জাতিগান
অন্যনাম: জাতিরাগ
প্রাচীন ভারতের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একটি প্রকরণ বিশেষ।

ধারণা করা হয়, বৈদিক গানের শেষের দিকে বা মহাকাব্যিক যুগের (৬০০-৩০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) সূচনা হয়েছিল। ভারতবর্ষের প্রথম মহাকাব্য রামায়ণে প্রত্যক্ষভাবে জাতি গানের উল্লেখ নেই। বাল্মীকি রামের দুই পুত্র কুশী ও লবকে রাম-সীতার চরিত্রসহ রাবণ-বধ নামক কাব্য শেখান। কুশীলব এই কাব্য পাঠ করা ও গান হিসেবে পরিবেশন করার প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে রামায়ণের চতুর্থ সর্গে (৭-১৩ শ্লোক) বলা হয়েছে- 'এই পাঠ ও গান মধুর, দ্রুত, মধ্য ও বিলম্বিতরূপে ত্রিবিধ-প্রমাণ-সংযুক্ত ষড়্‌জ ও মধ্যম প্রভৃতি সপ্তস্বর-সংযুক্ত, বীণালয় বিশুদ্ধ এবং শৃঙ্গার, করুণ, হাস্য, রৌদ্র, ভয়ানক ও বীর প্রভৃতি সমুদয়-রসসংযুক্ত। স্থান ও মূর্চ্ছনাভিজ্ঞ, গান্ধর্ব্ববিদ্যাভিজ্ঞ কুশী ও লব তাহা গাহিতে লাগিলেন।'

মূলত রামায়ণের যুগে জাতি গান প্রারম্ভিক দশায় ছিল। এই সময়ের গানে সপ্তসুর, গ্রাম, মূর্চ্ছনার ব্যবহার ছিল। কিন্তু শাস্ত্রীয় বিধি অনুসারে নাট্যশাস্ত্রে জাতিগানের যে পরিচয় পাওয়া যায়, সেকালের জাতি গান তেমনটি ছিল না। তবে নাট্যশাস্ত্রে বর্ণিত রসসমূহের গান্ধর্বগানে প্রয়োগ করা হতো। এই বিচারে বলা যায়- নাট্যশাস্ত্রে বর্ণিত রসসমূহের পরিচয় রামায়ণের সঙ্গীতজ্ঞরা জানতেন। মূলত
রামের দুই পুত্র কুশী ও লব ছিলেন চারণ গায়ক। আর্য-অনার্য গানের প্রভাব তাদের গানে ছিল বলে অনুমান করা যায়। 

খ্রিষ্টীয় প্রথম শতাব্দীতে নারদ 'শিক্ষা' নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেন। নারদীয় শিক্ষায় পাওয়া যায় ৭টি গ্রামরাগের কথা। এগুলো হলো- ষাড়্‌জ, পঞ্চম, কৈশিক, কৈশিকমধ্যম, মধ্যম, সাধারিত ও ষাড়ব। উল্লেখ্য নারদীয় শিক্ষায় গ্রামরাগের কথা থাকলেও জাতিরাগের উল্লেখ নেই। ধারণা করা হয়, গ্রামরাগ থেকে উৎপন্ন হয়েছিল শাস্ত্রীয় বিধির জাতিগান।

খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর দিকে ভরতের নাট্যশাস্ত্রে  আমলে জাতিগানের প্রচলন ছিল। নাটকের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের গীতের প্রয়োগ ছিল। এসকল গানের জন্য ছিল নির্ধরিত গ্রামরাগ, তাল, রস ইত্যাদি। এসকল বিচারে গানের জাত নির্ণয়ের সূত্রে- জাতিগান নামক পারিভাষিক শব্দের উৎপত্তি হয়েছিল।

ভরতের জাতিগানে নারদীয় শিক্ষার প্রতিটি জাতিগানের সুরের ভিত্তি ছিল গ্রামরাগ। তাই জাতিগানের নামকরণ করা হয়েছিল গ্রামরাগের নামানুসারে। ভারতের তালিকার পূর্ববর্তী ৪টি গ্রামরাগের
ষাড়্‌জ, পঞ্চম, কৈশিক, মধ্যম জাতিগানের নাম পাওয়া যায়।  নারদের তালিকার তিনটি গ্রামারাগের উল্লেখ নেই। এগুলো হলো- কৈশিকমধ্যম, সাধারিত ও ষাড়ব। এর ভিতরে সাধারিত গ্রামরাগকে স্বতন্ত্র গ্রামরাগ হিসেবে গ্রহণ না করে- জাতিগানের একটি বিধি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বরের সাধারণ প্রয়োগে জাতিগানের সাধারণত্ব নির্ধারিত হতো। এক্ষেত্রে বিশেষ কয়েকটি বিধি অনুসৃত হতো। যেমন-

কৈশিকমধ্যম ও ষাড়ব গ্রামরাগ ভরতের পরবর্তী সময়ে গ্রামরাগ তালিকায় আবার যুক্ত হয়েছিল গীতের অন্তর্গত হয়ে। যেমন- কৈশিকমধ্যম এবং ষাড়ব ছিল চোক্ষগীতির অন্তর্গত রাগ। এদের নাম ছিল কৈশিকমধ্যম:

গ্রামরাগের ব্যবহারের সূত্রে-  এই জাতি গানের জাত নির্ধারণের জন্য, প্রতিটি জাতিগানের ব্যবহৃত গ্রামরাগের দশ লক্ষণই জাতি গানের দশ লক্ষণ হয়ে উঠেছিল।

ভরতের পর ভরতের পুত্র দত্তিল-এর দত্তিলম্ গ্রন্থে জাতিগানের কথা পাওয়া যায়। তবে তিনি ষড়্‌জ ও মধ্যম গ্রামের সাথে গান্ধার গ্রামকে যুক্ত করেছিলেন।  

ভরতের জাতিগানের স্বরসংখ্যাভিত্তিক বর্গীকরণ
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শ্রেণিকরণে স্বরসংখ্যাভিত্তিক জাতি ৭ প্রকার। এগুলো হলো-

জাতিগানের স্বরভিত্তিক জাতি-তালিকা

জাতিগানের বর্গীকরণ
ভরতের আমলে গ্রামরাগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল। ভরত ১৮ গ্রামরাগের বিচারে জাতি গানের শ্রেণিকরণ করেছিলেন। এর ভিতরে টি ছিল শুদ্ধজাতি ও ১১টি ছিল বিকৃত জাতি।  

জাতি গানের তালের বৈশিষ্ট্যশিষ্ট্য
জাতিগানের তালের সাধারণ নাম ছিল মার্গতাল।  এই তালের ক্রিয়া ছিল দুই প্রকার। এগুলো হলো-

জাতি গান চারধরনের গীতে ব্যবহৃত হতো। এই ধরণগুলো ছিল-

জাতিগানের রস: ভরতের নাট্যশাস্ত্রে পাওয়া অষ্টরসের কথা। ভরতের তাঁর জাতিগানের এসকল রসের বিচারের নির্ধারিত হয়েছিল।


তথ্যসূত্র: ূত্র: