আর্যভী
ভারতীয় সঙ্গীত শাস্ত্রে বর্ণিত গ্রামরাগজাতিগান বিশেষ।

খ্রিষ্টীয় ১ম শতাব্দীর ভিতরে গ্রাম ও মূর্চ্ছনার উদ্ভবের ভিতরে দিয়ে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আদি কাঠামোগত রূপ লাভ করেছিল। গন্ধর্ব সঙ্গীতজ্ঞরা মূর্ছনা থেকে প্রথম গ্রামরাগের উদ্ভাবন করেছিলেন। নারদের রচিত 'নারদীয় শিক্ষা' গ্রন্থের প্রথম প্রপাঠকের চতুর্থ কণ্ডিকার ৮-১১ শ্লোকে পাওয়া যায় ৭টি গ্রামরাগের কথা। এগুলো হলো- ষড়জগ্রাম, পঞ্চম, কৈশিক , কৈশিকমধ্যম, মধ্যমগ্রাম, সাধারিত ও ষাড়ব।

নারদীয় শিক্ষায় গ্রাম সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় নি। খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে 
ভরত যখন গ্রামরাগগুলোকে নাটকের ধ্রুবাগানে ব্যবহার করেন, তখন গ্রামরাগভিত্তিক গানগুলোকে জাতিগান হিসেবে শ্রেণিকরণ করেন। তখন ষড়্‌জ গ্রামরাগটিকে রাখা হয়েছিল ষড়্‌জগ্রামের শুদ্ধজাতির জাতিগানে ব্যবহৃত গ্রামরাগ হিসেবে হিসেবে। তখন এর নাম রাখা হয়েছিল আর্যভী জাতি।

খ্রিষ্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীতে ভরতের রচিত নাট্যশাস্ত্রে এই গ্রামরাগটিকে পঞ্চস্বরা জাতির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু নাট্যশাস্ত্রের জাতিভিত্তিক আলোচনায় আর্ভীকে সপ্তস্বর ও ষটস্বরা জাতি হিসেবও উল্লেখ করা হয়েছে।

খ্রিষ্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীতে মতঙ্গের রচিত বৃহদ্দেশী-র 'জাতি', খ্রিষ্টীয় ৭ম-অষ্টম শতাব্দীতে নরদের রচিত সঙ্গীত মকরন্দঃ [পৃষ্ঠ১৯] এবং খ্রিষ্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দীতে শারঙ্গদেবের রচিত 'সঙ্গীতরত্নাকর-এর জাতিপ্রকরণ অংশে আর্ভী [পৃষ্ঠ: ৩৪] সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।

এই জাতির আরোহণে পঞ্চম বর্জিত হয়। এর অল্পত্বের কারণে সাধারণ ষটস্বরত্ব হয়।  এই জাতির ষাড়বত্ব ঘটলে ষড়্‌জ বাদ পড়ে এবং ঔড়বত্ব ঘটলে যড়্‌জ ও পঞ্চম বাদ পড়ে এবং গান্ধার ও মধ্যমের অল্পত্ব ঘটে। এই জাতির সম্পূর্ণ দশায় ষড়্‌জ, গান্ধার ও পঞ্চমের অল্পত্ব ঘটে। শুদ্ধ বিকৃত ও সম্পূর্ণ অবস্থায় এই জাতি ১০ প্রকার হতে পারে। সেক্ষত্রে অংশস্বর ১০টি হবে।

আর্যভী জাতির পরিচয়:
গ্রাম: ষড়্‌জগ্রাম
জাতি প্রকৃতি: শুদ্ধ
স্বরজাতি:

অংশস্বর: ঋষভ, ধৈবত  এবং নিষাদ। সম্পূর্ণ-তে ষড়্‌জ অংশ স্বর হয়।
গ্রহস্বর: ঋষভ, ধৈবত  এবং নিষাদ
ন্যাস স্বর: ঋষভ
অপন্যাস: ঋষভ
অল্পত্ব: পঞ্চম
স্বরসঙ্গতি: স্বরসঙ্গতি ঘটে- ষড়্‌জ, ধৈবতপঞ্চমের  মধ্যে। এছাড়া গান্ধার ও ঋষভের স্বরসঙ্গতিও ঘটে।
রস: বীর, রৌদ্র ও অদ্ভুত

 সঙ্গীতরত্নাকরে এই রাগের যে প্রস্তার দেওয়া হয়েছে, তা নিচে দেওয়া হলো-


স্বরসংখ্যাভিত্তিক জাতি:
এর ব্যবহার ছিল ধ্রুবা গানে। নাটকের প্রথম প্রেক্ষণে নৈষ্ক্রামিকী ধ্রুবায়- বীর, রৌদ্র এবং অদ্ভুত রসে এর প্রয়োগ ছিল। তাল হিসেবে ব্যবহৃত হত চচ্চৎপুট।  এই গান এককল চিত্রামার্গে মাগধীগীতি, দ্বিকলে বার্তিক মার্গে সম্ভাবিতা গীতি এবং চতুষ্কলে দক্ষিণামার্গে পৃথুলা গীতিতে ব্যবহৃত হতো। এই জাতির সাথে অন্য জাতির মিশ্রণে সৃষ্ট বিকৃত জাতিসমূহ।
তথ্যসূত্র: