(১৯২৪-১৯৩০) খ্রিষ্টাব্দ
একটি বিংশ শতাব্দীর একটি নাট্যদল
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের শেষের দিকে তিনি
মনোমোহন
থিয়েটার
বন্ধ হয়ে যায়। এই সময়
শিশিরকুমার ভাদুরী মাসিক তিন হাজার টাকায়
মনোমোহন
থিয়েটার
ভাড়া নিয়ে 'নাট্যমন্দির' প্রতিষ্ঠা করেন। এর মধ্য দিয়ে
মনোমোহন
থিয়েটারের প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটেছিল।
১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে ৬ আগস্ট (বুধবার ২১ শ্রাবণ ১৩৩১) নাট্যমন্দির
উদ্বোধন হয়। এই সময় তিনি
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের সীতা নাটকের স্বত্ব হারিয়েছিলেন। এই
কারণে তিনি যোগেশ চৌধুরীরকে দিয়ে সীতা নাটক
নতুন করে লেখান। ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে ৬ আগস্ট এই নাটকটি
দিয়েই নাট্যমন্দির উদ্বোধন হয়েছিল। মঞ্চায়িত যোগেশ
চৌধুরীর সীতা নাটকে শিশিরকুমারের অভিনয়ে অভিভূত হয়ে রসরাজ অমৃতলাল বসু তাঁকে
থিয়েটারের নবযুগের প্রবর্তক বলে ঘোষণা করেন। এরপর এই বছরের ১০
ডিসেম্বর মঞ্চস্থ হয় দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের 'পাষাণী'।
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে মঞ্চস্থ হয়েছিল উল্লেখ্যযোগ্য দুটি নাটক।
নাটক দুটি হলো-
- জনা [রচয়িতা:
গিরিশচন্দ্র ঘোষ। ৩ জুন ১৯২৫]
- পুণ্ডরীক [রচয়িতা:
শ্রীশ বসু। ১৩ আগষ্ট ১৯২৫]
১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে
শিশিরকুমার ভাদুরী
বিদ্যাসাগর কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে মঞ্চস্থ করেন 'রঘুবীর'। উল্লেখ্য
এই সময় নাটকের সকল নারী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ছাত্ররা। এই
বছরের 'ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট' সড়ক নির্মাণের জন্য মনোমোহন থিয়েটারের বাড়ি ভেঙে ফেলা
হয়। ফলে নাট্যমন্দিরের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে
শিশিরকুমার ভাদুরী ম্যাডোনা থিয়েটারসের
কর্ণওয়ালিস থিয়েটার-
তিন বছরের জন্য লিজ নেন। এই সময় তিনি কর্নাওয়ালিস থিয়েটার-এর পরিবর্তে নাট্যমন্দির নামে
অভিনয় শুরু করেন। তখন এর নাম রাখা হয়
হয় নাট্যমন্দির লিমিটেড কোম্পানি। ১৯২৬
খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিসর্জন নাটক
দিয়ে এই নাট্যদলের যাত্রা শুরু হয়। এই দল ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সক্রিয় ছিল।
এরপর আর্থিক অনটনে,
শিশিরকুমার ম্যাডোনা কোম্পানির কাছে মালিকানা হস্তান্তরে করেন। এই তিনি বছরে নাট্যমন্দির লিমিটেড যে সকল
নাটক মঞ্চস্থ করেছিল, তা হলো-
- বিসর্জন (রবীন্দ্রনাথ,
২৬ জুন, ১৯২৬)
- সীতা (যোগেশ চৌধুরী, ? ১৯২৬)
- পাণ্ডবের
অজ্ঞাতবাস (গিরিশচন্দ্র, ১
জুলাই, ১৯২৬)
- নরনারায়ণ (ক্ষীরোদপ্রসাদ,
১ ডিসেম্বর, ১৯২৬)
- প্রফুল্ল
(গিরিশচন্দ্র, জুন, ১৯২৭)
- সধবার একাদশী (দীনবন্ধু
মিত্র, জুলাই, ১৯২৭)
- যোড়শী (শরৎচন্দ্রের
দেনা-পাওনা উপন্যাসের নাট্যরূপ, ৬ আগস্ট, ১৯২৭)
- শেষরক্ষা (রবীন্দ্রনাথ,
৭ সেপ্টেম্বর, ১৯২৭)।
- সাজাহান (দ্বিজেন্দ্রলাল, নভেম্বর,
১৯২৭)
- বলিদান (গিরিশচন্দ্র,
২৫ জানুয়ারি, ১৯২৮)
- বিল্বমঙ্গল ঠাকুর
(গিরিশচন্দ্র, ২৯ মে,
১৯২৮)
- হাসনেহানা (বরদাপ্রসন্ন
দাশগুপ্ত, ২৫ আগস্ট, ১৯২৮),
- দিগ্বিজয়ী
(যোগেশ চৌধুরী, ১৪ ডিসেম্বর, ১৯২৮)
- বিবাহ-বিভ্রাট (অমৃতলাল
বসু, ৩ মে, ১৯২৯)
- বুদ্ধদেব (গিরিশচন্দ্র,
৮ জুন, ১৯২৯)
- রমা (শরৎচন্দ্রের পঙ্লীসমাজ-এর
নাট্যরাপ, আগস্ট, ১৯২৯)
- শঙ্খধ্বনি (The
Bell নাটকের রূপান্তর : ভূপেন্দ্রনাথ
বন্দ্যোপাধ্যায়, ২ নভেম্বর ১৯২৯)
- তপতী (রবীন্দ্রনাথ,
ডিসেম্বর, ১৯২৯)
১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসে কর্ণওয়ালিস থিয়েটারের 'ভাড়া-চুক্তি'
শেষ হয়ে যায়। এই মঞ্চে ২৫শে মার্চ শেষ অভিনয় হয়েছিল 'সীতা' ও
'ষোড়শী' (২৫
মার্চ ১৯৩০)।
এরপর নাট্যমন্দির চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমেরিকা থেকে শিশির কুমার
নাট্য-আমন্ত্রণ পান। আমেরিকা থেকে ফিরে, শিশিরকুমার নাট্যনিকেতন, রঙমহল, স্টার,
আর্ট থিয়েটারর কাজ করেন। ১৯৩৩ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে স্টার থিয়েটার বন্ধ হয়ে
গেলে তিনি স্টার থিয়েটার ভাড়া নিয়ে 'নবনাট্য-মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন।
সূত্র :
- বঙ্গীয় নাট্যশঠালার ইতিহাস। ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বঙ্গীয়
সাহিত্য পরিষদ মন্দির, ১৩৪৬
- বাংলা থিয়েটারের ইতিহাস। দর্শন চৌধুরী। পুস্তক বিপনী কলকাতা ১৯৯৫।
- বাংলা থিয়েটারের পূর্বাপর। নৃপেন্দ্র সাহা। তূণ প্রকাশ। ১৯৯৯।
- বাংলা নাটকের ইতিবৃ্ত্ত। হেমেন্দ্র নাথ দাশগুপ্ত
- বাংলা নাটকের ইতিহাস। অজিতকুমার
ঘোষ
- বাংলা নাট্য সাহিত্যের ইতিহাস। আশুতোষ ভট্টাচার্য
- বাংলা নাট্যসাহিত্যের পূর্ব্ব-কথা। শ্রীশরচ্চন্দ্র ঘোষাল। নারায়ণ
[পৌষ ১৩২১ বঙ্গাব্দ]
- বাংলা নাটকের বিবর্তন। সুরেশচন্দ্র
মৈত্র। মুক্তধারা। ১৯৭১