মূলত যে কোনো একটি স্বরের
কম্পাঙ্কের
সঙ্গীতোপযোগী
ধ্বনি থেকে,
উক্ত ধ্বনির দ্বিগুণ বা অর্ধগুণিতক কম্পাঙ্কের ধ্বনির মধ্যবর্তী অংশে যে সাতটি
মৌলিক স্বর পাওয়া যায়,
তাদের সমষ্টিই হলো অক্টেভ।
সাতটি মৌলিক বা শুদ্ধ স্বরের সমাহার বলেই,
ভারতীয় সঙ্গীত পদ্ধতিতে–
একে সপ্তক বলা হয়।
কিন্তু পাশ্চাত্য সঙ্গীত পদ্ধতিতে সাতটি মৌলিক স্বরের সাথে আদি স্বরের দ্বিগুণিতক
বা অর্ধ-গুণিতক স্বরকেও রাখা হয়,
ফলে স্বর সংখ্যা দাঁড়ায় আটটি।
এই কারণে,
পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে–
স্বরাষ্টক বা অক্টেভ বলা হয়।
আবার সাতটি স্বরের মধ্যে
'সা'
ও
'পা'
ব্যতীত প্রতিটি স্বরের বিকৃত স্বর রয়েছে।
এক সপ্তকে এই বিকৃত স্বরের সংখ্যা মোট ৫টি।
সব মিলিয়ে এক সপ্তকে স্বরের সংখ্যা,
দাঁড়ায় ৭ + ৫ = ১২টি।
ভারতীয় মতে শ্রুতির প্রয়োগে এক সপ্তকে স্বর-সংখ্যা ২২টি হতে পারে।
ধরা যাক,
২০০ কম্পাঙ্ক বিশিষ্ট একটি
সঙ্গীতোপযোগী
ধ্বনি নির্বাচন করা গেল।
এই
ধ্বনিটির নাম যদি 'স'
হয়, তাহলে
স-এর দ্বিগুণিতক ধ্বনিটির কম্পাঙ্ক হবে ২০০´২=৪০০।
এক্ষেত্রে ভারতীয় আকারমাত্রিক স্বরলিপিতে উক্ত ৪০০ কম্পাঙ্কের ধ্বনিটি লিখা হয়- র্স।
একই ভাবে ২০০ কম্পাঙ্কের অর্ধ-গুণিতক কম্পাঙ্ক হবে ২০০´১/২=১০০
হবে।
এক্ষেত্রে ভারতীয় আকারমাত্রিক স্বরলিপিতে ১০০ কম্পাঙ্কের ধ্বনিটির নাম স্।
স্
স র্স
১০০ কম্পাঙ্ক ২০০
কম্পাঙ্ক ৪০০ কম্পাঙ্ক
এখানে 'স্ ' থেকে 'স' পর্যন্ত শব্দ-সীমার মধ্যবর্তী যতগুলি সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি
পাওয়া যায়,
তার মধ্য থেকে সাতটি ধ্বনিকে মৌলিক সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি হিসাবে নির্বাচন করা হয়।
একইভাবে 'স' থেকে 'র্স' পর্যন্ত অনুরূপ অপর একটি মৌলিক সঙ্গীতোপযোগী ধ্বনি
নির্বাচন করা যায়।
এখানে 'স্'
থেকে 'স' পর্যন্ত একটি অক্টেভ বা সপ্তক হবে,
বা স থেকে র্স
পর্যন্ত অপর একটি অক্টেভ বা সপ্তক হবে।
সঙ্গীত শাস্ত্রে ধ্বনির উচ্চতা বা সামান্যতা অনুসারে অক্টেভ বা সপ্তককে বিভক্ত করা
হয়।
এ
ক্ষেত্রে অল্প কম্পাঙ্কের ধ্বনিকে মোটা স্বর আর বেশি কম্পাঙ্কের স্বরকে চিকন স্বর
হিসাবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
এই রীতিতে ব্যাবহারিক প্রয়োজনের উপর নির্ভর করে,
অক্টেভ বা সপ্তককে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
কণ্ঠ সঙ্গীতের ক্ষেত্রে এই ভাগগুলি হলো-
১.
উদারা (Lower
Octave)
: কণ্ঠজাত, উচ্চারিত বা ধ্বনিত স্বাভাবিক সপ্তকের নিচের সপ্তককে উদারা (মন্দ্র) সপ্তক বলে।
২.
মুদারা (Middle
Octave)
কণ্ঠজাত বা উচ্চারিত
বা ধ্বনিত
স্বাভাবিক সপ্তককে মুদারা (মধ্য) সপ্তক বলে।
৩.
তারা (Higher
Octave)
কণ্ঠজাত বা উচ্চারিত
বা ধ্বনিত
স্বাভাবিক সপ্তকের চয়ে উঁচু সপ্তককে তারা সপ্তক বলে।
যন্ত্রসঙ্গীতে নিচের দিকে এবং উপরের দিকে আরো কয়েকটি অক্টেভ পাওয়া যায়।
যেমন―
অতি উদারা :
উদারার চেয়ে নীচু সপ্তক।
অতি তারা
: তারার চেয়ে উঁচু সপ্তক।
ইত্যাদি।
উল্লেখ্য, পাশ্চাত্য মতে স্বরসমূহের উৎস ধরা হয়া হয়েছে শব্দের কম্পাঙ্ককে। পক্ষান্তরে ভারতীয় পদ্ধতিতে স্বরের উৎস ধরা হয়েছে শ্রুতিকে। মোট ২২টি শ্রুতি নির্ভর এই সপ্তকের অন্তর্গত স্বরসমূহের প্রকৃতি, আর পাশ্চাত্য স্বরের প্রকৃতি সম্পূর্ণ এক না হলেও অত্যন্ত কাছাকাছি। বর্তমানে পাশ্চাত্য সঙ্গীতযন্ত্রের প্রভাবে, ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত ব্যতীত প্রায় সর্বত্র পাশ্চাত্য সঙ্গীতের স্বর-কম্পাঙ্ককেই আদর্শ হিসাবে মানা হচ্ছে।