ইছামতি
বাংলাদেশে এই নামে একাধিক নদী আছে। এই নদীগুলো হলো।

১. ইছামতি (পাবনা)
পদ্মা নদীর একটি শাখা নদী। পাবনা শহরের দক্ষিণ দিকের পদ্মা নদী থেকে এই শাখা নদীটি পাবনা জেলা শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পাবনা শহরের মধ্য দিয়ে একদন্ত, আতাইকুলা, ভুলবাড়িয়া, সাঁথিয়া, বেড়া প্রভৃতি বাজারের পাশ দিয়ে বেড়া উপজেলার ত্রিমোহনীতে হুরাসাগর নদীতে মিলিত হয়েছে।

পাবনার ইছামতি নদী সৃষ্টি সম্পর্কে একটি প্রবাদ আছে। প্রবাদটি হলো সপ্তদশ শতকের প্রথম দশকে ইসলাম খান চিশতি (১৬০৮-১৬১৩) বাংলার শাসনকর্তা থাকার সময় রাজমহল থেকে স্থলপথে ঢাকা যাতায়াতের সুবিধা ছিল না। এই সময় প্রাদেশিক শাসনকর্তা ঈশা খানকে একটি খাল কেটে পদ্মা ও যমুনা নদীর সংযোগ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন বাংলার শাসক ইসলাম খান। রাজাজ্ঞা প্রাপ্ত হয়ে পদ্মা হতে একটি খাল কেটে ব্রহ্মপুত্র নদের সাথে সংযোগ করে দেন। ঈশা খানের মতে, খাল খনন হয়েছিল বলে ইসামতি>ইছামতি নাম হয়েছে। কিন্তু প্রবাদের সাথে কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না।

ইছামতি নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৫ কিমি। প্রস্থ ৪০ মিটার। নদীর গভীরতা ৪ মিটার। আর নদী অববাহিকার আয়তন ৪৫০ বর্গ কিমি। নদীটি মৌসুমি প্রকৃতির। জানুয়ারি হতে অক্টোবর মাস পর্যন্ত এই নদীর মুখ রেগুলেটর দ্বারা বন্ধ রাখা হয়। নদীটিতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব নেই। এই নদীর তীরে পাবনা পৌরসভা, সাঁথিয়া পৌরসভা ও বেড়া পৌরসভা শহর গড়ে উঠেছে।

২. ইছামতি (নদীয়া)
পশ্চিমবাংলার  মাথাভাঙা নদী নদীয়া জেলার মাজদিয়া এলাকায় দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। এর পশ্চিম শাখার নাম চুর্ণী আর অন্য শাখাটির নাম ইছামতি। এই ইছামতি নদীটি পূর্ব দিকে অগ্রসর ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর এঁকেবেঁকে হয়েছে। নদীটি পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সদর জেলার রাধানগরের কাছে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এরপর ভারত-বাংলাদেশের সীমানা চিহ্নিত করে এই নদীটি দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দেবহাটা উপজেলা সদর স্পর্শ করে প্রবাহিত হয়েছে। এরপর নদীটি কালীগঞ্জ হয়ে শ্যামনগর উপজেলায় কালিন্দী-রায়মঙ্গল নদীতে পতিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে। শেষ প্রান্তে এসে ইছামতি নাব্যতা হারালেও কালীগঞ্জ থানার পশ্চিম বসন্তপুর থেকে রাধানগর পর্যন্ত ইছামতি সম্পূর্ণ নাব্য নদী।

৩. ইছামতি (সুন্দরবন)
ঈশ্বরীপুরের কাছে যমুনার একটি শাখা প্রথমে ইছামতি নামে পরিচিত। তারপর কয়েক কিমি পরিচিত ‘কদমতলী’ নদী নামে। কদমতলী সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মালঞ্চ নদী যেখানে সমুদ্রে পড়েছে, তার কাছেই পড়েছে এই নদীতে। ইছামতি নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য ৭৫ কিমি। প্রস্থ সাকরা অঞ্চলে প্রায় ৮০০ মিটার। এখানে নদীটির গভীরতা ৯.৫ মিটার। আর অববাহিকার আয়তন ২৮০ বর্গ কিমি।

মার্চ-এপ্রিল মাসের শুকনো মৌসুমে এই নদীতে পানির গভীরতা থাকে ৪ মিটার। তবে জুলাই-আগস্ট মাসে প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে পানির গভীরতা দাঁড়ায় ৯.৫ মিটারে। সমুদ্রের নিকটবর্তী বলে এই নদীতে জোয়ার-ভাটার প্রভাব রয়েছে। বর্ষার সময় এই নদীতে বন্যার সৃষ্টি করে। এই নদীর তীরবর্তী শহর হলো দেবহাটা ও টাউন শ্রীপুর।

ইছামতি-কালিন্দী-রায়মঙ্গলদল নদী একসূত্রে গাঁথা তিনটি নদী। এর ভিতরে ইছামতি-কালিন্দীর পূর্বতীর ভাঙ্গনপ্রবণ। বাংলাদেশ অংশে ভাঙে আর পশ্চিম সীমান্তে অনেক চর জেগে উঠেছে। এসব চর ভারতীয়রা দখল করে। দখলকৃত চরে ভারতীয় বসবাসকারী জনগণ ঘরবাড়িসহ নানান গাছপালা রোপণ করেছে। ভারতের এক জরিপে এ চরকে বশিরহাট মহাকুমার হাসনাবাদ থানার জালালনগর মৌজার অন্তর্গত হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাঁশবাড়িয়া এবং খানজিয়ার চরও ভারত নিজেদের দখলে রেখেছে।

ভারত নদীর পশ্চিম তীরবর্তী অংশ গ্রোয়েন নির্মাণ করায় পানি বাংলাদেশ অংশে আঘাত হানে। যার ফলে সাতীরার কালীগঞ্জ, শ্যামনগর, কলারোয়া, দেবহাটা ও সদর উপজেলার প্রায় ৫০টি মৌজা ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। ভাঙনের মুখে বাংলাদেশ রাইফেলসের শাকরা বর্ডার আউটপোস্ট এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দে সাড়ে পাঁচশ মিটার ডাঙার দিকে এসে পুনরায় ভবন নির্মিত হয়েছে।

৪. ইছামতি (চট্টগ্রাম)
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের পূর্ব-পাহাড়ি অঞ্চলের একটি নদী। নদীটি
রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালি উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের পাহাড়ি এলাকা হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। এরপর এই নদীর জলধারা চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার মরিয়মনগর ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে কর্ণফুলী নদীতে পতিত হয়েছে। রাজানগর, পারুয়া, হোসনাবাদ, রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়ন দিয়ে প্রবাহকালে বেশ কয়েকটি ছোট খাল ও ছড়া এই নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি প্রকৃতির এই নদীতে সারাবছর পানিপ্রবাহ থাকে না। তবে বর্ষাকালে নদীটিতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পায়

নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৭ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩২ মিটার। তবে পাহাড়ি অঞ্চলের কারণে এর গতি প্রকৃতি সর্পিলাকার।


    সূত্র :
http://www.banglapedia.org/
http://www.nodimatrik.com/index.php/2012-02-08-10-58-42/97-ichamati-river-pabna