শ্যামবাজার থিয়েটার
খ্রিষ্টীয় ঊনবিংশ শতাব্দীর একটি সখের নাট্যমঞ্চ।

১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে নবীনচন্দ্র বসু তাঁর শ্যামবাজারে নিজের বাড়িতে এই নাট্যশালা তৈরি করেছিলেন। ধারণা করা হয়-  প্রসন্নকুমার চট্ট্যোপাধ্যায়ের হিন্দু থিয়েটার দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নবীনচন্দ্র এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, হিন্দু থিয়েটার-এর নাটকের ভাষা ছিল ইংরেজি। নবীনবসু তাঁর থিয়েটারের নাটকগুলোর ভাষা ছিল বাংলা। এই মঞ্চের প্রথম বাংলা নাটক উপস্থাপন করা হয়েছিল।

এই মঞ্চের প্রথম নাটক ছিল- বিদ্যাসুন্দর। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ৬ অক্টোবরের রাত্রি দ্বিতীয় প্রহর শেষে, ৭ অক্টোবর  রাত্রি প্রথম প্রহরে। অর্থাৎ রাত ১২টায় শেষ হয়ে হয়েছিল ৭ অক্টোবর সকাল ৬টায়। হিন্দু থিয়েটারের নাটকে স্ত্রী চরিত্র রূপায়ণ করেছিলেন অভিনেতারা। কিন্তু বিদ্যাসুন্দরে স্ত্রীচরিত্রগুলো অভিনয় করেছিলেন অভিনেত্রীরা।

পত্র-পত্রিকায় এই নাটক সম্পর্কে ভালো-মন্দ দুইই আলোচিত হয়েছিল। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে অক্টোবর 'হিন্দু পাইয়োনিয়ার' পাক্ষিক পত্র-সহ আরও কিছু পত্রিকায় থেকে এই নাটকটির আলোচনা পাওয়া যায়। এছাড়া অন্যন্য যেসকল পত্রিকায় এই নাটক সম্পর্কে জানা যায়, তা  হলো- 'ক্যালকাটা কুরিয়ার', ইংলিশনম্যান্ এন্ড মিলিটারি ক্রিনকল', 'এশিয়াটিক জার্নাল' ইত্যাদি থেকে।

সমকালীন পত্রপত্রিকা ও গ্রন্থ-উৎস থেকে জানা যায়-  সে সময়ের বিদ্যাসুন্দর সখের নাট্যদলগুলোর কাছে জনপ্রিয় পালা ছিল। নবীনচন্দ্র এমনি একটি দলের অভিনীত বিদ্যাসুন্দর দেখেছিলেন রামতনু মগের বাড়িতে। এই নাটক দেখে তিনি নিজের বাড়িতে নিজের মতো করে বিদ্যাসুন্দর মঞ্চস্থ করার উদ্যোগ নেন। তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করে বিলেত থেকে যন্ত্রপাতি এনে মঞ্চে আলোক-নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেছিলেন। পাইওনিয়র পত্রিকার '২২ অক্টোবর ১৮৩৫' সংখ্যায় মঞ্চ, দৃশ্যপট, আলোকসম্পাত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছিল। সেই আমলে তিনি আলোর কৌশলে মঞ্চে ঝড়-বৃষ্টিকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। এই পত্রিকা থেকে দৃশ্যপটের ত্রুটির কথাও জানা যায়। যন্ত্রবাদনে ব্যবহার করা হয়েছিল- পাখোয়াজ, বেহালা, সারিন্দা, সারেঙ্গী, সেতার ইত্যাদি।

নাটকের সুন্দরের ভূমিকায় ছিলেন শ্যামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিদ্যার ভূমিকায় ছিলন রাধামণি। রাণী ও মালিনী চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন জয়দুর্গা। নবীন বসু নিজে কালুয়া এবং রাজা বৈদ্যনাথ রায়ের ভুলুয়ার ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন।

এই নাট্যশালায় বছরে চার-পাঁচটি নাটক মঞ্চস্থ হতো।
১৮৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই ডিসেম্বর '
The National Paper' " পত্রিকা থেকে জানা যায়, নবীনচন্দ্রের পরে এই নাট্যশালটি পরিচালনা করেছিলেন নগেন্দ্রনাথ ঠাকুর। এরপর এই নাট্যশালাটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। তবে এই বিলুপ্তির তারিখ ও কারণ সম্পর্কে বিশেষভাবে জানা যায় নি।
সূত্র: