্রতিহত করুন।’
বেলা ১টার দিকে ঢাকার ইমপেরিয়াল কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা
এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন আজ তারুণ্যের এই প্রতিবাদী
সমাবেশের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে। বেলা পৌনে দুইটার দিকে শিল্পী সুবীর নন্দী,
এন্ড্রু কিশোর, কনকচাঁপা, খুরশীদ আলম, সুজিত মোস্তফা, সুরকার আলাউদ্দীন আলী
প্রমুখ প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এর আগে
বিকেল চারটা ১৩ মিনিটে রংবেরঙের হাজার
হাজার বেলুনে শহিদদের উদ্দেশে লেখা চিঠি উড়ানো হয় শাহবাগ থেকে। এ সময় ‘জয়
বাংলা’ স্লোগানে শাহবাগের আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
এদিন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন
মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত ‘মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’- আলোচনা
সভায় শাহবাগের আন্দোলনকে আওয়ামী লীগের 'ভেল্কিবাজি' নামে ব্যাঙ্গ করে। বিএনপির
ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাঁর বক্তৃতায় বলেন―
‘সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ঢাকতে সরকার ভেলকিবাজি শুরু করেছে। তাদের জাদুকরি খেলা
জনগণের কাছে ধরা পড়ে গেছে। এখন যতই ছলচাতুরি করা হোক না কেন, এটা প্রমাণ হয়ে
গেছে, আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ।’
- ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ ২১ ফেব্রুয়ারি [বৃহস্পবার] :
সপ্তদশ
দিন
যথাযোগ্য মর্যাদায় এদিন
ভাষা শহিদ দিবস পালিত হয়। এদিন এই দিবস এবং শাহাবাগ
প্রজন্ম চত্বর একাকার হয়ে যায়। ভাষা শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন এবং
প্রজন্মচত্বরের বিক্ষোভ একীভূত হয়ে ঢাকা শহিদ মিনার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত
জনসমুদ্রে পরিণত হয়। শহিদ দিবসের প্রভাত ফেরি শেষ করে, এবারে মানুষ ঘরে ফিরে না
গিয়ে, শাহবাগে জড় হয়েছিলেন। দুপরে পর থেকে পূর্বঘোষিত মহা-সমাবেশে নতুন করে
যুক্ত হয় আরও বহুমানুষ।
পূর্ব-ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে, বিকেল সোয়া চারটার দিকে প্রজন্ম চত্বরে
মহাসমাবেশ শুরু হয়। শুরুতেই মঞ্চে পাঠ করা হয় পবিত্র কোরআন। এরপর যথাক্রমে
গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল পাঠ করা হয়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে
প্রজন্ম চত্বরে জাতীয় সংগীত পরিবেশিত হয়। এই সময় হাজার মানুষ দাঁড়িয়ে জাতীয়
সংগীতের সঙ্গে কণ্ঠ মেলান। এরপর অমর একুশে স্মরণে সমবেত জনতা গায় ‘আমার ভাইয়ের
রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি...’ গানটি। এরপর বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা
মহাসমাবেশে বক্তৃতা দেন। সবশেষে ব্লগার অ্যান্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট
নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার ৬টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ও আগামি দিনের
কর্মসূচি ১১টি অধ্যায়। পরে শুক্রবারে এই শাহাবাগ অঞ্চলে যানবাহন চলাচলের জন্য
উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
৬টি চূড়ান্ত ঘোষণা
-
১. ঘাতক জামাত
শিবিরের হামলায় শহীদ রাজীব হায়দার, জাফর মুন্সী, বাহাদুর মিয়া, কিশোর রাসেল
মাহমুদ হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের আগামী ৭দিনের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।
-
২. ২৬ শে
মার্চের পূর্বে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক সন্ত্রাসী জামাত শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ
করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী জামায়াতে ইসলামীর
বিরুদ্ধে সুশোধনী আইনের অধীনে অভিযোগ গঠন এবং নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া শুরু
করতে হবে।
-
৩. অবিলম্বে
যুদ্ধাপরাধী সংগঠনগুলোর আর্থিক উৎস, যেসব উৎস থেকে সকল প্রকার জঙ্গিবাদী, এবং
দেশবিরোধী তৎপরতার আর্থিক জোগান দেয়া হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে আইনের আওতায়
নিয়ে আসার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করতে হবে।
-
৪.
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া গতিশীল ও অব্যহত রাখতে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক
অপরাধ ট্রাইবুন্যালকে স্থায়ী রূপ দিতে হবে।
-
৫. গণমানুষের
নিরাপত্তার স্বার্থে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও তাণ্ডব বন্ধে অবিলম্বে আইন
শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সকল সন্ত্রাসী গ্রেফতার ও অবৈধ
অস্ত্র উদ্ধারসহ গোপন আস্তানা সমূহ উৎখাত করতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক
গণমাধ্যমে এদের ভয়ংকর রূপ প্রকাশ করে দিতে হবে।
-
৬.
যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষক এবং হত্যা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা গণমাধ্যমগুলির
বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
কর্মসূচির ১১ দফা
- ২২ ফেব্রুয়ারি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ ও
পরবর্তীকালে জামায়াত-শিবিরের হাতে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে বাদ জুমা দেশের সব
মসজিদে বিশেষ দোয়া। এ ছাড়া অন্যান্য ধর্মের উপাসনালয়ে প্রার্থনা।
- ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত
দেশে ও দেশের বাইরে শাহবাগের আন্দোলনকারীদের ছয় দফা দাবির সমর্থনে গণস্বাক্ষর
অভিযান। প্রত্যেকে যে যার অবস্থানে থেকে সবার স্বাক্ষর সংগ্রহ করে প্রজন্ম
চত্বরে পাঠাবে। এই গণস্বাক্ষর জাতীয় সংসদে পৌঁছে দেওয়া হবে।
- ১ মার্চ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত প্রতিটি
বিভাগে গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে সংহতি সমাবেশ।
- ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর রায়েরবাজার
বধ্যভূমিতে বেলা তিনটায় সমাবেশ ও শপথ।
- ২৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুর ১০ নম্বর
গোলচত্বরে বিকেলে তিনটায় সমাবেশ।
- ২৭ ফেব্রুয়ারি বেলা তিনটায় মতিঝিলের
শাপলা চত্বরে সমাবেশ।
- ১ মার্চ শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরসহ
দেশের সব গণজাগরণ মঞ্চে বেলা তিনটা থেকে প্রতিবাদী গান।
- ৩ মার্চ বাহাদুর শাহ পার্ক ও ৫ মার্চ
যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় বেলা তিনটায় সমাবেশ।
- ৭ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী
উদ্যানের শিখা চিরন্তনে শ্রদ্ধা নিবেদন, সমাবেশ ও প্রতিবাদী গান।
এ ছাড়া দেশের সব গণজাগরণ মঞ্চে সাংস্কৃতিক
কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকবে। শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে প্রতি শুক্রবার বেলা তিনটায়
প্রতিবাদী সমাবেশ চলবে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রতিটি রায়
ঘোষণার আগের দিন বেলা তিনটায় শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে উপস্থিত হয়ে
জামায়াত-শিবিরের সহিংসতা প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
সংহতি
[সূত্র প্রথম আলো :
http://www.prothom-alo.com/detail/date/2013-02-21/news/330957 ]
নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ শাহবাগের আন্দোলনে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করেছেন। এঁদের
মধ্যে রয়েছেন: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সংসদের
উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন,
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ
বড়ুয়া, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদ,
সাংসদ ইসরাফিল আলম, সাংসদ রাশেদ খান মেনন, সাংসদ উবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, সাংসদ
নুরুল ইসলাম, সাংসদ আ ক ম মোজাম্মেল হক, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী আবদুস
সোবাহান, সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী,
বিকল্পধারার মহাসচিব আবদুল মান্নান, গণফোরামের সভাপতি ও সংবিধান-প্রণেতা ড. কামাল
হোসেন, চলচ্চিত্র নির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম
স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষক, নাট্যব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু,
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গোলাম কুদ্দুছ, সাংবাদিক ও কলাম লেখক
আবেদ খান, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, সাবেক সেনাপ্রধান ও সেক্টর কমান্ডার ফোরামের
ভাইস চেয়ারম্যান কে এম শফিউল্লাহ, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদজায়া শ্যামলী
নাসরীন চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না,
নারীনেত্রী শিরীন আক্তার, পঙ্কজ ভট্টাচার্য, অজয় রায়, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী,
মাহফুজা খানম, চলচ্চিত্র নির্মাতা মানজারে হাসিন, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ
সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক, কবি ম সামাদ, জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ
খান, নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, প্রবীণ
বামপন্থী নেতা হায়দার আকবর খান রনো, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও অধ্যাপক
রফিক উল্লাহ খান, জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যরা, আহমেদ রফিক, কামাল লোহানী, শেখ
জিয়াউল হক, জামিল আক্তার, বরুণ বিশ্বাস, রওশন জামিল, মনসুর মুসা, এস আর মাহমুদসহ
অনেক বিশিষ্ট নাগরিক।
সূত্র :
ইন্টারনেট, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা এবং অনুশীলনের সদস্যদের সংগৃহীত তথ্য।