দেখুন : শাহবাগের গণজাগরণ-এর আদ্যপাঠ
গণজাগরণের সূত্রপাত
এবং এর ধারাক্রম (৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১০
ফেব্রুয়ারি)
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি [মঙ্গলবার], জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি
জেনারেল
আবদুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার
বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২
এই রায় দেন। এই রায় প্রকাশের পর স্বাধীনতার স্বপক্ষীরা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে।
এরই ধারাবাহিকতায় জন্ম নেয় শাহবাগ জনজাগরণ। নিচে এর দিবসানুক্রমে আন্দোলনের
কার্যক্রম তুলে ধরা হলো।
শাহবাগের গণ-জাগরণের
নেতৃত্বদানকারী |
যথার্থ সময়ে সংগঠকের কর্মী ইমরান এইচ সরকার, যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের নেতা
আবদুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন নয় ফাঁসির
দাবি করেন এবং
ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে
যাবেন বলে অঙ্গীকার করেন। মূলত এই অঙ্গীকারের ভিতর উপস্থিত জনসাধারণ তাঁদের
মনের কথাটির প্রতিধ্বনি শুনেছিল। তারা সংগঠকদের সাথে এই আবেদনে একাত্ম হয়ে
শ্লোগানে, বিক্ষোভে আন্দোলনকে বেগবান করে তোলে। উপস্থিত তরুণদের অনুপ্রেরণায়,
ইমরান পরদিন বুধবার আরও বৃহত্তর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও
তিনি জানান। এরপর আর কিছু বলার প্রয়োজন হয় নি। সময় গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে
শাহবাগে গণমানুষের ঢল নামে। এরা সংগঠনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে সারারাত ধরে এই বিক্ষোভ
চালিয়ে যেতে থাকে। এই সময় নানা ধরনের শ্লোগান তৈরি হতে থাকে মুখে মুখে। যেমন― 'কসাই কাদেরের যাবজ্জীবন সাজা মানি না',
'আর কোনো রায় নাই, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই', 'রাজাকারদের সঙ্গে বসবাস করতে চাই
না', 'একাত্তরের হাতিয়ার গর্জে উঠুক আরেকবার', তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা
যমুনা'।
রাতের বেলায় মোমবাতি জ্বালিয়ে রাস্তার উপরে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেয়। একই সাথে মশাল
মিছিলও বের হয়। এরপর কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে কর্মসূচিতে একাত্মতা প্রকাশ
করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। রাতে ছাত্রলীগের সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ ও
সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম দলের নেতা-কর্মীসহ টিএসসিতে গিয়ে এই
কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এই সময় সারা দেশের সব সাংস্কৃতিক কর্মীকে এই কর্মসূচিতে
যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। এইভাবে বিকেলের সাধারণ
বিক্ষোভ বিরামহীন বিক্ষোভের জন্ম দেয়।
প্রথমে মনে হয়েছিল, ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ এই আন্দোলনকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক
সুবিধা গ্রহণ করবে। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক নেতার কাছে আন্দোলকারীরা আত্মসমর্পণ
না করে, সামগ্রিক গণমানুষের আন্দোলন হিসেবে একে দৃঢ়ভাবে ধরে রাখে।
শাহবাগে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি মূল মঞ্চ হয়। মূল মঞ্চের উদ্দীপনামূলক
শ্লোগান বক্তৃতা থাকলেও, শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের টিএসসি পর্যন্ত ভিন্ন
ভিন্ন দল নিজেদের মতো করে বিক্ষোভ শুরু করে দেয়। এবং সারারাত ধরে অবিরাম
বিক্ষোভ চলে। আন্দোলনকারীরা পুরো
শাহাবাগ মোড়কে নাম দিয়েছিল 'প্রজন্ম চত্বর'।
সারা রাত ধরে তরুণরা বিরামহীন বিক্ষোভ করে।
শাহবাগ গণজাগরণে যে সকল শ্লোগান মাইক যোগে উচ্চারিত হয়েছিল বা পোস্টার হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছিল, তার তালিকা |
|
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ ৭ ফেব্রুয়ারি
[বৃহস্পতিবার] : তৃতীয় দিন
তৃতীয় দিনের বিরামহীন বিক্ষোভ শাহবাগ
মোড়কে উদ্বেলিত করে রাখে। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও এই
আন্দোলনে যোগদান করে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শাহবাগ মোড়ে তীরন্দাজ নাট্যদলের
কর্মীরা প্রতিবাদী পথনাটক মঞ্চস্থ করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে মানবতাবিরোধী
অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কুশপুত্তলিকায় জুতাপেটা করা হয়, পরে তাতে আগুন
ধরিয়ে দেন বিক্ষোভকারীরা। বেলা ১১টা
৪০ মিনিটে তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান শাহবাগে গিয়ে আন্দোলনে
সংহতি প্রকাশ করেন। বেলা তিনটার দিকে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক আন্দোলনে
সংহতি প্রকাশ করেন। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের
পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, ইডেন কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ ও
আইডিয়াল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
এ ছাড়া সাবেক ফুটবলার ও ক্রিকেটাররাও এই আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে অংশ
নিয়েছেন।
সন্ধ্যার পর শাহবাগ মোড় গণমানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যায় প্রজ্বলিত মোমবাতি ও
মশালের আলোয় শাহবাগে আন্দোলনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। বিক্ষোভকারীরা কাদের
মোল্লার ফাঁসির দাবি করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এর সাথে ছিল প্রতিবাদী গান
ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। রাতে কয়েক দফায় রাজাকারদের প্রতীকী ফাঁসি দেওয়া হয়।
দুটি বড় পর্দায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র দেখানো
হয়। খণ্ডে খণ্ডে বিভক্ত হয়ে রাতভর চলে প্রতিবাদী গান। আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা
নিশ্চিত করতে শাহবাগ মোড় দিয়ে যান চলাচল না করতে, পুলিশের পক্ষ থেকে
রাজধানীবাসীকে অনুরোধ জানায়। একই সাথে এই আন্দোলনে যাতে
কোনো নাশকতামূলক কিছু না ঘটে, তার ব্যবস্থা নেয় র্যাব ও পুলিশ।
২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ ৮ ফেব্রুয়ারি
[শুক্রবার] : চতুর্থ দিন
তৃতীয় দিনের বিরামহীন বিক্ষোভের
ধারাবাহিকতায় শাহবাগ মোড়কে উদ্বেলিত করে রাখে আন্দোলনের চতুর্থ দিন। এইদিন সরকারী ছুটি থাকায়,
শাহবাগে জনসংখ্যা অসম্ভব রকম বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে বিকেল থেকে সন্ধ্যার ভিতরে
দাঁড়ানোর মতো জায়গা অবশিষ্ট ছিল না। মূল প্রতিবাদ মঞ্চে শ্লোগান ও ভাষণের
পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ওই জনসমুদ্রের ভিতরেই নানা ধরনের অনুষ্ঠান করে। সব
মিলিয়ে আন্দোলন হয়ে উঠে এক উৎসব মুখর পরিবেশ। এদিন সন্ধ্যার পরে
ছায়ানট-সহ বহু
সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী গান, নাটক পরিবেশন করে। সমাবেশে যোগ দেন দেশের বরেণ্য
শিল্পী, সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
এছাড়া বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের
শাহবাগে সমবেত হয়। সমাবেশস্থলে সংহতি জানান তেল-গ্যাস, বিদ্যুত্-বন্দর
রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। আর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক
জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত, কর্মজীবী
নারীর নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া রফিক বেবীসহ আরও অনেকে এই সমাবেশে আসেন। বেলা
তিনটায় শাহবাগের জনজাগরণ মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসমাবেশ শুরু হয়। এই সমাবেশে
শপথবাক্য পাঠ করা হয়। জামাত-শিবিরের দ্বারা পরিচালিত দিগন্ত টেলিভিশন, আমার
দেশ, সংগ্রাম ইত্যাদির মতো প্রচার মাধ্যম, রেটিনার মতো কোচিং সেন্টার, ইসলামী
ব্যাংক, ইবনে-সিনা হাসপাতাল বয়কট
করার আহ্বান করা হয়।
মহাসমাবেশে বাম
ছাত্র সংগঠনের নেতারা, আবদুল কাদের মোল্লা ও মো. কামারুজ্জামানের জাতীয়
প্রেসক্লাবের সদস্যপদ বাতিলের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সমাজ, রাষ্ট্র ও
সংবাদমাধ্যমের সব ক্ষেত্র থেকে জামায়াত-শিবিরের সদস্যদের বর্জন করার মধ্য দিয়ে
নতুন আন্দোলনের আহ্বান জানান তাঁরা। এই মহাসমাবেশে উপস্থিত হয়েছিলেন ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, জাহাঙ্গীরনগর
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আনোয়ার হোসেন ও বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের
উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত।
এছাড়া সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি প্রবীর সাহা, ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি
হাসান তারেক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বক্তব্য রাখেন।
হাসান তারেকও তাঁর বক্তব্যে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে আবদুল কাদের মোল্লা ও
কামারুজ্জামানের সদস্যপদ বাতিলের আহ্বান জানান।
এই দিন ভারতীয় সঙ্গীত শিল্পী সুমন কবীর, শাহবাগের এই আন্দোলনের সাথে একাত্ম হয়ে একটি গান রচনা করেন। পরে তা তাঁর নিজের ওয়েবসাইটে তুলে দেন। এই গানটি মহাসমাবেশে বাজানো হয়। গানটির প্রথম দুটি চরণ―
সীমানা চিনি না আছি শাহবাগে
আমার গিটারও আছে,
বসন্ত আজ বন্ধুরা দেখো
গণদাবি হয়ে বাঁচে।
সমাবেশে শেষে
শাহবাগে সারারাত ধরে বিরামহীন বিক্ষোভ চলতে থাকে।
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের এই আন্দোলনের সূত্রে ইংল্যান্ডের
পূর্ব লন্ডনের আলতাব আলী পার্কের ভাষা শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে সমাবেশ হয়। এই
সমাবেশে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে এই সময় কিছু স্থানীয় জামায়াত সমর্থকেরা
বিক্ষোভকারীদের ঘেরাও করে। তাঁরা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বন্ধ রাখার দাবি জানায়। একইসঙ্গে
কারাগারে আটক জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগানও দেন তাঁরা।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আন্দোলনকারীদের ধিক্কার হজম করে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়।
২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ৯ ফেব্রুয়ারি [শনিবার] : পঞ্চম
দিন
গত
চারদিনের বিরামহীন বিক্ষোভ শাহবাগ মোড়কে এদিনও উদ্বেলিত
করে রাখে। এই প্রসঙ্গে দৈনিক প্রথম আলো
পত্রিকার০৯-০২-২০১৩ বৈদ্যুতিন
সংখ্যায় লেখা হয়- 'শাহবাগ চত্বর এখন আলোর
মোহনা। চারদিকে চার রাস্তা। মৎস্য ভবন,
এলিফেন্ট রোড, বাংলামোটর ও টিএসসির ঠিক
মাঝখানে প্রজন্ম চত্বরের মূল মঞ্চ। চার
রাস্তাজুড়ে জ্বলছে মোমবাতি। মোমবাতি দিয়ে
লেখা হয়েছে '৭১'। মোমবাতি জ্বালিয়ে আজ শুরু
হয়েছে শাহবাগের রাতের কর্মসূচি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার সামনে টাঙানো
হয়েছে প্রায় ১০০ মিটারের মতো লম্বা
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। '৭১'-কে যেন ধারণ
করে আছে ওই পতাকা। স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে
মুক্তিযুদ্ধের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতাকে।
পতাকার পাশেই চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নাটক
আর গানের মধ্য দিয়ে চলছে প্রতিবাদ।'
এই দিন কিছু কিছু মহল 'জয়বাংলা' শ্লোগানটিকে
আওয়ামী লীগ-এর
শ্লোগান হিসাবে আন্দোলনকে আওয়ামী লীগের নামে
উল্লেখ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু
আন্দোলনকারীরা দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে ব্যক্ত করেন
যে, 'জয়বাংলা' শ্লোগানটি স্বাধীনতা যুদ্ধে
অংশগ্রহণকারী মুক্তিকামী মানুষের। আওয়ামী লীগ
এই শ্লোগানটিকে দলীয়ভাবে ব্যবহার করলেও, এই
শ্লোগান দলীয় নয়।
এইদিন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক রফিক উল্লাহ খান এই আন্দোলনের সাথে যাঁর সংহতি প্রকাশ করেন। এছাড়া ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের দল শাহবাগের তারুণ্যের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরাও এর সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের একদল শিক্ষার্থী ক্লাস বর্জন করে শাহবাগের সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
শাহবাগ আন্দোলনের অগ্নিকন্যা লাকি আক্তার। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি শেষ বর্ষের ছাত্রী। তাঁর গ্রামের বাড়ির ফেনী। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক। ঢাকার মালেকা বানু আদর্শ বিদ্যানিকেতন থেকে মাধ্যমিক এবং মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জড়িয়ে পড়েন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সঙ্গে। শাহাবাগ আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে সক্রিয় লাকী আক্তার এবং তিনি অবিরাম শ্লোগান দিয়ে উপস্থিত আন্দোলনকারীদের উদ্বুদ্ধ করে রাখেন। তাঁর দিনভর একনাগাড়ে তাঁর স্লোগান দেওয়ার ক্ষমতা দেখে সবাই বিস্মিত এবং মুগ্ধ। |
২০১৩
খ্রিষ্টাব্দ ১০ ফেব্রুয়ারি [রবিবার] : ষষ্ঠ
দিন
বিরামহীন
এই আন্দোলনে অজ্ঞাত ব্যক্তির দ্বারা আন্দোলনের
তীব্রকণ্ঠ লাকি আক্তারের মাথায় আঘাত করে। বিকেলে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি
হন তিনি। আঘাত গুরুতর না হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
রাত ১২টার দিকে তিনি আবার আগের মতই মূল মঞ্চে শ্লোগান দেওয়া শুরু করেন।
ধারণা করা হয়েছিল, কর্মদিবসের কারণে লোকসমাগম কমে যাবে। কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে দেখা গেল, রাতের বিক্ষোভকারীদের জায়গায় নতুন করে মানুষের ঢল নেমেছে। সন্ধ্যার দিকে সমগ্র এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। সন্ধ্যায় মোমবাতি জ্বালিয়ে, বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, শ্লোগানে আন্দোলনকারীরা আরো সক্রীয় উঠে।
এই দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করা হচ্ছে বলে, আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ জানান। ব্লগার ও ফেসবুক অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্কের সদস্য মাহবুব রশিদ, এটাকে আংশিক বিজয় হিসাবে মন্তব্য করেন।
শাহবাগে তৈরি করা হয় প্রতীকী ফাঁসির মঞ্চ। সেখানে কালো কাপড়ে তৈরি করা ঝুলিয়ে রাখা হয় শূন্য ফাঁস। এই ফাঁসে প্রতীকী ফাঁসিও দেওয়া হয় বার বার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আন্দোলনকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে একাত্ম ঘোষণা করেন। সাংসদ ও গায়িকা মমতাজ রাতে শাহবাগে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। সংহতি প্রকাশ করেন বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের সদস্যরা।
পরবর্তী অধ্যায় :
১১
ফেব্রুয়ারি থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি পর্যান্ত
সূত্র :
ইন্টারনেট, বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকা এবং অনুশীলনের সদস্যদের সংগৃহীত তথ্য।