নাফাখুম
জলপ্রপাত
বাংলাদেশের
বান্দরবান
জেলার অন্তর্গত
থানচি উপজেলার রেমাক্রি ইউনিয়নে অবস্থিত
একটি প্রাকৃতিক জলপ্রপাত। মারমা ভাষায় খুম শব্দের অর্থ হলো জলপ্রপাত। তাই নাফাখুম
এর অর্থ দাঁড়ায় - নাফা'র জলপ্রপাত।
ভৌগোলিক অবস্থান
২১°৭২'০৩'' উত্তর দ্রাঘিমাংশ ৯২°৫৩'৩৭''
পূর্ব অক্ষাংশ। এটি বান্দরবান
সদর থেকে ৭৯ কিঃমিঃ দুরে অবস্থিত
থানচি উপজেলা।
থানচি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৩ কিলোমিটার দূরে তিন্দু ইউনিয়ন অবস্থিত। এই দুটি
স্থানের মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে
সাঙ্গু নদী। আবার তিন্দু ইউনিয়ন থেকে রেমক্রি
ইউনিয়নের দূরত্ব ৯
কিলোমিটার। এই রেমক্রিতে
রেমক্রি খাল উপনদী হিসেবে
সাঙ্গু নদীর সাথে মিলিত হয়ে,
থানচির দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এই কারণে,
থানচি থেকে নৌপথে রেমক্রি আসতে গেলে উজানে
আসতে হয়। আবার নাফাখুম জলপ্রপাত থেকে আসারেমক্রি
খাল নিচের দিকে প্রবাহিত হয়ে
রেমাক্রি জলপ্রপাতে পতিত হয়েছে। তাই রেমাক্রি জলপ্রপাত থেকে নাফাখুম জলপ্রপাতে যেতে
হলে রেমাক্রি খাল ধরে উজানে যেতে হয়।
বান্দরবান
থেকে থানচি যেতে সময় স্থানীয় মোটরযানে প্রায় ৩ ঘন্টা সময় লাগে। বর্ষার সময়
ইঞ্জিনবোটে
থানচি থেকে
সাঙ্গু নদী ধরে তিন্দু যেতে সময় লাগে প্রায় আড়াই ঘন্টা। আর তিন্দু থেকে
একই নদী ধরে রেমাক্রি যেতে লাগে আরও আড়াই ঘন্টা। শীতের সময় ইঞ্জিন বোট চলার মত নদীতে যথেষ্ট
গভীরতা থাকে না। তাই সে সময়ে ঠ্যালা নৌকায় যেতে হয়ে।
এই রেমাক্রি
থেকে শুরু হয়েছে রেমাক্রি খাল। চার ঘন্টা পাহাড়ি পথে হাঁটলে এই জলপ্রপাতে পৌঁছা
যায়। ছোটখাট পাহাড় না ডিঙিয়ে, রেমাক্রি খালের পার ধরে হেটে গেলে পথ দীর্ঘ হলেও
অপেক্ষাকৃত আরামে এই জলপ্রপাতে পৌঁছানো যায়।
জলপ্রপাতে নৌপথে যাওয়ার জন্য, সাঙ্গু নদীর পাড়ে অবস্থিত থানচি বাজার থেকে, নৌকা
দিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠতে হয়। যেহেতু নদীটি রেমাক্রি থেকে থানচির দিকে ধীরে ধীরে
ঢালু হয়ে এসেছে। তাই নদী পথটিতে প্রবল স্রোত থাকে। চলার পথে ১-২ ফুট এমন কি
কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুট পর্যন্ত ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে। নদীর দুপাশে গাছপালায় ঢাকা উচু
উচু পাহাড় দেখা যায়। এর কোনো কোনো পাহাড়ের চূড়া মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়ে গেছে।
পাহাড়ে মাঝে মাঝে দু'একটি স্থানীয় নৃগোষ্ঠীর ঘরবাড়ি দেখা যায়।
এই জলপ্রপাতের জল বেশ চওড়া সিঁড়ির মতো ধাপে ধাপে পতিত হয়েছে। বর্ষায় এই জলপ্রপাতে জলরাশি তীব্র স্রোতসহ নিচে নেমে গেছে। এই দৃশ্য নাফাখুম জলপ্রপাতের উজান
ভাটিতে কিছুদূর পরপরই দেখা যায়। তবে মূল নাফাখুম তিনটি থাপে প্রায় ৩০ ফুট নিচে পতিত
হয়েছে। দিনের বেলায় সূর্যের আলো রংধনু দেখা যায়।