চৌখণ্ডী স্তূপ |
গৌতম বুদ্ধ
বুদ্ধগয়া'য়
বোধিত্ব লাভের পর
ছয় বছর সেখানে অবস্থান করেন। এরপর তাঁর গুরু আরাল কালাম,
উদ্দক রামপুত্ত এবং তাঁকে ছেড়ে যাওয়া পাঁচজন শিষ্যকে জ্ঞান দানের উদ্যোগ নেন।
কিন্তু ইতিমধ্যে আরাল কালাম এবং
উদ্দক রামপুত্ত দেহত্যাগ করেছিলেন। তাই পাঁচ শিষ্যকে জ্ঞান দানের জন্য, বোধিবৃক্ষ
ত্যাগ করে সারনাথে আসেন। যে স্থানে প্রথম এই পাঁচজন শিষ্যের সাথে বুদ্ধের প্রথম
দেখা হয়, সে স্থানটি বর্তমানে বর্তমানে 'চৌখণ্ডী স্তূপ' পরিচিত। পরবর্তী সময়ে এই
স্থানে সম্রাট
অশোক এই
স্তূপটি নির্মাণ করেছিলেন।
১১৯৪ খ্রিষ্টাব্দ
মুহম্মদ
ঘোরী জয়চাঁদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধে জয়চাঁদ পরাজিত ও নিহত হন।
এরপর তিনি ঘোরী বারানসী আক্রমণ করে তা দখল করেন এবং নগর এবং এর আশপাশের অঞ্চল
বিধ্বস্ত করেন। এই সময়
মুহম্মদ
ঘোরীর
সৈন্যরা সারনাথের বৌদ্ধ ভিক্ষুদের হত্যা করে এবং সারনাথের সকল বৌদ্ধ স্থাপনা ধ্বংস
করে ফেলে। উল্লেখ্য, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সারনাথ ছিল
বৌদ্ধ শিক্ষা-দানের অন্যতম স্থান। এখানে ২১০ ফুট উঁচু বিহার, ৩৬টি মন্দির এবং
হীনযান বৌদ্ধদের প্রায় ১৫০০ স্তূপ ছিল। এই সময় চৌখণ্ডী স্তূপটিও ক্ষতিগ্রস্থ
হয়েছিল।
১৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে
সম্রাট আকবর, চৌখণ্ডী স্তূপটির সংস্কার করে এর উপর একটি বুরুজ নির্মাণ করেন।
বর্তমানে এই স্তূপটির উচ্চতা প্রায় ৯৮ ফুট।
ধামেখ স্তূপ |
গৌতম বুদ্ধ
আষাঢ় মাসের পূর্ণিমার দিন এই
পাঁচ সন্ন্যাসীকে দীক্ষা দেন। এই ঘটনাকে বলা হয় 'ধর্মচক্র প্রবর্তন'। এই কারণে
সারনাথ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র তীর্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই পাঁচ
সন্ন্যাসীর দীক্ষাস্থানটিতে নির্মিত হয়েছিল ধামেখ স্তূপ।
এই
স্তূপটিও সম্রাট
অশোক
নির্মাণ করেছিলেন। এর সংস্কৃত
নাম 'ধর্মচক্র স্তূপ'। পালিভাষায় এরা নাম ধম্মখ বা বর্তমানকালে ধামেখ স্তূপ নামে
পরিচিত। এটিকে পঞ্চম শতকে গুপ্তযুগে বিশাল আকার দেওয়া হয়।
এই ধামেখস্তূপের উচ্চতা
১৫০ ফুট। এর নিচের অংশ পাথরের তৈরি আর উপরের অংশ ইটের তৈরি। অষ্টমার্গের অনুসরণে
আটকোণা স্তূপের নিচের তলটি ৯৩ ফুট ব্যাসার্ধের। এর মধ্যাংশ সরু হয়ে গম্বুজের মতো
উপরে উঠেছে। মধ্যাংশের ব্যাস ৬০ ফুট। এরপর রয়েছে ৪০ ফুটের বিশাল স্তূপ।
এর নচের অংশে আটদিকে আটটি কুলুঙ্গি করা আছে এবং পাথরে উৎকীর্ণ নানা জ্যামিতিক
বিন্যাস , স্বস্তিক, পুষ্প-পত্র, পক্ষী ও মানুষিক নক্শা দেখতে পাওয়া যায়।
ধর্মরাজিকা স্তূপ |
ধামেখ স্তূপের
দক্ষিণে রয়েছে ধর্মরাজিকা স্তূপ। সম্রাট
অশোক নির্মিত
এই স্তূপের চক্রাকার ভিত্তিভূমিটিই অবশিষ্ট রয়েছে।
মুহম্মদ
ঘোরীর
আক্রমণের পর ধর্মরাজিকা স্তূপটির যতোটা অবশেষ বাকি ছিলো, অষ্টাদশ শতকে কাশীনরেশ চেত
সিং-এর দিওয়ান জগত সিং দোকানপাট নির্মাণের জন্য তার ইঁটগুলি ভেঙে নিয়ে যায়। এই
স্তূপে একটি সবুজ পাথরের আধারের মধ্যে বুদ্ধের দেহাবশেষ ছিলো। পরে বুদ্ধের আত্মার
শান্তি কামনায় তা গঙ্গায় বিসর্জন দেয়। শূন্য আধারটি এই মূহুর্তে কলকাতা জাদুঘরে
রক্ষিত আছে।
বুদ্ধ সারনাথের মৃগদাব ইসিপত্তনে 'ধর্মচক্র প্রবর্তন'- করেন
এবং সেখানে বর্ষাযাপন করেন। এই সময় তিনি ৬০ জন শিষ্য তৈরি করতে সক্ষম
হন। এরপর তিনি স্থানীয় সাধারণ
গৃহীদের ভিতর ধর্ম প্রচার করা শুরু করেন। এই সময় তিনি একটি সংঘ
প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই সঙ্ঘের জন্য যে আইন তৈরি করা হয়েছিল, তাকে বলা হয় উপসম্পদা।
শুরুর দিকে তিনি শুধু পুরুষদের দীক্ষা দিতেন। পরে তাঁর প্রিয় শিষ্য আনন্দের অনুরোধে
নারীদের দীক্ষা দেওয়া শুরু করেন। কথিত আছে প্রথম ভিক্ষুণী হয়েছিলেন, তাঁর গৌতমের
বিমাতা গৌতমী।
এরপর তিনি গধের রাজা ছিলেন বিম্বিসার কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে সারনাথ ত্যাগ করে
উরুবিল্ব হয়ে মগধের রাজধানী রাজগিরীতে যান।
সূত্র:
পৃথিবীর ইতিহাস (সপ্তম খণ্ড)। দুর্গাদাস লাহিড়ী।
বৌদ্ধসভ্যতা ও বৌদ্ধকীর্তি দেশে দেশে। জ্যোতিবিকাশ বড়ুয়া