ধ্রুবা গান
ভারতীয় রাগসঙ্গীতের নিবদ্ধ প্রবন্ধগানের একটি ধারা। এই গানগুলো পরিবেশিত  হতো- নাটকের সাথে।

খ্রিষ্টীয় ২০০ অব্দের দিকে নিবদ্ধ প্রবন্ধ গানের ক্রমবিবর্তনের ধারায় সৃষ্ট হয়েছিল সালগ সুড় প্রবন্ধ। সালগসূড় প্রবন্ধ গানের একটি ধারা হলো ধ্রুব গান। শাস্ত্রীয়ভাবে এই গানের ব্যাপ্তী ছিল বিশাল। নাটকের প্রয়োজন যখন গানের ব্যবহার শুরু হয়েছিল, তখন নাটকের স্বল্প পরিসরে ধ্রুব গান ব্যবহার করা যেতো না। তাই এর ক্ষুদ্র সংস্করণ হিসেবে নাটকে ধ্রুবা গান ব্যবহৃত হতো। নাটকের বাইরে এই গানের পরিবেশিত হতো না। এর ভাষা ছিল সংস্কৃত এবং প্রাকৃত।

ভরতের নাট্যশাস্ত্রে ৩২শ অধ্যায় থেকে জানা যায়- ধ্রুবাগান গান ছিল ৬৪ প্রকার। জাতি, স্থান, প্রমাণ, প্রকার ইত্যাদি নানাভেদে এদের ভিন্ন ভিন্ন নাম ছিল।

সাধারণভাবে ঋক্, পাণিকা, গাথা এবং  সপ্তবিধ গানের (মদ্রক, উল্লপ্যক, অপরান্তক, প্রকরী, ওবেণক, রোবোন্দক ও উত্তর)  শ্রেণিগত হলো নাম ধ্রুবা। এই গানের ছিল নানা অঙ্গ। যেমন-   মুখ, প্রতিমুখ, বৈহায়সক, স্থিত, প্রবৃত্ত, বজ্র, সন্ধি, সংহরণ, প্রস্তার, উপবর্ত, মাষঘাত, চতুরস্র, উপপাত, প্রবেণী, শীর্ষক, সংপিষ্টক, অস্তাহরণ ও মহাজনিক।

ধ্রুবা গান পাঁচটি শ্রেণিতে বিভাজিত করা হয়েছে। এগুলো হলো- প্রাবেশিকী, নৈষ্ক্রামিকী, প্রাসাদিকী, আক্ষেপিকী ও অন্তরা।

এছাড়া নাটকের বিভিন্ন পরিবেশের উপর ভিত্তি করে- ধ্রুবা নানা নামে চিহ্নিত হয়েছে। যেমন- স্থিতা, দ্রুতা, শীর্ষক, উদ্ধতা, অনুবদ্ধ, অক্ষর, দ্রুত, বিলম্বিতা, অপকৃষ্টা, অড্ডিতা, খঞ্জক এব নবকূট।

নাট্যশাস্ত্র মতে- পদ, বর্ণ, অলংকার, লয় জাতি, ও পাণি পরস্পরের সাথে  ধ্রুবভাবে (স্থায়ীভাবে) যুক্ত থাকে। এই কারণে এই গানের নাম ধ্রুবা। ধ্রবাগানের এই উপাদানগুলোর রয়েছে সুনির্দিষ্ট পরিচয়। যেমন-

ধ্রুবাগানের বিবর্তনের ধারায় তুক বিন্যাস
আদি প্রবন্ধগানের ধারায় তুক বিভাজনের মূলবিন্যাস ছিল-

সালগসূড় প্রবন্ধ গানের একটি ধারায়, বাহুল্য বিবেচনা করে উদ্‌‌গ্রাহ ও মেলাপক অংশ বর্জন করে ধ্রব নামক তুকটিকে গানের শুরুতে রাখা হয়েছিল। মূলত ধ্রুব ও আভোগ নিয়ে ধ্রুবগানের সূচনা হয়েছিল। কালক্রমে ধ্রুব ও অভোগের মাঝখানে 'অন্তর' তুকটি যুক্ত হয়েছিল। এই সময় আভোগ দুটি অংশে পরিবেশন করা হতো। কালক্রমে আভোগের প্রথম অংশকে পৃথক তুক হিসবে পরিবেশন করা শুরু হয়। তখন তার নাম দেওয়া হয়েছিল সঞ্চারী। মতঙ্গ, পার্শ্বদেব এবং শার্ঙ্গদেব তাঁদের রচিত গ্রন্থাদিতে ধ্রুবগানের বর্ণনা পাওয়া যায়।

ধ্রুবগান বৃহৎ পরিসরে পরিবেশিত হতো। ভরতের নাট্যশাস্ত্রে- ক্ষুদ্র পরিসরে নাটকের জন্য রচিত ধ্রবগানকে বলা হয়েছে ধ্রুবা গান। বিভিন্ন গ্রন্থাদি অনুসরণে জানা যায়- সুলতান আলাউদ্দীনের রাজত্বকালে (১২৯৬-১৩১৬ খ্রিষ্টাব্দ) সুলতানের রাজদরবারে গোপাল নায়ক, ওই বৈজু বাওরা সালগসূড়ের ধ্রুবা গান পরিবেশন করতেন।