লক্ষ্মীপুর
বাংলাদেশ-এর চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা।

ভৌগোলিক অবস্থান
: ২°৩০'-২৩°১০' উত্তর ৯°৩৮'- °০১' পূর্ব। এ জেলার উত্তরে চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে ভোলা ও নোয়াখালী জেলা, পূর্বে নোয়াখালী জেলা, পশ্চিমে বরিশাল ও ভোলা জেলা এবং মেঘনা নদী।

ইতিহাস ও প্রশাসন: প্রাচীন কালে লক্ষ্মীপুর সমুদ্র গর্ভে ছিল। লক্ষ্মীপুর ছিল প্রাচীন ভুলুয়া নামক জেগে ওঠা দ্বীপের অংশ বিশেষ। চতুর্দশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ ভুলুয়া জয় করেন। এখানে তিনি পূর্বাঞ্চলীয় রাজধানী স্থাপন করেন এবং একজন শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। এই সময় মেঘনা উপকূলীয় সীমান্ত রক্ষার জন্য একটি শক্তিশালী নৌ-ঘাটি স্থাপন করা হয়। তখন প্রমত্তা মেঘনা নদী ফরাশগঞ্জ ও ভবানীগঞ্জের উপর দিয়ে পূর্ব-পশ্চিমে প্রবাহিত ছিল। উল্লেখ্য, ভুলুয়া পরগণায় ভুলুয়া নামক একটি গ্রাম ছিল, যা মাইজদী (নোয়াখালী) শহরের দক্ষিণ পশ্চিমের ১৫ মাইল এবং ভবানীগঞ্জের (লক্ষ্মীপুর) ৩ মাইল পূর্বে ছিল। বর্তমান শহর কসবা ও তেওয়ারীগঞ্জ গ্রামগুলোর কোন এক জায়গায় ভুলুয়া গ্রামের সীমানা ছিল।

সপ্তদশ শতাব্দিতে ভুলুয়া
মোগল সাম্রাজ্যের অধিকারে আসে এবং নৌঘাঁটি  এলাকা কশবা শহরের  পরিণত হয়। সপ্তদশ শতাব্দির মধ্য ভাগে সম্রাট শাহজাহানের (১৬২৭-১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) সময় বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খাঁন সন্দ্বীপ ও চট্টগ্রামে পর্তুগীজ জলদস্যু ও আরাকানদের বিরুদ্ধে অভিযানকালে ঢাকার 'লালবাগ দূর্গ
' স্থল বাহিনী পাঠিয়েছিলেন। এই বাহিনী চাঁদপুরে ডাকাতিয়া ও মেঘনা নদীর পথ ধরে শহর কসবার এসে নৌ-বাহিনীর সাথে মিলিত হয়েছিল। ত্রয়োদশ শতাব্দিতে লক্ষ্মীপুর ভুলুয়া রাজ্যের অধীন ছিল। ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি শাসনামলে লক্ষ্মীপুরে একটি সামরিক স্থাপনা ছিল।

ইষ্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে লক্ষ্মীপুর ছিল লবণ ও বস্ত্র শিল্পে সমৃদ্ধ। সাহাপুর কুঠি বাড়ি, জকসিন কুঠি বাড়ি ও রায়পুরের উত্তরে সাহেবগঞ্জ কুঠি বাড়ি লবণ ও বস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করত। পাশাপাশি নীল চাষে স্থানীয় জনগণকে বাধ্য করেছিল। মেঘনা নদী, ডাকাতিয়া নদী, রহমতখালী নদী, ভবানীগঞ্জ খাল, ভুলুয়া খাল ও জারিরদোনা খাল অধিকাংশ ব্যবসা বাণিজ্যে ভূমিকা রাখতো। রায়পুর, সোনাপুর, বড় খেরী, লক্ষ্মীপুর, দালাল বাজার, ভবানীগঞ্জ, তেওয়ারীগঞ্জ ও ফরাশগঞ্জ ছিল জেলার প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র। ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে লক্ষ্মীপুর মুন্সেফী আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পর মুন্সেফ ও উকিল শ্রেণী লক্ষ্মীপুরকে শহর হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালান। তাঁরা লক্ষ্মীপুরে একটি ইংলিশ স্কুল (লক্ষ্মীপুর মডেল হাই স্কুল), পাবলিক লাইব্রেরি ও টাউন হল, বাণী রঙ্গালয় মিলনায়তন ও বার লাইব্রেরি গড়ে তোলেন।

১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে লক্ষ্মীপুর নামে সর্বপ্রথম থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১লা সেপ্টেম্বর তৎকালীন ৫নং বাঞ্চানগর ইউনিয়ন লক্ষ্মীপুর পৌরসভায় রূপান্তরিত হয়। পরে এই পৌরসভাটির বিস্তৃতি ঘটে এবং রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা নিয়ে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে ১৯ জুলাই নোয়াখালী জেলার মহকুমায় পরিণত হয়। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৮ শে ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় লক্ষ্মীপুর জেলা। পরবর্তী সময়ে রামগতি উপজেলাকে ভাগ করে কমলনগর উপজেলা গঠিত হয়।

প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
লক্ষ্মীপুর জেলাটি ৫৮ টি ইউনিয়ন ও ৪ টি পৌরসভার সমন্বয়ে ৫ টি উপজেলা, ৪৭৪টি মৌজা ও ৫৪৭টি গ্রাম নিয়ে সর্বমোট ১,৫৩৪.৭ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বিস্তৃত।
 

সূত্র :
http://bn.banglapedia.org/
http://www.lakshmipur.gov.bd/